★★★ শিয়াদের মধ্যে এমন এক বাতিল দল রয়েছে যারা দাড়ি রাখাকে স্পষ্ট হারাম ফতোয়া দিয়েছে।
দাড়ির ভিতর নাকি শয়তান বাস করে। কেন?
তাদের যুক্তি হল কাফির ইয়াজিদও দাড়ি রেখে নামাজ পড়ত।
জবাব : তাদের এই যুক্তি হল মাথা ব্যাথা করলে মাথা কেটে ফেলে দিন।
ইয়াজিদ দাড়ি রেখে ইমাম হোসাইন (রা) কে শহীদ করেছে ইবনে যিয়াদের মাধ্যমে তাই বলে দাড়ির কি সম্পর্ক? ইয়াজিদ নামাজও পড়েছে রোজাও রেখেছে কালিমাও পড়েছে তাই বলে কি এখন তাদের যুক্তিমত নামাজ, রোজা, কালেমা সব হারাম হয়ে গেছে? আস্তাগফিরুল্লাহ ।
★★★ তাদের আরো অপবাদ দাড়ি রাসুলুল্লাহ (সা) রাখেন নি :
জবাব : এই জবাব নিচে অসংখ্য হাদিস দিয়ে দিয়েছি।
★★★ দাড়ি সম্পর্কিত হাদিস ইমাম বুখারী (রহ) এর মনগড়া নাকি :-
জবাব : আরে তোরা তো সহিহ সিত্তাকেও মানিস না, সাহাবায়ে কেরাম (রা) গনকেও মানিস না।
ইসলামের প্রধান ৪ খলিফার মধ্যে আলী (রা) কে ছাড়া আবু বকর (রা), উমর (রা), উসমান (রা) ওনাদেরকে কাফির মুনাফিক বলেও অপবাদ দিস তোরা (আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ) তোদের মধ্যে কোন দ্বীন আছে নাকি তোরা নিজে রাই কাফির, মুনাফিক। তাদের সব বাদ দিলে ইসলামের অর্ধেক দলিল শেষ বাকি রইল আল-কোরআন। আল-কোরআনে বলা আছে রাসুলের আনুগত্য করতে।
আর রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন সাহাবাগনের অনুসরন করতে আনুগত্য করতে শুধু আহলে বাইয়াত (আ) কে মানলেই রাসুলকে আর আল-কোরআনকে মানার শর্ত পুর্ন হবে না। রাসুল (সা) এর আদেশ নিষেধ সব আল্লাহর হুকুম হয়ে গেছে আল-কোরআনের আয়াত দ্বারা।
দাড়ি রাখা রাসুলুল্লাহ (সা) ও সাহাবীগনের সুন্নত। আল্লাহ আল-কোরআনে রাসুলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য করতে বলেছেন মানে রাসুল যা করে আমাদেরও তাই মান্য করা :
আসুন দেখি তাহলে তাদের জবাবে সুন্নাহ সম্পর্কে কিছু শরিয়তী হুকুম :
★ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন,
ولكن ربي أمرني بإعفاء لحيتي وقص شاربي
আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন, দাড়ি লম্বা রাখার ও মোচ খাটো করার।
-আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৪৫৯-৪৬০
★ আল্লাহর রাসূল বলেছেন-
من تمسك بسنتي عند فساد أمتي فله أجر شهيد
আমার উম্মতের ফাসাদ (আদর্শত্যাগের) সময় যে আমার সুন্নাহ (আদর্শ) কে ধারণ করবে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। (আল-হাদিস)
★ হুজুর স. বলেছেন,
যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহাব্বত করল সে যেন আমাকেই মুহাব্বত করল। আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে বসবাস করবে। (তিরমিযী শরীফ, মেশকাত- পৃ: ৩০)
★ যে আমার সুন্নাহ’র বিরাগভাজন হয়, তার আমার সাথে কোন লেনদেন নেই।” (বুখারী, ৪৬৭৫)
এ হিসেবে রাসুলের সুন্নাহ মান্য করতে হবে সেটা যেমন রাসুল (সা) এর হুকুম সেটা আল্লাহরও হুকুম :
★ “তোমাদের মধ্যে যদি কেউ আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা জ্বিন ২৩)
★ “রাসূল তোমাদের যা কিছু দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং সে যা কিছু নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা।” (হাশর ৭)
★ বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। [সুরা ইমরান: ৩১]
★ বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না। [সুরা ইমরান: ৩২]
★ আল্লাহ এবং তার রসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পরে বিবাদ করো না। তাহলে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতার সৃষ্টি হবে এবং তোমাদের অবস্থার অবনতি ঘটবে। (সূরা-আনফাল-৪৫-৪৬)
★ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না।
আর তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা বলে যে, আমরা শুনেছি, অথচ তারা শোনেনা।
[আল কুরআন (৮); ২০,২১]
★ "যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত হবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (সুরা নিসা - ১৩)
★ যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানি করবে এবং নির্ধারিত সীমালংঘন করবে,আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করাবেন,সে তাতে চিরকাল থাকবে।(সূরা আন-নিসা-১৪)
★ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ্ আনূগত্য করো এবং রাসূলের আনূগত্য করো এবং তোমদের মধ্যে যারা বিচারক। (নির্দেশ দাতা) যদি তোমরা কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহনে বিবাদে লিপ্ত হও - তাহলে উক্ত বিষয়টির ফায়সালা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের কাছে ন্যাস্ত করো। (সূরা নিসা - ৫৯)
★ যে রাসূলের আনূগত্য করে, সে মূলত আল্লাহর আনূগত্য করলো (সূরা নিসা - ৮০)।
