Thursday, September 24, 2015
Monday, September 21, 2015
হে রাসুল (সা) আপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না - হাদিসটির পর্যালোচনা :-
উক্ত হাদিসটিকে জাল বানানোর অপচেষ্টা করছে ওহাবীরা কারন ওহাবী-সালাফীদের সাথে বিভিন্ন আকিদার বিপরীত বলে। এই পোস্টের মাধ্যমে যেসব জবাব দেয়া হল :
১) ড জাকির নায়েকের ওসীলা হারাম ফতোয়ার জবাব
২) তারেক জানোয়ারের ফতোয়ার জবাব : আল্লাহ ও মুহাম্মাদ (সা) এর নাম পাশাপাশি রাখা শিরিক
৩) কালিমা তাইয়্যেবাহ তে "মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বিদাত" এর জবাব
৪) যদি রাসুল (সা)না হতেন, তাহলে কিছুই সৃষ্টি করা হতো না।
লেখক, গবেষক ও সংকলক : click here to connect in Fb (MASUM BILLAH SUNNY)
হাদিস ১ :
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্নিত,
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما أذنب آدم صلى الله عليه وسلم الذنب الذي أذنه رفع رأسه إلى العرش فقال أسألك حق محمد ألا غفرت لي فأوحى الله إليه وما محمد ومن محمد فقال تبارك اسمك لما لما خلقتني رفعت رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك
অনুবাদ-
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, হযরত আদম আঃ থেকে যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে ভুল সংঘটিত হয়, [যার দরূন তাকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়, তখন তিনি সর্বদা কাঁদতে ছিলেন। আর দুই ও ইস্তেগফার পড়তে ছিলেন।] তখন তিনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন,
হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাঃ এর ওসীলায় আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তখন অহী নাজীল হয়- মুহাম্মদ (সা) কে (তুমি কিভাবে জানলে তুমি তো তাকে কখনো দেখ নি)? তখন তিনি বলেন-যখন আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমার অভ্যন্তরে রুহ প্রবেশের পর মাথা তুলে আমি আরশে লেখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, মুহাম্মদ সাঃ এর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই
যার নাম আপনি স্বীয় নামের সাথে রেখেছেন।
তখন অহী নাজীল হল-তিনি সর্বশেষ নবী। তোমার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
যদি তিনি না হতেন, তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করা হতো না।
Reference :-
★ ইমাম বায়হাকী রহঃ : দালায়েলুন নাবায়িয়্যাহ : ৫/৪৮৯ পৃ
★ ইমাম হাকেম নিশাপুরী রহঃ মুসতাদরাকে হাকেম : ২/৪৮৬ পৃ : হাদিস : ৪২২৮
★ ইমাম হাকেম নিশাপুরী রহঃ আল মাদখাল : ১/১৫৪
★ তাবরানী : আল মুজামুল আওসাত : ৬/৩১৩ : হাদীস নং-৬৫০২
★ তাবরানী : আল মুজামুস সগীর : ২/১৮২ : হাদীস নং-৯৯২,
★ তাবরানী : মুজমায়ে কবীর’
★ ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২২৭
★ ইমাম আজলুনী : কাশফুল কাফা : ১/৪৬ ও ২/২১৪
★ আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
★ আল্লামা সুবকী রহঃ শেফাউস সিকাম
★ ইবনে আসাকির : নিজ ‘তারিখে দিমাশক’: ৭/৪৩৭ পৃ
★ ইবনুল জাওজী : আল ওয়াফা বি আহওয়ালিল মোস্তফা : ৩৩
★ ইবনুল জাওজী : বয়ানুল মীলাদুন্নবী (সা) : ১৫৮
★ ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া : ১/১৮ পৃ
★ ইবনে হাজর হায়সামী : মাযমাউজ যাওয়ায়েদ : ৮/২৫৩
★ শিহাবউদ্দীন খাফাজী : ‘নাসীম আর-রিয়াদ’
★ ইমাম সুয়ুতী : কাসায়েসুল কুবরা : ১/১২ : হাদিস ১২
★ ইমাম সুয়ুতী : আদ দুররে মানসুর : ১/১৪২
★ আল্লামা কাসতাল্লানী রহঃ আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ : ১/ ৮২ ও ২/৫২৫
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১৭২
★ ইমাম হালাবী : সীরাতে হালাবিয়্যাহ : ১/৩৫৫
★ মুহাদ্দিসে শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী : তফসীরে আজিযী : ১/১৮৩
★ ইমাম নাবহানী : শাওয়াহিদুল হক : ১৩৭
★ ইমাম নাবহানী : আনোয়ার-ই-মোহাম্মাদীয়া : ৯-১০
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪
★ ইমাম নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৩১ পৃ ও ৭৯৫ পৃ
(মাকতুবাত এ তাওফিক হিয়্যাহ, কাহেরা,মিশর)
★ আল্লামা শফী উকারবী : যিকরে হাসীন : ৩৭
★ আশরাফ আলী থানবী : নুশরাত্বীব : ২৮
★ ফাযায়েলে আমাল, ৪৯৭, উর্দু এডিশন
হাদিসের মান পর্যালোচনা :
যে সকল মুহাদ্দিসগন এ হাদিস সহিহ বলেছেনঃ
১) ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ।
আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫
২) ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান।শিফাউস সিকাম, পেইজ-১২০
৩) ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ। দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২
৪) ইমাম কস্তল্লানী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।মাওয়াহিবুল লাদুনিয়াহঃ১/১৬৫
৫) ইমাম সামহুদী বলেন, হাদিসটি সহীহ। ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯
৬) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।আল খাসাইসঃ১/৮
৭) ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদীসটি দলীল হিসাবে তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন।মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯
‘যদি মুহাম্মাদ না হতেন, তবে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না’-এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন,
এ হাদীসটি পূর্বের কথাকে কথাকে শক্তিশালী করেছে।
রেফারেন্সঃ
মাজমু উল ফাতাওয়া- ২/১৫৯
৮) বাতিল
দের
জবাবে ইমাম
ইবনু কাসীর পরিস্কার বলেছেন, এই হাদীসটি বানোয়াট নয়।
রেফারেন্সঃ
আস সীরাতুন নাবাওইয়্যাহ- ১/১৯৫
৯) বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী কারী বলেন, একথাটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।রেফারেন্সঃ
আল আসরারুল মারফুআহ- ১/২৯৫
হাদিস ২ :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আ:)-কে বলেছেন, ওহে ঈসা! মহানবী (দ:)-এর প্রতি ঈমান আনো এবং তোমার উম্মতকেও তা করতে বলো।
