Monday, September 14, 2015

পীর হওয়ার পূর্ব শর্ত গুলো



* হযরত ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি ফিকাহের ইল্ম হাসিল করল কিন্তু তাসাওউফের ইল্ম শিক্ষা করল না, সে ফাসেক আর যে ব্যক্তি তাসাওউফের ইল্ম হাসিল করল, কিন্তু ফিকাহের ইল্ম শিক্ষা করল না, সে জিন্দিক তবে যে ব্যক্তি জাহেরী বাতেনী উভয় ইল্ম শিক্ষা করল সেই সত্যিকারের হক্কানী আলেম
(
মেশকাত শরিফের শরাহ মেরকাত, কাহেরার . ৩১৩ পৃ. এবং বাইরুত . ৪৭৮ পৃ.)
*
হযরত জুনাইদ বোগদাদী (:)বলেন- তুমি আলেম হয়ে সুফী হও,সুফী হয়ে আলেম হয়োনা
ধ্বংস হয়ে যাবে

*
তাছাউফ নিয়ে হাফেজ ইবনে কাইয়্যূম (এর অভিমত
হাফেজ ইবনে কাইয়্যূম "আল ওয়াবিলুস'সায়্যিব মিনাল কালিমিত তায়্যিব" নামক কিতাবের ৬৯ পৃষ্ঠায় তাছাউফ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন তাঁর কিতাব সম্পূর্ণভাবে বুযুর্গগণের বিভিন্ন অবস্থা তাঁদের যিকির আযকার ওজীফার বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে কিতাবের মধ্যে তিনি পীর শায়েখ হওয়ার জন্য শর্ত লিখেছেন যে, কেউ যদি কারো কাছে মুরীদ হতে চায় তাহলে সর্ব প্রথম তাকে লক্ষ করতে হবে, শায়েখ যেন () যিকির কারী হন () যিকির থেকে উদাসীন না হন () সুন্নতের অনুসারী হন () নফস পুজারী না হন () দ্বীন দুনিয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার হন এমন শায়েখ যদি তুমি পাও তাহলে তাঁর আচলকে মজবুতভাবে ধরো
হাফেজ ইবনে কাইয়্যূম কিতাবের ৭১ পৃষ্ঠায় হযরত আল্লামা ইবনে তাইমিয়া এর কথা উল্লেখ করেছেন হাফেজ ইবনে কাইয়্যূম (রহ.) বলেন, একবার আমি শায়েখের খিদমতে উপস্থিত হলাম তিনি ফজরের নামায পড়ে স্থানে বসেই ঠিক দুপুরের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত আল্লাহ আল্লাহ যিকির করছিলেন তিনি আমাকে বললেন, এই যিকির হল আমার সকালের নাস্তা আমি যদি সকালের যিকিরের নাস্তা না খাই তাহলে আমার শক্তি শেষ হয়ে যায় তবে কিছু সময় আমি যিকির করা এজন্য বন্ধ রাখি, যাতে করে নফসকে একটু আরাম দিয়ে পুনরায় যিকিরের জন্য প্রস্তুত করে নিতে পারি

*
ইলমে ফিকাহ কি ?