★ যারা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী তদুপরি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কিছু বিশ্বাস করি কিন্তু কিছু প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায় । প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যাকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক আযাব।
[সুরা নিসা: ১৫০-১৫১]
★ "যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়, নিঃসন্দেহে (তাদের জন্য) আল্লাহ শাস্তি অতি কঠোর। ( সূরা আনফাল - ১৩)
★ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে রাজী রাখাই অত্যাবশ্যক - যদি তারা মোমেন হয়ে থাকে। (সুরা তওবা - ৬২)।
★ তারা কি একথা অবগত নয় যে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শক্রুতা করেছে- তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। (সূরা তওবা - ৬৩)
★ কোন বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নির্দেশ দেয়ার পর ঐ বিষয়ে কোন ঈমানদার পুরুষ এবং কোন ঈমানদার নারীর ভিন্নমত পোষন করার অধিকার নেই। (সূরা আহযাব - ৩৬)।
★ আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে - তারা স্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে পতিত হয়ে গিয়েছে। ( সুরা আহযাব - ৩৬)।
★ যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও পরকালের লা'নত করবেন বা অভিশপ্ত করবেন। (সুরা আহযাব - ৫৭)।
★ যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের বিরুদ্ধাচরন করেছে - তারা অপদস্ত হয়েছে। (সূরা - মুজাদালাহ্ - ৫)।
★ হে প্রিয় রাসূল, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী - এমন কাউকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের বিরুদ্ধাচারণকারীর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনকারী রুপে পাবেন-না। (সূরা মুজাদালাহ্ - ২২)।
আনুগত্য সম্পর্কে আরো দেখুন :-
★ আলে ইমরানের ১৩২নং আয়াত
★ সূরা মায়িদাহর ৯২নং আয়াত
★ সূরা আনফালের ১নং, ২০নং
★ সুরা রা নূরের ৫৪নং ও ৫৬নং আয়াত আরো অনেক আয়াতে।
এখান থেকে স্পষ্ট যে রাসূল (সা) এর আনুগত্য করাটাও আল্লাহ্র আনুগত্যে করার মতই জরুরি। আর দাড়ি রাখার ব্যাপারে হুকুম এসেছে সহীহ হাদীসে।
এখন আসি মুল আলোচনায় রাসুল (সা) দাড়ি রেখেছেন কিনা? এটা বিশ্বাস করা শরীয়তে ওয়াজিব :-
১. হজরত ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) মোচ খাটো এবং দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিতেন। (সহীহুল বুখারীঃ হাঃ নং ৫৮৯৩ , সহীহ মুসলিমঃ হাঃ নং ৬০০)
২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাড়ি লম্বা করো, মোচ খাটো করো।
(সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৬০২ , সহীহুল বুখারী হাঃ নং ৫৮৯২ )
৩. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা মোচ খাটো করো এবং দাড়ি নিচের দিকে ঝুলাও, অগ্নিপূজারীদের বিরোধিতা করো (সহিহ মুসলিম ১/২২২, ২৬০)।
৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা মোচ খাটো এবং দাড়ি লম্বা করো (সহিহ বুখারি ২/৮৭৫)।
৫. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা দাড়ি লম্বা করো, মোচ খাটো করো এবং তোমাদের চুলের সাদা রং পরিবর্তন করো। ইহুদি ও নাসারাদের সাদৃশ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকো (কানজুল উম্মাল ৬/৬৫৩)।
৬. হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ১০টি জিনিস ফিতরাত বা প্রকৃতির অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ ছোট করা, দাড়ি বড় করা, মিছওয়াক করা, নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে ফেলা, নখ ছোট করা, আঙুলের গিরা ও জোড়া ধৌত করা, বগলের চুল উপড়ানো, নাভির নিচের চুল কামানো, পেশাব-পায়খানার পর পানি ব্যবহার করা। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ১০ নম্বরটি ভুলে গেছি, তবে মনে হয় তা হবে কুলি করা (সহিহ মুসলিম ১/২২৩)।
৭. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- অগ্নিপূজকরা মোচ লম্বা করে, দাড়ি নিশ্চিহ্ন করে। তাই তোমরা তাদের বিরোধিতা করো, মোচ খাটো ও দাড়ি লম্বা করো (আত তারিখুল কাবির ১/১৪০)।
৮. হজরত হাসান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ১০টি স্বভাব এমন ছিল, যেগুলো অবলম্বন করে কওমে লুত ধ্বংস হয়ে গেছে। তার মধ্যে একটি দাড়ি কর্তন করা ও গোঁফ লম্বা করা (দুররে মনসুর ৫/৬৪৪)।
৯. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উৎবা (রা.) সূত্রে বর্ণিত- জনৈক অগ্নিপূজক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এ অবস্থায় এলো যে, তখন সে তার দাড়ি কামিয়ে ফেলেছে এবং মোচ লম্বা করে রেখেছে। এ অবস্থায় নবী (সা.) বললেন, তুমি এটা কী করেছ? সে উত্তর দিল, এটা আমাদের ধর্মে আছে। তখন নবী করিম (সা.) ইরশাদ করলেন, আমাদের ধর্মে আছে মোচ কর্তন করা এবং দাড়ি লম্বা করা (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৮/৩৭৯)।
