Tuesday, October 17, 2017

বিপদে আপদের সময় যেসব দোয়া পড়বেনঃ

বিপদ-মসিবতে পাঠ করার জন্য কতিপয় দোয়া  এবং এর জন্য আমল:

♦১) উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) কে বলতে শুনেছি, মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে সে যদি এই দোয়া পাঠ করে- আল্লাহতায়ালা তাকে তার বিপদের প্রতিদান দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।

দোয়া : ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুসিবাতী ওয়া আখলিফ-লী খইরম মিনহা।

অর্থ : আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চেয়ে ভালো কিছু দান করুন।
-সহিহ মুসলিম)

♦২) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বিপদের সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন—

দোয়া : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযীমুল হালীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুল আরশিল আজীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি- ওয়া রব্বুল আরশিল কারীম।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশমন্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু।
(সহীহ বোখারি, হা/ 6346)

♦৩) (বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু মায়া'সমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়াহুয়াস সামিউ'ল আ'লিম)

অর্থঃ আমি সেই আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামের বরকতে আকাশ ও পৃথিবীর কোনকিছুই কোন অনিষ্ট সাধন করতে পারেনা ; তিনি সর্বশ্রোতা, তিনি সর্বজ্ঞানসম্পন্ন।

উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি উপরের দোয়াটি প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বে দুনিয়া ও আখিরাতের কোন কিছুই তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সুননে আবু দাউদ, সহীহ, আলবানী)

♦৪) (হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আ'লাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আ'যীম)

অর্থঃ  আমার জন্য একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি একমাত্র তাঁর উপরই ভরসা করলাম। আর তিনি আরশে আযিমের অধিকারী। (সুরা তাওবাহ ১২৯ নং আয়াত)

বিপদে  উপরের আয়াতটি বেশি বেশি পড়বে।

এছাড়া বিপদে বেশি বেশি দোয়া ইউনুস পড়বে।

১০জনকে মেসেজ দিলে খুশির সংবাদ আসবে না জানালে বিপদ আসবে এসব এর হুকুম কি?


আসসালামু আলাইকুম
প্রশ্ন :কিছুদিন ধরে মোবাইলে কিছু মেসেজ আসছে l মেসেজ  গুলোর  ধরন এমন  :
“মদিনা শরীফে  ১ লাখ হাজী স্বপ্নে দেখেছেন  হযরত  মুহাম্মদ  (স) বলেছেন,  আমার  উম্মতদের বলে দিও, তারা  যেন  কোরআন  তেলাওয়াত  করে এবং নামাজের তাগিদ দেয় l এই sms টি যারা  ২০ জন কে দিবে  তারা ৯ দিনের  মধ্যে খুশির  সংবাদ  পাব l আর না দিলে ১৫ বছরেও  কোন খুশির  সংবাদ  পাবেনা l এটা  সত্য l”
(আমার  বন্ধুরা  sms টির প্রতি  উৎসাহিত হয়ে সবাইকে  send  করছে l শুধু এটি নয় আরও বহু এমন sms পাওয়া যায়, যা পাঠালেই নাকি এই হবে সেই হবে, এই পাবেনন সেই পাবেন।)

আমার  প্রশ্ন  হছে  এরুপ  sms কি প্রচার  করা যাবে? আর না  গেলে  আশা করি এর বিপক্ষে  যথাযথ  ব্যবস্থা  নিবেন l

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলামী শরীয়তের মুলনীতি হল, কোন বিষয় সম্পর্কে পরিস্কারভাবে না জেনে তা প্রচার করা ব্যক্তি মিথ্যুক হবার জন্য এরকম কাজই যথেষ্ট।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ [٤٩:٦]

মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। {সূরা হুজুরাত-৬}

তাই কোন কিছু শুনতেই তা প্রচার করা জায়েজ নেই। এসব কথা আমরা সেই ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি। এসবের কোন সত্যিকার প্রমাণ এখনো কেউ পায়নি। এক লাখ লোক হাজি স্বপ্নে দেখলে এটি সে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে লিড নিউজ হতো। এর কোন প্রমান আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। তাই এসব বিষয় সুনিশ্চিতভাবে এর প্রমাণ না জেনে প্রচার করা নাজায়েজ।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, যা শুনে তা’ই বলতে থাকা কোন ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।{মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৫৬১৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৯২}

কিন্তু কথাগুলো যেহেতু ভাল কথা। দ্বীন প্রচারের কথা। তাই শুরুর মিথ্যা কথাগুলো না বাড়িয়ে এমনিতে মানুষকে দাওয়াত দেয়া যেতে পারে এভাবে, কুরআন পড়ুন, সুন্নতী জীবন গড়ুন, আখেরাতকে সুন্দর করুন।

কিন্তু আগে পিছে মিথ্যা জোড়ে দিয়ে সংবাদ পৌছানো জায়েজ নয়

মসজিদের মাইকে আযান ব্যতীত অন্য কোন ঘোষণা দেয়া যাবে কি? যেমন: মৃত সংবাদ, হারানো বিজ্ঞপ্তিঃ

মসজিদে আযান ব্যতীত অন্য কোন ঘোষণা না দেওয়াই উচিত। যেমন হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কেউ মসজিদে হারানো বিজ্ঞপ্তি শুনলে সে যেন বলে আল্লাহ যেন তোমাকে জিনিষটি ফেরত না দেন। কারণ এ কাজের জন্য মসজিদ বানানো হয়নি (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭০৬)

অনুরূপ মৃত সংবাদও প্রচার করতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন (ছহীহ তিরমিযী হা/৯৮৬)।

সরকারী ঘোষণা ও চিকিৎসার ঘোষণার সাথে মসজিদের কোন সম্পর্ক নেই।

(সংগ্রহিত)

Sunday, October 15, 2017

কোন রঙের পাগরি পড়া সুন্নত?

প্রশ্ন : হাদিসে কোন কোন রঙের পাগরি পড়ার ব্যাপারে আছে?

