Thursday, June 11, 2015

বিদআত কি? বিদআতে হাসানা ও বিদআতে সাইয়া সম্পর্কে :


★★★ বিদআতের ব্যাপারে কত রকম হাদিস আছে?

উত্তর : ৩ রকম হাদিস :

১) এক প্রকার হাদিস যা বিদআত শব্দের উল্লেখ আছে কিন্তু তা ভাল বিদআত না মন্দ বলা নেই। শুধু রাসুলের পরে সেগুলোর আবিষ্কার হবে বলা আছে। তা ভালও হতে পারে খারাপও হতে হতে পারে।

২) স্পষ্ট ভাবে সেই সব বিদআতে নিষিদ্ধ করা করা হয়েছে, ঘৃনা, লানত, শাস্তি, অভিশাপ ইত্যাদি বর্নিত আছে, তা কুরআন ও সুন্নাহর পরিবর্তন করবে বলা আছে। বিদআতে সাইয়া

৩) স্পষ্টভাবে এক প্রকার নতুন কিছুর প্রবর্তনকে সওয়াব ও কল্যানময় বলা হয়েছে যা কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা - কিয়াস কোনটার বিপরীতে নয়। বিদআতে হাসানা।



                          বিদআত এর অর্থ ও সংগা কি ? :



NOTE : এগুলো মুলত প্রকৃত পক্ষে মন্দ বিদআতের অর্থ ও সংগা দেয়া হয়েছে অধিকাংশ কারন বিদাত কি বুঝানোর জন্য।
কারন বিদাতে হাসানাকে প্রকৃতপক্ষে আমরা বিদাত বলে সম্বোধন করি না। যেমন :
আল-কোরআন বাইন্ডিং বা কোরআন খতম, খতমে ইউনুস এগুলো বিদআত কিন্তু আমরা একে বিদাত বলিও না চিন্তায়ও আনি না, সংগারও প্রয়োজন মনে করি না কিন্তু আসলে নির্দিষ্ট করে বললে তা বিদাতে হাসানা বলা উচিত। যেমন :

★ ইমাম শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিই যে নিকৃষ্ট বা নিষিদ্ধ হবে, তার কোন যুক্তি নেই।” (আরওয়ারে কুদসিয়্যাহ্) অথচ আজকাল কিছু জাহিল লোক সকল বিদয়াতকেই (নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি) গোমরাহী বলে থাকে এবং দলীল হিসাবে তারা নিম্নোক্ত হাদীস শরীফখানা পেশ করে থাকে।

★ আর তাই শায়খ ইব্রাহীম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

“নতুন উদ্ভাবিত কোন কাজ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাবেয়ীনগণের নিকট হতে প্রমাণিত না থাকলে অথবা উক্ত কাজের প্রতি বিদয়াত শব্দ আরোপিত হলেই যে, তা মন্দ বা গোমরাহী একথা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং তা ভালও হতে পারে।” (কবীরী শরহে মুনিয়াতুল মুসল্লী পৃঃ২৫১)


বিদআতের অর্থ :

(১) “বিদয়াত হলো-দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত কোন বিষয় নতুন উদ্ভব হওয়া।” (লোগাতুল কামূস আল মহীত্ব ৩য় জিঃ পৃঃ৩, বায়ানুল লিসান, পৃঃ১১৫)

(২) “বিদয়াত হলো- নমুনা ব্যতীত সৃষ্ট জিনিস।” (মিছবাহুল লোগাত, পৃঃ ২৭)

(৩) “বিদয়াত মূলতঃ ওটাকেই বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়েছে।” (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ জিঃ পৃঃ২১৯, মিরকাত শরীফ)

(৪) “জেনে রাখ, হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পারে উদ্ভব ঘটেছে এমন প্রত্যেক কাজই বিদয়াত।” (আশয়াতুল লোমআত)

(৫) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা, নতুন প্রথা।” (আরবী ফিরোজুল লোগাত পৃঃ৫৩)

(৬) “বিদয়াত ওটাকে বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়।” (লোগাত আল মনজিদ পৃঃ৭৬)

(৭) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা।” (লোগাতে সাঈদী পৃঃ৯৬) সুতরাং বিদয়াত শব্দের লোগাতী বা আভিধানিক মূল অর্থ হলো- নতুন উৎপত্তি, নতুন উদ্ভব, নতুন সৃষ্টি। পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিলনা।

বিদয়াতের সংগা  :

(১) বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব, যার নমুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।” (ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ৩৫৬)

(২) আল্লামা ইসমাইল নাবিহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, (শায়খুল ইসলাম) ইজদুদ্দীন ইবনে সালাম বলেন, “বিদয়াত এমন একটি কাজ, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় সম্পন্ন হয়নি।” (জাওয়াহিরুল বিহার পৃঃ২৮০)

(৩) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “শরীয়ত মুতাবেক বিদয়াত হচ্ছে- এমনসব নব আবিস্কৃত জিনিসের নাম, যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।” (শরহে মুসলিম লিন নববী)

(৪) হাফেজ ইবনে রজব রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “বিদয়াত ঐ বিষয়কেই বলা হয়, যার ভিত্তি শরীয়তে নেই। সুতরাং শরীয়তে যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে, শরীয়ত মুতাবেক তা বিদয়াত নয়, যদিও আভিধানিক অর্থে বিদয়াত বলা হয়।” (জামিউল উলূম ওয়াল হাকাম পৃঃ১৯৩, ইরশাদুল উনূদ পৃঃ১৬১)

(৫) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ হচ্ছে এমন একটি নতুন কর্ম, যা হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলনা।” (তাহযীবুল আসমা ওয়াল লোগাত) শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদয়াত শব্দের মূল অর্থ হলো- ঐ নতুন উদ্ভব বিষয়, যার ভিত্তি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, বিদয়াত হলো- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত প্রত্যেক নতুন বিষয়। এখন তা ‘খায়রুল কুরুনে’ও হতে পারে অথবা তার পরেও হতে পারে।


সংগা ১ : বিদআত হল এমন নতুন বিষয়াদির আবিষ্কার যা রাসুলুল্লাহ (সা) এর যুগে ছিল না, পরে আবির্ভুত বা আবিষ্কৃত হয়েছে। তা ভাল ও হতে পারে খারাপও হতে পারে।


এ সম্পর্কে :

