র সাক্ষ্য দিতে পারে। ঘটনায় উপস্থিত না থাকলে কোন সাক্ষ্যই আদালতে গ্রহনযোগ্য নয়। হুজুর পাক সকল জগতে উপস্থিত আছেন বলেই আল্লাহর দরবারে বা আদালতে সবকিছুর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে পারবেন ।
তাফসীরে আবু দাউদ, তাফসীরে রুহুল মাআনী ও তাফসীরে জুমালে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে:-
যাদের প্রতি আপনাকে রাসুল করে প্রেরণ করা হয়েছে তাদের সকলের জন্য আমি আপনাকে শাহিদ করে পাঠিয়েছি। আপনি তাদের অবস্থাদি পর্যবেক্ষণ করেন, তাদের আমলসমুহ প্রত্যক্ষ করেন এবং তাদের সাক্ষ্য বহন করেন। আপনি এ সাক্ষ্য কিয়ামতের দিন ঐ সকল বিষয়ে আদায় করবেন যা তাদের জন্য উপকারী ও ক্ষতিকর হবে। (তাফসীরে ইবনে কাছীর,১৬ খন্ড, তাফসীরে আবু দাউদ, খন্ড-৭, পৃষ্টা-৪১৫। জুমাল, খন্ড-৩, পৃষ্টা-৪৪২। রুহুল মাআনী, খন্ড-১১,পৃষ্টা-৪২)
আর প্রিয় নবী কে সকল জগতের জন্য রাসুল হিসাবে পাঠানো হয়েছে। পরের আয়াত দেখুন-
২) ওয়া আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতুল্লিল আলামীন। অর্থ :- এবং আমি আপনাকে সকল জগতের জন্য রহমত(করুনা,দয়া) স্বরুপ পাঠিয়েছি । (সুরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৭) আলম আবরী এক বচন শব্দ যার অর্থ জগত । আর আলামীন হলো আলমের বহুবচন শব্দ। সুতরাং আলামীন মানে জগতসমুহ । সুতরাং প্রিয় নবী আকা ও মওলা শুধু এই পৃথিবী নয় বরং সপ্ত আসমান-জমিন, মহাকাশ ,গ্রহ, নক্ষত্র,চন্দ্র,সূর্য,আগুন,পানি,মাটি,বাতাস,শূণ্য এককথায় আল্লাহ পাক যে ১৮ হাজার আলম(জগত) সৃষ্টি করেছেন সে সমস্ত জগতের জন্য রহমত স্বরুপ। আল্লাহ পাকের রহমত(করুনা,দয়া) ছাড়া সৃষ্টি বাঁচতে পারে না । সুতরাং সকল সৃষ্টির মুলে আল্লাহ পাকের রহমত । আর এই আয়াত অনুসারে আল্লাহ পাকের সেই রহমত হলেন আমাদের প্রিয় নবী । তাহলে ব্যাপারটা এরুপ দাঁড়ালো প্রিয় নবীজী ছাড়া সৃষ্টি অচল । সৃষ্টির সব কিছুর মধ্যে প্রিয় নবী আল্লাহর রহমত হিসাবে বিরাজ করছেন বলেই সব সৃষ্টি বেঁচে আছে । সুতরাং সৃষ্টির জান ও প্রাণ হলেন আমাদের প্রিয় নবী আকাঁ ও মওলা । সুতরাং সকল সৃষ্টির মধ্যে প্রিয় নবী রহমত হিসাবে সর্বত্র হাজির-নাজির এ আয়াত দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেল । সৃষ্টির সর্বত্র প্রিয় নবী হাজির-নাজির বলেই এ আয়াত অনুসারে তিনি রাহমাতুল্লিল আলামীন।
৩) ইন্না আরসালনা ইলাইকুম রাসুলান ; শাহিদান আলাইকুম কামা আরসালনা ইলা ফিরআউনা রাসুলা। অর্থ : নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে এমন একজন রাসুল পাঠিয়েছি(প্রেরণ করেছি), যিনি তোমাদের নিকটে সাক্ষীসরুপ, যেভাবে আমি ফিরআউনের প্রতি রাসুল প্রেরন করেছি। (সুরা আল মুযযাম্মিল, আয়াত-১৫) এ আয়াত হতে ও পরিষ্কারভাবে বুঝা গেল প্রিয় নবী হাজির-নাজির। এ আয়াতে কোন শর্তারোপ করা হয়নি যে প্রিয় নবী মানব আকারে দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় শুধু হাজির-নাজির । সুতরাং প্রিয় নবী সকল জগতে সকল সময়ের জন্য হাজির-নাজির বা উপস্তিত এ আয়াত থেকে বুঝা যায়।
৪) ফাকাইফা ইযা জি'না মিন কুল্লি উম্মাতিম বি-শাহিদিওঁ ওয়া জি'না বিকা আলাহা-উলাই শাহিদা। অর্থ : তবে কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো এবং হে মাহবুব ! আপনাকে তাদের সকলের উপর সাক্ষ্য ও পর্যবেক্ষণকারীরুপে উপস্থিত করবো । (সুরা নিসা, আয়াত-৪১)
