Blog Archive

Monday, October 5, 2015

ওযু ছাড়া কোরান ধরা নিষেধ



সাহাবা কিরাম (রা) তাবেয়ীনদের থেকে মাসয়লাটি সম্পর্কে)
যেসব মতামত বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
হযরত সালমান ফারসী (রা) অযু ছাড়া কুরআন শরীফ পড়া দুষণীয় মনে করতেন না৷ তবে তাঁর মতে এরূপ ক্ষেত্রে হাত দিয়ে কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নয়৷ হযরত সা' (রা) ইবনে আবী ওয়াককাস এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এমত অনুসরণ করতেন৷ হযরত হাসান বাসরী ইবরাহীম নাখয়ী বিনা ওযুতে কুরআন শরীফ স্পর্শ করা মাকরূহ মনে করতেন৷ (আহকামুল কুরআন-জাসসাস) আতা, তাউস, শা'বী এবং কাসেম ইবনে মুহাম্মাদও এই মত পোষন করতেন বলে বর্ণিত হয়েছে (আল -মুগনী-ইবনে কুদামাহ) তবে তাঁদের সবার মতে অযু ছাড়া কুরআন শরীফ স্পর্শ না করে পড়া কিংবা মুখস্ত পড়া জায়েয৷
নাপাক, হায়েজ নিফাস অবস্থায় কুরআন শরীফ পড়া হযরত উমর (রা), হযরত আলী (রা), হযরত হাসান বাসরী, হযরত ইবরাহীম নাখয়ী এবং ইমাম যুহরীর মতে মাকরূহ৷ তবে ইবনে আব্বাসের (রা) মত ছিল এই যে, কোন ব্যক্তি কুরআনের যে অংশ সম্ভাবতই মুখে মুখে পড়তে অভ্যস্ত তা মুখস্ত পড়তে পারে৷ তিনি মতের ওপর আমলও করতেন৷ মাসয়ালা সম্পর্কে হযরত সা'ঈদ ইবনুল মুসাইয়েব এবং সা'ঈদ ইবনে জুবাইরকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ তার স্মৃতিতে কি কুরআন সংরক্ষিত নেই? সুতরাং পড়ায় কি দোষ হতে পারে? (আল -মুগনী আল-মুহাল্লা-ইবনে হাযম)
মাসয়ালা সম্পর্কে ফকীহদের মতামত নিম্নরূপঃ
ইমাম আলাউদ্দীন আল-কাশানী () গ্রন্থে বিষয়ে হানাফীদের মতের ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ বিনা অযুতে নামায পড়া জায়েজ নয়, তেমনি কুরআন মজীদ স্পর্শ করাও জায়েজ নয়৷ তবে কুরআন মজীদ যদি গেলাফের মধ্যে থাকে তাহলে স্পর্শ করা যেতে পারে৷ কোন কোন ফকীহর মতে চামড়ার আরবণ এবং করো করো মতে যে কোষ, লেফাফা, বা জুযাদানের মধ্যে কুরআন শরীফ রাখা হয় এবং তা থেকে আবার বের করা যায় তাই গেলাফের পর্যায়ভুক্ত অনুরূপ বিন অযুতে তাফসীর গ্রন্থসমূহ এবং এমন কোন বস্তু স্পর্শ করা উচিত নয় যার ওপর কুরআনের কোন আয়াত লিখিত আছে কিন্তু ফিকহার গ্রন্থসমূহ স্পর্শ করা যেতে পারে৷ তবে ক্ষেত্রেও উত্তম হচ্ছে বিনা অযুতে স্পর্শ না করা৷ কারণ দলীল প্রমাণ হিসেবে তার মধ্যে কুরআনের আয়াত লিখিত আছে শুধু সেই অংশ বিনা অযুতে স্পর্শ করা ঠিক নয়৷ কিন্তু যে, অংশে টীকা লেখা হয় তা ফাঁকা হোক কিংবা ব্যাখ্যা হিসেবে কিছু লেখা থাক, তা স্পর্শ করায় কোন দোষ নেই৷ তবে সঠিক কথা হলো, টীকা বা ব্যাখ্যাসমূহও কুরআনেই একটা অংশ এবং তা স্পর্শ করা কুরআন মজীদ স্পর্শ করার শামিল৷ এরপর কুরআন শরীফ পড়া সম্পর্কে বলা যায় যে, "বিনা অযুতে কুরআন শরীফ পড়া জায়েজ" ফতোয়ায়ে আলমগিরী গ্রন্থে শিশুদেরকে এই নির্দেশের আওতা বহির্ভূত গণ্য করা হয়েছে৷ অযু থাক বা না থাক শিক্ষার জন্য শিশুদের হাতে কুরআন শরীফ দেয়া যেতে পারে৷