Ans By MASUM BILLAH SUNNY

সুলাইমান ইবনে আবী আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে,
আমি প্রথম যুগের মুহাজ্জিরিন গনকে দেখেছি  তারা কালো, সাদা, লাল এবং সবুজ রঙের এর পুরো পাগড়ি পরা ছিল।
[আল-মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা (6/48) : হাদিস 25489]

★ বুখারী, মুসলিম শরীফে কালো পাগরি সম্পর্কে অনেক হাদিস এসেছে।

★ আতা বিন রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত,
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাথায় সাদা পাগরি বেঁধেছেন (অথবা আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ)।
★ মিশকাতঃ 377 পৃঃ এবং
★ ইমাম বায়হাকিঃ শুয়াবুল ইমান।

Sunday, October 8, 2017

ইমাম সূয়ুতী (রাঃ) এর লিখিত "চুপ থাকার ফযিলত"কিতাবটির PDF/APPS :

Islamic Apps developer- ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী
========
লিংকঃ
1. From Play Store : http://goo.gl/EuKTZc
2. From drmiaji.com http://wp.me/p85NO3-gd

চুপ থাকায় কত উপকার তা এই কিতাবটি পড়লে বোঝা যায়। ইমাম সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখিত কিতাবের এপ এটি। "চুপ থাকার ফযিলত" বা অন্য কথায় "এক চুপ শত সুখ"।

ইমাম আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কত বড় ইসলামী মনীষী ছিলেন তাঁর লিখিত কিতাবাদি না পড়লে বোঝা যায় না। এই কিতাবে কুরআন ও হাদিস থেকে ৯০টি ঘটনা উলেখ করে উনি প্রমাণ দিয়েছেন চুপ থাকায় কেবল ফযিলতই নয়, অনেক সময় মৃত্যুর মতো বিপদ থেকেও উদ্ধার পাওয়া যায়।

এপটি নিজে ইন্সটল করুন এবং অন্যকে ইন্সটল করতে উৎসাহিত করুন।

মাসিক তরজুমান ডাউনলোড করুনঃ

মাসিক তরজুমান মাহে মুহররম সংখ্যা ২০১৭
http://www.mediafire.com/file/6ledzr062lweyoo/
মাসিক তরজুমান মাহে জিলহজ্ব ২০১৭
http://www.mediafire.com/file/13l60m7zy4284n3/

Wednesday, October 4, 2017

সাহাবীদের সমালোচনা করা হারামঃ

হযরত আনাস রাদ্বিআল্লাহু তা'লা আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন আল্লাহ্'র প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা'লা আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
ইরশাদ করেন:

- নিশ্চই আল্লাহ তা'লা আমাকে নির্বাচন করেছেন এবং
- আমার সাহাবীগণকে নির্বাচন করেছেন।
- অতঃপর তাদের মধ্যে থেকে আমার শ্বশুড় ও জামাতা বানিয়েছেন এবং
- তাদেরকে আমার আনসার তথা সাহায্যকারী বানিয়েছেন।
নিশ্চই অচিরেই শেষ যামানায় এমন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে।
- যারা আমার সাহাবীদের সমালোচনা করবে৷
- সাবধান !এমন লোকদের সাথে বিবাহের সম্পর্ক করবেনা এবং তাদের নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেনা
সাবধান!!
- তাদের সাথে নামায পড়বেনা।
- সাবধান! তাদেরকে সালাম দিবেনা, তাদের উপড় লানত অভিশাপ অবতীর্ণ হয়েছে৷

(হাকীম সৈয়দ আহমাদুল্লাহ্ নদভী
,তারীখে হাদীস ওয়া মুহাদ্দিসীন
উর্দু খন্ড ১ম-পৃষ্ঠা - ১৯৬)

লেখক - (পীর মাদানী শাহ)

Monday, October 2, 2017

ছবি তোলা জায়েজ ও নাজায়েজ সম্পর্কে বিস্তারিতঃ

বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম।
ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞায় অগিনিত হাদিস এসেছে। যুগের বিবর্তনে মানুষের প্রয়োজন অনুসারে ইজমা-কিয়াস অনুযায়ী সকল সমস্যার সমাধানেরও অধিকার দিয়েছে ইসলাম।

এমন অনেক কিছুই ছিল যা পূর্বে নাজায়েজ ছিল কিন্তু এখন তা জায়েজ। যেমনঃ
- ইটের তৈরি মসজিদ।
- মাইক দিয়ে আজান দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি (মাসুম বিল্লাহ সানি) এখানে জায়েজ ও নাজায়েজ দুইপ্রকার মতামতই বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরব।

ছবি তোলা নাজায়েজ প্রসংঙ্গেঃ
ফতোয়াঃ


® প্রাণীর ছবি ঘরে রাখাকে ফকীহগণ নাজায়েয ও মাকরূহে তাহরীমী বলেছেন। (যুগ জিজ্ঞাসা, ফতোয়ায়ে রেজভীয়া - ৯ম খন্ড, আহকামে তাসভীর ইত্যাদি)

হাদিসঃ

1. 

জিবীকার উদ্দেশ্যে হলেও প্রানীর ছবি আঁকা হারাম তবে জরবস্তু কিংবা গাছ-পালা আঁকা  জায়েজঃ
® সাইদ বিন আব আল হাসান বর্ণনা করেন যে তিনি যখন ইবনে আব্বাসের সাথে বসেছিলেন তখন এক লোক তার কাছে আসে ও বলে-" হে আব্বাসের পিতা , আমি ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করি "। ইবনে আব্বাস বললেন-" আমি সেটাই বলব যা আমি আল্লাহর নবির কাছ থেকে শুনেছি। আমি তাকে বলতে শুনেছি, যে লোক ছবি আঁকে তাকে আল্লাহ শাস্তি দেবে যতক্ষন পর্যন্ত না সে তাতে জীবন দিতে পারে এবং সে সেটা করতে কখনই সক্ষম হবে না।" এটা শুনে সেই লোকটার মুখ শুকিয়ে গেল। ইবনে আব্বাস তাকে বললেন - " কি দু:খের কথা ! যদি তুমি ছবি আঁকতেই চাও তাহলে আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে গাছ পালার ছবি বা অন্য কোন জড় বস্তুর ছবি আঁকতে পার।"সহি বুখারি , ভলিউম- ৩, বই - ৩৪, হাদিস - ৪২৮

2. 

যে ঘরে কুকুর বা কোন প্রানীর ছবি থাকবে সেই ঘরে ফিরিস্তারা প্রবেশ করে নাঃ
® ইবনে মুকাতিল (র)...আবূ তালহা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ঘরে কুকুর থাকে আর প্রানীর ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফিরিশতা প্রবেশ করেন না। [সহীহ বুখারী, পঞ্চম খণ্ড, হাদিস নং ২৯৯৮ - ইফা]
এছাড়াও হাদীছে আরও আছে -
® "হযরত আবু তালহা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ঘরে (প্রানীর) ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।" (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩৩)
®"হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত,... নবীজী (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন, ... আর যে ঘরে (প্রানীর) ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।" (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩২)

3. 

মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা প্রানীর ছবি/মূর্তি তৈরি করেঃ
® হুমায়দী (র)...মুসলিম (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরুকের সাথে ইয়াসার ইবনে নুমায়রের ঘরে ছিলাম। মাসরুক ইয়াসারের ঘরের আঙ্গিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, (কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায়। [সহীহ বুখারী, নবম খণ্ড, হাদিস নং ৫৫২৬ - ইফা]

4. 