৫) ওয়া'লামু আন্না ফি'কুম রাসুলাল্লাহি । অর্থ : এবং জেনে রাখ, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল উপস্থিত রয়েছেন। (সুরা হুজুরাত, আয়াত-৭) যেহেতু এ আয়াতে সময়ের কোন শর্তারোপ করা হয়নি সুতরাং আল্লাহর রাসুল প্রিয় নবী সর্বত্র উপস্তিত রয়েছেন।
** হাদিসের দৃষ্টিতে প্রিয় নবী হাজির-নাজির:-
১) হযরত আবু হোরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন- তোমরা আমার মুখ শুধু কিবলার দিকেই দেখছ ? আল্লাহর কসম ! আমার কাছে না তোমাদের রুকু লুকায়িত এবং না তোমাদের বিনয়-নম্রতা । নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে আমার পেছন দিক হতেও দেখি । ( বুখারী, ১ম খন্ড )
সুবহানাল্লাহ ! আমাদের প্রিয় নবী সবকিছু সবদিকেই দেখতে পেতেন ।
২) হযরত সাওবান (রা:) হতে বর্ণিত, ক্বালা রাসুলাল্রাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামা ইন্নাল্লাহা জাআলিকাল আরদা রাআয়তু মাশারিকাহা ওয়া মাগারিবাহা। অর্থ :- রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন,নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা সমস্ত জমিনের পূর্ব থেকে পশ্চিমের সবকিছু আমাকে প্রত্যক্ষ করান বা দেখান। (মুসলিম, খন্ড-২) এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, সৃষ্টির কোন কিছুই প্রিয় নবীজীর দৃষ্টির বাইরে নন। যা কিছু হচ্ছে এবং হবে সবকিছু তিনি প্রত্যক্ষ করেন এবং আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দেন।
৩) হযরত আবু যর গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত, ক্বালা রাসুলাল্রাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামা ইন্নি আ-রা মালাতারাওনা । অর্থ:-রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন,নিশ্চয়ই আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না। (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ) এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, আমরা মানুষ আমাদের দৃষ্টি সীমার মধ্যে যা দেখি ও প্রত্যক্ষ করি এছাড়াও রাসুলে পাক সব কিছু দেখেন যা আমরা কেউ অবগত নই। সুতরাং সৃষ্টির সবকিছুই তিনি প্রত্যক্ষ করেন।
৪) রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর হাজির নাজির
সম্পর্কিত ঘটনা
হযরত আবু ইবনে উবাইয়া (রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)
হতে বর্ণিত 'একদিন হযরত আবু বিলাল (রদিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু) যোহর নামাজের আগে মসজিদ পরিষ্কার
করছিলেন, পরিষ্কার করতে করতে হযরত আবু বিলাল
(র) নীচে লুটে গেলেন, এবং গড়াগড়ি শুরু
করে দিলেন সাহাবারা এমন অবস্থা দেখে রসূল
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর
কাছে এটা বলতে গেল। রসূল (স) বললেন
তোমরা বিলালকে গিয়ে বল আমি ডাকছি। বিলাল (র)
কে ডেকে আনা হল রসূল (স) ওনার মাথায় হাত
বুলিয়ে আযান দিতে যাইতে বললেন। বিলাল (র) বের
হয়ে মসজিদের দিকে যাছছেন। সাহাবারা বললেন
রসূল (স) আপনাকে কিছু বলল না কেন? বিলাল (র)
বললেন তোমাদের যখন
আমাকে ডেকে আনতে পাঠানো হল তার আগেই
রসূল (স) আমার সামনে উপস্থিত। আমার
থেকে জিজ্ঞেস করলেন বিলাল তুমি নীচে এমন
গড়াগড়ি করছ কেন? আমি উত্তর দিলাম 'ইয়া রসূলাল্লাহ'
আমি যখন মসজিদ পরিষ্কার করতে জাড়ু হাতে নিলাম
তখন দেখলাম হাজার ফেরেশতা আপনার
পেছনে নামাজ পড়তে দাড়িয়ে আছে। তাদের
গায়ে এই জাড়ু লাগুক তা আমি চাইনি তাই ময়লা নিজ
শরীরে গড়াগড়ি করে তুলছিলাম।
অতঃপর তাই আমাকে রসূল (স) আর কিছু বলেননি।
(ইবনে মাজা শরীফ, খন্ড ২, হাদিস নং ৪৩৫৬, কানজুল
উম্মাল, খন্ড ১, প্রিষ্ঠা ৬৩৮).
