Sunday, September 13, 2015

যারা বলেন ৩ মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন জায়গা যিয়ারত করা যাবেন এবং রওযা যিয়ারতের সূন্নত


Top of Form
আজকাল একদল লোক বিশেষ করে ইবনে তাইমিয়া তার সমর্থকরা নিয়ত করে মাজার জিয়ারতের জন্য সফর করার ব্যাপারে হাদীস শরীফের ভুল বা মনগড়া ব্যাখ্যা করে থাকে। এমনকি ইবনে তাইমিয়া তার ফতওয়ায়ে কোররাতে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা শরীফও নিয়ত করে জিয়ারতের জন্য সফর করা নিষেধ করেছে। (অথচ তাদের ব্যক্তিগত আমল ছিল এর বিরোধী)
তারা ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ বর্ণনা করে থাকে॥

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তিন মসজিদ ছাড়া সফর করো না, মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আক্বছা আমার এই মসজিদ।
অথচ উপরোক্ত হাদীস শরীফ কবর বা মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা সংক্রান্ত নয়, ইহা মসজিদে সফর করা সম্পর্কিত। আমাদের ফতওয়ার বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক।
উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় নিম্নোক্ত হাদীস শরীফে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন॥
:
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন কোন ব্যক্তি যদি ঘরে নামাজ পড়ে তবে তার এক নামাজে॥ এক নামাজের সওয়াব পাবে। আর যদি পাঞ্জেগানা মসজিদে নামাজ পড়ে তবে এক নামাজে॥ পঁচিশ নামাজের সমান সওয়াব পাবে। আর যদি জুমুআর মসজিদে এক নামাজ পড়ে তবে পাঁচশ নামাজের সওয়াব পাবে আর যদি মসজিদুল আক্বছায় এক নামাজ পড়ে তবে পঞ্চাশ হাজার নামাজের সওয়াব পাবে। আর মসজিদুল নববীতে যদি এক নামাজ পড়ে তবেও পঞ্চাশ হাজার নামাজের সওয়াব পাবে। এবং যদি ক্বাবা শরীফে এক নামাজ পড়ে তবে এক লাখ নামাজের সওয়াব পাবে। (ইবনে মাজা, মেশকাত)

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহম্মদ ইউসুফ বিন নূরী বলেন:
জমহুর উম্মত এর মাযহাব হল রওজা মোবারক জিয়ারত করা উত্তম ইবাদত, আর নিয়ত করে সফর করা শুধু জায়েজই নয় বরং মোস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত এতে কোন প্রকার অসুবিধা নাই। (মা আরিফুস সুনান, শরহে তিরমিযী, খন্ড , পৃঃ৩২৯)

এই হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উক্ত হাদীস দ্বারা সাধারণভাবে সফর নিষিদ্ধ হওয়া বুঝায় না। কেননা কোন কোন সফর ওয়াজিব যেমন॥ হজ্বের নিয়তে সফর করা, জ্বিহাদের জন্য সফর, ইলম অর্জনের জন্য সফর, হিজরতের জন্য সফর এবং আরোও অন্যান্য সফর সকলের মতে জায়েজ হয়। তা হল হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা মোবারক জিয়ারত কি করে নাজায়েজ হবে? (ফতহুল বারী ৩য় খন্ড, পৃঃ৫০, উমদাতুল ক্বারী খন্ড পৃঃ২৫৩)

হাফিজে হাদীস শায়েখ আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন॥
:
হুকুমের উদ্দেশ্য হলো শুধু মসজিদের সাথে সস্পৃক্ত। মসজিদত্রয় ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে নামাজের জন্য সফর করা নিষিদ্ধ। তবে যদি মসজিদ ব্যতীত সালেহগণের (কবর) জিয়ারত, জীবিত-গণের সাথে সাক্ষাৎ, ইলম অর্জন, ব্যবসায় ভ্রমনের জন্য সফর করে তা হাদীসের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। (ফতহুল বারী ৩য় খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)

শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন॥
অর্থঃ কতক আলেমের মতে, এখানে মসজিদের কথা বলা হয়েছে অর্থাতিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের দিকে ভ্রমন করা জায়েজ নহে, মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র ভ্রমন হুকুমের অন্তর্ভূক্ত নহে। (আশআতুল লোমআত ১ম খন্ড ৩২৪ পৃঃ

তাই আমরা এখানে বিস্তারিত দলিল॥আদিল্লাসহ নিয়ত করে কবর বা মাজার শরীফ জিয়ারত করার জন্য সফর করার উপর ফতওয়া প্রকাশ করলাম।