কঠিন আযাব হবে তাদের, যারা আল্লাহ্‌র সৃষ্টির (প্রানীর) অনুরূপ তৈরি করবে, তাই ছবির পর্দাসমূহ ছিরেঁ ফেললেন/ সরিয়ে ফেলতে বললেনঃ
® "হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক যুদ্ধের সফর থেকে ফিরে এলেন। আমি আমার ঘরে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম। তাতে ছিল (প্রাণীর) অনেকগুলো ছবি। নবীজী (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন...।" (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩০ ও ৫৫৩১)
® "নবী সহধর্মিণী হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, (একবার) তিনি ছবিযুক্ত গদি কিনলেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বাহির থেকে এসে) যখন তা দেখতে পেলেন, তখন দরজার উপর দাঁড়িয়ে গেলেন। (ভেতরে) প্রবেশ করলেন না। আয়শা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) নবীজীর (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব বুঝতে পারলেন।..." (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩৬)
® হযরত আনাস (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহু) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, "হযরত আয়শার (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) নিকট কিছু পর্দার কাপড় ছিল, তা দিয়ে তিনি ঘরের এক দিকে পর্দা করেন। রসূলুল্লাহ (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) তাঁকে বললেন, আমার থেকে এটা সরিয়ে নাও (অর্থাৎ, লুকিয়ে রাখ বা ছবি নেই এমন কিছু দ্বারা আচ্ছাদিত করে রাখ), কেননা এর ছবিগুলো নামাজের মধ্যে আমাকে বাধার সৃষ্টি করে। (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, পরিচ্ছেদঃ ছবিযুক্ত কাপড়ে নামাজ পড়া মাকরূহ, হাদীছ নং ৫৫৩৪)

ছবি তোলা জায়েজ প্রসংঙ্গেঃ

যেহেতু হাদিসের উপরে ফতোয়া নয় তাই আল্লাহ এ ব্যাপারে আমাদের ক্ষমা করবেন কিনা তিনিই সর্বাধিক জ্ঞাত।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ফতোয়াঃ

® আহলে সুন্নাহর প্রখ্যাত আলেম মুফতী মুহাম্মদ অছিয়র রহমান সাহেব তাঁর কিতাবে লিখেছেন -
"কোনো প্রাণীর ছবি ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখা জায়েয নেই। কারণ, যে ঘরে প্রাণীর ছবি ঝুলানো থাকে, সে ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না। তবে, মাতা-পিতা, পীর-মুর্শিদ বা অন্য কারও স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি অ্যালবামে বা গোপন স্থানে সংরক্ষণ করলে তাতে অসুবিধা নেই।
('যুগ জিজ্ঞাসা' বইয়ের ৪৫ পৃষ্ঠা)

® সম্মানিত মাতাপিতা ও পীর-বুযর্গদের অ্যালবাম বা গোপনস্থানে সংরক্ষিত ছবিসমূহ শুধুমাত্র স্মৃতিস্বরূপ বা তাঁদেরকে স্মরণে আবদ্ধ রাখার নিমিত্তেই হবে। শোভা প্রদর্শন বা চুম্বন করার উদ্দেশ্যে নয়। কারণ, শোভা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে যেকোনো প্রাণীর ছবি ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখা বা কোনো ছবিকে চুম্বন করা ফকীহগণের মধ্যে অনেকেই নাজায়েয ও মাকরূহে তাহরীমী বলেছেন।
(সূত্রঃ ফতোয়ায়ে রেজভিয়া - ৯ম খন্ড, আহকামে তাসভীর ইত্যাদি)"

আহলে হাদিস শাইখের ফতোয়াঃ

® শাইখ ইবনে উথাই’মিন বলেছেন: আধুনিক ছবি দুই ধরনের হয়ে থাকে:
১. যেসব ছবি, যা কোন কিছুর সাহায্য ছারা দেখা যায় না, আমাকে বলা হয়েছে যেমন ভিডিও ক্যামেরার দৃশ্য। এরূপ ছবির ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা নেই এবং এগুলি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পরে না। যেসব আলেমরা প্রিন্ট করা ছবির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছেন তারাই বলেছেন এরূপ অস্থায়ী ভিডিও ক্যামেরার ছবির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই।
২. যা কাগজে ছাপানো হয়। (নাজায়েজ তবে পিতা-মাতা বা পীরের ছবি স্মৃতির উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা যেতে পারে - পূর্বে আলোচিত হয়েছে)
® শাইখ ডা: খা’লিদ আল-মুস’হাকি (র:)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আমি মোবাইল দিয়ে স্মৃতির জন্য আমার বাচ্চার ছবি তুলি। কিন্তু আমি পড়েছি যে স্মৃতির জন্য ছবি তোলা শরীয়ত মতে হারাম। আমার এই ছবি তোলা কি শরীয়তে নিষিদ্ধ অথবা এটা কি ঠিক আছে মোবাইলে ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা। এর ক্ষেত্রে দলিল কি? আমি এও পড়েছি যে কম্পিউটার এবং মোবাইলের ছবিকে ‘ছবি’ বলা হয় না, কারণ তা রাখা হয় কম্পিউটার বা মোবাইলের মেমোরিতে এবং তা ছাপানো হয় না। আমি যদি কম্পিউটার বা মোবাইলে ছবি খুলি তাহলে তাতে ফেরেশতারা কি থাকবে না চলে যাবে? আমি আশা করছি আপনি আমাকে বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে বুঝাতে পারবেন কারণ এটি খুব বিভ্রান্তিকর বিষয়। আল্লাহ্‌ যেন আপনাকে ভাল প্রতিদান দেয়।
তার উত্তর: ‘মোবাইল বা কম্পিউটার বা ভিডিও টপের ছবিগুলি, শরীয়তের ছবির নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পরে না কারণ এই ছবিগুলোর কোন আকার নেই এবং তা স্থায়ী নয় , যতক্ষণ না তা কাগজে ছাপা হয়। এ ভিত্তিতে মোবাইলে বা কম্পিউটারে স্মৃতির জন্য ছবি রাখাতে কোন সমস্যা নেই, যদি না তা দ্বারা কোন হারাম কাজ করা হয়। এবং আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন’…
এই নীতির ভিত্তিতে, কেউ যদি মোবাইল দিয়ে বা ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দেয় তাতে কোন সমস্যা নেই, যদি না তা ছাপানো হয়। তবে তা ঝুকিপূর্ণ ও তাকওয়ার খেলাপ। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এরূপ ছবি তোলা শরীয়ত সম্মত নয়, কারণ তা ফিতনার কারণ হবে এবং তা ছেলেদের মধ্যে খারাপ কামনা-বাসনা তৈরি করবে। কম্পিউটার ও মোবাইল স্ক্রীনে থাকা প্রাণীর (অশ্লীল ও নারীর ছবি ছাড়া) ছবি প্রিন্ট করার আগ পর্যন্ত জায়েজ বলেছেন জামিয়া বিন্নুরিয়া পাকিস্তানের ফাতওয়া বিভাগ।
সুতরাং ফটোগ্রাফী ছবিকে মুতলাক জায়েজ বলা এই হিসেবে যে, তা মূলত ছবি না, বরং তা ছায়াকে আটকে ফেলা, এরূপ বলা উচিত নয়, বরং তার বৈধতা প্রয়োজন পর্যন্ত সীমিত থাকবে।
(তাফসীরু আয়াতিল আহকাম-২/৩০০)