হাদিসটির সনদ দিতে গিয়ে হযরত আনস বিন মালেক (র)
বলেন রসূল (স) সর্ব জায়গায়, সর্ব অবস্থায় উপস্থিত
হওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
(মসনদে আনস বিন মালেক, খন্ড ৩, প্রিষ্ঠা ৪২১)
এর থেকে কি বুঝা যাইনা রসূল (সল্লাল্লাহু
** যুগশ্রেষ্ঠ উলামাদের দৃষ্টিতে প্রিয় নবী হাজির-নাজির
----------------------- ১) শায়খুল মুহাদ্দেসীন হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী(রা.) বলেন- উম্মতে মোহাম্মদীর উলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য ও মাযহাবের আধিক্য থাকা সত্তেও এই মাসআলা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই যে, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম রুপকের অবকাশ ও কুটিল ব্যাখ্যার ধারণা ব্যতিরেকে প্রকৃত জীবনে জীবিত, স্থায়ী ও বিরাজমান এবং উম্মতের আমলসমুহের প্রতি প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য প্রদানকারী (হাজির-নাজির) । ( আখবারুল আখইয়ারের পাদটীকা)
২) হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী(রা.) বলেন- রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম উম্মতের গুনাহসমুহ, ইমানের স্তরসমুহ, পাপ ও পূণ্য কর্মাদি এবং উম্মতের ভাল চরিত্র ও কপটতা(মুনাফিকি)কে জানেন ও চিনেন। অতত্রব শরিয়তের বিধান অনুযায়ী উম্মতের বেলায় তার সাক্ষ্যদান(উপস্থিতি) গ্রহনযোগ্য ও অবশ্যই পালনীয়। (তাফসীরে আযীযী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৪৬)
৪) শাহ অলিউল্লাহ সাহেবও রাসূলে পাককে
হাজির-নাজির বলে তার গ্রন্থ "ফয়জুল হারামাইনে" লিখেছেন,
৫) আল্লামা ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমত
এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন কিতারেব ১ম জিলদের ৯৯ পৃষ্ঠায়
বাতেনি শর্তের বয়ানে লিখেছেন-
ﻭﺍﺣﻀﺮ ﻓﻰ ﻗﻠﺒﻚ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺷﺨﺼﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭﻗﻞ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻚ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺒﻰ
ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ –
অর্থ: তোমরা ক্বলব বা অন্তরে রাসূলেপাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং তাঁর
পবিত্র দেহাকৃতিকে উপস্থিত জানবে এবং বলবে ‘আস
সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ ওয়ারাহমাতুল্লাহ
ি ওয়া বারাকাতুহু।’
৬) পাক-ভারত উপমহাদেশের সর্বজন স্বীকৃত আলেমকুল
শিরোমণি শেখ আব্দুল হক
মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত লিখিত
‘মাদারিজুন নবুয়ত’ কিতাবের ১ম জিলদের ১৬৫ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ রয়েছে-
ﺍﺯﺟﻤﻠﮧ ﺧﺼﺎﺋﺺ ﺍﯾﮟ ﺭﺍﻧﯿﺰ ﺫﮐﺮ ﮐﺮﺩﮦ ﺍﻧﺪﮐﮧ ﻣﺼﻠﮯ ﺧﻄﺎﺏ ﻣﯿﮑﻨﺪ ﺁﻧﺤﻀﺮﺕ ﺭﺍﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮫ
ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻘﻮﻝ ﺧﻮﺩ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﯿﮏ ﺍﯾﮭﺎ ﺍﻟﻨﺒﯽ ﻭﺧﻄﺎﺏ ﻧﻤﯿﮑﻨﺪ ﻏﯿﺮ ﺍﻭﺭﺍ۔
অর্থাৎ ‘রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফাযায়েলের বর্ণনায়
উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসল্লিগণ নামাযের
মধ্যে আসসালামু আলাইকা আইয়হান্নাবীউ’
পাঠকালে হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করবে অন্য
কারো প্রতি নয়।’
উপরোন্তু ‘আশিয়াতুল লুমআত’ শরহে মেশকাত এর ১ম
জিলদের ৪০১ পৃষ্ঠায় শেখ আব্দুল হক
মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত আরো উল্লেখ
করেছেন-
ﻭﺑﻌﺾ ﺍﺯﻋﺎﺭﻓﺎﺀ ﮔﻔﺘﮧ ﺍﻧﺪ ﮐﮧ ﺍﯾﮟ ﺧﻄﺎﺏ ﺑﺠﮭﺖ ﺳﺮﯾﺎﻥ ﺣﻘﯿﻘﺖ ﻣﺤﻤﺪﯾﮧ ﺍﺳﺖ ﺩﺭﺫﺭﺍﺋﺮ
ﻣﻮﺟﻮﺩﺍﺕ ﻭﺍﻓﺮﺍﺩ ﻣﻤﮑﻨﺎﺕ ﭘﺲ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺩﺭﺫﺍﺕ ﻣﺼﻠﯿﺎﮞ ﻣﻮﺟﻮﺩ ﻭﺣﺎﺿﺮﺍﺳﺖ –
অর্থাৎ কোন কোন আরিফ ব্যক্তিগণ বলেছেন,
নামাযে ‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ’
বলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন রীতির প্রচলন এ
জন্যই করা হয়েছে যে,
হাকিকতে মোহাম্মদীয়া বা হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের মূল সত্ত্বা সৃষ্টিকুলের
অণুপরমাণুতে এমনকি সম্ভবপর প্রত্যেক কিছুতেই
ব্যাপৃত। সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযিগণের সত্ত্বার
মধ্যে বিদ্যমান ও হাজির আছেন।
* ওলামায়ে দেওবন্দের অভিমত:
---------
*মৌলভী কাসেম নানাতুবী স্বীয় কিতাব তাহজীরুন্নাছে ৯২ পৃ: লিখেছেন; অন্যান্য যা' কিছু আছে তা' সব'ই মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ছায়া ও প্রতিবিম্ব মাত্র | এক পলকে দেশদেশান্তরে যাওয়া বা এক স্থান হতে সারা বিশ্ব অবলোকন করা বা ক্ষমতা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে শক্তি ব্যবহার করা বা এক'ই সময়ে বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত হওয়া একটি ভাল ও সৎ গুন | ফেরেশতা,অলি, অন্যান্য নবী ও জ্বীনদের মদ্ধ্যেও এই গুন পাওয়া যায় | যেমন