http://uswatun-hasanah.net/cms_ইলমে-ফিকাহ-উনার-পরিচিতি--প্রয়োজনীয়তা_45_79
ফিকহে হযরত মুজাদ্দিদে যম আলাইহিস সালামইলমে-ফিকাহ-উনার-পরিচিতি--প্রয়োজনীয়তা
উসওয়াতুন হাসানাহ | শাবান, ১৪৩৫ হি:
ফিকহ শাস্ত্র সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় আলোচনাইলমুল ফিকহ’-এর আভিধানিক অর্থ
ইল্ম শব্দটি একবচন, বহুবচনে উলূম বাবে সামিয়া-.এর মাছদার অর্থ-জ্ঞান, শাস্ত্র, তত্ত্ব ইত্যাদি। ফিক্হ শব্দটিও বাবেসামিয়া’-এর মাছদার। শাব্দিক অর্থ- ছহীহ বুঝ, বিচক্ষণতা, সূক্ষদর্শিতা, গভীর জ্ঞান উন্মুক্ত করা ইত্যাদি। সুতরাং একত্রেইলমুল ফিক্হএর অর্থ ফিকাহ শাস্ত্র।দূররুল মুখতারগ্রন্থে রয়েছে- “ফিক্হ বলা হয় কোনো জিনিস সম্পর্কে জানা। সাইয়্যিদ মুফতী আমীমুল ইহসান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেনবক্তব্য হতে বক্তার উদ্দেশ্য অনুধাবন করাকে ফিক্হ বলা হয়।
ইলমুল ফিক্হ’-এর পারিভাষিক সংজ্ঞা:
মুজাদ্দিদে যামান, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফ হতে ছহীহ্  বুঝ বা (বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা প্রাপ্ত) ইল্মকে ফিক্হ বলা হয়। অর্থাবাস্তব জীবনের কর্মপন্থা সংক্রান্ত শরয়ী বিধানাবলী দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে অবগত হওয়ার নাম ফিকহ। এক কথায় ইসলামী শরীয়তকেইফিক্হবলা হয়
ইলমুল ফিকহ’-এর আলোচ্য বিষয়
মানব জীবনের মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত সকল স্তর তথা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আধ্যাত্মিক সর্বস্তরের যাবতীয় কর্মকা- সম্পর্কে ইসলামী বিধানসমূহ আলোচনা এবং এসব বিধানের দলীল প্রমাণ যুক্তিসমূহ উপস্থাপন করাইফিক্হ শাস্ত্রেরআলোচ্য বিষয়
ইলমুল ফিক্হউনার লক্ষ্য উদ্দেশ্য
মানব জীবনের প্রতিটি স্তরে কর্মকা- মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রদর্শিত বিধানসমূহ অবগত হয়ে সে মতে আমল করে হক্বকুল্লাহ হক্বকুল ইবাদ যথাযথ আদায় করে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীকী সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করাই ইলমুল ফিক্হ উনার লক্ষ্য উদ্দেশ্য। 
ইলমুল ফিকহ উনার পত্তি
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ছাড়া নিজ থেকে কোনো কিছুই বলেন না।
অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায়ের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করতেন। নতুন কোনো সমস্যা দেখা দিলে পরামর্শের ভিত্তিতে ফায়সালা করতেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার প্রত্যেক ছাহাবায়ে কিরাম তারকা সাদৃশ্য, তোমরা যে কাউকে অনুসরণ করবে, হিদায়েত পেয়ে যাবে।
অর্থাপ্রত্যেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পৃথক পৃথক মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অর্থাপ্রত্যেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আলাদা আলাদা এক একটা  মাযহাব।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যুগের পরবর্তীতে আরো ব্যাপকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলোকরশ্মি দিক দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রায় সমস্ত পৃথিবীর দেশ জাতি মুসলমানদের সংস্পর্শে আসে। ফলে মানব জীবনের বহু নিত্য-নতুন সমস্যার উদ্ভব হতে থাকে। যেহেতু ইসলামী জীবন ব্যবস্থার হুকুম-আহকাম নিয়ম কানুনসমূহ পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার নানা স্থানে বিস্তৃত পরিসর জুড়ে বর্ণিত রয়েছে। তাই উদ্ভূত সমস্যার সমাধান পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র সুন্নাহ শরীফ খুঁজে বের করা বহু সময় সাপেক্ষ কষ্টসাধ্য বটে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সাধারণের পক্ষে তা সহজ সাধ্য হয়ে উঠে না। অতএব, সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনাকে অল্পায়াসে সমস্যার সঠিক সমাধান করার জন্য একটি ধারাবাহিক শ্রেণীবদ্ধ ফিক্হ শাস্ত্রের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অশেষ দয়া ইহসানে উক্ত অভাব চিরতরে দূরীভূত হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ হাদীছ শরীফসমূহের শানে নযূল, , পরিবেশ পরস্পর সম্পর্কে, নাসেখ মানসুখ ইত্যাদি সম্বন্ধে পূর্ণ ইলম না থাকলে ইসলামী শরীয়ত উনার যে কোনো বিষয় সমাধান দেয়া কোনোক্রমেই শুদ্ধ হবে না। আর সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ইমাম তথা ফকীহগণের বিষয় পরিপূর্ণ ইলম ছিল। উনারা এসব বিষয় পবিত্র কুরআন শরীফ সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ পূর্ণাঙ্গভাবে তাহক্বীক করে ফিক্হ শাস্ত্র সম্পাদন করেন (মাযহাব নির্ধারণ করেন) পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে ফিক্হ শাস্ত্রের কোনো শাস্ত্র অস্তিত্ব ছিল না। তখন পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঙ্গে একীভূত ছিল। হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে ইলমুল ফিকাহ একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। হযরত ইমাম যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুগভীর ইলম, প্রজ্ঞা ইলমে লাদুন্নির দ্বারা পবিত্র কুরআন শরীফ সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা বিশ্লেষণ করে ফিক্হ শাস্ত্র সংকলন করেন। হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ১০০০ ছাত্রেরও বেশি ছাত্রদের নিয়ে ফিক্হ শাস্ত্র সম্পাদনায় কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এজন্য তিনি ছাত্রদের মধ্যে যুগশ্রেষ্ঠ চল্লিশজন ফিক্হ তত্ত্ববিদকে নিয়ে একটি সম্পাদনা পরিষদ গঠন করেন, যাদের প্রত্যেকেই হক্কানী আলিম মুজতাহিদগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। উনাদের মধ্যে হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম হযরত মুহম্মদ রহমতল্লাহি আলাইহি ইমাম যুফার রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখযোগ্য। পরিষদের মাসয়ালা রচনার পদ্ধতি এরূপ ছিল, প্রথমত, মাসয়ালার সমাধান পবিত্র কুরআন শরীফে অনুসন্ধান করা হত এবং প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সূত্রে সমাধান পেলেই তা লিপিবদ্ধ করা হতো। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভিন্নমুখী উক্তি পরিলক্ষিত হলে তার শানে নুযুল, নাসেখ, মানসুখ, পরিবেশ সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনার পর যা সঠিক বলে সকলে বিবেচনা করতেন, সমাধানই লিপিবদ্ধ করতেন। বিতর্কমূলক মাসয়ালাসমূহে হযরত ইমাম যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শেষ জীবন মুবারকের পবিত্র হাদীছ শরীফকে গ্রহণ করতেন। পবিত্র সুন্নাহ শরীফ দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত না হতে পারলে ইজমার প্রতি দৃষ্টি দিতেন। সর্বশেষে ক্বিয়াস ইসতিহসান দ্বারা মীমাংসা করতেন। যেহেতু ফিক্হ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মূল বুনিয়াদ বা চারটি যথাঃ ১। পবিত্র কুরআন শরীফ ২। পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ৩। পবিত্র ইজমায়ে উম্মাহ ৪। পবিত্র ছহীহ্ ক্বিয়াস। হযরত ইমামে যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রত্যেকটি মাসয়ালা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যালোচনার পর লিপিবদ্ধ করতেন। সুদীর্ঘ ২২ বছর এরূপ অক্লান্ত কোশেশের পর ১২৪ হিজরীতে সম্পাদনের কাজ সমাপ্ত করেন এবং পাঁচ লক্ষ মাসয়ালা সন্নিবেশিত হয়। যা ফিকহে হানীফীয়ামে সর্বত্র প্রসিদ্ধি লাভ করে
সূত্র : আল বাইয়্যিনাত শরীফ

*
ইলমে তাসাউফ কি ?