★‘মিরকাত’ الاعتصام অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে।

وَفِى الشَّرْعِ اِحْدَاثُ مَالَمْ يَكُنْ فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ

বিদআত হচ্ছে শরীয়তে ওই ধরনের কাজের সূচনা করা, যা হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের যুগে ছিল না।

★ আশআতুল লুমআতে বর্ণিত আছে-

“যে কাজ হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের পরে সূচিত হয়েছে, তা বিদআত”

NOTE: এই বিদআত ভালও হতে পারে খারাপও হতে পারে। কেন ভাল হতে পারে? কারন নিচের কাজগুলোও স্পষ্ট বিদআত যা রাসুলের যুগের পরে এসেছে কিন্তু ভাল বিদআত।


যেমন :
ভাল কিছু বিদআতের প্রচলন হল :
★ ইটের তইরি মসজিদ → সুন্নতী মসজিদ হল মাটির তইরি
★ মাদ্রাসা → রাসুলের যুগে ছিল না
★ জুমুয়ার ২ আজান → হযরত উসমান (রা) এর খেলাফত কালে চাল হয় (বুখারী)
★ কুরআন শরীফ একত্রিত করন → হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর নির্দেশে। (বুখারী)
★ তারাবিহ নামাজ জামায়াতে আদায়→ হযরত উমর (রা) এর খিলাফত কালে চালু হয় (বুখারী)
★ রমজানে ৩ দিনে তারাবিহ নামাজের মধ্যে কুরআন খতম → ইমাম বুখারী তার সংগীদের নিয়ে জামায়াতে ৩ দিতে এক খতম দিতেন তারাবির নামাজে।

Note: নিচে এগুলো রেফারেন্স সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল।


সংগা ২ : বিদআত হল এমন কিছু যা কুরআন এবং সুন্নাহর পরিবর্তন কারী।

★ অনুরুপ হযরত আয়েশা (রা) থেকেও সহীহ বুখারীতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা) বলেন, "কেউ যদি নতুন কিছু (বিদাত) সংযোজন করে এবং তা ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয় তা প্রত্যাখ্যাত।" [বুখারী ৩য় খণ্ড, বুক ৪৯, হাদিস নং ৮৬১]


★ মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ের প্রথম হাদীসে আছে।

مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هذَا مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَد

যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত।


এটা সব সময়ই খারাপ। এমন বিদআত সম্পর্কে যত হাদিস এসেছে অভিশাপ ও লানতের ব্যাপারে বা শাস্তির ব্যাপারে সেগুলো মন্দ বিদআতকে বুঝানো হয়েছে।
খারাপ বিদআত হল এক কথায় আকিদাগত বিদআত।


★★★ হাদিস থেকে ২ প্রকার বিদআতের সংগার উদ্ভাবন :



★ মিশকাত শরীফের العلم অধ্যায়ে বর্ণিত আছে।

যে কেউ ইসলামের মধ্যে ভাল রীতি প্রচলন করেন, তিনি এর জন্য ছাওয়াব পাবেন; যারা এর উপর আমল করবেন, এর জন্যও ছাওয়াব পাবেন, তবে তাঁদের ছাওয়াবের মধ্যে কোন কমতি হবে না; এবং যারা ইসলামে মন্দরীতি প্রচলন করে, এর জন্য তাদের পাপ হবে এবং যারা এর উপর আমল করবে, তার জন্যও পাপের ভাগী হবে, তবে ওদের পাপের বেলায় কোন কমতি হবে না।

উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা বিদআতের সংগা :



 ★ ফাতওয়ায়ে শামীর ভুমিকায় ইমাম আবু হানীফা (রহ:) এর ফযীলত বর্ণনা প্রসংগে উল্লেখিত আছে।

উলামায়ে কিরাম বলেন- এসব হাদীস সমূহ ইসলামের কানুন হিসেবে প্রযোজ্য- যে কেউ ইসলামে কোন মন্দ কাজের সূচনা করলে সে এর উপর সমস্ত আমলকারীদের গুনাহের ভাগী হবে; আর যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের প্রচলন করেন, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত আমলকারীদের ছওয়াবের ভাগী হবেন। এর থেকেও প্রমাণিত হলো ভাল বিদআতে ছওয়াব আছে ও মন্দ বিদআতে গুনাহ হয়।


★ আশআতুল লুমআত গ্রন্থের প্রথম খন্ডে الاعتصام হাদীছটি وكل بدعة ضلالة প্রসংগে উল্লেখিত আছে।

যে বিদআত ধর্মের মূলনীতি, নিয়ম কানুন ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এর সাথে কিয়াস করা হয়েছে, একে বিদআতে হাসানা বলা হয়। আর যা বিপরীত, সেটাকে বিদআতে গুমরাহী বলা হয়।




                        বিদআতের বিস্তারিত শ্রেনী বিভাগ :-



কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিদাতের প্রকার ভেদ আলোচনা করা হল। সুতরাং ইহা ১ প্রকার বলা মানে পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়।

★ ইমাম, মুজতাহিদগণ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিদয়াতকে প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন-

১। বিদয়াতে ই’তেক্বাদী, অর্থাৎ আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদয়াত।

২। বিদয়াতে আ’মালী, অর্থাৎ কর্মগত বিদয়াত।

(১) বিদয়াতে ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত বিদয়াত হলো – যে সমস্ত আক্বীদা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মূলনীতির বহির্ভূত, মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদয়াতের সবটাই হারামের পর্যায়ভূক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

যেমন- খারেজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরকার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরকার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।

(২) বিদয়াতে আ’মালী বা কর্মগত বিদয়াতঃ

বিদয়াতে আ’মালী প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত-

(ক) বিদয়াতে হাসানা,
(খ) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।


(ক) বিদয়াতে হাসানা আবার তিন প্রকার-

(১) বিদয়াতে ওয়াজিব,
(২) বিদয়াতে মোস্তাহাব ও
(৩) বিদয়াতে মোবাহ্।

★ আর এ বিদয়াতে হাসানাহ্ সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে সাওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার সাওয়াবও সে পাবে।” (মুসলিম শরীফ)




(খ) আর বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ দু’প্রকার-

(১) বিদয়াতে হারাম,
(২) বিদয়াতে মাকরূহ্।

এই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

★ “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (মিশকাত শরীফ)

★ আরো ইরশাদ হয়েছে,

 كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.

 অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদয়াতই গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহ লোকই জাহান্নামে যাবে।” উল্লেখিত হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বিদয়াত ফিদদ্বীন বলা হয়।



★ আবার কেউ কেউ বলেন : বিদ‘আত দু প্রকার :

১)  বিদ‘আতে ফিদ্দীন (البدعةفيالدين)  (মন্দ)
২)  অন্যটা হল বিদ‘আত লিদ্দীন (البدعةللدين)  (ভাল)


★ মহান আল্লাহ বলেন,

مَّن يَشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُن لَّهُ نَصِيبٌ مِّنْهَا ۖ وَمَن يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُن لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيتًا

অর্থঃ যে ব্যক্তি কল্যাণ ও সৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে এবং যে ব্যক্তি অকল্যাণ ও অসৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে৷ আর আল্লাহ সব জিনিসের প্রতি নজর রাখেন৷"
[সূরা নিসা ৮৫]


★ রাসুল (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মে কোনো সুন্নাতুন্ হাসানা তথা উত্তম প্রথা/রীতি প্রবর্তন করেন, তিনি এর সওয়াব পান এবং যারা তার পরে ওতে আমল করবে, তাদের সওয়াবও তিনি পেতে থাকেন; আর তাদের (পরবর্তী আমলকারীদের) সওয়াবেরও এতে ন্যূনতম কমতি হয় না। অনুরূপ ভাবে কেউ যদি ধর্মে খারাপ কিছু সংযোজন করে আর কেউ তা অনুসরণ করে, সে ওই মন্দের জন্য দায়ী থাকবে।” [সাহীহ মুসলিম : ৬৪৬৬]

Note: এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বিদাত ২ প্রকার।

★ ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,

ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺤﺚ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺑﺘﺪﺍﺀ ﺑﺎﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﻭﺳﻦ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﺤﺴﻨﺎﺕ ﻭﺍﻟﺘﺤﺬﻳﺮ ﻣﻦ ﺍﺧﺘﺮﺍﻉ ﺍﻻ ﺑﺎﻃﻴﻞ ﺍﻟﻤﺴﺘﻘﺒﺤﺎﺕ -

অর্থাৎ, উপরোল্লিখিত হাদীস শরীফে ভাল কাজের সূচনা এবং উত্তম রীতি-রেওয়াজ চালু করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং ভ্রান্ত ও অনিষ্ট রীতি-রেওয়াজ চালু করার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

Reference : শরহে নববী আলা মুসলিম,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২৭।

★ ইমাম নববী উল্লিখিত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন,

ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺗﺨﺼﻴﺺ ﻗﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ( ﻛﻞ ﻣﺤﺪﺛﺔ ﺑﺪﻋﺔ ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ) ﻭﺍﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﻪ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﺎﺕ ﺍﻟﺒﺎﻃﻠﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﺬﻣﻮﻣﺔ –

অর্থাৎ, উপরোল্লিখিত হাদীস -এ হুজুর সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর ফরমানে মুবারক

ﻛﻞ ﻣﺤﺪﺛﺔ ﺑﺪﻋﺔ ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ

(প্রত্যেক নতুন বস্তুই বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত গোমরাহী) এর ব্যাখ্যা হল যে, অত্র হাদীসের মধ্যে বিদ’আত থেকে উদ্দেশ্য নব্য ভ্রান্ত বিষয়াদি এবং মন্দ বিদ’আত।

Reference : শরহে নববী আলা মুসলিম,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২৭।

★ হযরত আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামী মক্কী শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত-৯৭৩ হিজরী) বর্ণনা করেন,

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﺰﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ - ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻓﻌﻞ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻌﻬﺪ ﻓﻰ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭﺗﻨﻘﺴﻢ ﺍﻟﻰ ﺧﻤﺴﺔ ﺍﺣﻜﺎﻡ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻮﺟﻮﺏ ﻭﺍﻟﻨﺪﺏ ﺍﻟﺦ ﻭﻃﺮﻳﻖ ﻣﻌﺮﻓﺔ ﺫﻟﻚ – ﺍﻥ ﺗﻌﺮﺽ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﺍﻋﺪ ﺍﻟﺸﺮﻉ- ﻓﺎﻯ ﺣﻜﻢ ﺩﺧﻠﺖ ﻓﻴﻪ، ﻓﻬﻰ ﻣﻨﻪ – ﻓﻤﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻮﺍﺟﺒﺔ ﺗﻌﻠﻢ ﺍﻟﻨﺤﻮ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﻔﻬﻢ ﺑﻪ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﻣﺬﻫﺐ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻘﺪﺭﻳﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﻨﺪﻭﺑﺔ ﺍﺣﺪﺍﺙ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻤﺪﺍﺭﺱ ﻭﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻟﺼﻠﻮﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﺒﺎﺣﺔ ﺍﻟﻤﺼﺎﻓﺤﺔ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﻜﺮﻭﻫﺔ ﺯﺧﺮﻓﺔ ﺍﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﺍﻟﻤﺼﺎﺣﻒ ﺍﻯ ﺑﻐﻴﺮ ﺍﻟﺬﻫﺐ ﻭﺍﻻ ﻓﻬﻰ ﻣﺤﺮﻣﺔ- ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ – ﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ﻭﻛﻞ ﺿﻼﻟﺔ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ- ﻭﻫﻮ ﻣﺤﻤﻮﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﻻ ﻏﻴﺮ -

অর্থাৎ, হযরত আল্লামা ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইরশাদ করেন, বিদ’আত এমন একটি কাজ যার প্রচলন হুজুর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর যুগে ছিল না।এবং এটা (বিদ’আত) কে পাঁচটি বিধানে বিভক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ওয়াজিব-মুস্তাহাব এবং অন্যান্য। এটা জানার উপায় এই যে, বিদ’আত (নতুন উদ্ভাবন) কে ইসলামী শরীয়তের মূলনীতিতে পেশ করা হবে। ফলে ঐ বিদ’আত (নতুন উদ্ভাবন) যেই বিধানে পড়বে তবে তা উহার অন্তর্ভুক্ত হবে।

১। ওয়াজিব বিদ’আতঃ এর মধ্যে (অন্যতম) রয়েছে ইলমে নাহু শিক্ষা করা। যার মাধ্যমে কুরআন মাজীদ ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর হাদীস শরীফকে বুঝা যায়।