(
) কবর জিয়ারত সম্বন্ধে হাদীস শরীফে আছে
(
): হযরত বুরহিদাহ্ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পারো (মুসলিম শরীফ)
(
) অন্য হাদিস শরীফ উনার মধ্যে আছে: হযরত ইবনে মসউদ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পার। কেননা উহা দুনিয়ার আসক্তিকে কমায় এবং আখিরাতকে স্মরণ করায়। (ইবনে মাযাহ)

(
) কবর জিয়ারতের বৈধতা প্রসঙ্গে বিভিন্ন হাদীস পরিলক্ষিত হয়, আর সমস্ত হাদীসের ব্যাখ্যা হাফেজে হাদীস আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি দিয়েছেন এভাবে:
জেনে রাখুন পুরুষ মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা সমস্ত হাদীসের রায় অনুযায়ী মোস্তাহাব প্রমাণিত, তবে মহিলাদের ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। (ফতহুল বারী ফি শরহে বোখারী ৩য় খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন: সাইয়্যিদাহ্ ফাতিমা রাদিআল্লাহু আনহু প্রতি শুক্রবার হযরত হামযাহ্ রাদিআল্লাহু আনহু এর কবর জিয়ারত করতে যেতেন, অনুরূপভাবে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিআল্লাহু আনহু স্বীয় ভ্রাতা আবদুর রহমান রাদিআল্লাহু আনহু এর কবর জিয়ারত করার জন্য মক্কা শরীফ যেতেন। (উমদাতুল ক্বারী ফি শরহে বোখারী)

তাবেয়ী মুহম্মদ বিন নোমান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন॥ যে ব্যক্তি প্রত্যেক শুক্রবার আপন মা॥বাপের অথবা তাঁদের মধ্যে একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং মা॥বাপের সহিত সদ্ব্যব্যবহারকারী বলে লেখা হবে। (বায়হাকী)

হাদীসেও এককভাবে কবর জিয়ারত করার কথা বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি তাঁর মাতা॥পিতার কবর জিয়ারত করতে যাবে সে বাড়ী থেকে নিয়ত করেই রওয়ানা হবে অর্থাজিয়ারতকারী একমাত্র কবর জিয়ারত করার জন্যই কবরস্থানে গমন করবে। আর ক্ষেত্রে দূর বা নিকট এর কোন পার্থক্য নাই। নিকটের যে হুকুম, দূরেরও একই হুকুম।

প্রসঙ্গে ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি ইমাম আযম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বরকত হাসিল করি। যখন আমার কোন সমস্যা দেখা দেয় আমি তাঁর মাজার শরীফে এসে প্রথমে দুরাকাত নামাজ আদায় করি। অতঃপর তাঁর উসিলা দিয়ে আল্লাহ্ পাকের নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য প্রার্থনা করি। তা অতি তাড়া তাড়ি সমাধান হয়ে যায়। (মুকাদ্দিমা,শামী ১ম খন্ড ৫৫ পৃঃ)

হুযূর পাক (:) এরশাদ ফরমান: “আমি যদি সেখানে থাকতাম, তাহলে আমি তোমাদেরকে মূসা (:)-এর মাযারটি দেখাতাম, যেটি লাল বালির পাহাড়ের সন্নিকটে পথের ধারে অবস্থিত।
বোখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, বই নং ২৩, হাদীস নং ৪২৩
এই হাদীস আবারও রাসূলে খোদা (:)-এর কাছ থেকে একটিনস’ (স্পষ্ট দলিল) এই মর্মে যে তিনি আম্বিয়া (:)-গণের মাযার-রওযা যেয়ারত পছন্দ করতেন; উপরন্ত, তিনি সাহাবা--কেরাম (রা:)-এর কাছে জোরালোভাবে তা ব্যক্তও করেছেন।

উপলব্ধির জন্যে নিম্নে পেশকৃত হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এটি মাযার-রওযা যেয়ারতের আদব পালনে সাহাবা--কেরাম (রা:)-এর আকীদা-বিশ্বাসেরও প্রতিফলন করে।
হযরত সাইয়্যেদাহ আয়েশা (রা:) বর্ণনা করেন: “যে ঘরে মহানবী (:) আমার পিতা (আবূ বকর - রা:)-কে দাফন করা হয়, সেখানে যখন- আমি প্রবেশ করেছি, তখন আমার মাথা থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলেছি এই ভেবে যে আমি যাঁদের যেয়ারতে এসেছি তাঁদের একজন আমার পিতা অপরজন আমার স্বামী। কিন্তু আল্লাহর নামে শপথ! যখন হযরত উমর ফারূক (রা:) ওই ঘরে দাফন হলেন, তখন থেকে আমি আর কখনোই ওখানে পর্দা না করে প্রবেশ করি নি; আমি হযরত উমর (রা:)-এর প্রতি লজ্জার কারণেই রকম করতাম।” [মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা, হাদীস # ২৫৭০১]