১০. আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- আল্লাহ তায়ালার কিছু ফেরেশতা আছেন, যাঁদের তাসবিহ হলো এই পবিত্র ওই সত্তা, যিনি পুরুষদের দাড়ি দিয়ে সজ্জিত করেছেন আর নারীদের করেছেন সুন্দর চুলের বেণি ও খোঁপা দিয়ে (কাশফুল খিফা ১/৫৩৮, তাকমিলায়ে বাহরুর রায়েক ৮/৩৩১)।
১১. হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন অজু করতেন, তখন এক তালু পানি নিয়ে গলার নিচে রাখতেন এবং তা দিয়ে তাঁর দাড়ি মোবারক খিলাল করতেন। আর বলতেন এভাবে আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন (আবু দাউদ, মেশকাত ১/৪৬)।
১২. হজরত আবু মা'মার (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হজরত খাব্বাব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) কি জোহর এবং আসরের নামাজে কিরাত পাঠ করতেন? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। আমরা বললাম, আপনারা কিভাবে বুঝতেন? তিনি বলেন, তাঁর দাড়ি নড়াচড়া করার দ্বারা। (সহিহ বুখারি ১/৭৬০)।
১৩. জায়দ বিন আসলাম ,আতা ইবন ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে উপস্থিত ছিলেন, এমন সময় একজন লোক এসে হাজির হল যার মাথা এবং দাড়ি উভয়েই কামানো ছিল। আল্লাহর রাসূল (সা) হাত দিয়ে ইশারা করে তাকে চলে যেতে বললেন এবং ইংগিত করলেন যেন সে চুল এবং দাড়ি গজায়। লোকটি কিছুদিন পর তাই করল এবং আবার এসে হাজির হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যদি নোংরা মাথা নিয়ে হাজির হও তার চেয়ে কি এই অবস্থা উত্তম নয়; যেন সে একটি শয়তান (কামানো দাড়ি ও মাথার প্রতি ইংগিত করে) ?” (মালিক, বুক ৫১, হাদীস ৫১।২।৭)
রাসূল সাঃ এর দাড়ি লম্বা ছিল। সাহাবাগণের দাড়িও লম্বা ছিল :
১৪. হযরত আলী রাঃ রাসূল সাঃ এর বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, “তিনি অনেক বড় দাড়ির অধিকারী ছিলেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৩১১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৪৬}
১৫. হযরত জাবির বিন সামুরা রাঃ বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাড়ি ছিল বেশি বা ঘন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৩০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৭৪৫৬}
১৬. বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রাহ. বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও মোচ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা কী?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কাটব ও দাড়ি লম্বা রাখব।’
جاء رجل من المجوس إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم قد حلق اللحية وأطال شاربه فقال له النبي صلى الله عليه وسلم ما هذا؟ قال : هذا في ديننا، قال : لكن في ديننا أن نجز الشارب وأن نعفي اللحية.
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১৬-১১৭, হাদীস : ২৬০১৩
★★★ এ কয়টি হাদিসসহ আরো বহু হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, নবী (সা.)-এর দাড়ি মোবারক লম্বা ছিল।
দাড়ির পরিমাণ কতটুকু হবে?
১. হজরত আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় দাড়ির নিচ ও আশপাশ থেকে মুষ্টি পরিমাণের বাইরের অংশ কাটছাঁট করতেন। (শরহু শিরআতিল ইসলাম-২৯৮)।
২. হজরত মারওয়ান ইবনে সালেমে মুকাফা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর (রা.)-কে দেখেছি, তিনি নিজের দাড়ি মুঠ করে ধরে বাকিটুকু কেটে ফেলতেন (আবু দাউদ ২/৭৬৫)।
হজরত ইবনে উমর (রা.) হজ ও উমরার সময় নিজ দাড়ি মুঠ করে ধরে বাইরের অংশটুকু কেটে ফেলতেন (সহিহ বুখারি ৭/৮৩ হা. ৫৮৯২)।
৩. আবু জুর'আ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) স্বীয় দাড়ি মুঠ করে ধরে বাইরের অংশটুকু কেটে ফেলতেন।
** ফতহুল বারি ১০/৬৩২,
** ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯
৪ হজরত হাসান বসরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা (সাহাবিগণ ও তাবেয়ীগন) মুঠের বাইরের অংশটুকু কেটে ছোট করাকে অনুমোদন করতেন।
** মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৫/২২৬ হা. ২৫৪৭০)।
** প্রাগুক্ত ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯৫
৫. হযরত উমর (রাঃ) তো নিজেই এক ব্যক্তির দাড়ি ধরে এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজেই কেটে দিয়েছিলেন । (প্রাগুক্ত)
ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন রাসূলের (সাঃ) আদর্শের পুঙ্খনুভাবে এবং পূর্ণ অনুসারী । তাই তিনি যা করেছেন তা রাসূল (সাঃ) থেকেই জেনে-শুনে করেছেন ।
৬. ইবনে উমর (রাঃ) যখন হজ্ব অথবা উমরা করতেন,তখন তিনি দাড়ি মুঠ করে ধরে মুঠের বেশী অংশটুকু কেটে ফেলতেন। ( সহীহুল বুখারী হাঃ ৫৮৯২)
এখানে যদিও হজ্ব ও উমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে ,কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন। এ ছাড়াও :