২। হারাম বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে ক্বদরিয়্যাহ এবং অন্যান্য সম্প্রদায় (বাতিল ফির্কা) সমূহ।

৩। মুস্তাহাব বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে মাদ্রাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা এবং তারাবীহ নামাজের জন্য একত্রিত হওয়া।

৪। মুবাহ (বৈধ) বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে নামাজের পর মুসাফাহা (করমর্দন) করা।

৫। মাকরুহ বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে মসজিদ এবং পবিত্র কুরআন মাজিদের সৌন্দর্যকরণ। অর্থাৎ স্বর্ণ ব্যতিরেকে অন্যান্য বস্তু দ্বারা (মসজিদ এবং কুরআন মাজিদের) সৌন্দর্যকরণ। (অন্যদিকে) স্বর্ণ দ্বারা এহেন সৌন্দর্যকরণ করাও হারাম (এগুলো হল বিদ’আতের পাঁচটি প্রকার।) আর হাদীস শরীফের মধ্যে রয়েছে যে,প্রত্যেক বিদ’আত হল গোমরাহী (ভ্রষ্টতা) এবং প্রত্যেক গোমরাহী-ই জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম। তাহলে এই হাদীস শুধুমাত্র হারাম বিদ’আতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (অর্থাৎ এই হাদীস শরীফে শুধুমাত্র হারাম বিদ’আতের কথা উল্লেখ হয়েছে, নতুবা অসংখ্য নব্য সৃষ্টি দ্বীনের জন্য আবশ্যকীয়।)

Reference : ফতোয়ায়ে হাদীসিয়্যাহ,পৃষ্ঠা-১০৯,দারুল ফিকার, বৈরুত,লেবানন।



★ হাদিসে বর্নিত আছে,

````যে ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতি প্রচলন করল সে উহার সওয়াব পাবে এবং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না।

```` আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে উহার পাপ বহন করবে, এবং যারা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে, তাতে তাদের পাপের কোন কমতি হবে না”। (মুসলিম)

NOTE : প্রবর্তন বা প্রচলন মানে নতুন কিছুর আবিষ্কার।


★ ‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’।
[সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]


★ হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাকী (রহ) সহিহ ইসনদসহ "মানাকিব আল-ইমাম শাফেঈ (রহ) " কিতাবে বর্ননা করেন, মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে আল-ফজল (রহ) আমাদের নিকট বর্ননা করেছেন যে,

** মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে আল-ফজল (রহ) তিনি ** আবু আল-আব্বাস আল আসসাম (রহ) থেকে তিনি ** রাবী ইবনে সুলায়মান (রহ) থেকে তিনি ** ইমাম শাফেঈ (রহ) থেকে বর্ননা করেছেন যে ইমাম শাফেঈ (রহ) তাকে (সুলায়মানকে) জানিয়েছেন :

নব আবিষ্কৃত বিষয়সমুহের মধ্যে থেকে ২ ধরনের বিষয় প্রমানিত হয় :

১) নতুন আবিষ্কৃত বিষয় গুলোর মধ্যে ১টা হল যা কুরআন অথবা সুন্নাহ অথবা কোন (শরীয়তের) বর্ননা অথবা (উম্মতের বা ইমামগনের সর্বজনীন) ঐক্যমতের বিরোদ্ধে আবির্ভাব হবে সেগুলো হবে পথভ্রষ্টতা (আল-বিদাতু আল- দ্বালালাতু)

২) দ্বিতীয়ত এমন কিছু ভাল জিনিস নতুন আবিষ্কৃত বা আবির্ভুত হবে যেগুলোর কোনটাই কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা-কিয়াসের বহির্ভুত হবে না।
তখন সেটা হবে এমন বিদআত যা নিন্দনীয় হবে না (বরং তা উত্তম হবে) (ঘায়রু মাযমুমাতিন)।

Reference :
** ইমাম বায়হাকী (রহ) : মানাকিবমানাকিব আল-ইমাম শাফেঈ (রহ)
** মোল্লা আলী কারী (রহ) : মেরকাত শরহে মেশকাত, ১ম জিঃ পৃঃ১৮৯

English Translation :


Al-Hafidh al-Imam al-Bayhaqi (Alayhir Rahmah) narrates through a sahih isnad (authentic chain of transmission) in Manaqib al-Imam al-Shafi'i, that Muhammad ibn Musa ibn al-Fadl narrated to us that Abu al-'Abbas al-Assam narrated to him that Rabi' ibn Sulayman narrated to him that al-Imam ash-Shafi'i informed him:

"The newly-invented matters from the affairs are of two kinds: One of them is whatever is innovated contravening the Book, or the Sunnah, or a narration, or a consensus, then this is an innovation of misguidance (al-bid'atu al-dalalatu). The second is whatever is innovated of the good which does not contravene any of these, then this is an innovation which is not blameworthy (Ghayru Mazmumatin)."




★ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী কিতাবে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে :-

ﺛﻢ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻋﻠﻲ ﻧﻮﻋﻴﻦ _ ﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﺤﺴﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﺣﺴﻨﺔ ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﻘﺒﺢ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﻣﺴﺘﻘﺒﺤﺔ

অতঃপর বিদআত ২ প্রকার। বিদআতটি যদি শরীয়ত সম্মত ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তা বিদআতে হাসানাহ বা ভাল বিদআত । আর যদি তা শরীয়তের দৃৃষ্টিতে খারাপ ও জঘন্য কাজ হয় তবে তা বিদআতে মুস্তাকবিহা বা জঘন্য বিদআত। (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী)



                         ১) বিদআতে সাইয়া সম্পর্কে :



এই মন্দ বিদাত সম্পর্কিত কিছু হাদিস জেনে নিন :


★ সাহাল বিন সাদ (রা.) বলেনে,”আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে,(যখন আমি হাউজে কাউসারের পানি পান করাব তখন) “অবশ্যই আমার কাছে এমন কিছু লোক আসবে যাদের আমি চিনি, এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অত:পর তাদের ও আমার মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। তখন আমি (ফেরেস্তাদের) বলব-এরাতো আমার উম্মত!” তখন আমাকে বলা হবে-আপনি জানেন না যে, তারা আপনার পর `````কি সব নতুন নতুন কাজের আবিস্কার করেছে। অত:পর আমি বলল-”যারা আমার পর আমার দ্বীনের পরিবর্তন সাধন করেছে````, তারা দূর হোক, তারা দূর হোক।”-[বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৬৬৪৩]