রাসূলুল্লাহ (দ:) না হলে আমি আদমকে সৃষ্টি করতাম না, বেহেশত বা দোযখও সৃষ্টি করতাম না।”
Reference :
★ ইমাম হাকিম নিশাপুরী : আল মোসতাদরেক’ : ২/৬৭১ : হাদিস ৪২২৭
★ ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২
★ ইমাম ইবনে সাদ : তানাকাতুল কোবরা
★ ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী : ‘শিফাউস্ সিকাম ৪৫
★ শায়খুল ইসলাম আল-বুলকিনী : ফতোওয়ায়ে সিরাজিয়া ১/১৪০
★ ইবনে হাজর রচিত ‘আফদালুল কোরা
★ আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪ ও ৪/১৬০
★ ইবনে কাসীর : কাসাসুল আম্বিয়া : ১/২৯ পৃ
★ ইবনে কাসীর : সিরাতে নববিয়্যাহ : ১/৩২০
★ ইবনে কাসীর : মুজিজাতুন্নবী (সা) : ১/৪৪১
★ ইবনে হাজর আসকালানি : লিসানুল মিযান : ৪/৩৫৪
★ ইমাম যাহাবী : মিজানুল ইতিদাল : ৫/২৯৯, রাবী নং ৬৩৩৬
★ ইবনে হাজর হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/৪২
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১২/২২০
★ আবু সাদ ইব্রাহীম নিশাপুরী : শরহে মোস্তফা : ১/১৬৫
★ ইমাম সুয়ুতী : কাসায়েসুল কুবরা : ১/১৪ : হাদিস ২১
★ ইমাম ইবনে হাইয়্যান : ‘তাবকাত আল-ইসফাহানী : ৩/২৮৭
★ কানযুল উম্মাল- হাদীস ৩২০২২
★ মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১০১
★ মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১/২৯৫, হাদিস : ৩৮৫
★ ইবনে শামী সালেহ : সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ১২/৪০৩
হাদিসের মান পর্যালোচনা :
★ ইমাম দায়লামী : হাদিসটির মান সনদের দিক থেকে হাসান।
আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২
হাদিস ৩ :
হযরত সালমান ফারিসী (রা:)-কে, যিনি বলেন: “হযূর পূর নূর (দ:)-এর কাছে জিবরীল আমীন (আ:) এসে পৌঁছে দেন আল্লাহর বাণী, ‘(হে রাসূল) আপনার চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কাউকেই আমি সৃষ্টি করি নি। আমি বিশ্বজগত ও এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সবই সৃষ্টি করেছি যাতে তারা জানতে পারে আপনার মহান মর্যাদা সম্পর্কে। আমি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম না, যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম’।”
Reference :
★ ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৩/৫১৭
★ মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১০১
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১৮২
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২৮৯
★ কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/১০৫
হাদিস ৪ :
তাবেয়ী হযরত কাবুল আহবার (রা) থেকে বর্নিত,
(বিশাল বর্ননার পর)....
যদি তিনি [রাসুল (সা)] না হতেন তাহলে আমি না তোমাকে [আদম (আ)] সৃষ্টি করতাম, না আসমান, জমীন সৃষ্টি করতাম।
Reference :
★ ইমাম কুস্তালানী : আল মাওয়াহেব : ১/৩৩
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৫২
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/৭৮
★ আল্লামা শফী উকারবী : যিকরে হাসীন : ৩১
★ ইমাম তুগরিব : আল মাওলুদ শরীফ : ১৪২
হাদিস ৫ : এই হাদিসের ২টা সনদ সহকারে উল্লেখ্য করলাম :
হযরত ইমাম হাকিম নিসাপুরী
↓
হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
↓
হারূন বিন আব্বাস হাশেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
↓
জানদাল বিল ওয়াকিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
↓
হযরত আমর বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,
২য় সনদ :
ইমাম হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
↓
হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি , তিনি
↓
হযরত ক্বাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি,
↓
সাঈদ বিন মুসাঈয়িব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
↓
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত,
-حدثنا علي بن حمشاد العدل املاء هرون بن العباس الهاشمي ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصاريحدثنا سعيد بن ابي عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضي الله عنه قال اوحي الله الي عيسي عليه السلام يا عيسي امن بمحمد صلي الله عليه و سلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لامحمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت الجنة و النار ولقد خلقت العرش علي الماء فضطرب فكتبت عليه “لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه وسلم فسكن. هذا حديث صحيح الاسناد
” মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ! আপনি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে উনাকে যারা পেতে চায় তাঁদের নির্দেশ করুন, তাঁরা যেন উনার প্রতি ঈমান আনে।
যদি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন হতেন তবে আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করতাম না, যদি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি না হতেন তবে জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না। আর যখন আমি পানির উরর আরশ সৃষ্টি করলাম তখন তা টলমল করছিলো, যখনই আরশের মধ্যেلا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।”
এই হাদীস শরীফের সনদ সহীহ।
Reference :
★ মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকীম নিশাপুরী (রহ),
কিতাব : তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন ওয়া খাতামুন নাব্যিয়িন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মুছতাফা ছলাওয়াতুল্লাহিআলাইহি ওয়া আলিহীত ত্বহীরিন
খন্ড : ৪র্থ খন্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা
★ মুখতাছারুল মুসতাদরাক ২য় খন্ড ১০৬৭ পৃষ্ঠা
মুহাদ্দিসে কেরাম থেকে :
১