http://www.annur.it/products/à¦à¦²à¦®à§-তাসাà¦à¦«/
-
এদেশের মানুষ সাধারণত ধর্মপরায়ণ তাদের ধর্ম পরায়ণতার সুযোগ নিয়ে সমাজে বেশ কিছু ব্যবসায়ী পীরের আবির্ভাব ঘটেছে- যাদের ভিতর হক্কানী পীর (যারা আল্লাহর রাস্তায় সঠিক পথ প্রদর্শক)-এর দশটি আলামতের কোন একটিও পাওয়া যায় না
**
কামেল পীরের বৈশিষ্ট্য: ইমাম গা্জ্জালী (:)
------------------
, একজন কামেল পীরের বৈশিষ্ট্যগুলোর
মধ্যে প্রথমটি হলো তাঁকে আল্লাহ্ তালার নৈকট্যপ্রাপ্ত
বান্দা (কুরবাত) রাসূলুল্লাহ্ (:)-এর নায়েব (প্রতিনিধি)
হিসেবে দ্বীনের (ধর্মের) যাহেরী (প্রকাশ্য)
এবং বাতেনী (আধ্যাত্মিক) জ্ঞানে একজন আলেম বা জ্ঞান
বিশারদ হতে হবে মোট কথা, ইসলামী জ্ঞানের সকল
শাখায় তাঁর অগাধ জ্ঞান থাকতে হবে তাঁকে আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কেও জানতে হবে
, দ্বিতীয়তঃ তাঁকে আরেফ বা ভেদের রহস্য
সম্পর্কে জ্ঞানী হতে হবে তাঁর ইহ্সান
অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, যেমন মহানবী (:)
এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর এবাদত এমনভাবে করো যেন
তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো, আর যদি না দেখতে পাও
তবে এটি জানো যে তিনি তোমাকে দেখছেন” (আল
হাদীস) একজন আরেফ তাঁর অন্তরে সাক্ষ্য দেবেন
যে আল্লাহ্ তালা তাঁর যাত মোবারক, গুণাবলী কর্মে এক
অনন্য
, তৃতীয়তঃ কামেল পীর তাঁর পীরের
তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যেই পরিশুদ্ধ তাঁকে নফস
তথা একগুঁয়ে সত্তার বিভিন্ন স্তর বা পর্যায়, রোগ ত্রুটি-
বিচ্যুতি সম্পর্কে ওয়াকেফহাল হতে হবে শয়তান কোন্
কোন্ পদ্ধতিতে কলব্ বা অন্তরে প্রবেশ
করতে পারে তাও তাঁকে জানতে হবে তাঁর মুরীদদের
পরিশুদ্ধ করা এবং কামেলিয়াত বা পূর্ণতার পর্যায়ে উন্নীত করার
সকল পদ্ধতিও তাঁর জানা থাকা প্রয়োজন
, চতুর্থতঃ তরীকতের
পথে অনুসারীদের পথ দেখানোর ক্ষেত্রে একজন
কামেল পীরের প্রয়োজন তাঁর পীর কেবলার এজাযত
বা অনুমতি
, বস্তুতঃ একজন কামেল পীরের বৈশিষ্ট্য গুণ
হলো তাঁকে দেখলেই আল্লাহর কথা স্মরণ হবে, তাঁর
কথাবার্তা শুনলে ঈমান সজীব চাঙ্গা হয়ে উঠবে

**
হযরত বড়পীর (রহ.) পীর বা মুর্শিদের জন্য নিম্নোক্ত পাঁচটি গুণ থাকা অবশ্য কর্তব্য বলে বর্ণনা করেছেন---------
(
) শরীয়তে পরিপূর্ণ জ্ঞানসম্পন্ন আলেম হওয়া
(
) 'লমে হাকীকত সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞান থাকা
(
) সাক্ষাত্ প্রার্থীর সাথে স্নিগ্ধ মার্জিত ব্যবহার এবং প্রফুল্ল বদন সন্তুষ্টচিত্তে দর্শন দান করা
(
) দীন-হীনদের সাথে কথায় কাজে নম্রতাপূর্ণ ব্যবহার করা
(
) ভক্তবৃন্দের অন্তরের ব্যাধিসমূহ নির্ধারণপূর্বক তা দূরীকরণের উপায় সম্বন্ধে অভিজ্ঞ হওয়া নিজেকে রিয়া, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, গর্ব-অহমিকা ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখা, কর্তব্যকর্মে শৈথিল্য এবং আরামপ্রিয়তা দূরীভূত করা