NOTE: আগেই আলোচনা করেছি আয়েশা (রা) এর হাদিসহাদিস : বিদাত হল এমন জিনিস যা কুরআন ও সুন্নাহ এর পরিবর্তনকারী। সুতরাং এই হাদিসে নিষ:ন্দেহে বিদাতে সাইয়ার দিকে ইংগিত করা হয়েছে।

★ * রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,”যে ব্যক্তি কোন বিদআতিকে সাহায্য করে, আল্লাহ্‌ তাকে লানত করেন।”-[মুসলিম]

★ “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যার প্রতি আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।”-[মুসলিম]

★ “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্‌র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।

Note : এখানে বিদাতে সাইয়ার কথা মুলত বুঝানো হয়েছে।

★ যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,


“তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা”।



                             হাদিসের ব্যাখ্যা :


অথচ তার ব্যাখ্যা সম্পর্কে তারা নেহায়েতই অজ্ঞ।

★ এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা মেশকাত শরীফের শরাহ্ মেরকাত শরীফে উল্লেখ করা হয়,

“ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আল আজহার” নামক কিতাবে

 كل بدعة ضلالة  হাদীস শরীফের এ অংশটুকুর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে,

“সকল বিদয়াতে সাইয়্যিয়াই গোমরাহী।”


★ মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ের প্রথম হাদীসে আছে।

مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هذَا مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَد

যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত।

★★★ এ প্রসংগে ‘মিরকাত’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে।

وَالْمَعْنى اَنَّ مَنْ اَحْدَثَ فِى الْاِسْلَامِ رَايًا فَهُوَ مَرْدُوْد عَلَيْهِ اَقُوْلُ فِىْ وَصْفِ هَذَا الْاَمْرِ اِشَارَة اِلى اَنَّ اَمْرَ الْاِسْلَامِ كَمَلَ

যে কেউ ইসলামে এ ধরণের আকীদা প্রচলন করে, যা ধর্মের পরিপন্থী সে মরদুদ। আমি বলতে চাই যে هذالامر দ্বারা ওদিকে ইংগিত করা হয়েছে যে ইসলামের ব্যাপারটা পরিপূর্ণ হয়েছে।

★ মিশকাত الايمان بالقدرঅধ্যায়ে উল্লেখিত আছে হযরত ইবনে উমর (রা:) কে কেউ বললেন অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন-

بَلَغَنِىْ اَنَّهُ قَدْ اَحْدَثَ فَاِنْ كَانَ اَحْدَثَ فَلَا تُقْرِئَه مِنِّى السَّلَامَ

আমি জানতে পারলাম যে, সে বিদআতী হয়ে গেছে। তা যদি হয়, তাকে আমার সালাম বলবেন না।
জিজ্ঞাসা করা হলো বিদআতী কিভাবে হতে পারে? ফরমালেন :-

يَقُوْلُ يَكُوْنُ فِىْ اُمَّتِىْ خَسْفٌ وَمَسْخٌ اَوْقَذْفٌ فِىْ اَهْلِ الْقَدْرِ

হুযুর আলাইহিসসালাম ইরশাদ ফরমাতেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে কদরীয়া সম্প্রদায়ের বেলায় ভূমি ধ্বসে যাবে, চেহারা বিকৃত হবে, অথবা পাথর বর্ষিত হবে।

Note:
প্রতিভাত হলো যে, কদরীয়া ফিরকাকে অর্থাৎ যারা তকদীরকে অস্বীকার করতো তাদেরকে বিদআতী বলা হয়েছে। এই হল আকিদাগত বিদআতের Example.

★ দুররুল মুখতারের কিতাবুল সালাত الامت শীর্ষক অধ্যায়ে বর্নিত আছে।

وَمَبْتَدَعٍ اَىْ صَاحِبِ بِدْعَةٍ وَهِىْ اِعْتِقَادُ خِلَافِ الْمَعْرُوْفِ عَنِ الرَّسُوْلِ

বিদআতী ইমামের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। বিদআত হচ্ছে সেই আকীদার বিপরীত আকীদা পোষন করা যা হুজুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম থেকে প্রসিদ্ধ লাভ করেছেন।


★ ফাতওয়ায়ে রশীদিয়া প্রথম খন্ড কিতাবুল বিদআতের ৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে- যে বিদআতের ব্যপারে কঠিন হুমকি দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে আকীদাগত বিদআত যেমন : রাফেজী ও খারেজীদের আকিদাগত বিদআত।



                        ২) বিদআতে হাসানা সম্পর্কে উদাহরন সহ :



★★★ NOTE: এই বিদাতে হাসানার অধিকাংশ দলিল ইতিপুর্বে (বিদাতের শ্রেনীবিভাগ পর্বে CLASSIFICATION OF BIDAH) এর মধ্যে আলোচিত হয়ে গেছে তাই ওই গুলো পুনরাবৃত্তি করলাম না।

★ এখন বিদআতে হাসানার প্রমান নিন আল-কুরআন থেকে আল্লাহ তায়ালা ফরমান :

وَجَعَلْنَا فِىْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْاهُ رَافَةً وَّرَحْمَةً وَّرَهْبَانِيَّةٍ اِبْتَدَعُوْاهَا مَا كَتَبْنَا هَاعَلَيْهِمُ اِلّابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللهِ

“আমি তাদের আত্মায়, যারা তাঁর অনুসরণ করেছেন, আরাম ও রহমত দান করেছি সন্ন্যাসবাদ তারাই প্রবর্তন করেছিল; আমি তাদেরকে এর হুকুম দিইনি। আল্লাহর রেজামন্দির উদ্দেশ্যে এর সূচনা করেছিল”

★ পুনরায় ইরশাদ করেন-

فَاَتْيَنَا الَّذِيْنَ امَنُوْا مِنْهُمْ اَجْرَهُمْ

“তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, আমি ওদেরকে পুরস্কার দিয়েছি”।

★ তবে হ্যাঁ, যারা একে চালু রাখতে পারেনি, তাদের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে-

فَمَارَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا

“এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি”।

Note: লক্ষ্য করুন এখানে বিদআতের জন্য নিন্দা করা হয়নি বরং এটা চালু রাখতে না পারায় আল্লাহ অসুন্তুষ্ট।


★ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে – عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غيره ان ينقص من اجرهم شىء .