তফছীরে রুহুল বায়ান, খাজেন, কবীরের অষ্টম পারায় মালাকুত মওত সম্পর্কে লিখা হয়েছে যে, সারা বিশ্ব আজরাইল ফেরেশতার সামনে রাখা একটি বর্তনের মত; যেখান থেকে চায় সেখান থেকে নিতে ও ধরতে পারে | আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক আত্মাসমূহ তার জন্য হরণ করা কঠিন নয় । তফছীরে খাজেনে আছে যে, ঐ ফেরেশতা দৈনিক ২ বার সারা বিশ্বের মানুষের ঘরবাড়ীসমূহে আসা- যাওয়া করে ।
*>> আল্লামা শায়খ জালালুদ্দিন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি "তানবীরুল হাওয়ালেক" নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে, হযরত রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেহ ও রুহ মোবারকের সাথে জীবিত রয়েছেন , তিনি যেখানে ইচ্ছে সেখানে ভ্রমন করতে পারেন ; উনার ইন্তেকালের সময় যে আকৃতিতে ছিলেন আজও সে আকৃতিতে আছেন। তিনি ফেরেশতাদের ন্যায় মানুষের দৃষ্টির অন্তরালে রয়েছেন, আল্লাহ পাক যখন কারো প্রতি দয়া করেন, তখন তিনি তাঁর জেয়ারত লাভে ধন্য হন।
আম্বিয়ায়ে কিরামের এ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে, ইন্তেকালের পর রুহ সমূহ তাঁদের দেহ মোবারকে প্রত্যাবর্তন করে এবং কবর থেকে বের হয়ে যমীন ও আসমানে ভ্রমন করার অনুমতি তাঁদের প্রদান করা হয়
দলীল ---> √ স্বপ্নজগতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - লেখক - লালবাগ শাহী মসজিদের সাবেক খতীব মাওলানা আমিনুল ইসলাম দেওবন্দী ! পৃষ্ঠা ২২৬।
*মাওলানা মহিউদ্দীন খান বলেন -হযরত হুসাইন আহমদ মাদানি (রা:)
মসজিদে নব্বীতে হাদিস শিক্ষা দেবার সময়ে এক ছাত্র কে হায়াতুন নবী এই বিষয় টি কিছুতেই বুঝানো যাচ্ছিল না। ছাত্র টি বার বার প্রশ্ন করেই যাচ্ছিল। শেষে বিরক্ত হয়ে হুসাইন আহমদ মাদানি (রা:) ছাত্র টিকে বললেন মসজিদে নব্বীর পাশে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা শরীফের দিকে দৃষ্টি দিতে। ছাত্র টি সেদিকে তাকানোর সাথে সাথে দেখতে পেলো রওজা শরীফের গম্বুয, মিনার কিছুই নেই। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে আছেন। ছাত্র টি সে দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইলে হযরত হুসাইন আহমদ মাদানি (রা:) তাকে নিষেধ করেন। এর কিছুক্ষন পরেই রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা অদৃশ্য হয়ে যায়। “স্বপ্নযোগে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”, লেখক মাওলানা মহিউদ্দীন খান, মদীনা পাবলিকেশন্স
সুবিখ্যাত হদিছ গ্রন্থ মিশকাত শরীফের ইছবাতু আযাবিল কবর শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে
(১) فَيَقُوْ لَانِ مَاكُنْتَ تَقَوْلُ فِىْ هذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ
মুনকার নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শাযিত মৃত ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন ওনার (মুহা্ম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কি ধারনা পোষন করতে?
হাদিছের সুবিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ আশআতুল লমআত-এ উক্ত হাদীছ
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- هذَا الرَّجُلِ দ্বারা হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিএ গুণাবলী সও্বার প্রতীই নিদের্শ হয়ে থাকে ।
উক্ত ব্যাখ্যায় গ্রন্থে এ হদীছের ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছেঃ কিংবা কবরের মধ্যে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র সত্ত্বাকে দৃশ্যতঃ উদ্ভাসিত করা হয়। এটা এভাবেই হয় যে কবরে তার জিসমে মিছালীকে উপস্থাপন করা হয়। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এর দিদারে প্রত্যাশী চিন্তীত ব্যাক্তিবর্গের জন্য এটাই শুভ সংবাদ যে তারা যদি এ প্রত্যাশিত সাক্ষাতের আশায় প্রাণ বির্সজন দিয়ে কবরে চলে যান তাহলে তাদেরও এ সুযোগ রয়েছে ।
মিশকাত শরীফের হাশিয়ায় সে একই হাদিছের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে-
قِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرَى النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهِىَ بُشْرَى عَظِيْمَةٌ
বলা হয়েছে মৃত ব্যাক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ ।
সুপ্রসিদ্ধ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় গ্রন্থ কুসতলানীর ৩য় খন্ডে ৩৯০ পৃষ্টায় কিতাবুল জানায়েযে বর্নিত আছেঃ
فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ
অর্থাৎ এও বলা হয়েছে যে মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয় যার দরুণ সে নবী আলাইহিস সালামকে দেখতে পায়। এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয় যদি সে সঠিক পথে থাকে।
লক্ষ্যণীয় যে একই সময় হাজার হাজার মৃত ব্যাক্তির লাশ দফন করা হয়ে থাকে । হুজুর আলাইহিস সালাম যদি হাযির-নাযির না হন তাহলে, তিনি প্রতিটি কবরে উপস্থীত থাকেন কি রূপে?