বড়পীর (রহ.)-কে একদা এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ফকীর সম্পর্কে জবাবে তিনি বললেনঃ "ফকীর" শব্দের "ফে" হরফ বলে যে, তুমি মহান আল্লাহর ইচ্ছার ওপরে নিজেকে ফানা করে দাও এবং আল্লাহ্ ব্যতীত যাবতীয় সৃষ্ট বিষয়বস্তু হতে হূদয়কে মুক্ত করে ফেল "ক্কাফ" হরফ বলে যে, তোমার ক্বলবকে আল্লাহ-প্রেমের শক্তি দ্বারা মজবুত কর এবং তাঁর সন্তুষ্টিতেই সদাসর্বদা নিয়োজিত থাক "ইয়া" বলে যে, প্রত্যাশা আল্লাহরই নিকট কর এবং তাঁরই অবলম্বন এবং লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা প্রভৃতি হীন প্রবৃত্তি হতে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর দিকে রুজু কর অন্যত্র বলেছেন, পরিপূর্ণভাবে রাসূলে মকবুল (.)-এর অনুসারী হও তাঁর নসীহতসমূহ মেনে চল এবং সাবধানতার সাথে বেদায়াতসমূহ হতে মুক্ত থাক ধৈর্যধারণ করাকে আপন অভ্যাসে পরিণত কর জেনে রেখো, প্রত্যেক দুঃখের পর সুখ নিশ্চয়ই আসবে বিপদাপদে আশা হারিয়ে ফেল না আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাক পাপে লিপ্ত হয়ো না; বরং তওবা করে পাপরাশি ধৌত করে পবিত্র হয়ে যাও আল্লাহর দরজায় সর্বদা পড়ে থাক দরজা কখনো পরিত্যাগ করো না

**
শায়েখ পীর হওয়ার জন্য যে সব শর্ত জরুরী..............শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী (:)

(
) পীর হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হল, কোরআন,
হাদীসের আলেম হওয়া (আল কওলুল জামিল ২০
পৃ.)
(
) পীর হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হল,
ন্যায়নীতিবান খোদাভীরু হওয়া
কবীরা গোনাহ
থেকে বেঁচে থাকবে এবং ছগীরা গোনাহও
বার-বার করবে না (আল কওলুল জামিল ২৪ পৃ.)
(
) পীর হওয়ার জন্য তৃতীয় শর্ত হল,
দুনিয়াত্যাগী আখেরাতমুখী হওয়া যিকির
মামূলাত নিয়মিত পালন করা এবং সঠিক
হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সুন্নতে মুয়াক্কাদা
নফল ইবাদত সময়মত আদায় করা
অন্তরে সর্বদা আল্লাহ পাকের স্বরণ রাখা
যাকে 'ইয়াদ-দাশত' বলা হয়, তা যেন
অন্ত্মরের স্থায়ী গুণে পরিণত হয়ে যায় (আল
কওলুল জামিল ২৫ পৃ.)
(
) পীর হওয়ার জন্য চতুর্থ শর্ত হল,
কাজের আদেশ অস কাজের নিষেধ করা
সঠিক জ্ঞানের অধিকারী হওয়া, কথা
কাজে বিশ্বস্ত থাকা যেন তার আদেশ-
নিষেধের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা যায়
যেমন আল্লাহ পাক বলেন,
ﻣِﻤَّﻦْ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻥَ ﻣِﻦَ
ﺍﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀ "যে সব সাক্ষীগণের সাক্ষী দেওয়ার
প্রতি তোমরা সন্ত্মুষ্ট থাকো, তাদের
সাক্ষী গ্রহণ করো" তাহলে পীরের
প্রতি কেমন ধরনের সুধারণা হওয়া উচিত?