অথ: হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত)




★ অপর হাদিসে বর্নিত আছে :

ﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮُﻫَﺎ ﻭَﺃَﺟْﺮُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀٌ ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔً ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭِﺯْﺭُﻫَﺎ ﻭَﻭِﺯْﺭُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃَﻭْﺯَﺍﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀ  ٌ

 যে ব্যক্তি ইসলামে একটি নতুন ভাল প্রথা আবিষ্কার করল তার জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে, এবং যারা এর উপর আমল করবে তাদের জন্যও উত্তম প্রতিদান রয়েছে। এতে লোকেরা যে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান সওয়াব দেওয়া হবে।আবার তাদেরকে ও কম দেওয়া হবে না। আর যে ইসলামে একটি খারাপ প্রথা চালু করেছে ও লোকেরা সে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান পাপ দেওয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম করা হবে না।  ( ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস-১৭৩,সহিহ)



★ আবু যার (রা) বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায় যে আল্লাহ্‌র রাসূলকে (সাঃ) জিজ্ঞেস করা হয়েছেঃ "ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে কী বলবেন যে কোনো ভালো কাজ করল এবং মানুষ এরজন্য তাকে প্রশংসা করল?" আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ) বললেনঃ "এটি হোলো মু'মিনের জন্য আগাম সুসংবাদ।" [মুসলিম]



যদি বিদআত শুধু ১প্রকারই হয় আর মন্দ কাজকেই বুঝায় তবে নিচের কাজগুলো যারা চালু করেছেন তাদেরকে কি ওহাবী-সালাফীগন জাহান্নামী বলার সাহস আছে?কিন্তু তাদের আকিদার কারনে তাদের না বুঝে মুর্খের মত ফতোয়ার কারনে ঠিকই ওনাদের উপর পরোক্ষভাবে সেই জাহান্নামীর অপবাদ পরে থাকে (নাউযুবিল্লাহ) :


★ মিশকাত শরীফের
الاعتصام অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-

اتبعوا السواد الاعظم فانه من شذشذ فى النار-

বড় জামাতের অনুসরণ করুন। যে এর থেকে পৃথক রইল, সে দোযখে পৃথক অবস্থায় থাকবে।

★ আরও উল্লেখ আছে-

ماراه المؤمنون حسنا فهو عند الله حسن ومن فارق الجماعة شبرا فقد خلع ريقة الاسلام عن عنقه-

মুসলমান যাকে ভাল মনে করে, আল্লাহর কাছেও সে ভাল। মুসলমানগণের জামাত থেকে কনিষ্ঠাঙ্গুলী পরিমাণও পৃথক রইল, সে যেন ইসরামের রশি নিজ গলা থেকে ফেলে দিল।

★ কুরআনে কারীমে আছে-

ويتبع غير سبيل المؤمنين نوله ماتولى ونصله جهنم –

যে মুসলমানের পথ থেকে ভিন্ন পথ চলে, আমি তাকে সে অবস্থায় ছেড়ে দেব এবং তাকে দোযখে প্রবেশ করাবো।



★ ‘আশআতুল লুমআত’ এ فعليكم بسنتى এর প্রোপটে উল্লেখিত আছে-

يس برجه خلفائـ راشدين بدان كرده باشند- اكرجه باجتهاد وقياس ايشان بود موافق سنت نبوى است اطلاق بدعت بران نتوان كرد-

যে বিষয়ে খুলাফায়ে রাশেদীন রায় দিয়েছেন, তা যদি নিজস্ব কিয়াস ও ইজতিহাদ দ্বারা হয় এবং সুন্নাতের নববী অনুযায়ী হয়, তবে তাকে বিদআত বলা সমচীন নয়।




                            আবু বকর (রা) এর বিদাতে হাসানার প্রচলন :




★ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত (রা:) কে যখন কুরআনে পাক একত্রিত করার হুকুম দিলেন, তখন তিনি আরয করলেন।

كيف تفعلون شيئالم يفعله رسول الله صلى الله عليه وسلم قال هو خير-

আপনি এ কাজ কেন করতে যাচ্ছেন, যা হুযুর আলাইহিস সালাম করেননি। হযরত সিদ্দিক (রা:) ফরমালেন, এতো ভাল কাজ। অর্থাৎ হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত হযরত সিদ্দীক (রা:) এর সমীপে আরয করলেন, কুরআন একত্রিতকরণ হচ্ছে বিদআত। তাই আপনি কেন বিদআতে হাত দিচ্ছেন। তখন হযরত সিদ্দীক (রা:) ইরশাদ ফরমালেন- বিদআত বটে তবে উত্তম বিদআত। এর থেকে প্রমাণিত হলো সাহাবায়ে কিরামের কাজ হচ্ছে বিদআতে হাসানা।


Reference : বুখারী শরীফ : দ্বিতীয় খন্ড :  كتاب فضائل القران এর جمع القران অধ্যায়।


★ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) যখন কুর্‌আন সংকলন করার কথা বললেন তখন সাহাবা গণ আরজ করলেন হে খলিফাতুল মুসলেমিন” আপনি কি এমন কাজ (বিদাত) করবেন যা রাসূল (সাঃ) করেননি? তখন সিদ্দিকে আকবর বললেন আল্লাহর কসম এটা ভাল কাজ.।

Reference : মেশকাত শরিফ পৃষ্ঠা ১৯৩

প্রমাণিত হল হযরত আবু বকর (রাঃ) ভাল বিদাত গ্রহণ করেছেন ।


                               উমর (রা) এর বিদআতে হাসানার প্রচলন :



হযরত উমর (রা:) স্বীয় খিলাফাতের যুগে নিয়মিতভাবে জামাত সহকারে তারাবীর নামায আদায় করার হুকুম দিয়েছিলেন এবং জামাত অনুষ্ঠিত হতে দেখে বলেছেন نعمت البدعة هذه- এতো বড়ই ভাল বেদআত। দেখুন হযরত উমর (রা:) নিজেই নিজের প্রচলিত কাজকে বিদআত হাসানা বলেছেন।

হযরত উমর (রাঃ) ৩০ দিন জামাত সহকারে তারাবিহ নামাজ চালু করেন, যা রাসূল (সাঃ) ও আবু বকর (রাঃ) এর সময় ছিলনা।

★ হযরত উমর (রাঃ) একদা হযরত আব্দুর রহমান (রাঃ) কে সাথে নিয়ে রাতে বের হলেন. যখন তিনি সবাইকে জামাত সহকারে তারাবীহ নামাজ পরতে দেখলেন তখন তিনি খুশি হয়ে বললে ” এটা কতইনা উত্তম বিদাত !”