ইমাম নববী () () গ্রন্থে শাফেয়ী মাযহাবের মতামত বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ নামায তাওয়াফের মত বিন অযুতে কুরআন মজীদ স্পর্শ করা কিংবা তার কোন পাতা স্পর্শ করা হারাম৷ অনুরূপ কুরআনের জিলদ স্পর্শ করাও নিষেধ৷ তাছাড়া কুরআন যদি কোন থলি বা ব্যাগের মধ্যে রাখা থাকে কিংবা গেলাফ বা বাক্সের মধ্যে থাকে বা দরসে কুরআনের জন্য তার কেন অংশ কোন ফলকের ওপরে লিখিত থাকে তাও স্পর্শ করা জায়েজ নয়৷ তবে যদি করো মালপত্রের মধ্যে রাখা থাকে, কিংবা তাফসীর গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ থাকে অথবা কোন মুদ্রার গায়ে তা ক্ষোদিত হয় তাহলে তা স্পর্শ খরা জায়েয৷ শিশুর অযু না থাকলেও সে কুরআন স্পর্শ করতে পারে৷ কেউ যদি অযু ছাড়া কুরআন পাঠ করে তাহলে কাঠ বা অন্য কোন জিনিসের সাহায্যে পাতা উল্টাতে পারে৷
'
আল -ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা'' গ্রন্থে মালেকী মাযহাবের যে মত উদ্ধৃত করা হয়েছে তা হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহদের সাথে তারা ব্যাপারে একমত যে, হাত দিয়ে কুরআন মজীদ স্পর্শ করার জন্য অযু শর্ত কিন্তু কুরআন শিক্ষার প্রয়োজনে তারা শিক্ষক ছাত্র উভয়কে ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন৷ এমনকি তাদের মতে শিক্ষার জন্য ঋতুবর্তী নারীর জন্যও কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ৷ ইবনে কুদামা আল মুগনি গ্রন্থে ইমাম মালেকের () উক্তিটি উদ্ধৃত করেছেন যে, নাপাক অবস্থায় তো কুরআন শরীফ পড়া নিষেধ৷ কিন্তু ঋতু অবস্থায় নারীর জন্য কুরআন পড়ার অনুমতি আছে৷ কারণ, আমরা যদি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাকে কুরআন পড়া থেকে বিরত রাখি তাহলে সে তা ভুলে যাবে৷
ইবনে কুদামা হাম্বলী মাযহাবের যেসব বিধি-বিধান উল্লেখ করেছেন তা হচ্ছে, নাপাক এবং হায়েজ নিফাক অবস্থায় কুরআন কিংবা কুরআনের পূর্ণ কোন আয়াত পড়া জায়েজ নয়৷ তবে বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি পড়া জায়েয৷ কারণ এগুলো কুরানের কোন না কোন আয়াতের অংশ হলেও সেগুলো পড়ার ক্ষেত্রে কুরআন তেলাওয়াতের উদ্দেশ্য থাকে না৷ তবে কোন অবস্থায়ই বিনা অযুতে হাত দিয়ে কুরআন শরীফ স্পর্শ করা জায়েজ নয়৷ তবে চিঠিপত্র কিংবা ফিকাহর কোন গ্রন্থ বা অন্যকিছু লিখিত বিষয়ের মধ্যে যদি কুরআনের কোন আয়াত লিপিবদ্ধ থাকে তাহলে তা হাত দিয়ে স্পর্শ করা নিধেষ নয়৷ অনুরূপভাবে যদি কোন জিনিসের মধ্যে সংরক্ষিত থাকে তাহলে অযু ছাড়াই তা হাত দিয়ে ধরে উঠানো যায়৷ তাফসীর গ্রন্থসমূহ হাত দিয়ে ধরার ক্ষেত্রে অযু শর্ত নয়৷ তাছাড়া তাক্ষণিক প্রয়োজনে অযুহীন কোন লোককে যদি হাত দিয়ে কুরআন শরীফ স্পর্শ করতে হয় তাহলে সে তায়াম্মুম করে নিতে পারে৷ 'আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা' গ্রন্থে হাম্বলী মাযহাবের মাসয়ালাটিও উল্লেখ আছে যে, শিক্ষার উদ্দেশ্যও শিশুদের বিনা অযুতে কুরআন শরীফ স্পর্শ করা ঠিক নয়৷ তাদের হাতে কুরআন শরীফ দেয়ার আগে তাদের অভিভাবকদের কর্তব্য তাদের অযু করানো৷

No comments:

Post a Comment