কারণ সাক্ষী গ্রহণ করার
ক্ষেত্রে যদি সাক্ষীগণের বিশ্বস্ত্ম হওয়ার
প্রয়োজন হয়, তাহলে পীর হওয়ার জন্য
বিশ্বস্ত্ম হওয়া কত বেশি প্রয়োজন
হওয়া উচিত (আল কওলুল জামিল ২৫ পৃ.)
সাক্ষী দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি সাক্ষীগণের
বিশ্বস্ত্ম হওয়ার প্রয়োজন হয়, যা পার্থিব
বিষয় তাহলে ঈমানের সত্যতা প্রমাণ করার
জন্য বাইয়াত গ্রহণকারী পীরের জন্য
মুত্তাকী, পরহেজগার বিশ্বস্ত্ম
হওয়া আরো বেশি প্রয়োজন, কারণ তা ঈমানী
ইসলাহী বিষয় আর তার জন্য সুন্নতের অনুসরণ
করাও জরুরী লোক সমাজে পীরের বিশ্বস্ত্ম
হওয়ার জন্য জাহেরী বাতেনী গোনাহ
থেকে বেঁচে থাকা এবং ছগীরা গোনাহ থেকেও
বেঁচে থাকা জরুরী
(
) পীর হওয়ার জন্য পঞ্চম শর্ত হল, অনেক
দিন ধরে পীর-মাশায়েখের
সোহবতে থেকে আদব আখলাক শিক্ষা করা
বাতেনী নূর হাসিল করা এবং 'সাকিনা'
অর্থা সবর-ধৈর্য বিনয়-নম্রতার গুণ অর্জন
করা কারণ আল্লাহ পাকের নিয়ম হল, কোন
মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত্ম দ্বীন হাসিল
করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে কোন বুযুর্গ
ব্যক্তির সঙ্গ লাভ
না করবে এবং তাদেরকে দেখে দেখে ভাল
গুণগুলো শিক্ষা না করবে (আল কওলুল জামিল
২৬ পৃ.)
ফায়দা : এখানে আল্লাহ পাকের নিয়মের
কথা বলা হচ্ছে, সঠিক তরিকায় দ্বীন ঈমান
হাসিল করতে হলে, কোন ওলী-মুর্শিদ বুযুর্গ
ব্যক্তির
সোহবতে থাকা এবং তাদেরকে দেখে দেখে ভাল
আমল ভাল গুণগুলো গ্রহণ করা জরুরী যেমন
অনেক সাহাবা কেরাম (রা.) কিতাবী ইল্ম
শিক্ষা করার তেমন বেশি সুযোগ পাননি
কিন্ত্মু তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোহবতে থেকে
তাঁকে দেখে দেখে যা কিছু শিক্ষা করেছিলেন
এবং তাঁর যে সুন্নতসমূহ তারা আমলের জন্য
গ্রহণ করেছিলেন, তা তাদের ঈমান-ইসলাম
হেদায়েত পাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল যার
সত্যতা প্রমাণের জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও
বলেছিলেন, যারাই আমার সাহাবাদের অনুসরণ
করবে তারাই হেদায়েত পাবে
এমনিভাবে পরবর্তী যুগেও এই একই
নিয়মে দ্বীন হাসিল করার নিয়ম চলে আসছে
সুতরাং বিকল্প কোন তরিকায় দ্বীন ঈমান
পাওয়ার আশা করা নিতান্ত্ম গোমরাহী যেমন
'
এলাউস সুনান' নামক কিতাবে বলা হয়েছে,
কোন কামেল শায়েখের হাতে বাইয়াত
হয়ে তার সোহবতে থেকে আখলাক-চরিত্র