ইমাম নূরুদ্দীন হায়তামী (রহ:) এই হাদীসটি সম্পর্কে বলেন: “এটি ইমাম আহমদ (রহ:) কর্তৃক বর্ণিত এবং এর বর্ণনাকারীরা সবাই সহীহ মানব।” [মজমাউয্ যাওয়াইদ, :৪০, হাদীস # ১২৭০৪]
ইমাম আল-হাকিম (রহ:) এটি বর্ণনা করার পর বলেন, “এই হাদীস বোখারী মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।” [মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীস # ৪৪৫৮]
জরুরি জ্ঞাতব্য: প্রথমতঃ এই হাদীসে প্রমাণিত হয় যে শুধু আম্বিয়া (:)-এর মাযার-রওযা নির্মাণ- ইসলামে বৈধ নয়, পাশাপাশি সালেহীন তথা পুণ্যবান মুসলমানদের জন্যেও তা নির্মাণ করা বৈধ। লক্ষ্য করুন যে হাদীসেবায়তবাঘরশব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। মানে মহানবী (:)-এর রওযা শরীফের সাথে সর্ব-হযরত আবূ বকর (রা:) উমর (রা:)-এর মাযার-রওযাওএকটি নির্মিত ঘরের অভ্যন্তরেঅবস্থিত ছিল।

দ্বিতীয়তঃ হযরত উমর ফারূক (রা:)-এর উক্ত ঘরে দাফনের পরে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) পূর্ণ পর্দাসহ সেখানে যেয়ারতে যেতেন। এটি এতদসংক্রান্ত বিষয়ে হযরতে সাহাবা--কেরাম (রা:)-এর আকীদা-বিশ্বাস প্রতিফলনকারী স্পষ্ট দলিল, যাতে বোঝা যায় তাঁরা মাযারস্থদের দ্বারা যেয়ারতকারীদের চিনতে পারার ব্যাপারটিতে স্থির বিশ্বাস পোষণ
করতেন। হাদীসটির স্পষ্ট বর্ণনার দিকে লক্ষ্য করুন। তাতে বলা হয়েছেহায়া মিন উমর’, মানে হযরত উমর (রা:)-এর প্রতি লজ্জার কারণে হযরত আয়েশা (রা:) ওখানে পর্দা করতেন।

*
তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ্ বলেছেন,‘আমরা রাসুলের সাথে শহীদদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা হতে বের হলাম। যখন আমরাহাররে ওয়াকিমনামক স্থানে পৌঁছালাম কয়েকটি কবর লক্ষ্য করে তাঁকে বললাম : হে আল্লাহর নবী! এগুলো কি আমাদের মুসলিম ভ্রাতাদের কবর? তিনি বললেন : কবরগুলো আমার সাহাবীদের। যখন আমরা শহীদদের কবরের নিকট পৌঁছালাম তিনি বললেন : কবরগুলো আমাদের ভ্রাতৃবর্গের।
সুনানে ইবনে দাউদ,২য় খণ্ড,পৃ..২১৮,হাদীস নং ৩৫৭,কিতাবুল মানাসিক,জিয়ারতে কবর অধ্যায়।

*
মুসলিম হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.) শেষ রাত্রে জান্নাতুল বাকীর গোরস্তানে যেয়ে এভাবে সালাম করতেনআস্ সালামু আলা দারে কাওমি মুমিনীন।
সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৬৩,হাদীস নং ১০২,কিতাবুল জানায়িয।

*
ইবনে আবি শাইবাহ বলেছেন,‘মহানবী (সা.) প্রতি বছরের শুরুতে ওহুদের শহীদদের কবরের নিকটে গিয়ে এভাবে সালাম দিতেন,‘আসসালামু আলাইকুম বিমা সাবারতুম ফানিমা উকবাদ্দার।
মুসতাদরাকে হাকিম,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৩৩,হাদীস নং ১৩৯৬।
---------
কবর জিয়ারত বিষয়ে বিস্তারিত একটি ওয়েবসাইট লিন্ক:
http://alhassanain.org/bengali/?com=content&id=404
Bottom of Form


No comments:

Post a Comment