তাবলিগ জামাতের ফতোয়াঃ

® মুফতী তাক্বী উসমানী প্রণীত “ফিক্বহী মাক্বালাত”-৪/১২৩-১৩০
দলিলঃ فى تفسير آيات الأحكام-فإطلاق
الإباحة في التصوير الفوتوغرافي ، وأنه ليس بتصوير وإنما هو حبس للظلّ ،
مما لا ينبغي أن يقال ، بل يقتصر فيه على حد الضرورة ، (تفسير آيات
الأحكام-2/300) অনুবাদ-সুতরাং ফটোগ্রাফী ছবিকে
মুতলাক জায়েজ বলা এই হিসেবে যে, তা মূলত ছবি না, বরং তা ছায়াকে আটকে ফেলা, এরূপ বলা উচিত নয়, বরং তার বৈধতা প্রয়োজন পর্যন্ত সীমিত থাকবে। (তাফসীরু আয়াতিল আহকাম-২/৩০০)
وفى فتاوى الشيخ عبد الرزاق
عفيفي-اما التصوير الشمسى لذوات الأرواح فهو محرم وممنوع لان فيه مضاهان
لخلق الله ولان فاعله من اظلم الناس ولانه يمنع من دخول ملائكة الرحمة
والبركة الى المكان الذي تكون به هذه الصور ولان تصوير ذوات الأرواح من
المعظمين كالأمراء والعلماء ونحوهم هو ذريعة وسبب ووسيلة للشرك (فتاوى
الشيخ عبد الرزاق عقيفى-1/305) প্রামান্য গ্রন্থাবলী
১. তাফসীরু আয়াতিল আহকাম-২/৩০০
২. ফাতওয়া আব্দুর রাজ্জাক আফিফী-১/৩০৫
৩. আল ফাতওয়া লাজনাতুত দায়িমাহ-১/৬৬২
৪. ফিক্বহী মাকালাত-৪/৮৯
৫. জাদীদ ফিক্বহী মাসায়েল-১/৩৫৪
৬. জাওয়াহীরুল ফিক্বহ-৪/৯

যুক্তিসহ প্রশ্নউত্তরের জবাবঃ

১ম প্রশ্নঃ

ছবি তোলার পাপসমূহ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন কিনা?
জবাবঃ
® "আমার খাতিরে আল্লাহ্ তায়ালা, আমার উম্মাতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তার সে কাজ যা সে বাধ্য হয়ে করেছে। "
[ইবনে মাজাহ্, হাঃ নং-২০৪৫]
যেহেতু এখন জনসং্খ্যা বেড়েছে অপরাধ কর্মও বেড়েছে। রাষ্ট্র ও জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য, কতিপয় কাজ-কর্ম সহজ করার জন্য ছবির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ ব্যাপারে ধারণা করা যায় আল্লাহ চাহেন তো ক্ষমা করতে পারে। সব আল্লাহর ইচ্ছা।

২য় প্রশ্নঃ

ছবি তোলা বা ভিডিওচিত্র ধারণ করা জায়েয নাকি নাজায়েয? শরীয়তে ছবি তোলা সম্পর্কে কোনো বিধি-নিষেধ আছে কি?
উত্তরঃ
শরীয়তে (যে কোনো প্রাণীর বা জড়বস্তুর) ছবি তোলা এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করা সাধারণভাবে জায়েয (তবে, ছবি আঁকা নয়)। কেননা,
প্রথমত,
ক্যামেরা দিয়ে তোলা স্থির ছবি বা ভিডিওচিত্র মূলত আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের মাধ্যমে সৃষ্ট আমাদের প্রতিবিম্ব, যা কাগজে ছাপানো কিংবা ইলেক্‌ট্রনিক ডিভাইসে (কম্পিউটার, মোবাইল, ক্যামেরা ইত্যাদির মেমোরিতে) সেইভ করে রাখা যায়। আর কারও প্রতিবিম্ব এবং আঁকা ছবি এক নয়; কেননা আঁকা ছবিতে সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া থাকে, যা প্রতিবিম্বে থাকে না। তাই ছবি আঁকার প্রতি অর্পিত নিষেধসমূহ (যা হাদীছে বর্ণিত আছে - যেমন, হাশরের ময়দানে তা-তে প্রাণ সঞ্চার করতে হবে) ছবি তোলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
দ্বিতীয়ত,
আলোকচিত্র বা তোলা ছবির প্রতিবিম্ব এবং আয়নায় বা পানিতে সৃষ্ট প্রতিবিম্বের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে পার্থক্য নেই। কোনো সাহাবী পানিতে প্রতিবিম্ব দেখে সৌন্দর্যচর্চা করেছেন বা চুল আঁচড়িয়েছেন এবং নবীজী (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) তা-তে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মর্মে কোনো হাদীছ বা দলীল পাওয়া যায় না।
তৃতীয়ত, 
তবে ছবি তোলা ও ভিডিওচিত্র ধারণ করা নাজায়েয হবে, যদি তোলা ছবি ও ভিডিওতে অশ্লীলতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, বেহায়পনা বা এমন সব কর্মকান্ডের বহিঃপ্রকাশ থাকে, যা সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে; কেননা, শরীয়তে অশ্লীলতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াতসমূহ দ্রষ্টব্যঃ
®“কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক।” (সূরা আল-আনআমঃ ১৫১)
®"আপনি বলুন, আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন।" (সূরা আ'রাফঃ ৩৩)
®"তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন।..." (সূরা নাহলঃ ৯০)
এছাড়া হাদীছে আছে, "আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ... অশ্লীলতা উচ্ছৃঙ্খলতার অংশ। আর উচ্ছৃঙ্খলতার ঠিকানা জাহান্নামে।" (আহমাদ ও তিরমিযী)

য় প্রশ্নঃ

প্রাণীর ছবি ঘরে ঝুলিয়ে রাখা বা উন্মুক্ত রাখা কি জায়েয?
উত্তরঃ
(বাস্তব কিংবা কল্পিত) প্রাণীর (ছাঁপানো বা আঁকানো) ছবি ঘরে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা তথা উন্মুক্ত রাখা নাজায়েয।


Sunday, October 1, 2017

ইয়াযীদ সম্পর্কে মহানবী (সাঃﷺ) এর ভবিষ্যত বাণীঃ

কারবালা (নয়) - ইয়াযীদ সম্পর্কে মহানবী (সাঃﷺ) এর ভবিষ্যত বাণী
- ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী
=============
কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার পূর্বাভাষ রাসূল ﷺ নিজেই দিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে অনেকগুলো সহীহ হাদিস রয়েছে। কোন কোন হাদিসে আবার সরাসরি এজিদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করে হলো।