র সাক্ষ্য দিতে পারে। ঘটনায় উপস্থিত না থাকলে কোন সাক্ষ্যই আদালতে গ্রহনযোগ্য নয়। হুজুর পাক সকল জগতে উপস্থিত আছেন বলেই আল্লাহর দরবারে বা আদালতে সবকিছুর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে পারবেন ।
তাফসীরে আবু দাউদ, তাফসীরে রুহুল মাআনী ও তাফসীরে জুমালে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে:-
যাদের প্রতি আপনাকে রাসুল করে প্রেরণ করা হয়েছে তাদের সকলের জন্য আমি আপনাকে শাহিদ করে পাঠিয়েছি। আপনি তাদের অবস্থাদি পর্যবেক্ষণ করেন, তাদের আমলসমুহ প্রত্যক্ষ করেন এবং তাদের সাক্ষ্য বহন করেন। আপনি এ সাক্ষ্য কিয়ামতের দিন ঐ সকল বিষয়ে আদায় করবেন যা তাদের জন্য উপকারী ও ক্ষতিকর হবে। (তাফসীরে ইবনে কাছীর,১৬ খন্ড, তাফসীরে আবু দাউদ, খন্ড-৭, পৃষ্টা-৪১৫। জুমাল, খন্ড-৩, পৃষ্টা-৪৪২। রুহুল মাআনী, খন্ড-১১,পৃষ্টা-৪২)
আর প্রিয় নবী কে সকল জগতের জন্য রাসুল হিসাবে পাঠানো হয়েছে। পরের আয়াত দেখুন-
২) ওয়া আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতুল্লিল আলামীন। অর্থ :- এবং আমি আপনাকে সকল জগতের জন্য রহমত(করুনা,দয়া) স্বরুপ পাঠিয়েছি । (সুরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৭) আলম আবরী এক বচন শব্দ যার অর্থ জগত । আর আলামীন হলো আলমের বহুবচন শব্দ। সুতরাং আলামীন মানে জগতসমুহ । সুতরাং প্রিয় নবী আকা ও মওলা শুধু এই পৃথিবী নয় বরং সপ্ত আসমান-জমিন, মহাকাশ ,গ্রহ, নক্ষত্র,চন্দ্র,সূর্য,আগুন,পানি,মাটি,বাতাস,শূণ্য এককথায় আল্লাহ পাক যে ১৮ হাজার আলম(জগত) সৃষ্টি করেছেন সে সমস্ত জগতের জন্য রহমত স্বরুপ। আল্লাহ পাকের রহমত(করুনা,দয়া) ছাড়া সৃষ্টি বাঁচতে পারে না । সুতরাং সকল সৃষ্টির মুলে আল্লাহ পাকের রহমত । আর এই আয়াত অনুসারে আল্লাহ পাকের সেই রহমত হলেন আমাদের প্রিয় নবী । তাহলে ব্যাপারটা এরুপ দাঁড়ালো প্রিয় নবীজী ছাড়া সৃষ্টি অচল । সৃষ্টির সব কিছুর মধ্যে প্রিয় নবী আল্লাহর রহমত হিসাবে বিরাজ করছেন বলেই সব সৃষ্টি বেঁচে আছে । সুতরাং সৃষ্টির জান ও প্রাণ হলেন আমাদের প্রিয় নবী আকাঁ ও মওলা । সুতরাং সকল সৃষ্টির মধ্যে প্রিয় নবী রহমত হিসাবে সর্বত্র হাজির-নাজির এ আয়াত দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেল । সৃষ্টির সর্বত্র প্রিয় নবী হাজির-নাজির বলেই এ আয়াত অনুসারে তিনি রাহমাতুল্লিল আলামীন।
৩) ইন্না আরসালনা ইলাইকুম রাসুলান ; শাহিদান আলাইকুম কামা আরসালনা ইলা ফিরআউনা রাসুলা। অর্থ : নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে এমন একজন রাসুল পাঠিয়েছি(প্রেরণ করেছি), যিনি তোমাদের নিকটে সাক্ষীসরুপ, যেভাবে আমি ফিরআউনের প্রতি রাসুল প্রেরন করেছি। (সুরা আল মুযযাম্মিল, আয়াত-১৫) এ আয়াত হতে ও পরিষ্কারভাবে বুঝা গেল প্রিয় নবী হাজির-নাজির। এ আয়াতে কোন শর্তারোপ করা হয়নি যে প্রিয় নবী মানব আকারে দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় শুধু হাজির-নাজির । সুতরাং প্রিয় নবী সকল জগতে সকল সময়ের জন্য হাজির-নাজির বা উপস্তিত এ আয়াত থেকে বুঝা যায়।
৪) ফাকাইফা ইযা জি'না মিন কুল্লি উম্মাতিম বি-শাহিদিওঁ ওয়া জি'না বিকা আলাহা-উলাই শাহিদা। অর্থ : তবে কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো এবং হে মাহবুব ! আপনাকে তাদের সকলের উপর সাক্ষ্য ও পর্যবেক্ষণকারীরুপে উপস্থিত করবো । (সুরা নিসা, আয়াত-৪১)