Reference :
** মিশকাত শরীফের قيام شهر رمضان অধ্যায়
** ইমাম বুখারী : সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড : পৃষ্টা ২৬৯



                               হযরত উসমান (রা) বিদাতে হাসানার প্রচলন :


★ হযরত ওসমান (রাঃ) জুমার নামাজে খুতবার আযান (দ্বিতীয় আজান) চালু করেছেন, যা রাসূল (সাঃ) ও দুই খলিফার আমলে ছিলনা। (সহীহ বুখারী পার্ট ১. পৃষ্ঠা ১২০)

★ যদিও গায়র মুকাল্লিদীনের অর্থাৎ আহলে হাদিস ভাইদের নিকট এই আযান বেদআত (নাউযুবিল্লাহ)। যেমন :

★ মুহাম্মদ ইদরীস সালাফী এক প্রশ্নের জবাবে লিখে-"প্রথম আযান বেদআত" (জমীমা জাদীদা ফতোয়ায়ে সাত্তারিয়া-২য় খন্ড, ১৩পৃ:)

★ আব্দুস সাত্তার রহমানী গায়র মুকাল্লিদ "আজীব ও গরীব বেদআত" নামক এক কিতাব লিখেছেন,

উক্ত কিতাবে বেদআতের নামে হযরত উসমান রা: এর চালুকৃত আযানের আলোচনা করতে গিয়ে এটাকে বেদআতের মধ্যে শামীল করেছেন। (আজীব ও গরীব বেদআত-২৯)



                                ইমাম বুখারী (রহ) এর বিদাতে হাসানার প্রচলন :



★ ইমাম বুখারী (রাহ) এর আমলের বিবরণঃ
_____________
মুসাব্বিহ বিন সায়ীদ (রাহ) বলেন,
ইমাম বুখারী (রাহ) এর অভ্যাস ছিল, রামাদান মাসের প্রথম রাত থেকেই তাঁর সাথীগণ তাঁর নিকট জমায়েত হতেন। অতঃপর তিনি তাদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর প্রতি রাকাতে তিনি ২০ আয়াত করে তেলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরী পর্যন্ত তিনি কোর’’আনে কারীমের এক তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করতেন। আর এভাবে প্রতি তিনদিনে সেহরীর সময় তাঁর এক খতম কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত হয়ে যেত।
আর প্রতি এক খতম কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত শেষে ইমাম বুখারী বলতেন,
এখন দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে।
রেফারেন্সঃ
১/সিফাতুস সাফওয়াহঃ২/৩৫৪
২/সিয়ারু আ’লামিন নুবালা

ইমাম বুখারী (রাহ) এর এ আমল থেকে যা পাওয়া গেলঃ
____________________________
১/ প্রতি রাকাতে ২০ টি আয়াত তেলাওয়াত করা। অর্থাৎ আয়াতের নাম্বার নির্ধারণ করা।
২/ প্রতিরাত সালাতের জন্য কোর’আনে কারীমের এক তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করা।
৩/ প্রতি তৃতীয় রাতে জামাতের সাথে সালাত আদায়ে কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত খতম করা।
৪/ প্রতি তৃতীয় রাতে সাথীদেরকে বলাঃ দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে। তার মানে তিনি কোর’আন খতম করে দোয়া করতেন।

আমাদের দৃষ্টিতে এ আমলঃ
______________
আমরা মনে করি, এ আমল একটি উত্তম আমল, যা আল্লাহর সুন্তুস্টি অর্জনে এবং অশেষ ছওয়াব হাসিলে সহায়ক।

হে লা-মাযহাবীঃ
______________
আপনারা কোন আমলকে বা ইবাদতকে বেদ’আত নির্ধারণ করতে গিয়ে যে বিষয়গুলোর অবতারণা করে ধোঁকাবাজি করে থাকেন, তা হচ্ছে-
১/এমন আমল কি রাসুল (সা) করেছেন?
২/ এমন আমল কি সাহাবায়ে কেরাম করেছেন?
যদি না করে থাকেন, তবে তা বেদ’আত ও বাতিল আমল বলে গণ্য হবে।
এটা হচ্ছে কোন বিষয়কে বেদ’আত বানাতে আপনাদের পলিসি ও চালাকি।

সরাসরি প্রশ্নঃ
_______
এবার ইমাম বুখারী (রাহ) এর এ আমল নিয়ে আপনাদের নিকট সরাসরি প্রশ্নঃ
আপনাদের এ পলিসির মানদন্ডে ইমাম বুখারী (রাহ) একজন বেদ’আতী হয়ে যাচ্ছেন।
কারণ, প্রতি রামাদান মাসে তিনি একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সম্পূর্ণ নতুন সিস্টেমে সালাত আদায় করতেন যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলুন তো,
১/রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদান মাসে এভাবে প্রতিরাত এক তৃতীয়াংশ কোর’আনে কারীম তেলাওয়াত করে প্রতি তিন দিনে সাহাবীদের নিয়ে নামাজে কোর’আন খতম করেছেন?
২/ রামাদানে প্রতি তৃতীয় রাতে খতম শেষে দোয়া কবুলের কথা বলেছেন? বা দোয়া করেছেন?
৩/ একজন সাহাবী ও কি রামাদান মাসে এভাবে সালাত আদায় করেছেন?
আমি বলছি, করেন নি। এমন কোন প্রমাণ নেই।
আর সে জন্য আপনাদের বেদ’আতের পলিসির মানদন্ডে ইমাম বুখারী (রাহ) এর এ আমল ইবাদতে এক নতুন আবিস্কার।
আর আপনাদের মতে প্রতিটি বেদ’আত ই ভ্রস্ট। যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
আর একই কারণে আপনাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইমাম বুখারী (রাহ) একজন বেদ’আতী।



                               তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ ও
                         সালেহীনগনের বিদাতে হাসানা :



★ ইমামগন ও মুহাদ্দিসগন হাদিস সংকলন বিদাতে হাসানা এগুলো রাসুলের যুগে ছিল না তাই কেউ সংকলনও করেন নি, এসব হাদিস সংগ্রহ শুরু হয়েছিল তাবেঈগনের যুগ থেকে।

★ বর্তমানে যে সহিহ সিত্তাহ ছাড়াও শত শত হাদিসের কিতাব পেয়েছি আমরা তা সব বিদাতে হাসানার ফসল। নয়তো এক বার ভাবুন তো যদি আমাদের কাছে হাদিস না পোছাত কি অবস্থা হত আমাদের?