১। তৃতীয় শতাব্দীর এক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম আবু ইয়া’আল (রঃ) তাঁর মুসনাদ (ভলিঃ ২, পৃঃ ৭১) সহীহ সনদে উল্লেখ করেনঃ
"হযরত আবু উবায়দাহ বিন জাররাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃﷺ) বলেছেন – “মুসলিম উম্মাহর যাবতীয় কাজ কারবারে ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়পরায়ণতা পরিলক্ষিত হবে যখন বনি উম্যায়াহ গোত্রের এক জন এসে দ্বীনের মধ্যে ফাটল ধরাবে। তার নাম হবে ইয়াজিদ।”

২। আরেক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম সাহাবুদ্দীন আহমেদ বিন হাজর হায়তামী (রঃ) তাঁর আস-সাবাক আল-মুহরিকা গ্রন্থের ১৩২ পৃঃ ভিন্ন সনদে একই হাদীস উল্লেখ করেছেন।
"হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেছেন, “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ (সাঃﷺ) বলেছেন – আমার সুন্নাহকে পরিবর্তনকারী প্রথম ব্যক্তি হবে বনি উম্যায়াহ গোত্রের ইয়াজিদ”।

৩। হাফিজ ইবন কাছীর একই হাদীস উল্লেখ করেছেন তাঁর সুবিখ্যাত আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহ্যায়াহ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৫৬ নং পৃষ্ঠায়। "হযরত আবুযার ঘিফারী (রাঃ) থেকে। এই বর্ণনায় ‘যার নাম ইয়াজিদ হবে’ এই কথাটি অনুপস্থিত।

৪। হাদীসটি নিম্নোক্ত গ্রন্থেও বর্ণীত আছে।
মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা- খণ্ডঃ ৮, পৃঃ ৩৪১, হাদীস নং ১৪৫; দালাইল উন নবুয়্যাত লিল বায়হাকী আবওয়াব ঘাজওয়া তাবুক- হাদীস নং ২৮০২; মাতালিব আল-আলিয়্যাহ- হাদীস নং ৪৫৮৪।

৫। আমর বিন ইয়াহিয়া সায়ে’দ বিন আমর বিন সায়ে’দ তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, "আমি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সাথে মসজিদে নববীতে বসেছিলাম এবং মারওয়ান আমাদের সাথে ছিলেন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছিলেনঃ “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ (সাঃﷺ) বলেছেন, কুরাইশ বংশের কিছু যুবকদের দ্বারা আমার উম্মত ধ্বংস প্রাপ্ত হবে”। মারওয়ান বলেন, আল্লাহ এই ধরণের যুবকদের অভিশাপ দেন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি বলতে পারি অমুক, অমুকের পুত্র অমুক, তমুকের পুত্র তমুক যদি আমি চাই। হযরত আমর বিন ইয়াহিয়া বলেন, আমি আমার দাদার সাথে বনী মারওয়ানে গিয়েছিলাম যখন তারা সিরিয়া নিয়ন্ত্রণ করছিল এবং এক জন যুবককে দেখতে পেলাম। আমার দাদা বললেন তারাও তাদের একজন হবে। আমরা বললাম তা আপনি ভাল বলতে পারবেন।
[সহীহ বুখারীঃ কিতাবুল ফিতনা, (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮০, তৌহিদ ফাউন্ডেশন - ৭০৫৮) ]

৬। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ (ﷺসাঃ) বলেছেন- আল্লাহ তা’আলার সাহায্য প্রার্থনা কর ৭০ দশক হতে এবং এক যুবকের রাজত্বকাল হতে।
[মুসনাদ ইমাম আহমদ, হাদীস নং ৩৮০০]

৭। সহীহ বুখারী শারীফের ব্যাখ্যাকারী এবং ফাতহুল বারীর লেখক হাফিজ আহমদ বিন হাজর আসকলানী (রঃ) মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা সূত্রে বর্ণনা করেন, "হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বাজারে যাওয়ার সময় প্রার্থনা করত ‘ও আল্লাহ, আমাকে ৬০ হিজরী এবং যুবকের রাজত্বকাল পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখ না’
হাফিজ ইবন হাজর আসকলানী (রঃ) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এই হাদীসে ৬০ হিজরীতে একজন শাসকের কথা বলা হয়েছে। হাদীস অনুসারে তাই ঘটে। ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যা এই বছরেই শাসনে বসেন এবং ৬৪ হিজরীতে মারা যান।

৮। সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারী ইমাম বদরুদ্দীন আইনি (রঃ) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘প্রথম বালক যে শাসন করবে’এই কথা দ্বারা ইয়াজিদকে বুঝানো হয়েছে। [উমদাত উল কাদরী ভলি. ১৬, পেজ ৩৩৩]

মূলত এই কারণে আগেরকার যুগের বড় বড় আলেমগণ ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যার নামের শেষে ‘আল্লাহ এর লানত বর্ষিত হোক’ কথাটি লিখতেন। অথচ এই শেষ যুগে এসে ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীস নামের দলটির নেতারা এই ব্যক্তির নামের শেষে ‘আল্লাহ এর রহমত বর্ষিত হোক' কথাটি ব্যবহার করে চলেছে। সত্যিই প্রসংশা করার মতো তাদের প্রতিভা ও ধর্মজ্ঞান! যেই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রাণপ্রিয় নাতির হত্যাকারী তার নামের শেষে ......., এটা ভাবতেও যে কি কষ্ট।

ইয়াজিদি মুসলমানদের পরিনতিঃ

ইয়াজিদী সৈন্যদের ভয়ংকর পরিণতি – শেষ পর্ব

⭕   অজগর ও ইয়াজিদী সৈন্য

ইবনে যিয়াদ এবং তার সেনাপতিদের মাথা মুখতার সাকাফীর সামনে এনে যখন রাখা হল, তখন হঠাৎ এক বিশাল অজগর দেখা গেল;  এমতাবস্থায় অজগরটি সব মাথা ছেড়ে ইবনে যিয়াদের মাথায় তার নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করলো।  কিছুক্ষণ পরই অজগরটি মুখ দিয়ে বাহিরে এল। অতঃপর আবার নাক দিয়ে ঢুকলো, আবার মুখ দিয়ে বের হল।  অর্থাৎ এমন করে তিন বার ভিতর ঢুকল আর বাহিরে আসল। এক পর্যায়ে অজগরটি অদৃশ্য হয়ে গেল।

ঐতিহাসিক লিখেন যে, মুখতার সাকাফীর সাথে যুদ্ধে সত্তর হাজার(৭০,০০০) শামবাসী মারা যায়(যারা সবাই ইমাম পাকের শাহাদাতের সাথে জড়িত ছিল)। আর এমনিভাবে হাদীস শরীফে বর্ণিত আল্লাহ তা’আলার ওয়াদাও পূর্ণ হল যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র রক্তের বদলায় সত্তর হাজার পাপীষ্ঠ মারা যাবে।

إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সর্বশক্তিমান।

টীকা

জান্নাতের সর্দার, সাইয়্যেদুশ শোহাদা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাত  এমন এক চরম হৃদয় বিদারক ঘটনা যে, আজ পর্যন্ত কারবালার যমীনে প্রবাহিত হওয়া তাঁদের এক এক ফোটা রক্তের বিনিময়ে পৃথিবী অশ্রু সাগরে পরিণত হয়েছে। সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে, পৃথিবীর কোন মর্মান্তিক ঘটনার বেলায় এতটুকু অশ্রু ঝরেনি, যতটুকু কিনা কারবালার ব্যাপারে ঝরেছে।

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যেহেতু এই ফিত্‌নার বিষয়ে অবগত হয়েছিলেন। এজন্যই তিনি শেষ বয়সে এই দু’আ করতেন,

“হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, ষাটতম হিজরী এবং নবীনদের নেতৃত্ব থেকে”

ষাট হিজরীতেই ইয়াজিদের মত কনিষ্ঠ ব্যক্তি খিলাফতের দায়িত্ব নেয় এবং এই ফিত্‌নারও সূত্রপাত হয়।

টীকা

সাইয়্যেদুনা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা বাতিলের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন এবং হক্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই ছিল। কিন্তু পাপীষ্ঠ খারেজী সম্প্রদায়রা বলে যে, (নাউযু বিল্লাহ) ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইয়াজিদের বিপক্ষে অন্যায়ভাবে দাঁড়িয়েছে,এ জন্যই সে নির্মমভাবে মারা গিয়েছে। (আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অভিশম্পাত ইমাম হুসাইনের এই দুশমনদের উপর -অনুবাদক)

সুতরাং খারেজীদের সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করব।

    হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমন অন্ধ হয়ে গেলো

মুহাম্মদ বিন ছলাত আব্দী এবং র’বী বিন মুনযির তোরী যারা তাদের পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি এসে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের সুসংবাদ দেয়(অর্থাৎ সে ইমাম হুসাইনের শাহাদাতে খুশি ছিল-অনুবাদক) এবং সে তখনই অন্ধ হয়ে যায়। যাকে পরে অন্য এক লোক এসে ধরে নিয়ে যায়।

    পৃথিবীতে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমনের শাস্তি

ইবনে আইনিয়্যাহ বর্ণনা করেন যে, আমাকে আমার দাদী বলছেন, জুফাইন গোত্রের দু’ব্যক্তি হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে শরীক ছিল, যাদের মধ্যে থেকে একজনের লজ্জাস্থান এতটাই দীর্ঘ হয়ে গিয়েছিল যে, সে বাধ্য হয়েই সেটাকে ভাঁজ করে চলাফেরা করতো। এবং অপরজনের এত চরম পিপাসা সৃষ্টি হয়ে গেল যে, সে পানি ভর্তি মশক’কে(বড় পাত্র) মুখের সাথে লাগাতো এবং পাত্রের শেষ বিন্দুটা পর্যন্ত চুষে খেতো।

    হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমন জ্বলন্ত আগুনে পুরে মারা গেলো

সুদ্দী এক ঘটনার বর্ণনা করেন যে- আমি এক জায়গায় মেহমান হিসেবে গেলাম, যেখানে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের আলোচনা চলছিল। আমি বললাম, হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে যারা জড়িত ছিল, তারা ন্যাক্কারজনকভাবে মারা গিয়েছে। একথা শুনে এক ব্যক্তি বলল, হে ইরাকিরা ! তোমরা কতইনা মিথ্যাবাদী। দেখো ! আমি হুসাইনের হত্যায় জড়িত ছিলাম, কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমি এহেন মৃত্যূ থেকে নিরাপদ আছি। এ কথা শেষে সে তখন জ্বলন্ত একটি চেরাগে তেল ভরে বাতিকে নিজের আঙ্গুল দ্বারা কিছুটা বাড়িয়ে দিতেই পুরো বাতিতে আগুন লেগে যায়, ঐ আগুন সে তার থু থু দ্বারা নিভাতে ছিল, ঠিক তখনই তার দাঁড়িতে আগুন ধরে যায়। সে সেখান থেকে দৌঁড়িয়ে পানিতে ঝাপ দেয়, যাতে আগুন নিভে যায়। কিন্তু পরিশেষে যখন তাকে দেখা গেল, ততক্ষনে সে জ্বলে কয়ালায় পরিণত হয়ে গিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতেই দেখিয়ে দিলেন যে, “তোর দুস্কৃতির এটাই পরিণতি।”

    ইবনে যিয়াদের উপর অজগরের আক্রমন

আম্মার বিন উমায়ের রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন যে, যখন উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ এবং তার সাথীদের মাথা নিয়ে মসজিদের বরাবর বাহিরে রাখা হয়েছিল, তখন আমি ঐ লোকদের নিকট পৌঁছলাম, যখন কিনা তারা বলছিল- “ঐ এসেছে-ঐ এসেছে”। এমনই মুহুর্তে একটি সাপ এসে ঐসকল মাথার মধ্যে ঢুকতে শুরু করলো। অতঃপর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ এর নাকের ছিদ্রে ঢুকলো ও তাতে কিছুক্ষন থাকার পর বাহিরে চলো এলো। সাপটি কোথায় থেকে আসলো আবার কোথায় চলে গেল। এই ঘটনাটিকে ইমাম তিরিমিযী বর্ণনা করেন এবং তার সনদকে সহীহ হাসান বলেছেন।

    আগুলের স্ফুলিঙ্গ লাগাতে অন্ধ হয়ে গেলোঃ

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’কে ফাসিক ইবনে ফাসিক (ফাসিকের ছেলে ফাসিক) বলে গালি দেয়। আল্লাহ তা’আলা তখনই তার উপর দুইটি ছোট তারকার স্ফুলিঙ্গ বর্ষণ করে তাকে অন্ধ করে দেন। [সাওয়াইকে মুহাররিকাহ,পৃষ্ঠা ১৯৪]

