Thursday, October 22, 2015

ইমাম হুসাইন (রা:)শেষ উপদেশ ও যুদ্ধে গমন

হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) তাঁবুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন তখন তাঁর চৌদ্দ বছর বয়স্ক ছেলে হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন (রাঃ), যিনি মারাত্মক রোগ জ্বরে ভুগছিলেন, হেলিয়ে দুলিয়ে কোন মতে আব্বাজানের সামনে এসে আরজ করলেন, আব্বাজান! আমাকেও বিদায় দিন, আমিও শাহাদাত বরণ করতে চাই তিনি নিজের অসুস্থ ছেলেকে সান্ত্বনা দিলেন এবং বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
যাইনুল আবিদীন! তোমাকেও যদি বিদায় দিই, তাহলে ইমাম হুসাইন (রাঃ) এরসিলসিলাকার থেকে জারি হবে? বাবা শোন! তোমার থেকেই আমার বংশেরসিলসিলাজারি হবে। আমি দুআ করছি, আল্লাহ পাক তোমাকে জীবিত রাখুন এবং তোমার থেকে আমার বংশধরেরসিলসিলাজারি রাখুন।
তিনি উনাকে বাতিনী খিলাফত ইমামত প্রদান করলেন। উনাকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে বাতিনী নিয়ামত প্রদান করলেন এবং কিছু ওছীয়ত করার পর ফরমালেন,
প্রিয় ! আমি চলে যাওয়ার পর মদীনা শরীফ- পৌঁছার যদি সৌভাগ্য হয়, তাহলে সবার আগে তোমার নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ- গিয়ে সর্বপ্রথম আমার সালাম বলিও এবং কারবালায় তোমার দেখা সমস্ত ঘটনা উনাকে শুনিও।
ছেলেকে ওসীয়ত করার পর ইমাম হুসাইন (রাঃ) তাঁর প্রস্তুতি শুরু করলেন, নবী করিম (সঃ) এর পাগড়ী মুবারক মাথার উপর রাখলেন, সৈয়দুশ শুহাদা হযরত হামযা (রাঃ) এর ঢাল পিঠের উপর রাখলেন বড় ভাই হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) এর কোমর বন্ধনী নিজ কোমরে বাঁধলেন এবং আব্বাজান শেরে খোদা হযরত আলী মুর্তূজা (রাঃ) এর তলোয়ারজুলফিকারহাতে নিলেন অতঃপর কারবালার দুলহা, কারবালার সুলতান শাহীন শাহে কারবালা হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) ময়দানের দিকে যাত্রা দিলেন হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) তলোয়ার হাতে নিয়ে বের হওয়ার মুহুর্তে সেই পর্দানশীন মজলুম মহিলাদের দিকে এক নজর তাকালেন, তখন সবাই তাঁকে (রাঃ) সবর ধৈর্যে অটল দেখালেন, কারো চোখে পানি নেই, সবাই অধিক শোকে পাথর হয়ে রইলেন কিন্তু উনাদের অন্তর হু হু করে কাঁদছিল যাদের ভরা ঘর আজ খালি হয়ে গিয়েছে সর্বশেষ যে আশ্রয়টা ছিল, তিনি (রাঃ) এখন তাদেরকে বিদায়ী সালাম দিয়ে রওয়ানা হচ্ছেন হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) এক এক জনকে সম্বোধন করে বললেন,
শহরবানুআমার আখেরী সালাম গ্রহণ করো, ‘রোবাব ! হুসাইন (রাঃ) এর চেহারা দেখে নাও, সম্ভবতঃ চেহারা দেখার নসীব আর নাও হতে পারে জয়নাব! তোমার ভাই যাচ্ছে, জয়নাব! তুমি খয়বার যুদ্ধ বিজয়ীর কন্যা, তুমি ধৈর্যশীলা ফাতিমাতুয যুহরা (রাঃ) এর কন্যা, তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ সবরকারী (সঃ) এর আওলাদ দেখ, এমন কোন কাজ করিও না, যদ্বারা আল্লাহ তাঁর রাসূল (সঃ) নারাজ হন যে কোন অবস্থায় ধৈর্যহারা হইওনা জয়নাব! আর একটি কথা শোন, আমার প্রিয় কন্যা সখিনাকে কাঁদতে দিওনা সে আমার সব চেয়ে আদরের মেয়ে ওকে আদর করিও এবং সদা বুকে জড়িয়ে রাখিও আমি যাচ্ছি, তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে সোপার্দ করলাম
তিনি (রাঃ) কথাগুলো বলছিলেন, আর এদিকে তাঁর মাসুম কন্যা এসে জড়িয়ে ধরলো হযরত রোবাব (রাঃ) এসে হযরত হুসাইন (রাঃ) এর কাঁধে মুখ রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন,
আমাদেরকে ফেলে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, দুর্দিনে আমাদেরকে অবস্থায় ফেলে কোথায় যাচ্ছেন ? জালিমদের হাতে আমাদের সোপর্দ করে কোথায় যাচ্ছেন ? আমাদের পরিণাম কি হবে! পশুরা আমাদের সাথে কি যে আচরণ করবে! তিনি (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের সাথে আছেন তোমরা আল্লাহর নবী (সঃ) এর আওলাদ, আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত আল্লাহ তাআলা তোমাদের ইজ্জত সম্মানের হেফাজতকারী
হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) সবাইকে ধৈর্য ধারণের জন্য তাগিদ দিলেন কিন্তু নিজে অধৈর্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিলেন তবুও একান্ত কষ্টে আত্ম সংবরণ করে হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) ঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘোড়ার কাছে আসলেন এবং যে মাত্র ঘোড়ায় আরোহন করতে যাচ্ছিলেন, সে মূহুর্তে হযরত সৈয়দা জয়নাব (রাঃ) মাথায় পর্দা দিয়ে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন,
ভাইজান! যে মায়ের তুমি দুধ পান করেছ, আমিও সে মায়ের দুধ পান করেছি, আমিও হযরত আলী মর্তুজা (রাঃ) এর কন্যা ভাইজান! তুমি সবাইকে ঘোড়ায় আরোহন করিয়ে ময়দানে পাঠিয়েছ, কিন্তু তোমাকে আরোহণ করার মত এখন আর কেউ নেই তাই মজলুম বোন তোমাকে ঘোড়ায় আরোহন করাবে আমি তোমার ঘোড়ার লাগাম ধরলাম, তুমি আরোহণ কর
হযরত হুসাইন (রাঃ) ঘোড়ায় আরোহণ করে ময়দানের দিকে যাত্রা শুরু করলেন হযরত ফাতেমাতুয যুহরা (রাঃ) এর নয়নমণি ইয়াজিদী বাহিনীর সামরা সামনি হতে চলেছি নবী করিম (সঃ) এর দৌহিত্র পরিবারের সবার শাহাদাত বরণ করার পর নিজে শাহাদাত বরণ করতে চলছেন
তথ্যসূত্র
  • কারবালা প্রান্তরে(লেখকঃ খতিবে পাকিস্তান হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ শফী উকাড়বী(রহঃ))


No comments:

Post a Comment