★ তাছাড়াতাছাড়া পুর্ববর্তী ইমামগন থেকে আজ পর্যন্ত ইমামগন কুরআন-সুন্নাহ থেকে গবেষনাভিত্তিক যুগ উপযোগী বিভিন্ন ফতোয়ার উদ্ভাবন করে থাকেন যেগুলো ছাড়া আমাদের জীবন অনেক কঠিন হয়ে যেত। এসব উত্তম বিদআত।

★ তাছাড়া বিভিন্ন ফতোয়ার কিতাব, অথবা ৪ মাজহাব সেগুলো সব উত্তম বিদআত।

এই হাদিস থেকে তার প্রমান দেখুন :


রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন-

ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺧْﻄَﺄَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮٌ

হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব।

Reference :

** সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯,

** সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬,

** সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪


                                অন্যান্য উদাহরন :



জায়েয ও উত্তম বিদআতসমুহ একনজরে :

★ নিচের সমস্ত কাজগুলো বিদআত কারন কুরআন হাদিসে এগুলোর নিয়ম উল্লেখ নেই যে এভাবে এই খতম পড়তে হবে, অমুক তসবিহ এত হাজার বার বা এত লক্ষ বার পড়তে হবে কিন্তু এগুলো উত্তম বিদআত তথা বিদআতে হাসানা যা অনুমতি স্পষ্ট সহিহ হাদিসে এসেছে । এর নিয়ম কুরআন হাদিসে নেই তবুও এসব কাজকে নাজায়েয ফতোয়াদানকারী জাহান্নামের পাপ অর্জনকারী।
'
★ কুরআন শরীফ একত্রিকরন : আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর নির্দেশে (বুখারী)

★ হাদিস সংকলন : কোন সাহাবীগনও লিখে রাখেন নি।

★ জামায়াতে তারাবিহ আদায় : উমর (রা) চালু করেছিলেন। (বুখারী)

★ জুমার দ্বিতীয় আজান : উসমান (রা) চালু করেছিলেন। (বুখারী)

★ ইদে মিলাদুন্নবী (সা) ইসলামিক স্বর্নযুগের পুর্ববর্তী সমস্ত উম্মতের ইজমা।

★ খতমে তারাবিহ : রমজানে ৩০ দিনের মধ্যে বা তার আগেই ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজের মধ্যে সমস্ত আল-কুরআন খতম। -(ইমাম বুখারী (রহ) নিজে এই আমল করতেন)

★ খতমে বুখারী : বুখারী শরীফ খতম (যা রাসুলের যুগের ২০০-৩০০ বছর পর ইমাম বুখারী সংকলন করেছিলেন উক্ত কিতাব)

★ খতমে ইউনুস : "লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নী কুন্তু মিনাজ জুয়ালিমিন" উক্ত আয়াতের নির্দিষ্ট সংখ্যক খতম।

★ খতমে তাসমিয়া : বিসমিল্লাহ শরীফ এর খতম।

★ খতমে খাজেগান : অনেক কিছু নিয়ে এই খতম।

★ খতমে গাউসিয়া : অনেক তসবিহ ও সুরা নিয়ে এ খতম।

★ গেয়ারবী শরীফ পাঠ করা নিঃসন্দেহে জায়েয ও উত্তম কাজ ।

★ তাছাড়া অলীগনের লিখা বিভিন্ন দুরুদ ও অলীগনে কাশফ (অন্তরচক্ষু) বা স্বপ্নে প্রাপ্ত দুরুদ যা ফজিলতের জন্য পাঠ করা হয় সব সওয়াবের কাজ। যেমন : আমি যদি কোন দুরুদ লিখি যে :
'' হে আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা) ওনার বংশধরগনের উপর আপনার স্বীয় সন্তুষ্টি অনুপাতে ও স্বীয় গুনাবলী, স্বীয় সৃষ্টি , স্বীয় ক্ষমতা, স্বীয় জিকির এবং সমস্ত দৃশ্য অদৃশ্য সৃষ্টির জিকিরের সংখ্যানুপাতে শান্তি ও রহমত বর্ষিত করুন, প্রতি মুহুর্তে মুহুর্তে উপরে উল্লেখিত সমস্ত কিছুর কোটি কোটি গুনে বর্ধিত করে কিয়ামত পর্যন্ত, হে পরম করুনাময়, হে মহামহিম আল্লাহ।
:
তা কি নাজায়েজ হবে নাকি জায়েয হবে আপনারাই বুঝবেন।

★ রেডিও টেলিভিশন এ ইসলামিক প্রোগ্রাম শুনা ও দেখা।


★ ওহাবী সালাফীরা যখন ডাক্তার জাকির নায়েকের ভাষন শুনে টিভিতে সেটাও কিন্তু
বিদআত যদি বিদাত বলে শুধু খারাপই বুঝায় তবে এসব বন্ধ করে দিন।

★ মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোষাক ব্যাবহার করে ইবাদতের জন্য এসবের মধ্যেও বিদাতে হাসানার উদাহরন রয়েছে।

★ মাটির পাত্রে খাওয়া সুন্নত। এখন কয়জন খান মাটির পাত্রে যে পাত্রই আবিষ্কার হয়েছে তা বিদাতে হাসানা।

NOTE: অনেকে যুক্তি দিয়ে বলে এসব নাকি ইসলামের সাথে সম্পর্কিত নয়। সত্যি কি তাই?
ইসলাম কি কাপড় -চোপর,  হাট -বাজার, চলা-ফেরা, হাটা-খাওয়া, উঠা -বসা, কথা বলা এসব কিছুর সুন্নত শিখায় নি?
এসব কিছুর সাথে সম্পর্কিত সকল নব আবিষ্কৃত জিনিস গুলো সবই বিদাত। ভাল বা কল্যানের জন্য হলে বিদাতে হাসানা। আর মানুষের ক্ষতির জন্য হলে তা বিদাতে সাইয়া।











No comments:

Post a Comment