    ইয়াজিদের চেলা মুসলিম বিন উকবার পরিণতি

মুসলিম বিন উকবা মদীনা শরীফে গিয়ে লোকদেরকে ইয়াজিদের বায়’আত হওয়ার আহবান জানাতেই কিছু লোক জান-মালের ভয়ে ইয়াজিদের বায়’আত হলো। তাদের মধ্যে কুরাইশ গোত্রের একজন ব্যক্তিও ছিল। বায়’আতের সময় সে বলল যে, আমি বায়’আত হলাম ইয়াজিদের আনুগত্যের উপর, তার গুনাহের (সাথে একাত্মতার) উপর নয়। একথা শোনা মাত্রই মুসলিম বিন উকবা তাকে হত্যা করলো। এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির মা ছেলে হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার শপথ নিয়ে বলল যে, যদি মুসলিম বিন উকবা মরেও যায়. তাহলেও আমি কবর খনন করে তার লাশ জ্বালিয়ে দেব। মুসলিম বিন উকবা যখন মারা গেল, তখন ঐ মা তার দাসকে বলে তার কবর খনন করলো। খননের এক পর্যায়ে যখন লাশের নিকট পৌঁছলো তখন দেখলো যে, তার ঘাড়ে অজগর সাপ পেঁচিয়ে আছে এবং তার নাক দিয়ে ঢুকে তাকে দংশন করছে। [ইবনে আসাকির,তইয়ুল ফারাসিখ]

    হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দুশমন

আবু নঈম এবং ইবনে আসাকির আ’মাশ হতে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মাজার শরীফে পায়খানা করে দিল (নাউজুবিল্লাহ)। সে সঙ্গে সঙ্গে পাগল হয়ে গেল এবং কুকুরের ন্যায় ঘেউ ঘেউ শব্দ করতে লাগলো। যখন সে মারা গেল, তখন তার কবর হতেও কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ আসতে লাগলো। [তাবাক্বাতে মানাদী আজ জামালে আউলিয়া,পৃষ্ঠা-৩৪]

টীকা

প্রকৃতার্থে আহলে বাইত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম’দের দুশমন কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট। অর্থাৎ পৃথিবীর কুকুর তো তার জীবনে ঘেউ ঘেউ করেই; আর আহলে বাইতের দুশমন মানুষ হয়ে জন্ম নিলেও কুকুর হয়ে মরে এবং মরার পরও ঘেউ ঘেউ করে। বুঝা গেল যে,আল্লাহ ওয়ালাদের ব্যক্তিত্বই সম্মানের পাত্র।এভাবে তাঁদের মাজার শরীফও সম্মানের স্থান।

    ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র উট

হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান জামী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি তাঁর কিতাব “শাওয়াহেদুন নবুওয়াতে” উল্লেখ করেন যে, সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র (কাফেলা হতে) বেচে যাওয়া কিছু উট ছিল। সেগুলোকে জালিমরা যবেহ করে কাবাব বানালো। ঐ গোশতের স্বাদ এতই তিক্ত ছিল যে, সেখান থেকে ভক্ষন করার সাহস কারোরই হল না।

টীকাঃ

এই শাস্তি ফেরাউনীদের ঐ শাস্তির সদৃশ, যেখানে পানি বনী ইসরাঈলীদের জন্য তার মৌলক অবস্থায় ছিল। অন্যদিকে ফেরাউনীদের জন্য রক্তে পরিণত হয়েছিল। এমনকি যে, যেই পাত্র দ্বারা বনী ইসরাঈলগণ পানি নিত তা পানিই থাকতো। কিন্তু ঐ পাত্র দ্বারা যখন ফিরাউনীরা পানি নিত তখন তা রক্তে রুপান্তরিত হত। তাদের খাদ্য দ্রব্যে উকুনে ছেঁয়ে গেলো। এমনকি যে, বনী ইসরাঈল হতে তারা খাদ্য নিলে সেটাও উকুনে ছেঁয়ে যেত।

   ✴  ইয়াজিদের উপর খোদায়ী গযব

ইয়াজিদের মৃত্যূর পর তার কবরে পাথর নিক্ষেপ করা হত। পরবর্তীতে লোকেরা এটার উপর দালান-কোঠা তৈরী করে ফেলে। এক পর্যায়ে ইয়াজিদের কবরের উপর লোহা,কাঁচ গলানোর বিশাল চুলা স্থাপিত করা হয়। যেমনটা মনে হচ্ছে যে, ইয়াজিদের কবরে প্রত্যহ আগুন প্রজ্জলিত হচ্ছে। এমনকি এক পর্যায়ে তার কবরের নাম নিশানাই আর থাকল না।

  ✴  ইয়াজিদের ধংস

হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের পর এক দিনও শান্তিতে কাটেনি ইয়াজিদের। সমগ্র মুসলিম জাহানে শহীদদের রক্তের ডাক এবং ক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ইয়াজিদের জিন্দেগী এর পর দুই বছর আট মাস এর বেশী দীর্ঘ হয়নি। দুনিয়াতেও আল্লাহ তা’আলা তাকে অপদস্থ করেছেন এবং সে অপদস্থতার সাথেই ধংস হয়ে যায়।

    তীর নিক্ষেপকারী পিপাসার্ত অবস্থায় ছটফট করে মারা গেলো

যে ব্যক্তি হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে তীর নিক্ষেপ করেছিল এবং পানি পান করতে দেয়নি। তার মধ্যে আল্লাহ তা’আলা এমন পিপাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে, কোনভাবেই তা নিবারণ হত না।পানি যতই পান করুক না কেন, পিপাসায় সর্বদা কাতরাতো। এক পর্যায়ে সে পেট ফেটে মারা গেল।

✴   অবিশ্বাস্য সময়

এটা আমাদের দূর্ভাগ্য মনে করা হোক বা অবিশ্বাস্য সময় বলে মনে করা হোক, আমাদের যুগে এসে এমন পাপীষ্ঠও সৃষ্টি হয়েছে; যে কিনা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদতকে বিদ্রোহ জনিত মৃত্যূ বলে আখ্যা দেয়। বদমাশ,নাফরমান,খবীস ইয়াজিদকে আমীরুল মু’মিনীন ইত্যাদি বলে। এমতাবস্থায় খলিফায়ে রাশিদ সাইয়্যেদুনা উমর বিন আব্দুল আযীয রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ঐ ব্যক্তিকে বিশটি বেত্রাঘাতের হুকুম দিতেন, যে কিনা ইয়াজিদকে আমীরুল মু’মিনীন বলতো।

হায় ! আজ যদি সাইয়্যেদুনা উমর বিন আব্দুল আযীয রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জীবদ্দশায় থাকতেন, তাহলে আমরা তাঁর নিকট আবেদন করতাম যে, “বাংলাদেশে এক জন নয় এরকম লাখো আছে,আর তারা কোন সাধারণ ব্যক্তি নয় বরং ধার্মিক। এমনকি ধর্মের কর্ণধার। হে উমর বিন আব্দুল আযীয ! একটু অনুগ্রহ করে তাদেরকেও শিক্ষা দিন। কিন্তু আফসোস যে, তিনি আমাদের সময়ের আগেই দুনিয়া হতে পর্দা করেছেন। ইনশা’আল্লাহ আমরা কিয়ামতের দিন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র পতাকা তলে থাকবো এবং তারা ইয়াজিদের ধুঁতির মধ্যে থাকবে।

    একটি সংশয়ের নিরসনঃ

ইয়াজিদ পন্থীরা বলে থাকে যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে হত্যার আদেশ দেয়নি এবং না সে এই কাজে সন্তুষ্ট ছিল। (যারা এমনটা বলে) তারাও ভ্রান্ত।