৫) ওয়া'লামু আন্না ফি'কুম রাসুলাল্লাহি । অর্থ : এবং জেনে রাখ, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল উপস্থিত রয়েছেন। (সুরা হুজুরাত, আয়াত-৭) যেহেতু এ আয়াতে সময়ের কোন শর্তারোপ করা হয়নি সুতরাং আল্লাহর রাসুল প্রিয় নবী সর্বত্র উপস্তিত রয়েছেন।
** হাদিসের দৃষ্টিতে প্রিয় নবী হাজির-নাজির:-
১) হযরত আবু হোরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন- তোমরা আমার মুখ শুধু কিবলার দিকেই দেখছ ? আল্লাহর কসম ! আমার কাছে না তোমাদের রুকু লুকায়িত এবং না তোমাদের বিনয়-নম্রতা । নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে আমার পেছন দিক হতেও দেখি । ( বুখারী, ১ম খন্ড )
সুবহানাল্লাহ ! আমাদের প্রিয় নবী সবকিছু সবদিকেই দেখতে পেতেন ।
২) হযরত সাওবান (রা:) হতে বর্ণিত, ক্বালা রাসুলাল্রাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামা ইন্নাল্লাহা জাআলিকাল আরদা রাআয়তু মাশারিকাহা ওয়া মাগারিবাহা। অর্থ :- রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন,নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা সমস্ত জমিনের পূর্ব থেকে পশ্চিমের সবকিছু আমাকে প্রত্যক্ষ করান বা দেখান। (মুসলিম, খন্ড-২) এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, সৃষ্টির কোন কিছুই প্রিয় নবীজীর দৃষ্টির বাইরে নন। যা কিছু হচ্ছে এবং হবে সবকিছু তিনি প্রত্যক্ষ করেন এবং আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দেন।
৩) হযরত আবু যর গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত, ক্বালা রাসুলাল্রাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামা ইন্নি আ-রা মালাতারাওনা । অর্থ:-রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন,নিশ্চয়ই আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না। (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ) এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, আমরা মানুষ আমাদের দৃষ্টি সীমার মধ্যে যা দেখি ও প্রত্যক্ষ করি এছাড়াও রাসুলে পাক সব কিছু দেখেন যা আমরা কেউ অবগত নই। সুতরাং সৃষ্টির সবকিছুই তিনি প্রত্যক্ষ করেন।
৪) রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর হাজির নাজির
সম্পর্কিত ঘটনা
হযরত আবু ইবনে উবাইয়া (রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)
হতে বর্ণিত 'একদিন হযরত আবু বিলাল (রদিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু) যোহর নামাজের আগে মসজিদ পরিষ্কার
করছিলেন, পরিষ্কার করতে করতে হযরত আবু বিলাল
(র) নীচে লুটে গেলেন, এবং গড়াগড়ি শুরু
করে দিলেন সাহাবারা এমন অবস্থা দেখে রসূল
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর
কাছে এটা বলতে গেল। রসূল (স) বললেন
তোমরা বিলালকে গিয়ে বল আমি ডাকছি। বিলাল (র)
কে ডেকে আনা হল রসূল (স) ওনার মাথায় হাত
বুলিয়ে আযান দিতে যাইতে বললেন। বিলাল (র) বের
হয়ে মসজিদের দিকে যাছছেন। সাহাবারা বললেন
রসূল (স) আপনাকে কিছু বলল না কেন? বিলাল (র)
বললেন তোমাদের যখন
আমাকে ডেকে আনতে পাঠানো হল তার আগেই
রসূল (স) আমার সামনে উপস্থিত। আমার
থেকে জিজ্ঞেস করলেন বিলাল তুমি নীচে এমন
গড়াগড়ি করছ কেন? আমি উত্তর দিলাম 'ইয়া রসূলাল্লাহ'
আমি যখন মসজিদ পরিষ্কার করতে জাড়ু হাতে নিলাম
তখন দেখলাম হাজার ফেরেশতা আপনার
পেছনে নামাজ পড়তে দাড়িয়ে আছে। তাদের
গায়ে এই জাড়ু লাগুক তা আমি চাইনি তাই ময়লা নিজ
শরীরে গড়াগড়ি করে তুলছিলাম।
অতঃপর তাই আমাকে রসূল (স) আর কিছু বলেননি।
(ইবনে মাজা শরীফ, খন্ড ২, হাদিস নং ৪৩৫৬, কানজুল
উম্মাল, খন্ড ১, প্রিষ্ঠা ৬৩৮).