ইমাম সাইফুদ্দীন আবূ জা’ফর বিন উমর আল-হুমাইরী আল-হানাফী নিজ ‘আদ-দুররূল তানযীম ফী মওলিদিন্ নাবিই-ইল করীম’ শীর্ষক কেতাবে বলেন: আল্লাহতা’লা যখন হযরত বাবা আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাঁর মনে এই ভাবের উদয় করেন যার দরুণ তিনি মহান প্রভুকে প্রশ্ন করেন, ”এয়া আল্লাহ! আপনি আমার কুনিয়া (বংশ-পরম্পরার নাম) কেন ’আবূ মোহাম্মদ’ (মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের পিতা) করেছেন?” আল্লাহ উত্তরে বলেন, “ওহে আদম! তোমার মাথা তোলো।” তিনি শির উঠিয়ে আরশে মহানবী (দ:)-এর নূর (জ্যোতি) দেখতে পান। হযরত আদম (আ:) জিজ্ঞেস করেন, “এয়া আল্লাহ! এই নূর কোন্ মহান সত্তার?” আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, “তোমার বংশেই এই মহান নবী (দ:)-এর জন্ম। আসমানে তাঁর নাম আহমদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এবং জমিনে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। আমি তাঁকে সৃষ্টি না করলে তোমাকে বা আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করতাম না।”
২
সাইয়্যেদ আবূল হুসাইন হামদূনী শাযিলী তাঁর ‘কাসিদায়ে দা’লিয়া’তে লেখেন: “প্রিয়নবী (দ:) হলেন সারা বিশ্বজগতের মধ্যমণি এবং সকল সৃষ্টির কারণ (অসিলা)। তিনি না হলে কিছুই অস্তিত্ব পেতো না।”
৩
ইমাম শরফউদ্দীন আবূ মোহাম্মদ বুসিরী তাঁর কৃত ‘কাসিদা-এ-বুরদা’ কাব্য-পুস্তকে লেখেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) না হলে দুনিয়া অস্তিত্বশীল হতো না।”
৪
ইমাম বুসিরী (রহ:)-এর কাব্যের ব্যাখ্যামূলক পুস্তকে ইমাম শায়খ ইবরাহীম বাইজুরী লেখেন: “হুযূর করীম (দ:) অস্তিত্বশীল না হলে বিশ্বজগত-ই অস্তিত্বশীল হতো না। হযরত আদম (আ:)-কে আল্লাহ বলেন, ‘মহানবী (দ:) অস্তিত্বশীল না হলে আমি তোমোকে সৃষ্টি করতাম না। হযরত আদম (আ:) হলেন মনুষ্যজাতির আদি পিতা, আর পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই মানুষের জন্যে সৃষ্ট। তাই হযরত আদম (আ:)-কে যেহেতু রাসূলে খোদা (দ:)-এর অস্তিত্বের কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু সমগ্র জগতই মহানবী (দ:)-এর কারণে সৃষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়। অতএব, সকল অস্তিত্বশীল সত্তার সৃষ্টির কারণ হলেন বিশ্বনবী (দ:)।”
৫
কাসিদা-এ-বুরদা কাব্য সম্পর্কে আল্লামা খালেদ আযহারী মন্তব্য করেন: “রাসূলে পাক (দ:)-এর কারণেই দুনিয়া অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব পেয়েছে।”
৬
মোল্লা আলী কারী লেখেন: ”রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর আশীর্বাদ ও মহত্ত্ব ছাড়া সমগ্র এই বিশ্বজগত অস্তিত্ব পেতো না এবং আল্লাহ ছাড়া কিছুই অস্তিত্বশীল থাকতো না।”
৭
ইমাম শেহাবউদ্দীন ইবনে হাজর আসকালানী বলেন, “এই সকল বর্ণনা ব্যক্ত করে যে মহানবী (দ:)-কে সৃষ্টি করা না হলে আল্লাহতা’লা আসমান-জমিন, বেহেশ্ত-দোযখ, চন্দ্র-সূর্য কিছুই সৃষ্টি করতেন না।”
৮
আল্লামা আবূল আয়াশ আবদুল আলী লাখনৌভী নিজ ‘ফাওয়াতিহ আর-রাহমূত শরহে মোসাল্লাম আস্ সুবূত’ পুস্তকে লেখেন: “রাসূলে খোদা (দ:) অস্তিত্বশীল না হলে সৃষ্টিকুল আল্লাহর রহমত-বরকত (আশীর্বাদ)-ধন্য হতো না।”
Sunday, September 20, 2015
কুরবানী ও আকীকা সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল
কুরবানী ও আকীকা সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল
মাওলানা আব্দুস জাহের আজহারী
জিলহাজ্জ আরবী মাসসমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ কুরবানীর দিন। কুরবানী শব্দটি আরবী কুরবান শব্দ থেকেহ উদ্ভুত। ফিকহী পরিভাষায় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিস্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে হালাল নির্দিষ্ট পশু যবেহ করাকে উযহিয়্যা বা কুরবানী বলা হয়। (হিদায়া ৪র্থ খন্ড, শামী ৫ম খন্ড, পৃঃ ২১৯)
কুরবানীর তাৎপর্য হল, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। প্রচলিত কুরবানী মূলতঃ হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর অপূর্ব আত্ম-ত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিচারণ। যেই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালবাসা ও ঐকান্তিকতা নিয়ে কুরবানী করেছিলেন ইব্রাহীম (আঃ), সেই আবেগ, অনুভূতি ও ঐকান্তিকতার অবিস্মরণীয় ঘটনাকে জীবন্ত রাখার জন্যই মহান আল্লাহ উম্মাতে মুহাম্মদীর উপর কুরবানী ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তাই কুরবানী কুরবানী কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। সূরা মায়েদায় ২৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "ইন্নামা ইয়াতাকাব্বালুল্লাহু মিনাল মুত্তাকীন।" (অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করেন)। আল্লাহ পাক আরো বলেন, "লাইয়্যানালাল্লাহা লুহুমুহা ওয়ালা দিমাউহা ওয়ালা কিয়্যানালুহুত্ তাকওয়া মিনকুম।" (আল্লাহর নিকট (কুরবানীর পশুর) গোশত, রক্ত পেঁৗছায় না; বরং পেঁৗছায় তোমাদের তাকওয়া)। সূরা হাজ্জ, আয়াত নং-২২।
কুরবানী মহান একটি ইবাদাত। সেই ইবাদাতটি সহীহ তরিকাহ্ মোতাবেক করতে হলে যে সকল জরুরী বিষয়গুলো জানা অত্যাবশকীয়। আজকের লিখনীতে সেই সকল টিপসগুলোই রইলো সম্মানিত পাঠকপাঠিকাদের জন্য।
কুরবানীর প্রকারভেদ ঃ কুরবানী দুই প্রকার।
(এক) ওয়াজিব কুরবানী।
(দুই) নফল কুরবানী।
যার উপর কুরবানী ওয়াজিব ঃ
১। জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক, মুসাফির নয় এমন কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি ১০ই জিলহাজ্জ ফজর সময় (সুবহিসাদিক) হতে ১২ জিলহাজ্জ সূর্যঅস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত সময়ের মধ্যে নিবাস পরিমাণ সম্পদ বা অর্থের মালিক হন তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। (শামী, ৯ম খন্ড, পৃঃ ৪৫৭)