৭. আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের (রাঃ) হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে।
(ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)
৮. নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মুষ্ঠির অতিরিক্ত দাড়ি কেটে ফেলতেন।
- প্রাগুক্ত হাদীস : ২৫৯৯৭
_____________________________
ইমামগনের বিভিন্ন ফতোয়া দাড়ি রাখা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত :-
ফক্বীহদের দৃষ্টিতে দাড়ির বিধান।
উপর্যুক্ত হাদীসগুলোর আলোকে মুসলিম উম্মাহের ফক্বীহগণ একমত যে, দাড়ি বড় করা মুসলিমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং দাড়ি মুন্ডন করা বা “একমুষ্টি” এর কম রাখা নিষিদ্ধ।
পারিভাষিক মূলনীতির আলোকে কোন কোন ফক্বীহ দাড়ি রাখা “ফরজ” বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ তা “ওয়াজিব”মত দিয়েছেন। কেউ বা “সুন্নাত” বলেছেন।
★ চতুর্থ হিজরী শতকের অন্যতম মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ আবু আওয়ানা ইয়াকুব ইবনে ইসহক বলেন “গোঁফ কর্তন করা এবং তা ছোট করা ওয়াজিব ও দাড়ি বড় করা ওয়াজিব”। { মুসনাদে আবী আওয়ানা-১/১৬১}
★ পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ ইবনে হাযম যাহিরী আলী ইবনে আহমাদ বলেন “দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ও গোঁফ কর্তন করা ফরজ”। {আল মুহাল্লা-২/২২০}
★ ষষ্ঠ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও মালিকী ফক্বীহ কাযী ইয়াজ বলেন যে, “দাড়ি মুন্ডন করা, কাটা বা পুড়ানো মাকরূহ। তবে দাড়ির দৈর্ঘ ও প্রস্থ থেকে কিছু কাটা ভাল। দাড়ি কাটা বা ছাটা যেমন মাকরূহ, তেমনি প্রসিদ্ধির জন্য তা বেশি বড় করাও মাকরূহ”। {ফাতহুল বারী-১০/৩৫০, নাইলুল আওতার-১/১৩৬}
★ একাদশ হিজরীতে প্রসিদ্ধ হাম্বলী ফক্বীহ মানসূর বুহুতী রহঃ বলেন যে, “দাড়ি মুন্ডন করা হারাম, এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা মাকরূহ নয়। {কাশশাফুল কিনা-১/৭৫}
★ একাদশ শতকে প্রসিদ্ধ হানাফী ফক্বীহ আলাউদ্দীন হাসকাফী রহ^ তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আদ দুররুল মুখতার” এ লিখেন যে, “দাড়ি লম্বা করার সুন্নাত সম্মত পরিমাণ এক মুষ্টি। নিহায়া গ্রন্থে এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা ওয়াজিব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এক মুষ্টির কম পরিমাণ দাড়ি ছাটা কেউই বৈধ বলেন নি। মরক্কো অঞ্চলের কিছু মানুষ ও মেয়েদের অনুকরণপ্রিয় কিছু হিজড়া পুরুষ এরূপ সমর্বসম্মতভাবে নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হয়। {রদ্দুল মুহতার-২/৪১৭-৪৮১}
আকৃতি বিকৃতির ফতোয়া :
★ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ তাআলার ভর্ৎসনা ঐ সব পুরুষদের উপর যারা মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং ঐ সব মহিলাদের উপর আল্লাহ তাআলার ভর্ৎসনা যারা পুরুষদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৪৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৭৫০}
★ আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ আল আনসারী বর্ণিত, ” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন-নুহবা এবং আল-মুথলা নিষেধ করেছেন।” (বুখারী, ৭ম খণ্ড, ৪২৫)
★ সুমরাহ এবং ওমরান বিন হুসেইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, “প্রত্যেক খুতবায় নবীজী আমাদেরকে দান করতে ও আল-মুথলা (আকার বিকৃতি) থেকে বেঁচে থাকার কথা না বলে শেষ করতেন না।” [হাদিসটি হাসান]
★ ইবন আস শাকির হতে বর্ণিত, ওমর বিন আব্দুল আযিয (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “দাড়ি কামানো হল মুথলা এবং নবীর নিষেধ করা কাজের একটি হল মুথলা”।
★ ইমাম ইবন হাজম রাহিমাহুল্লাহ , তাঁর বই ‘মারাতিব আল-ইজমা’ (ঐক্যমতের স্তর) এ উল্লেখ করেন,” তাঁরা (আলেমগণ) একমত হয়েছেন যে, দাড়ি কামানো হল মুথলা এবং এটা অননুমোদিত।”
★ ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর উক্তি উল্লেখ করেন- দাড়ি মুণ্ডানোর মতো দাড়ি কাটাও হারাম (বজলুল মজহুদ ১/৩৩)।
★ শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) লেখেন- দাড়ি মুণ্ডানো হারাম। এটি পশ্চিমা ও অমুসলিম মুশরিকদের রীতি। এক মুষ্টি পর্যন্ত দাড়ি রাখা ওয়াজিব। (আশইয়াতুল লুম'আত ১/২১২)।
★ হজরত আশরাফ আলী থানভী বাওয়াদেরুন নাওয়াদেরে লেখেন- 'দাড়ি মুণ্ডানো ও কাটা হারাম। এর ওপরে উম্মতের ঐকমত্য রয়েছে (২/৪৪৩)।
★ এক মুষ্টির আগে দাড়ি কাটা উম্মতের কেউ অনুমতি দেননি (তানকিহুল ফাতাওয়া আল হামেদিয়া ১/৩৫১)।
★ বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফয়জুল বারিতে উল্লেখ আছে- এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা সব ইমামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হারাম (৪/৩৮০)।
দাড়ির ভিতর নাকি শয়তান বাস করে। কেন?