হাদিসটির সনদ দিতে গিয়ে হযরত আনস বিন মালেক (র)
বলেন রসূল (স) সর্ব জায়গায়, সর্ব অবস্থায় উপস্থিত
হওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
(মসনদে আনস বিন মালেক, খন্ড ৩, প্রিষ্ঠা ৪২১)
এর থেকে কি বুঝা যাইনা রসূল (সল্লাল্লাহু
** যুগশ্রেষ্ঠ উলামাদের দৃষ্টিতে প্রিয় নবী হাজির-নাজির
----------------------- ১) শায়খুল মুহাদ্দেসীন হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী(রা.) বলেন- উম্মতে মোহাম্মদীর উলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য ও মাযহাবের আধিক্য থাকা সত্তেও এই মাসআলা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই যে, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম রুপকের অবকাশ ও কুটিল ব্যাখ্যার ধারণা ব্যতিরেকে প্রকৃত জীবনে জীবিত, স্থায়ী ও বিরাজমান এবং উম্মতের আমলসমুহের প্রতি প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য প্রদানকারী (হাজির-নাজির) । ( আখবারুল আখইয়ারের পাদটীকা)
২) হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী(রা.) বলেন- রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম উম্মতের গুনাহসমুহ, ইমানের স্তরসমুহ, পাপ ও পূণ্য কর্মাদি এবং উম্মতের ভাল চরিত্র ও কপটতা(মুনাফিকি)কে জানেন ও চিনেন। অতত্রব শরিয়তের বিধান অনুযায়ী উম্মতের বেলায় তার সাক্ষ্যদান(উপস্থিতি) গ্রহনযোগ্য ও অবশ্যই পালনীয়। (তাফসীরে আযীযী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৪৬)
৪) শাহ অলিউল্লাহ সাহেবও রাসূলে পাককে
হাজির-নাজির বলে তার গ্রন্থ "ফয়জুল হারামাইনে" লিখেছেন,
৫) আল্লামা ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমত
এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন কিতারেব ১ম জিলদের ৯৯ পৃষ্ঠায়
বাতেনি শর্তের বয়ানে লিখেছেন-
ﻭﺍﺣﻀﺮ ﻓﻰ ﻗﻠﺒﻚ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺷﺨﺼﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭﻗﻞ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻚ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺒﻰ
ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ –
অর্থ: তোমরা ক্বলব বা অন্তরে রাসূলেপাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং তাঁর
পবিত্র দেহাকৃতিকে উপস্থিত জানবে এবং বলবে ‘আস
সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ ওয়ারাহমাতুল্লাহ
ি ওয়া বারাকাতুহু।’
৬) পাক-ভারত উপমহাদেশের সর্বজন স্বীকৃত আলেমকুল
শিরোমণি শেখ আব্দুল হক
মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত লিখিত
‘মাদারিজুন নবুয়ত’ কিতাবের ১ম জিলদের ১৬৫ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ রয়েছে-
ﺍﺯﺟﻤﻠﮧ ﺧﺼﺎﺋﺺ ﺍﯾﮟ ﺭﺍﻧﯿﺰ ﺫﮐﺮ ﮐﺮﺩﮦ ﺍﻧﺪﮐﮧ ﻣﺼﻠﮯ ﺧﻄﺎﺏ ﻣﯿﮑﻨﺪ ﺁﻧﺤﻀﺮﺕ ﺭﺍﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮫ
ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻘﻮﻝ ﺧﻮﺩ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﯿﮏ ﺍﯾﮭﺎ ﺍﻟﻨﺒﯽ ﻭﺧﻄﺎﺏ ﻧﻤﯿﮑﻨﺪ ﻏﯿﺮ ﺍﻭﺭﺍ۔
অর্থাৎ ‘রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফাযায়েলের বর্ণনায়
উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসল্লিগণ নামাযের
মধ্যে আসসালামু আলাইকা আইয়হান্নাবীউ’
পাঠকালে হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করবে অন্য
কারো প্রতি নয়।’
উপরোন্তু ‘আশিয়াতুল লুমআত’ শরহে মেশকাত এর ১ম
জিলদের ৪০১ পৃষ্ঠায় শেখ আব্দুল হক
মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত আরো উল্লেখ
করেছেন-
ﻭﺑﻌﺾ ﺍﺯﻋﺎﺭﻓﺎﺀ ﮔﻔﺘﮧ ﺍﻧﺪ ﮐﮧ ﺍﯾﮟ ﺧﻄﺎﺏ ﺑﺠﮭﺖ ﺳﺮﯾﺎﻥ ﺣﻘﯿﻘﺖ ﻣﺤﻤﺪﯾﮧ ﺍﺳﺖ ﺩﺭﺫﺭﺍﺋﺮ
ﻣﻮﺟﻮﺩﺍﺕ ﻭﺍﻓﺮﺍﺩ ﻣﻤﮑﻨﺎﺕ ﭘﺲ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺩﺭﺫﺍﺕ ﻣﺼﻠﯿﺎﮞ ﻣﻮﺟﻮﺩ ﻭﺣﺎﺿﺮﺍﺳﺖ –
অর্থাৎ কোন কোন আরিফ ব্যক্তিগণ বলেছেন,
নামাযে ‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ’
বলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন রীতির প্রচলন এ
জন্যই করা হয়েছে যে,
হাকিকতে মোহাম্মদীয়া বা হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের মূল সত্ত্বা সৃষ্টিকুলের
অণুপরমাণুতে এমনকি সম্ভবপর প্রত্যেক কিছুতেই
ব্যাপৃত। সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযিগণের সত্ত্বার
মধ্যে বিদ্যমান ও হাজির আছেন।
* ওলামায়ে দেওবন্দের অভিমত:
---------
*মৌলভী কাসেম নানাতুবী স্বীয় কিতাব তাহজীরুন্নাছে ৯২ পৃ: লিখেছেন; অন্যান্য যা' কিছু আছে তা' সব'ই মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ছায়া ও প্রতিবিম্ব মাত্র | এক পলকে দেশদেশান্তরে যাওয়া বা এক স্থান হতে সারা বিশ্ব অবলোকন করা বা ক্ষমতা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে শক্তি ব্যবহার করা বা এক'ই সময়ে বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত হওয়া একটি ভাল ও সৎ গুন | ফেরেশতা,অলি, অন্যান্য নবী ও জ্বীনদের মদ্ধ্যেও এই গুন পাওয়া যায় | যেমন