নিসাব হচ্ছে, যার নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য আসবাবপত্রে, কাপড়-স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা থাকবে অথবা সে পরিমাণ অর্থ থাকবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। ২। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর নিসাব পরিমাণ সম্পদ অতিবাহিত হওয়া জরুরী নয়; বরং কুরবানীর দিনগুলোর (জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের) মধ্যে নিসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক হলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড) ৩। কোন ব্যক্তি যদি সিাবের পরিমাণ স্মপদের মালিক হন তবে কেবল তার নিজের পক্ষ হতে কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব। স্ত্রী বা সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব নয়। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৪৪) ৪। নিসাব পরিমাণ মালিকের উপর শুধু একটি কুরবানীই ওয়াজিব হবে, অবশ্য কেউ যদি একাধিক কুরবানী করে তা নফল হিসেবে সওয়াবের অধিকারী হবে। (ইমদাদুল ফতোয়া, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৬১) ৫। ঋণ গ্রস্থ ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করে দিলে নিসাব পরিমাণ অর্থের মালিক থাকেন তবেই তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। ৬। কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন ধরনের ব্যক্তি কুরবানী করলে সওয়াব পাবে। তবে এরূপ গরীব ব্যক্তি কুরবানীর নিয়্যতে পশু ক্রয় করলে তার কোরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। এমন ব্যক্তির পশুটি যদি হারিয়ে যায় বা মারা যায়, তাকে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। ৭। যদি কুরবানীর জন্তু হারিয়ে যায়, তৎপরিবর্তে আরেকটি জন্তু খরিদ করা হয়। পরে প্রথম জন্তুটিও পাওয়া যায়। এখন ক্রেতা যদি সাহিবে নিসাব হয়ে থাকেন তার উপর একটি জন্তু কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ক্রেতা যদি সাহিবে নিসাবের মালিক না হন (গরীব হন), তবে তার উপর দুইটি জন্তুই কুরবানী করা ওয়াজিব। (হিয়াদা-৪র্থ খন্ড/কিফায়াতুল মুফতী, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬)
৮। কোন মহিলার মহরানার অর্থ বা টাকা পয়সা বা স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি অথবা মহিলা যদি সাহিবে নিসাবের মালিক হন তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব হবে।
৯। মৃত পিতা-মাতা, যে কোন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে অথবা রাসূল (সঃ) এর পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়িয। তবে নিজের পক্ষ থেকে কুরবানীর পর তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী নফল হিসেবে করা যাবে।
১০। যদি কোন ব্যক্তির একাধিক ছেলে থাকে এবং সকলেই একান্নভূক্ত হয় তাহলে শুধু পিতার উপরই কুরবানী ওয়াজিব হবে। তবে যদি ছেলেদের কেউ পৃথকভাবে মালিক হয় তাহলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব হবে। (রাদ্দুল মুহতার, ৫ম খন্ড)
কুরবানীর পশুর হুকুম ঃ
১। উট, মহিষ, গরু, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল দ্বারা কুরবানী করতে হবে। এগুলো ছাড়া অন্য পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড) ২। দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল কুরবানীর জন্য এক বছর বয়স হওয়া জরুরী। যদি ছয় মাসের দুম্বা বা ভেড়া এরূপ মোটা-তাজা হয় যে, দেখতে এক বছরের মত মনে হয় তাহলে এর দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে। ৩। গরু, মহিষ ও উট এ ক্ষেত্রে বয়স কম পক্ষে যথাক্রমে গরু ২ বছর, মহিষ ২ বছর এবং উট ৫ বছর বয়স হতে হবে। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৪৯) ৪। গরু, মহিষ ও উট এই তিন প্রকার পশুর একটিতে সাত ব্যক্তি পর্যন্ত অংশীদার হয়ে কুরবানী করতে পারবে। তবে শর্ত হল, কারো অংশ যে এক সপ্তমাংশ থেকে কম না হয়। (ফতোয়া আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ৩০৪) ৫। ছাগল, দুম্বা ও ভেড়া একটি এক জনে কুরবানী করতে পারবে। একাধিক ব্যক্তি শরীক হয়ে এ সকল পশু কুরবানী করলে দুরস্ত হবে না। ৬। কয়েক ব্যক্তি কুরবানীর নিয়্যতে পশু খরিদ করে এবং তারপরে যদি অন্য লোক তাতে শরীক হতে চায় এমতাবস্থায় ক্রোতাগণ সর্বসম্মতভাবে সম্মতি দিলে তাতে সাত জন (সর্বোচ্চ) পর্যন্ত অংশ গ্রহণে কুরবানী করা জায়েয হবে। (আলমগীরী) ৭। কুরবানীর অংশীদার প্রত্যেকে যদি নাবালেগ হয় বা কোন অংশীদারের অংশ এক সপ্তমাংশ হতে কম হয় অথবা কোন অংশীদারের নিয়্যত সহীহ না থাকে বা কোন শরীক অমুসলিম হয় তবে কারো কুরবানীই জায়েয হবে না। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড) ৮। গর্ভবতী পশু জেনে শুনে কুরবানী করা মাকরূহ। তবে পশুটি গর্ভবতী বলে জানা ছিল না এমন অবস্থায় যবেহ করার পর পেট থেকে জীবিত বাছুর বের হয় উক্ত বাছুর যবেহ করে খাওয়া জায়েজ। যদি কুরবানীর পশুর পেট হতে মৃত বাচ্চা বের হয় তাহলে উক্ত বাচ্চাটির গোশ্ত হারাম হবে। (শামী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২২৭) ৯। যে পশুর চোখ, কান, লেজ, দাঁত, পা ও অন্যান্য অঙ্গ এক তৃতীয়াংশের বেশী ত্রুটি যুক্ত এ ধরনের পশু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৯৭)
১০। কুরবানী আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। তাই কুরবানী দাতার উচিত দোষমুক্ত, মোটাতাজা পশু কুরবানী করা। (কানযুল উম্মাল)
কুরবানীর সঙ্গে আকীকা আদায় প্রসঙ্গে ঃ
১। কুরবানী করা ওয়াজিব। আকীকা করা সুন্নাত। যে সকল পশু দ্বারা কুবানী করা জায়েয সে সকল পশু দ্বারা আকীকা করা ও জায়েয। আর যে সকল পশু দ্বারা আকীকা করা জায়েয নেই সে সকল পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নেই। (রাদ্দুল মুহতার, ৫ম খন্ড)
২। পুত্র সন্তানের জন্য দুইটি ছাগল আর কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকীকা করা মুস্তাহাব। ৩। উট, মহিষ ও গরুর মধ্যে একটিতে সাত জনের আকীকা করা যাবে। এ ধরনের পশুর মধ্যে কুরবানীর সাথে আকীকা ও করা যায়। তবে শর্ত হল, কুরবানীর অংশ দেয়ার পর আকীকা দিতে হবে। একই গরুতে একজন কুরবানী ও আকীকা উভয়টিই দিতে পারবে। ধরুন, সাত অংশের মধ্যে একজন দুই নামে কুরবানী, আরেকজন দুই নামে কুরবানী এবং অন্য একজন একনামে কুরবানী ও দুই নামে আকীকা করবে নিয়্যত করলো। তাহলে তা করা যাবে। তবে শর্ত হল কারোর অংশ যেন এক -সপ্তমাংশের কম না হয়। (কিফায়াতুল মুফতী)