“এবং কতেক বলে থাকে যে, ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যা ছিল কবীরা গুনাহ, কুফরী নয়; এবং লা’নত যে  কাফিরের জন্য নির্ধারিত,এটাও ভূল।”

তোমরা কি জান না যে, দো’জাহানের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’কে কষ্ট দেওয়াটাও যে অন্যতম কুফরী।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا

অর্থাৎ নিশ্চয় যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের উপর দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর অভিশম্পাত। এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অপমানজনক শাস্তি।

আপত্তিঃ কিছু লোক বলে থাকে যে, ইয়াজিদের শেষ অবস্থাটা জানা যায়নি। হয়ত সে কুফর ও গুনাহের পর তাওবা করে থাকতেও পারে। তাওবাকারী হয়ে সে মৃত্যূ বরণ করেছে। ইমাম গাজ্জালী তারঁ “এহয়াউল উলুম” এর মধ্যে এ দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

জবাবঃ  তাওবার সম্ভাবনা সম্ভাবনাই । আহ ! এই অভাগা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত যারা এমন কিছু করেছে, যা অন্য কেউই করেনি। ইমাম হুসাইন এবং আহলে বাইতকে শহীদের পর সে মদিনা মুনাওয়ারাকে অপবিত্র করতে এবং মদীনাবাসীকে হত্যা এবং শহীদ করার জন্যে সেখানে সৈন্য প্রেরণ করে। তিন দিন পর্যন্ত মসজিদে নববী আযান ও নামাযহীন থাকে। তারপরে কাবা শরীফে আক্রমণ করা এবং স্বয়ং কাবার অভ্যন্তরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে শহীদ করা এবং তাঁদের দুর্নাম বর্ণনা করা; সবই তার কাজ ছিল। [আল্লাহই ভালো জানেন]

আপত্তিঃ বুখারী শরীফ প্রথম খন্ডে কিতাবুল জিহাদে হযরত উম্মে হেরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বর্ণনা করেন যে,আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হতে শুনেছি। তিনি ইরশাদ করেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে থেকে প্রথম সৈন্যবাহিনী যারা কিনা রোম সম্রাটের এর শহর কুস্তন্তুনিয়ায় জিহাদ করবে, তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমিও কি সেখানে যাব ? হুজুর বললেন ‘না’।

এই জিহাদ ৫০ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল। তাতে সেনাপতি ছিল ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া। এবং এই যুদ্ধে অনেক সাহাবায়ে কিরামও অংশ নিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম। এই মুজাহিদদেরকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ক্ষমাকৃত বলে ঘোষণা করেছেন। এজন্যই ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ছিল এবং সে জান্নাতী।

এটা ছিল ইয়াজিদ পন্থী খারেজীদের সবচেয়ে বড় দলীল, যা কিনা তাদের পক্ষ হতে বলা হয়ে থাকে। এবং এই হাদীস দ্বারা অনেকে কারণ বের করেছে যে, ইয়াজিদের খিলাফত সহীহ ছিল এবং সে জান্নাতী।

জবাবঃ এই হাদীস দ্বারা এটা কিভাবে হৃদয়াঙ্গম হলো যে, ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ! কেননা যখন ইয়াজিদ কুসতুন্তুনিয়াতে আক্রমন করতে গিয়েছিল সে সময়ে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জীবিত ছিলেন। তখন তাঁর খিলাফতকাল ছিল। তাঁর আমরণ খিলাফত ওলামায়ে কিরামের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সহিহ ছিল। কারণ ইমামে বরহক্ব হযরত ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইসলামী সম্রাজ্যের খিলাফত হযরতে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র নিকট অর্পণ করেছিলেন। এখন যোদ্ধাদের ক্ষমাকৃত হওয়ার দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে, তার প্রত্যেককে মাফ করা হবে এবং সে বেহেশতী হবে। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার সাথে স্বয়ং এক ব্যক্তি বীরত্বের সাথে লড়াই করছিল।  হুজুর ইরশাদ করেন, সে দোযখী।  বেহেশতী আর দোযখী হওয়াটা সর্বশেষ অবস্থার উপর নির্ভর করে।  ইয়াজিদ প্রথমে অনেক ভাল কাজ করেছে যে, কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমন করা। কিন্তু খলীফা হওয়ার পর সে এমন হীন কর্মের দ্বারা নিজ বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে যে, নাউজুবিল্লাহ ! ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে হত্যা এবং আহলে বাইতকে অপমান করিয়েছে।  যখন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র মাথা মুবারক আনা হল, তখন অভিশপ্ত ইয়াজিদ বলতে লাগল, “আমি বদরের প্রতিশোধ নিলাম”।

মদীনা মুনাওয়ারায় সে হামলা চালালো, হেরেমের পবিত্র স্থানে ঘোড়া বাধলো, মসজিদে নববী এবং রওযা শরীফকে অপমান করলো। এসকল গুনাহের পরও কি ইয়াজিদকে ক্ষমাকৃত এবং জান্নাতী বলা যেতে পারে !!

সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে, এ কথা তো সবারই জানা যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যায় এবং আহলে বাইতের অপমানে খুশি ও রাজী ছিল। এজন্যই আমরা তার বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করি না। বরং তার ঈমানের ব্যাপারেই আমাদের আপত্তি। আল্লাহর অভিশম্পাত ইয়াজিদ ও তার সহযোগীদের উপর।

    আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ফয়সালা

সকল মুফাসসীরিন, মুহাদ্দীসীন, আইম্মায়ে কিরাম, ওলামায়ে রাব্বানী এবং আল্লাহর ওলীগণ এই কথার উপর ঐক্যমত যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হক্বের উপর ছিলেন। অপরদিকে ইয়াজিদ ফাসিক ও ফাজির ছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে,আমার উম্মতের ঐক্যমত কখনোই গোমরাহীর উপর হতে পারে না।

ইমামে রাব্বানী হযরত মুজাদ্দীদ আলফে সানী সহ অন্যান্য আওলিয়ায়ে কিরাম এবং ওলামায়ে ইসলামগণ বলেন, ইয়াজিদ পাপীষ্ঠ ও ফাসিকদের দলের অন্তর্ভূক্ত। তার পাপীষ্ঠতার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নাই। যে হীন কর্ম এই দূর্ভাগা করেছে, কোন কাফির ফিরিঙ্গিও তা করতো না। [মাকতুবাত শরীফ-৫৪,২৫১]

[মুফতীয়ে আযম শায়খ আল্লামা ফয়য আহমদ ওয়াইসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র লিখিত ”ইয়াজিদ গাজীয়ো কে আঞ্জামে বদ্‌” কিতাব হতে লেখাটি অনূদিত]

ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন।

==> আলহামদুলিল্লাহ ! সমাপ্ত <==