তফছীরে রুহুল বায়ান, খাজেন, কবীরের অষ্টম পারায় মালাকুত মওত সম্পর্কে লিখা হয়েছে যে, সারা বিশ্ব আজরাইল ফেরেশতার সামনে রাখা একটি বর্তনের মত; যেখান থেকে চায় সেখান থেকে নিতে ও ধরতে পারে | আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক আত্মাসমূহ তার জন্য হরণ করা কঠিন নয় । তফছীরে খাজেনে আছে যে, ঐ ফেরেশতা দৈনিক ২ বার সারা বিশ্বের মানুষের ঘরবাড়ীসমূহে আসা- যাওয়া করে ।
*>> আল্লামা শায়খ জালালুদ্দিন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি "তানবীরুল হাওয়ালেক" নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে, হযরত রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেহ ও রুহ মোবারকের সাথে জীবিত রয়েছেন , তিনি যেখানে ইচ্ছে সেখানে ভ্রমন করতে পারেন ; উনার ইন্তেকালের সময় যে আকৃতিতে ছিলেন আজও সে আকৃতিতে আছেন। তিনি ফেরেশতাদের ন্যায় মানুষের দৃষ্টির অন্তরালে রয়েছেন, আল্লাহ পাক যখন কারো প্রতি দয়া করেন, তখন তিনি তাঁর জেয়ারত লাভে ধন্য হন।
আম্বিয়ায়ে কিরামের এ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে, ইন্তেকালের পর রুহ সমূহ তাঁদের দেহ মোবারকে প্রত্যাবর্তন করে এবং কবর থেকে বের হয়ে যমীন ও আসমানে ভ্রমন করার অনুমতি তাঁদের প্রদান করা হয়
দলীল ---> √ স্বপ্নজগতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - লেখক - লালবাগ শাহী মসজিদের সাবেক খতীব মাওলানা আমিনুল ইসলাম দেওবন্দী ! পৃষ্ঠা ২২৬।
*মাওলানা মহিউদ্দীন খান বলেন -হযরত হুসাইন আহমদ মাদানি (রা:)
মসজিদে নব্বীতে হাদিস শিক্ষা দেবার সময়ে এক ছাত্র কে হায়াতুন নবী এই বিষয় টি কিছুতেই বুঝানো যাচ্ছিল না। ছাত্র টি বার বার প্রশ্ন করেই যাচ্ছিল। শেষে বিরক্ত হয়ে হুসাইন আহমদ মাদানি (রা:) ছাত্র টিকে বললেন মসজিদে নব্বীর পাশে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা শরীফের দিকে দৃষ্টি দিতে। ছাত্র টি সেদিকে তাকানোর সাথে সাথে দেখতে পেলো রওজা শরীফের গম্বুয, মিনার কিছুই নেই। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে আছেন। ছাত্র টি সে দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইলে হযরত হুসাইন আহমদ মাদানি (রা:) তাকে নিষেধ করেন। এর কিছুক্ষন পরেই রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা অদৃশ্য হয়ে যায়। “স্বপ্নযোগে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”, লেখক মাওলানা মহিউদ্দীন খান, মদীনা পাবলিকেশন্স
সুবিখ্যাত হদিছ গ্রন্থ মিশকাত শরীফের ইছবাতু আযাবিল কবর শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে
(১) فَيَقُوْ لَانِ مَاكُنْتَ تَقَوْلُ فِىْ هذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ
মুনকার নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শাযিত মৃত ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন ওনার (মুহা্ম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কি ধারনা পোষন করতে?
হাদিছের সুবিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ আশআতুল লমআত-এ উক্ত হাদীছ
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- هذَا الرَّجُلِ দ্বারা হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিএ গুণাবলী সও্বার প্রতীই নিদের্শ হয়ে থাকে ।
উক্ত ব্যাখ্যায় গ্রন্থে এ হদীছের ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছেঃ কিংবা কবরের মধ্যে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র সত্ত্বাকে দৃশ্যতঃ উদ্ভাসিত করা হয়। এটা এভাবেই হয় যে কবরে তার জিসমে মিছালীকে উপস্থাপন করা হয়। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এর দিদারে প্রত্যাশী চিন্তীত ব্যাক্তিবর্গের জন্য এটাই শুভ সংবাদ যে তারা যদি এ প্রত্যাশিত সাক্ষাতের আশায় প্রাণ বির্সজন দিয়ে কবরে চলে যান তাহলে তাদেরও এ সুযোগ রয়েছে ।
মিশকাত শরীফের হাশিয়ায় সে একই হাদিছের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে-
قِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرَى النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهِىَ بُشْرَى عَظِيْمَةٌ
বলা হয়েছে মৃত ব্যাক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ ।
সুপ্রসিদ্ধ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় গ্রন্থ কুসতলানীর ৩য় খন্ডে ৩৯০ পৃষ্টায় কিতাবুল জানায়েযে বর্নিত আছেঃ
فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ
অর্থাৎ এও বলা হয়েছে যে মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয় যার দরুণ সে নবী আলাইহিস সালামকে দেখতে পায়। এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয় যদি সে সঠিক পথে থাকে।
লক্ষ্যণীয় যে একই সময় হাজার হাজার মৃত ব্যাক্তির লাশ দফন করা হয়ে থাকে । হুজুর আলাইহিস সালাম যদি হাযির-নাযির না হন তাহলে, তিনি প্রতিটি কবরে উপস্থীত থাকেন কি রূপে?
No comments:
Post a Comment