৪। কুরবানীর গোশত বন্টনের মতো আকীকার গোশত বন্টিত হবে। কুরবানীর গোশতের মত আকীকার গোশত নিজে খাওয়া, পিতা-মাতা খাওযা ও আত্মীয় স্বজন এবং গরীব-মিসকিনকে দেওয়া জায়েয। (আজিজুল ফতয়া, ১ম খন্ড)
৫। কেউ যদি মনে করে যে, তার বা তার পিতামাতার আকীকা ছোটকালে দেয়া হয়নি। তাহলে নিজের আকীকা ও পিতা-মাতা আকীকাও করতে পারবে। (ফতয়ায়ে রহমানিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড)
৬। কুরবানী ওয়াজিব এমন স্বচ্ছল ব্যক্তি কুরবানীর জন্য কোন পশু খরিদ করার পর তাতে যদি এমনএকান ত্রুটি দেখা দেয় যার কারণে তা কুরবানী করা দুরস্ত হবে না। তবে তিনি তার পরিবর্তে অন্য একটি পশু খরিদ করে কুরবানী করবেন। অবশ্য যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি উপরোক্ত ঘটনাটি সংঘটিত হয় সে ব্যক্তি ঐ পশুটিই কুরবানী করতে হবে। (ফতোয়া শামী, ২য় খন্ড, ২২৯ পৃঃ)
কুরবানীর পশু যবেহ করার নিয়ম ঃ
১) জিলহাজ্জ মাসের ১০ তারিখ সূর্যোদয়ের পর থেকে ১২ জিলহজ্জ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কুরবানী করার নির্দিষ্ট সময়। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৯৬)
২) নিজের পশু নিজেই কুরবানী করা সর্বোত্তম। নিজে যবেহ করতে অপারগ হলে অন্যের দ্বারা কুরবানী দুরস্ত আছে। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৯৬)।
৩) যবেহ করার সময় কুরবানী পশু কেবলামুখী করে শোয়াবে, যবেহকারী কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন এবং যবেহকারীর বাম দিকে পশুর মাথা থাকবে। যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলতে হবে। ইচ্ছাকৃত ভাবে বিসমিল্লাহ না বললে উক্ত পশুর গোশত হালাল হবে না। তবে ভুলবশত বিসমিল্লাহ পরিত্যাগ করলে যবেহকৃত পশুর গোশত হালাল হবে। (হিদায়া ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৩৫)। ৪) কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় আরবীতে নিয়্যত পাঠ করা এবং কুরবানী দাতাগণের নাম পাঠ করা জরুরী নয়, বরং মনে মনে নিয়্যত করবে যে, আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করছি। (ফতোয়া শামী, ৫ম খন্ড পৃঃ ২৭২)। ৫) যবেহ করার সময় পশুর চারটি রগ কাটা জরুরী।
র) কণ্ঠনালী রর) খাদ্য নালী ররর ও রা) দুই পাশের দুটি মোটা রগ। ৬) যবেহ কারীকে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা পয়সা বা অন্য কিছু দেয়া যাবে তবে যবেহকৃত পশুর মাথা, রান, চামড়া পারিশ্রমিক বা যবেহ'র বিনিময়ে দেয়া যাবে না। ৭) যবেহকৃত জন্তুকে অযথা কষ্ট দেয়া মাকরূহ। যবেহর পূর্বে ছুরি ভালভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। যবেহকারীর সাথে কেউ যদি ছুরি চালানোর কাজে সহযোগিতা করে থাকে, তবে তাকেও 'বিসমিল্লাহী আল্লাহু আকবার' বলতে হবে (শামী, ৯ম খন্ড, পৃঃ ৪৭৩)
কুরবানীর গোশতের বিধান ঃ
১) কুরবানীর গোশত বন্টনের উত্তম (মুস্তাহাব) নিয়ম হল, তিন ভাগ করে একভাগ নিজের পরিবারবর্গের জন্য, একভাগ আত্মীয় স্বজন আর একভাগ গরীব মিসকিনদের জন্য বন্টন করা। (শামী, ১ম খন্ড পৃঃ ৪৭৩)। ২) কয়েকজন এক সাথে কুরবানী করলে অবশ্যই পাল্লা দিয়ে মেপে সমান/সঠিক ওজন করে ভাগ করতে হবে। তবে অংশীদারগণ যদি একান্নভুক্ত পরিবারের সদস্য হন, তাহলে বন্টনের প্রয়োজন নেই। (শামী, ২য় খন্ড, ২৩২ পৃঃ)। ৩) কুরবানী দাতা কুরবানীর গোশত বিক্রি করা মাকরূহ তাহরিমি। যদি কেউ তা করে থাকে তাহলে বিক্রিত মূল্য সদকা করা ওয়াজিব হবে। ৪) কুরবানীর গোশত পারিশ্রমিক বাবদ বিনিময় হিসেবে কাউকে দেওয়া জায়েব হবে না। ৫) কয়েক ব্যক্তি শরীক হয়ে কুরবানী করে তারা নিজেদের মধ্যে গোশত বন্টন করে নেওয়ার পরিবর্তে যদি রান্না করে বা সমস্ত গোশত গরীবদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়ার ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত নেয় তা জায়েজ হবে। কিন্তু শরীকদের কোন একজন এতে ভিন্নমত প্রকাশ করলে তা জায়েজ হবেনা। (মাসাইল ঈদায়ন, পৃঃ ১৮৩)
কুরবানীর পশুর চামড়ার হুকুম ঃ
১) কুরবানীর পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে নিজে ব্যবহার করতে পারবে।
অথবা, চামড়া দান করে দিবে বা বিক্রি করে অর্থ গরীব অভাবীদের দান করবে। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৩৪)
২) লিল্লাহ বোর্ডিং, গরীব পরীক্ষার্থী, অভাবী, মিসকিন (যারা ফিতরা পাওয়ার উপযুক্ত) তাদেরকে কুরবানীর পশুর চামড়া অথবা বিক্রিকৃত অর্থ দান করবে।
৩) পশুর চামড়া বিক্রির সময় অবশ্যই যথাযথ মূল্যে বিক্রি করতে হবে। কারণ এর অর্থ গরীবের হক।
৪) কুরবানীর চামড়া বা মূল্য মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ বা কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকল্পে অথবা শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা হিসেবে প্রদান করা জায়েয হবে না। (মাসাইল ইদাঈন, পৃঃ ১৯২)
কুরবানীর কাযা ঃ
কোন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল কিন্তু কুরবানীর দিন সমূহ (জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) শেষ হয়ে গেছে অথচ সে ব্যক্তি কুরবানী করে নাই। এমতাবস্থায় তাকে একটি বকরী বা এর মূল্য সাদকা দিতে হবে। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৩০)।
তাকবীরে তাশরীক সম্পর্কে ঃ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ'। ৯ই জিলহাজ্জ ফজর সালাত থেকে ১৩ই জিলহাজ্ব আসর সালাত পর্যন্ত (২৩ ওয়াক্ত সালাত) প্রত্যেক ফরয সালাতের পর উপরোক্ত তাকবীরটি কমপক্ষে একবার পড়া ওয়াজিব। একাকী নামায বা জামাতে নামায যে কোন অবস্থায় তাকবীরে তাশরীকটি পড়তে হবে। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের কুরবানী কবুল করুন। আমাদেরকে তার প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল করুন। আমিন!