তাদের যুক্তি হল কাফির ইয়াজিদও দাড়ি রেখে নামাজ পড়ত।
জবাব : তাদের এই যুক্তি হল মাথা ব্যাথা করলে মাথা কেটে ফেলে দিন।
ইয়াজিদ দাড়ি রেখে ইমাম হোসাইন (রা) কে শহীদ করেছে ইবনে যিয়াদের মাধ্যমে তাই বলে দাড়ির কি সম্পর্ক? ইয়াজিদ নামাজও পড়েছে রোজাও রেখেছে কালিমাও পড়েছে তাই বলে কি এখন তাদের যুক্তিমত নামাজ, রোজা, কালেমা সব হারাম হয়ে গেছে? আস্তাগফিরুল্লাহ ।
★★★ তাদের আরো অপবাদ দাড়ি রাসুলুল্লাহ (সা) রাখেন নি :
জবাব : এই জবাব নিচে অসংখ্য হাদিস দিয়ে দিয়েছি।
★★★ দাড়ি সম্পর্কিত হাদিস ইমাম বুখারী (রহ) এর মনগড়া নাকি :-
জবাব : আরে তোরা তো সহিহ সিত্তাকেও মানিস না, সাহাবায়ে কেরাম (রা) গনকেও মানিস না।
ইসলামের প্রধান ৪ খলিফার মধ্যে আলী (রা) কে ছাড়া আবু বকর (রা), উমর (রা), উসমান (রা) ওনাদেরকে কাফির মুনাফিক বলেও অপবাদ দিস তোরা (আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ) তোদের মধ্যে কোন দ্বীন আছে নাকি তোরা নিজে রাই কাফির, মুনাফিক। তাদের সব বাদ দিলে ইসলামের অর্ধেক দলিল শেষ বাকি রইল আল-কোরআন। আল-কোরআনে বলা আছে রাসুলের আনুগত্য করতে।
আর রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন সাহাবাগনের অনুসরন করতে আনুগত্য করতে শুধু আহলে বাইয়াত (আ) কে মানলেই রাসুলকে আর আল-কোরআনকে মানার শর্ত পুর্ন হবে না। রাসুল (সা) এর আদেশ নিষেধ সব আল্লাহর হুকুম হয়ে গেছে আল-কোরআনের আয়াত দ্বারা।
দাড়ি রাখা রাসুলুল্লাহ (সা) ও সাহাবীগনের সুন্নত। আল্লাহ আল-কোরআনে রাসুলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য করতে বলেছেন মানে রাসুল যা করে আমাদেরও তাই মান্য করা :
আসুন দেখি তাহলে তাদের জবাবে সুন্নাহ সম্পর্কে কিছু শরিয়তী হুকুম :
★ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন,
ولكن ربي أمرني بإعفاء لحيتي وقص شاربي
আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন, দাড়ি লম্বা রাখার ও মোচ খাটো করার।
-আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৪৫৯-৪৬০
★ আল্লাহর রাসূল বলেছেন-
من تمسك بسنتي عند فساد أمتي فله أجر شهيد
আমার উম্মতের ফাসাদ (আদর্শত্যাগের) সময় যে আমার সুন্নাহ (আদর্শ) কে ধারণ করবে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। (আল-হাদিস)
★ হুজুর স. বলেছেন,
যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহাব্বত করল সে যেন আমাকেই মুহাব্বত করল। আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে বসবাস করবে। (তিরমিযী শরীফ, মেশকাত- পৃ: ৩০)
★ যে আমার সুন্নাহ’র বিরাগভাজন হয়, তার আমার সাথে কোন লেনদেন নেই।” (বুখারী, ৪৬৭৫)
এ হিসেবে রাসুলের সুন্নাহ মান্য করতে হবে সেটা যেমন রাসুল (সা) এর হুকুম সেটা আল্লাহরও হুকুম :
★ “তোমাদের মধ্যে যদি কেউ আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা জ্বিন ২৩)
★ “রাসূল তোমাদের যা কিছু দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং সে যা কিছু নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা।” (হাশর ৭)
★ বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। [সুরা ইমরান: ৩১]
★ বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না। [সুরা ইমরান: ৩২]
★ আল্লাহ এবং তার রসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পরে বিবাদ করো না। তাহলে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতার সৃষ্টি হবে এবং তোমাদের অবস্থার অবনতি ঘটবে। (সূরা-আনফাল-৪৫-৪৬)
★ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না।
আর তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা বলে যে, আমরা শুনেছি, অথচ তারা শোনেনা।
[আল কুরআন (৮); ২০,২১]
★ "যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত হবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (সুরা নিসা - ১৩)
★ যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানি করবে এবং নির্ধারিত সীমালংঘন করবে,আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করাবেন,সে তাতে চিরকাল থাকবে।(সূরা আন-নিসা-১৪)
★ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ্ আনূগত্য করো এবং রাসূলের আনূগত্য করো এবং তোমদের মধ্যে যারা বিচারক। (নির্দেশ দাতা) যদি তোমরা কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহনে বিবাদে লিপ্ত হও - তাহলে উক্ত বিষয়টির ফায়সালা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের কাছে ন্যাস্ত করো। (সূরা নিসা - ৫৯)
★ যে রাসূলের আনূগত্য করে, সে মূলত আল্লাহর আনূগত্য করলো (সূরা নিসা - ৮০)।
★ যারা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী তদুপরি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কিছু বিশ্বাস করি কিন্তু কিছু প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায় । প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যাকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক আযাব।