সংশোধন করানো ছাড়া বাতেনী ইসলাহ
পাওয়া সম্ভব নয় সুতরাং যারা মনে করেন,
শুধু মাদরাসায় কিতাবের দরসে বসে ইল্ম
শিক্ষা করার দ্বারা আখলাক-চরিত্র সঠিক
করে নিতে সক্ষম হবে, তারা অনেক
বেশি গোমরাহ
(
এলাউস সুনান ১৮ . ৪৫৪ পৃ. হাদীস নং ৬০৬২)

**
কামেল পীরের আলামত: মাওলানা আশরাফ আলী দেওবন্দী

(
) পীর সাহেব কুরআন, হাদীস মাসলা মাসায়েল সম্পর্কে আলেম হবেন তবে ইলমের শেষ মর্তবা সব ইলম সম্পর্কে আলেম হওয়ার আবশ্যক
(
) পীর সাহেব আকীদা-বিশ্বাস আমল শরীয়তের মোয়াফেক স্বভাব চরিত্র অন্যান্য গুণাবলী যে রকম শরীয়তে চায় সে রকম হওয়া দরকার
(
) পীর সাহেবের মাঝে লোভ টাকা পয়সা, সম্মান, প্রতিপত্তি, যশঃ সুখ্যাতির লিপ্সা থাকবে না নিজে কামেল হওয়ার দাবী করবে না কেননা, এটাও দুনিয়া মহব্বতেরই অন্তর্ভূক্ত
(
) তিনি কোন কামেল পীরের খেদমতে দীর্ঘ দিন থেকেছেন তাদের থেকে বাতেনী নূর শান্তি লাভ করেছেন তিনি কোন হক্কানী শায়েখ থেকে কামেল হয়েছেন অর্থা কামেল শায়েখ থেকে এসলাহের ইলম হাসিল করেছেন কেননা, আল্লাহ পাকের রীতি চলে আসছে যে, কোন ব্যক্তি সফলতা লাভ করতে পারে না যতক্ষণ সফলকামীদেরকে না দেখে যেমন আলেমগণের খেদমতে থাকা ছাড়া ইলম হাসিল করা এছাড়া আন্যান্য জ্ঞানের ব্যাপারে একই নিয়ম তাই পথের ভাল মন্দ কোন কামেল শায়েখ থেকে শিখতে হয়
(
) সমসাময়ীক পরহেযগার মুত্তাকী আলেমগণ পীরগণ তাকে শায়েখ অনুসরণের যোগ্য মনে করবেন
(
) দুনিয়াদার ফাসেক লোকদের অপেক্ষায় দ্বীনদার লোকেরাই তার প্রতি বেশী ভক্তি রাখে
(
) তাঁর মুরীদের মধ্যে অধিকাংশ রকম হবে যে, তাদের অধিকাংশ হক্ক সঠিক পথে চলে
(
) মুরীদদেরকে পথের ভাল মন্দ শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে তিনি মন দিয়ে তার মুরীদদেরকে
আল্লাহরওলী বানানোর চেষ্টা করেন তাদেরকে নরমে গরমে সংশোধন করেন
(
) তার সোহবতে কিছুদিন যাব থাকলে দুনিয়ার মহব্বত কম হয় এবং আখেরাতের চিন্তা বেশী হতে থাকে
(
১০) পীর কামেল তিনি নিচেও রীতিমত যেকের আযকার বিভিন্ন সময়ে হাদীসের বর্ণিত দোয়াগুলো আমলের উপর পাবন্দী করেন অন্তরকে সর্বদা আল্লাহ পাকের সাথে মিলিয়ে রাখার চেষ্টা করেন তিনি নিজে সর্বদা আমলের প্রতি পাবন্দী করেন অন্ততঃপক্ষে আমল করার পাক্কা ইচ্ছা রাখেন
(
কসদুল সাবীল, আশরাফ আলী থানভী. থেকে গৃহিত)

No comments:

Post a Comment