মাওলানা আব্দুস জাহের আজহারী
জিলহাজ্জ আরবী মাসসমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ কুরবানীর দিন। কুরবানী শব্দটি আরবী কুরবান শব্দ থেকেহ উদ্ভুত। ফিকহী পরিভাষায় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিস্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে হালাল নির্দিষ্ট পশু যবেহ করাকে উযহিয়্যা বা কুরবানী বলা হয়। (হিদায়া ৪র্থ খন্ড, শামী ৫ম খন্ড, পৃঃ ২১৯)
কুরবানীর তাৎপর্য হল, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। প্রচলিত কুরবানী মূলতঃ হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর অপূর্ব আত্ম-ত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিচারণ। যেই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালবাসা ও ঐকান্তিকতা নিয়ে কুরবানী করেছিলেন ইব্রাহীম (আঃ), সেই আবেগ, অনুভূতি ও ঐকান্তিকতার অবিস্মরণীয় ঘটনাকে জীবন্ত রাখার জন্যই মহান আল্লাহ উম্মাতে মুহাম্মদীর উপর কুরবানী ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তাই কুরবানী কুরবানী কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। সূরা মায়েদায় ২৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "ইন্নামা ইয়াতাকাব্বালুল্লাহু মিনাল মুত্তাকীন।" (অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করেন)। আল্লাহ পাক আরো বলেন, "লাইয়্যানালাল্লাহা লুহুমুহা ওয়ালা দিমাউহা ওয়ালা কিয়্যানালুহুত্ তাকওয়া মিনকুম।" (আল্লাহর নিকট (কুরবানীর পশুর) গোশত, রক্ত পেঁৗছায় না; বরং পেঁৗছায় তোমাদের তাকওয়া)। সূরা হাজ্জ, আয়াত নং-২২।
কুরবানী মহান একটি ইবাদাত। সেই ইবাদাতটি সহীহ তরিকাহ্ মোতাবেক করতে হলে যে সকল জরুরী বিষয়গুলো জানা অত্যাবশকীয়। আজকের লিখনীতে সেই সকল টিপসগুলোই রইলো সম্মানিত পাঠকপাঠিকাদের জন্য।
কুরবানীর প্রকারভেদ ঃ কুরবানী দুই প্রকার।
(এক) ওয়াজিব কুরবানী।
(দুই) নফল কুরবানী।
যার উপর কুরবানী ওয়াজিব ঃ
১। জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক, মুসাফির নয় এমন কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি ১০ই জিলহাজ্জ ফজর সময় (সুবহিসাদিক) হতে ১২ জিলহাজ্জ সূর্যঅস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত সময়ের মধ্যে নিবাস পরিমাণ সম্পদ বা অর্থের মালিক হন তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। (শামী, ৯ম খন্ড, পৃঃ ৪৫৭)
নিসাব হচ্ছে, যার নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য আসবাবপত্রে, কাপড়-স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা থাকবে অথবা সে পরিমাণ অর্থ থাকবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। ২। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর নিসাব পরিমাণ সম্পদ অতিবাহিত হওয়া জরুরী নয়; বরং কুরবানীর দিনগুলোর (জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের) মধ্যে নিসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক হলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড) ৩। কোন ব্যক্তি যদি সিাবের পরিমাণ স্মপদের মালিক হন তবে কেবল তার নিজের পক্ষ হতে কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব। স্ত্রী বা সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব নয়। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৪৪) ৪। নিসাব পরিমাণ মালিকের উপর শুধু একটি কুরবানীই ওয়াজিব হবে, অবশ্য কেউ যদি একাধিক কুরবানী করে তা নফল হিসেবে সওয়াবের অধিকারী হবে। (ইমদাদুল ফতোয়া, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৬১) ৫। ঋণ গ্রস্থ ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করে দিলে নিসাব পরিমাণ অর্থের মালিক থাকেন তবেই তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। ৬। কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন ধরনের ব্যক্তি কুরবানী করলে সওয়াব পাবে। তবে এরূপ গরীব ব্যক্তি কুরবানীর নিয়্যতে পশু ক্রয় করলে তার কোরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। এমন ব্যক্তির পশুটি যদি হারিয়ে যায় বা মারা যায়, তাকে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। ৭। যদি কুরবানীর জন্তু হারিয়ে যায়, তৎপরিবর্তে আরেকটি জন্তু খরিদ করা হয়। পরে প্রথম জন্তুটিও পাওয়া যায়। এখন ক্রেতা যদি সাহিবে নিসাব হয়ে থাকেন তার উপর একটি জন্তু কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ক্রেতা যদি সাহিবে নিসাবের মালিক না হন (গরীব হন), তবে তার উপর দুইটি জন্তুই কুরবানী করা ওয়াজিব। (হিয়াদা-৪র্থ খন্ড/কিফায়াতুল মুফতী, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬)
৮। কোন মহিলার মহরানার অর্থ বা টাকা পয়সা বা স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি অথবা মহিলা যদি সাহিবে নিসাবের মালিক হন তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব হবে।