[সুরা নিসা: ১৫০-১৫১]
★ "যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়, নিঃসন্দেহে (তাদের জন্য) আল্লাহ শাস্তি অতি কঠোর। ( সূরা আনফাল - ১৩)
★ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে রাজী রাখাই অত্যাবশ্যক - যদি তারা মোমেন হয়ে থাকে। (সুরা তওবা - ৬২)।
★ তারা কি একথা অবগত নয় যে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শক্রুতা করেছে- তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। (সূরা তওবা - ৬৩)
★ কোন বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নির্দেশ দেয়ার পর ঐ বিষয়ে কোন ঈমানদার পুরুষ এবং কোন ঈমানদার নারীর ভিন্নমত পোষন করার অধিকার নেই। (সূরা আহযাব - ৩৬)।
★ আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে - তারা স্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে পতিত হয়ে গিয়েছে। ( সুরা আহযাব - ৩৬)।
★ যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও পরকালের লা'নত করবেন বা অভিশপ্ত করবেন। (সুরা আহযাব - ৫৭)।
★ যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের বিরুদ্ধাচরন করেছে - তারা অপদস্ত হয়েছে। (সূরা - মুজাদালাহ্ - ৫)।
★ হে প্রিয় রাসূল, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী - এমন কাউকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের বিরুদ্ধাচারণকারীর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনকারী রুপে পাবেন-না। (সূরা মুজাদালাহ্ - ২২)।
আনুগত্য সম্পর্কে আরো দেখুন :-
★ আলে ইমরানের ১৩২নং আয়াত
★ সূরা মায়িদাহর ৯২নং আয়াত
★ সূরা আনফালের ১নং, ২০নং
★ সুরা রা নূরের ৫৪নং ও ৫৬নং আয়াত আরো অনেক আয়াতে।
এখান থেকে স্পষ্ট যে রাসূল (সা) এর আনুগত্য করাটাও আল্লাহ্র আনুগত্যে করার মতই জরুরি। আর দাড়ি রাখার ব্যাপারে হুকুম এসেছে সহীহ হাদীসে।
এখন আসি মুল আলোচনায় রাসুল (সা) দাড়ি রেখেছেন কিনা? এটা বিশ্বাস করা শরীয়তে ওয়াজিব :-
১. হজরত ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) মোচ খাটো এবং দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিতেন। (সহীহুল বুখারীঃ হাঃ নং ৫৮৯৩ , সহীহ মুসলিমঃ হাঃ নং ৬০০)
২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাড়ি লম্বা করো, মোচ খাটো করো।
(সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৬০২ , সহীহুল বুখারী হাঃ নং ৫৮৯২ )
৩. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা মোচ খাটো করো এবং দাড়ি নিচের দিকে ঝুলাও, অগ্নিপূজারীদের বিরোধিতা করো (সহিহ মুসলিম ১/২২২, ২৬০)।
৪. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা মোচ খাটো এবং দাড়ি লম্বা করো (সহিহ বুখারি ২/৮৭৫)।
৫. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা দাড়ি লম্বা করো, মোচ খাটো করো এবং তোমাদের চুলের সাদা রং পরিবর্তন করো। ইহুদি ও নাসারাদের সাদৃশ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকো (কানজুল উম্মাল ৬/৬৫৩)।
৬. হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ১০টি জিনিস ফিতরাত বা প্রকৃতির অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ ছোট করা, দাড়ি বড় করা, মিছওয়াক করা, নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে ফেলা, নখ ছোট করা, আঙুলের গিরা ও জোড়া ধৌত করা, বগলের চুল উপড়ানো, নাভির নিচের চুল কামানো, পেশাব-পায়খানার পর পানি ব্যবহার করা। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ১০ নম্বরটি ভুলে গেছি, তবে মনে হয় তা হবে কুলি করা (সহিহ মুসলিম ১/২২৩)।
৭. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- অগ্নিপূজকরা মোচ লম্বা করে, দাড়ি নিশ্চিহ্ন করে। তাই তোমরা তাদের বিরোধিতা করো, মোচ খাটো ও দাড়ি লম্বা করো (আত তারিখুল কাবির ১/১৪০)।
৮. হজরত হাসান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ১০টি স্বভাব এমন ছিল, যেগুলো অবলম্বন করে কওমে লুত ধ্বংস হয়ে গেছে। তার মধ্যে একটি দাড়ি কর্তন করা ও গোঁফ লম্বা করা (দুররে মনসুর ৫/৬৪৪)।
৯. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উৎবা (রা.) সূত্রে বর্ণিত- জনৈক অগ্নিপূজক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এ অবস্থায় এলো যে, তখন সে তার দাড়ি কামিয়ে ফেলেছে এবং মোচ লম্বা করে রেখেছে। এ অবস্থায় নবী (সা.) বললেন, তুমি এটা কী করেছ? সে উত্তর দিল, এটা আমাদের ধর্মে আছে। তখন নবী করিম (সা.) ইরশাদ করলেন, আমাদের ধর্মে আছে মোচ কর্তন করা এবং দাড়ি লম্বা করা (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৮/৩৭৯)।