৯। মৃত পিতা-মাতা, যে কোন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে অথবা রাসূল (সঃ) এর পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়িয। তবে নিজের পক্ষ থেকে কুরবানীর পর তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী নফল হিসেবে করা যাবে।
১০। যদি কোন ব্যক্তির একাধিক ছেলে থাকে এবং সকলেই একান্নভূক্ত হয় তাহলে শুধু পিতার উপরই কুরবানী ওয়াজিব হবে। তবে যদি ছেলেদের কেউ পৃথকভাবে মালিক হয় তাহলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব হবে। (রাদ্দুল মুহতার, ৫ম খন্ড)
কুরবানীর পশুর হুকুম ঃ
১। উট, মহিষ, গরু, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল দ্বারা কুরবানী করতে হবে। এগুলো ছাড়া অন্য পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড) ২। দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল কুরবানীর জন্য এক বছর বয়স হওয়া জরুরী। যদি ছয় মাসের দুম্বা বা ভেড়া এরূপ মোটা-তাজা হয় যে, দেখতে এক বছরের মত মনে হয় তাহলে এর দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে। ৩। গরু, মহিষ ও উট এ ক্ষেত্রে বয়স কম পক্ষে যথাক্রমে গরু ২ বছর, মহিষ ২ বছর এবং উট ৫ বছর বয়স হতে হবে। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৪৯) ৪। গরু, মহিষ ও উট এই তিন প্রকার পশুর একটিতে সাত ব্যক্তি পর্যন্ত অংশীদার হয়ে কুরবানী করতে পারবে। তবে শর্ত হল, কারো অংশ যে এক সপ্তমাংশ থেকে কম না হয়। (ফতোয়া আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ৩০৪) ৫। ছাগল, দুম্বা ও ভেড়া একটি এক জনে কুরবানী করতে পারবে। একাধিক ব্যক্তি শরীক হয়ে এ সকল পশু কুরবানী করলে দুরস্ত হবে না। ৬। কয়েক ব্যক্তি কুরবানীর নিয়্যতে পশু খরিদ করে এবং তারপরে যদি অন্য লোক তাতে শরীক হতে চায় এমতাবস্থায় ক্রোতাগণ সর্বসম্মতভাবে সম্মতি দিলে তাতে সাত জন (সর্বোচ্চ) পর্যন্ত অংশ গ্রহণে কুরবানী করা জায়েয হবে। (আলমগীরী) ৭। কুরবানীর অংশীদার প্রত্যেকে যদি নাবালেগ হয় বা কোন অংশীদারের অংশ এক সপ্তমাংশ হতে কম হয় অথবা কোন অংশীদারের নিয়্যত সহীহ না থাকে বা কোন শরীক অমুসলিম হয় তবে কারো কুরবানীই জায়েয হবে না। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড) ৮। গর্ভবতী পশু জেনে শুনে কুরবানী করা মাকরূহ। তবে পশুটি গর্ভবতী বলে জানা ছিল না এমন অবস্থায় যবেহ করার পর পেট থেকে জীবিত বাছুর বের হয় উক্ত বাছুর যবেহ করে খাওয়া জায়েজ। যদি কুরবানীর পশুর পেট হতে মৃত বাচ্চা বের হয় তাহলে উক্ত বাচ্চাটির গোশ্ত হারাম হবে। (শামী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২২৭) ৯। যে পশুর চোখ, কান, লেজ, দাঁত, পা ও অন্যান্য অঙ্গ এক তৃতীয়াংশের বেশী ত্রুটি যুক্ত এ ধরনের পশু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৯৭)
১০। কুরবানী আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। তাই কুরবানী দাতার উচিত দোষমুক্ত, মোটাতাজা পশু কুরবানী করা। (কানযুল উম্মাল)
কুরবানীর সঙ্গে আকীকা আদায় প্রসঙ্গে ঃ
১। কুরবানী করা ওয়াজিব। আকীকা করা সুন্নাত। যে সকল পশু দ্বারা কুবানী করা জায়েয সে সকল পশু দ্বারা আকীকা করা ও জায়েয। আর যে সকল পশু দ্বারা আকীকা করা জায়েয নেই সে সকল পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নেই। (রাদ্দুল মুহতার, ৫ম খন্ড)
২। পুত্র সন্তানের জন্য দুইটি ছাগল আর কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকীকা করা মুস্তাহাব। ৩। উট, মহিষ ও গরুর মধ্যে একটিতে সাত জনের আকীকা করা যাবে। এ ধরনের পশুর মধ্যে কুরবানীর সাথে আকীকা ও করা যায়। তবে শর্ত হল, কুরবানীর অংশ দেয়ার পর আকীকা দিতে হবে। একই গরুতে একজন কুরবানী ও আকীকা উভয়টিই দিতে পারবে। ধরুন, সাত অংশের মধ্যে একজন দুই নামে কুরবানী, আরেকজন দুই নামে কুরবানী এবং অন্য একজন একনামে কুরবানী ও দুই নামে আকীকা করবে নিয়্যত করলো। তাহলে তা করা যাবে। তবে শর্ত হল কারোর অংশ যেন এক -সপ্তমাংশের কম না হয়। (কিফায়াতুল মুফতী)
৪। কুরবানীর গোশত বন্টনের মতো আকীকার গোশত বন্টিত হবে। কুরবানীর গোশতের মত আকীকার গোশত নিজে খাওয়া, পিতা-মাতা খাওযা ও আত্মীয় স্বজন এবং গরীব-মিসকিনকে দেওয়া জায়েয। (আজিজুল ফতয়া, ১ম খন্ড)
৫। কেউ যদি মনে করে যে, তার বা তার পিতামাতার আকীকা ছোটকালে দেয়া হয়নি। তাহলে নিজের আকীকা ও পিতা-মাতা আকীকাও করতে পারবে। (ফতয়ায়ে রহমানিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড)
৬। কুরবানী ওয়াজিব এমন স্বচ্ছল ব্যক্তি কুরবানীর জন্য কোন পশু খরিদ করার পর তাতে যদি এমনএকান ত্রুটি দেখা দেয় যার কারণে তা কুরবানী করা দুরস্ত হবে না। তবে তিনি তার পরিবর্তে অন্য একটি পশু খরিদ করে কুরবানী করবেন। অবশ্য যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি উপরোক্ত ঘটনাটি সংঘটিত হয় সে ব্যক্তি ঐ পশুটিই কুরবানী করতে হবে। (ফতোয়া শামী, ২য় খন্ড, ২২৯ পৃঃ)