১০. আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- আল্লাহ তায়ালার কিছু ফেরেশতা আছেন, যাঁদের তাসবিহ হলো এই পবিত্র ওই সত্তা, যিনি পুরুষদের দাড়ি দিয়ে সজ্জিত করেছেন আর নারীদের করেছেন সুন্দর চুলের বেণি ও খোঁপা দিয়ে (কাশফুল খিফা ১/৫৩৮, তাকমিলায়ে বাহরুর রায়েক ৮/৩৩১)।
১১. হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন অজু করতেন, তখন এক তালু পানি নিয়ে গলার নিচে রাখতেন এবং তা দিয়ে তাঁর দাড়ি মোবারক খিলাল করতেন। আর বলতেন এভাবে আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন (আবু দাউদ, মেশকাত ১/৪৬)।
১২. হজরত আবু মা'মার (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হজরত খাব্বাব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) কি জোহর এবং আসরের নামাজে কিরাত পাঠ করতেন? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। আমরা বললাম, আপনারা কিভাবে বুঝতেন? তিনি বলেন, তাঁর দাড়ি নড়াচড়া করার দ্বারা। (সহিহ বুখারি ১/৭৬০)।
১৩. জায়দ বিন আসলাম ,আতা ইবন ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে উপস্থিত ছিলেন, এমন সময় একজন লোক এসে হাজির হল যার মাথা এবং দাড়ি উভয়েই কামানো ছিল। আল্লাহর রাসূল (সা) হাত দিয়ে ইশারা করে তাকে চলে যেতে বললেন এবং ইংগিত করলেন যেন সে চুল এবং দাড়ি গজায়। লোকটি কিছুদিন পর তাই করল এবং আবার এসে হাজির হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যদি নোংরা মাথা নিয়ে হাজির হও তার চেয়ে কি এই অবস্থা উত্তম নয়; যেন সে একটি শয়তান (কামানো দাড়ি ও মাথার প্রতি ইংগিত করে) ?” (মালিক, বুক ৫১, হাদীস ৫১।২।৭)
রাসূল সাঃ এর দাড়ি লম্বা ছিল। সাহাবাগণের দাড়িও লম্বা ছিল :
১৪. হযরত আলী রাঃ রাসূল সাঃ এর বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, “তিনি অনেক বড় দাড়ির অধিকারী ছিলেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৩১১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৪৬}
১৫. হযরত জাবির বিন সামুরা রাঃ বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাড়ি ছিল বেশি বা ঘন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৩০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৭৪৫৬}
১৬. বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রাহ. বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও মোচ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা কী?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কাটব ও দাড়ি লম্বা রাখব।’
جاء رجل من المجوس إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم قد حلق اللحية وأطال شاربه فقال له النبي صلى الله عليه وسلم ما هذا؟ قال : هذا في ديننا، قال : لكن في ديننا أن نجز الشارب وأن نعفي اللحية.
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১৬-১১৭, হাদীস : ২৬০১৩
★★★ এ কয়টি হাদিসসহ আরো বহু হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, নবী (সা.)-এর দাড়ি মোবারক লম্বা ছিল।
দাড়ির পরিমাণ কতটুকু হবে?
১. হজরত আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় দাড়ির নিচ ও আশপাশ থেকে মুষ্টি পরিমাণের বাইরের অংশ কাটছাঁট করতেন। (শরহু শিরআতিল ইসলাম-২৯৮)।
২. হজরত মারওয়ান ইবনে সালেমে মুকাফা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর (রা.)-কে দেখেছি, তিনি নিজের দাড়ি মুঠ করে ধরে বাকিটুকু কেটে ফেলতেন (আবু দাউদ ২/৭৬৫)।
হজরত ইবনে উমর (রা.) হজ ও উমরার সময় নিজ দাড়ি মুঠ করে ধরে বাইরের অংশটুকু কেটে ফেলতেন (সহিহ বুখারি ৭/৮৩ হা. ৫৮৯২)।
৩. আবু জুর'আ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) স্বীয় দাড়ি মুঠ করে ধরে বাইরের অংশটুকু কেটে ফেলতেন।
** ফতহুল বারি ১০/৬৩২,
** ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯
৪ হজরত হাসান বসরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা (সাহাবিগণ ও তাবেয়ীগন) মুঠের বাইরের অংশটুকু কেটে ছোট করাকে অনুমোদন করতেন।
** মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৫/২২৬ হা. ২৫৪৭০)।
** প্রাগুক্ত ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯৫
৫. হযরত উমর (রাঃ) তো নিজেই এক ব্যক্তির দাড়ি ধরে এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজেই কেটে দিয়েছিলেন । (প্রাগুক্ত)
ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন রাসূলের (সাঃ) আদর্শের পুঙ্খনুভাবে এবং পূর্ণ অনুসারী । তাই তিনি যা করেছেন তা রাসূল (সাঃ) থেকেই জেনে-শুনে করেছেন ।
৬. ইবনে উমর (রাঃ) যখন হজ্ব অথবা উমরা করতেন,তখন তিনি দাড়ি মুঠ করে ধরে মুঠের বেশী অংশটুকু কেটে ফেলতেন। ( সহীহুল বুখারী হাঃ ৫৮৯২)
এখানে যদিও হজ্ব ও উমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে ,কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন। এ ছাড়াও :
৭. আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের (রাঃ) হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে।
(ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)
৮. নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মুষ্ঠির অতিরিক্ত দাড়ি কেটে ফেলতেন।
- প্রাগুক্ত হাদীস : ২৫৯৯৭
_____________________________
ইমামগনের বিভিন্ন ফতোয়া দাড়ি রাখা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত :-
ফক্বীহদের দৃষ্টিতে দাড়ির বিধান।
উপর্যুক্ত হাদীসগুলোর আলোকে মুসলিম উম্মাহের ফক্বীহগণ একমত যে, দাড়ি বড় করা মুসলিমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং দাড়ি মুন্ডন করা বা “একমুষ্টি” এর কম রাখা নিষিদ্ধ।
পারিভাষিক মূলনীতির আলোকে কোন কোন ফক্বীহ দাড়ি রাখা “ফরজ” বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ তা “ওয়াজিব”মত দিয়েছেন। কেউ বা “সুন্নাত” বলেছেন।
★ চতুর্থ হিজরী শতকের অন্যতম মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ আবু আওয়ানা ইয়াকুব ইবনে ইসহক বলেন “গোঁফ কর্তন করা এবং তা ছোট করা ওয়াজিব ও দাড়ি বড় করা ওয়াজিব”। { মুসনাদে আবী আওয়ানা-১/১৬১}
★ পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ ইবনে হাযম যাহিরী আলী ইবনে আহমাদ বলেন “দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ও গোঁফ কর্তন করা ফরজ”। {আল মুহাল্লা-২/২২০}
★ ষষ্ঠ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও মালিকী ফক্বীহ কাযী ইয়াজ বলেন যে, “দাড়ি মুন্ডন করা, কাটা বা পুড়ানো মাকরূহ। তবে দাড়ির দৈর্ঘ ও প্রস্থ থেকে কিছু কাটা ভাল। দাড়ি কাটা বা ছাটা যেমন মাকরূহ, তেমনি প্রসিদ্ধির জন্য তা বেশি বড় করাও মাকরূহ”। {ফাতহুল বারী-১০/৩৫০, নাইলুল আওতার-১/১৩৬}
★ একাদশ হিজরীতে প্রসিদ্ধ হাম্বলী ফক্বীহ মানসূর বুহুতী রহঃ বলেন যে, “দাড়ি মুন্ডন করা হারাম, এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা মাকরূহ নয়। {কাশশাফুল কিনা-১/৭৫}
★ একাদশ শতকে প্রসিদ্ধ হানাফী ফক্বীহ আলাউদ্দীন হাসকাফী রহ^ তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আদ দুররুল মুখতার” এ লিখেন যে, “দাড়ি লম্বা করার সুন্নাত সম্মত পরিমাণ এক মুষ্টি। নিহায়া গ্রন্থে এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা ওয়াজিব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এক মুষ্টির কম পরিমাণ দাড়ি ছাটা কেউই বৈধ বলেন নি। মরক্কো অঞ্চলের কিছু মানুষ ও মেয়েদের অনুকরণপ্রিয় কিছু হিজড়া পুরুষ এরূপ সমর্বসম্মতভাবে নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হয়। {রদ্দুল মুহতার-২/৪১৭-৪৮১}
আকৃতি বিকৃতির ফতোয়া :
★ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ তাআলার ভর্ৎসনা ঐ সব পুরুষদের উপর যারা মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং ঐ সব মহিলাদের উপর আল্লাহ তাআলার ভর্ৎসনা যারা পুরুষদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৪৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৭৫০}
★ আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ আল আনসারী বর্ণিত, ” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন-নুহবা এবং আল-মুথলা নিষেধ করেছেন।” (বুখারী, ৭ম খণ্ড, ৪২৫)
★ সুমরাহ এবং ওমরান বিন হুসেইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, “প্রত্যেক খুতবায় নবীজী আমাদেরকে দান করতে ও আল-মুথলা (আকার বিকৃতি) থেকে বেঁচে থাকার কথা না বলে শেষ করতেন না।” [হাদিসটি হাসান]
★ ইবন আস শাকির হতে বর্ণিত, ওমর বিন আব্দুল আযিয (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “দাড়ি কামানো হল মুথলা এবং নবীর নিষেধ করা কাজের একটি হল মুথলা”।
★ ইমাম ইবন হাজম রাহিমাহুল্লাহ , তাঁর বই ‘মারাতিব আল-ইজমা’ (ঐক্যমতের স্তর) এ উল্লেখ করেন,” তাঁরা (আলেমগণ) একমত হয়েছেন যে, দাড়ি কামানো হল মুথলা এবং এটা অননুমোদিত।”
★ ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর উক্তি উল্লেখ করেন- দাড়ি মুণ্ডানোর মতো দাড়ি কাটাও হারাম (বজলুল মজহুদ ১/৩৩)।
★ শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) লেখেন- দাড়ি মুণ্ডানো হারাম। এটি পশ্চিমা ও অমুসলিম মুশরিকদের রীতি। এক মুষ্টি পর্যন্ত দাড়ি রাখা ওয়াজিব। (আশইয়াতুল লুম'আত ১/২১২)।
★ হজরত আশরাফ আলী থানভী বাওয়াদেরুন নাওয়াদেরে লেখেন- 'দাড়ি মুণ্ডানো ও কাটা হারাম। এর ওপরে উম্মতের ঐকমত্য রয়েছে (২/৪৪৩)।
★ এক মুষ্টির আগে দাড়ি কাটা উম্মতের কেউ অনুমতি দেননি (তানকিহুল ফাতাওয়া আল হামেদিয়া ১/৩৫১)।
★ বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফয়জুল বারিতে উল্লেখ আছে- এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা সব ইমামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হারাম (৪/৩৮০)।