কুরবানীর পশু যবেহ করার নিয়ম ঃ
১) জিলহাজ্জ মাসের ১০ তারিখ সূর্যোদয়ের পর থেকে ১২ জিলহজ্জ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কুরবানী করার নির্দিষ্ট সময়। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৯৬)
২) নিজের পশু নিজেই কুরবানী করা সর্বোত্তম। নিজে যবেহ করতে অপারগ হলে অন্যের দ্বারা কুরবানী দুরস্ত আছে। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৯৬)।
৩) যবেহ করার সময় কুরবানী পশু কেবলামুখী করে শোয়াবে, যবেহকারী কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন এবং যবেহকারীর বাম দিকে পশুর মাথা থাকবে। যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলতে হবে। ইচ্ছাকৃত ভাবে বিসমিল্লাহ না বললে উক্ত পশুর গোশত হালাল হবে না। তবে ভুলবশত বিসমিল্লাহ পরিত্যাগ করলে যবেহকৃত পশুর গোশত হালাল হবে। (হিদায়া ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৩৫)। ৪) কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় আরবীতে নিয়্যত পাঠ করা এবং কুরবানী দাতাগণের নাম পাঠ করা জরুরী নয়, বরং মনে মনে নিয়্যত করবে যে, আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করছি। (ফতোয়া শামী, ৫ম খন্ড পৃঃ ২৭২)। ৫) যবেহ করার সময় পশুর চারটি রগ কাটা জরুরী।
র) কণ্ঠনালী রর) খাদ্য নালী ররর ও রা) দুই পাশের দুটি মোটা রগ। ৬) যবেহ কারীকে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা পয়সা বা অন্য কিছু দেয়া যাবে তবে যবেহকৃত পশুর মাথা, রান, চামড়া পারিশ্রমিক বা যবেহ'র বিনিময়ে দেয়া যাবে না। ৭) যবেহকৃত জন্তুকে অযথা কষ্ট দেয়া মাকরূহ। যবেহর পূর্বে ছুরি ভালভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। যবেহকারীর সাথে কেউ যদি ছুরি চালানোর কাজে সহযোগিতা করে থাকে, তবে তাকেও 'বিসমিল্লাহী আল্লাহু আকবার' বলতে হবে (শামী, ৯ম খন্ড, পৃঃ ৪৭৩)
কুরবানীর গোশতের বিধান ঃ
১) কুরবানীর গোশত বন্টনের উত্তম (মুস্তাহাব) নিয়ম হল, তিন ভাগ করে একভাগ নিজের পরিবারবর্গের জন্য, একভাগ আত্মীয় স্বজন আর একভাগ গরীব মিসকিনদের জন্য বন্টন করা। (শামী, ১ম খন্ড পৃঃ ৪৭৩)। ২) কয়েকজন এক সাথে কুরবানী করলে অবশ্যই পাল্লা দিয়ে মেপে সমান/সঠিক ওজন করে ভাগ করতে হবে। তবে অংশীদারগণ যদি একান্নভুক্ত পরিবারের সদস্য হন, তাহলে বন্টনের প্রয়োজন নেই। (শামী, ২য় খন্ড, ২৩২ পৃঃ)। ৩) কুরবানী দাতা কুরবানীর গোশত বিক্রি করা মাকরূহ তাহরিমি। যদি কেউ তা করে থাকে তাহলে বিক্রিত মূল্য সদকা করা ওয়াজিব হবে। ৪) কুরবানীর গোশত পারিশ্রমিক বাবদ বিনিময় হিসেবে কাউকে দেওয়া জায়েব হবে না। ৫) কয়েক ব্যক্তি শরীক হয়ে কুরবানী করে তারা নিজেদের মধ্যে গোশত বন্টন করে নেওয়ার পরিবর্তে যদি রান্না করে বা সমস্ত গোশত গরীবদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়ার ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত নেয় তা জায়েজ হবে। কিন্তু শরীকদের কোন একজন এতে ভিন্নমত প্রকাশ করলে তা জায়েজ হবেনা। (মাসাইল ঈদায়ন, পৃঃ ১৮৩)
কুরবানীর পশুর চামড়ার হুকুম ঃ
১) কুরবানীর পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে নিজে ব্যবহার করতে পারবে।
অথবা, চামড়া দান করে দিবে বা বিক্রি করে অর্থ গরীব অভাবীদের দান করবে। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৩৪)
২) লিল্লাহ বোর্ডিং, গরীব পরীক্ষার্থী, অভাবী, মিসকিন (যারা ফিতরা পাওয়ার উপযুক্ত) তাদেরকে কুরবানীর পশুর চামড়া অথবা বিক্রিকৃত অর্থ দান করবে।
৩) পশুর চামড়া বিক্রির সময় অবশ্যই যথাযথ মূল্যে বিক্রি করতে হবে। কারণ এর অর্থ গরীবের হক।
৪) কুরবানীর চামড়া বা মূল্য মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ বা কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকল্পে অথবা শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা হিসেবে প্রদান করা জায়েয হবে না। (মাসাইল ইদাঈন, পৃঃ ১৯২)
কুরবানীর কাযা ঃ
কোন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল কিন্তু কুরবানীর দিন সমূহ (জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) শেষ হয়ে গেছে অথচ সে ব্যক্তি কুরবানী করে নাই। এমতাবস্থায় তাকে একটি বকরী বা এর মূল্য সাদকা দিতে হবে। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৩০)।
তাকবীরে তাশরীক সম্পর্কে ঃ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ'। ৯ই জিলহাজ্জ ফজর সালাত থেকে ১৩ই জিলহাজ্ব আসর সালাত পর্যন্ত (২৩ ওয়াক্ত সালাত) প্রত্যেক ফরয সালাতের পর উপরোক্ত তাকবীরটি কমপক্ষে একবার পড়া ওয়াজিব। একাকী নামায বা জামাতে নামায যে কোন অবস্থায় তাকবীরে তাশরীকটি পড়তে হবে। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের কুরবানী কবুল করুন। আমাদেরকে তার প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল করুন। আমিন!
Subscribe to:
Posts (Atom)