তু ঐ সব কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য ছওয়াব হাছিল করা। তাই, এ বিশেষ উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য করে এই মজলিসের নামকরণ করা হয়েছে ঈছালে ছওয়াব মাহফিল- আহলে সুন্নাত অল-জামায়াতের আকায়েদ নসফীপ্রসিদ্ধ কিতাব - ১৭১ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে - জীবিত লোকের দোয়া ও দান-খয়রাত মৃত লোকদের জন্য উপকারী।
আসুন ! জিন্দা ব্যক্তিগণ মৃতদের জন্য কিরূপে দোয়া করবেন, এ সম্পর্কে আঁ হযরত ও ছাহাবায়ে কিরামের এবং আয়েম্মায়ে দ্বীনের আমল ও কওল থেকে দেখি! জীবিতগণ মৃতদের জন্য দোয়া করেছেন কি? তাই মহান আল্লাহ ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের শানে নিম্নোক্ত আয়াতখানি অবতীর্ণ করেছেন-
অর্থাৎ ঃ ঐ সব ব্যক্তিগণ যারা পূর্ববর্তী ঈমানদার ভাইদের ক্ষমা করুন। (সূরা হাশর ১০)
হযরত বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেছেন, আঁ-হযরত (সাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিতেন। তারা যখন কবরস্থানে গমন করবেন, যেন তাদের মধ্য হতে একজন বলেন, ওহে কবরস্থানের মুমিন মুসলমান বাসিন্দারা ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আমরাও তোমাদের সাথী হবো। মহান আল্লাহর কাছে আমাদের ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি প্রার্থনা করি।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, জীবিতদের দোয়া মৃতদের জন্য উপকারী এবং মৃতদের জন্য জীবিতগণের দোয়া করা উচিত।
মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনদে আহমদ ও ইবনে মাজা শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেছেন, জনৈক ব্যক্তি হযরত রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন আমার আব্বাজান মারা গেছেন, অথচ কোন অছীয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ হতে ছদ্কা করি তাতে তিনি উপকৃত হবেন কি? হুযুর বললেন হঁ্যা।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি হুযুরকে জিজ্ঞেস করেন, আমার আম্মা হঠাৎ মারা যান। আমার ধারণা যদি তিনি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে তিনি দান ছদকা করে যেতেন। হুযুর! যদি আমি তার পক্ষ থেকে দান করি, তাহলে তিনি উক্ত দানের ছওয়াব পাবেন কি:? আঁ-হযরত (সাঃ) উত্তরে বললেন হঁ্যা। এই হাদীছটি বুখারী ও মুসলিম স্বীয় কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাছ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত রাসুলকে জিজ্ঞেস করেন, আমার মাতা মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি যদি তার তরফ হতে ছদকা করি এতে তার কোন উপকার হবে কি? তদুত্তরে হুযুর পাক বললেন হঁ্যা। প্রশ্নকারী বলেন আমি বললাম আমার একটি বাগান আছে এবং আপনাকে সাক্ষী করলাম, উক্ত বাগানটি আমার মায়ের তরফ হতে দান করলাম। বুখারী, তিরমিজী, আবু দাউদ ও নাসায়ী শরীফ দ্রষ্টব্য।
হাসান বসরী (রাঃ) ছাদ বিন ওবাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার মাতা মারা যান। আমি কি মায়ের তরফ হতে দান করবো। তিনি বললেন হঁ্যা। আমি বললাম কি ছদকা দেবো? উত্তরে বললেন, পানি পান করার ব্যবস্থা কর। (অর্থাৎ কূপ খনন করে দাও)।
উল্লেখিত হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো, আওলাদ ফরজন্দ যদি ছদকা খয়রাত মা-বাপের মৃত্যুর পর অছীয়ত করুক বা না করুক তাদের রূহের মাগফিরাত কামনার্থে দান করে তবে উক্ত দান-খয়রাতের ছওয়াব তাদের রূহের উপর পৌঁছবে।
মানুষ যা দুনিয়াতে উপার্জন করে উহাই পরকালে ভোগ করবে। মো'তাযিলা ফেরকা উক্ত আয়াত চয়ন করে বলেন, অপরের দান খয়রাত দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোন উপকার সাধিত হবে না। তদুত্তরে বলবো উক্ত আয়াতখানি কাফিরদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। উল্লেখিত আয়াতখানীর হুকুম মানসুখ হয়ে গেছে।
যথা ঃ
হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, আঁ-হযরত বলেছেন, মানুষের উপার্জনের একটা অংশ হতেছে সন্তানাদি।
সুতরাং কুরআন পাকের আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণিত। যথা মুলতাকাল আখবার ৪/৮০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। অর্থাৎ মানুষ যা দুনিয়ায় কামাই করবে তা' পাবে। এখানে আয়াতে উল্লেখিত দ্বারা মানুষের আওলাদ উদ্দেশ্য হতেছে। অথবা ইনসান শব্দ দ্বারা এখানে কাফেরকে বুঝানো হয়েছে। কাফিরদের জন্য পরকালে কিছুই নেই। শুধু দুনিয়ার বুকে যা গুনাহ করেছে উহাই পাবে। অথবা এর অর্থ হবে, যে মুসলমান স্ত্রী বা পুরুষের জন্য মৃত্যুর পর কোন লোক দান-খয়রাত ও কুরআন পাঠ কিছুই না করে তাহলে ঐ ব্যক্তি পরকালে শুধু উহাই ভোগ করবে, যা সে দুনিয়ার বুকে ভাল কাজ করেছে।
সুতরাং আয়াতটি জীবিতদের দোয়া ও দান-খয়রাত মৃতদের জন্য উপকৃত হওয়ার বিপরীত নয় বরং সপক্ষে। মানুষের মৃত্যুর পর সে কিছু আল্লাহ পাকের তরফ থেকে পুরস্কার পাবে, উহা একমাত্র আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ হিসেবে পাবে। অথবা এর লামটা অর্থে ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের কর্মদোষের দরুণ তার উপর শাস্তির ব্যবস্থা হবে। মানুষের মৃত্যুর পর জীবিত ব্যক্তিগণ তাদের জন্য দোয়া অথবা দান-খয়রাত করলে তদ্বারা মৃত ব্যক্তিগণ উপকৃত হন।
এ বিষয় দলিলরূপে ধারাবাহিক কয়েকটি হাদীছ পেশ করছি। যথা ঃ মুসলিম শরীফ ২/৪১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, আঁ-হযরত বলেছেন, মানুষের মৃত্যুর পর তার যাবতীয় নেক আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি নেক আমল এমন ধরনের যার ছওয়াব মৃত্যুর পরেও তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে। (১) ছদকায়ে জারিয়া যেমন ওয়াকফ সম্পত্তি বা মাদ্রাসা, মসজিদ, পান্থশালা ইত্যাদি কায়েম করা। (২) এমন ইলম শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করা যেমন বই পুস্তক, কিতাবাদি প্রণয়ন করা এবং এমন তা'লীম তরবীয়ত দেয়া যাতে সে লোকটি শিক্ষা প্রাপ্ত হয়ে অন্যকে শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়। (৩) এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে সন্তান নামাজ, রোজা, ওয়াজ-নছীহত, জিকর-ফিকর, মুরাকাবা ও মুশাহাদা কালে দোয়াতে লোকটিকে স্মরণ করে। উপরোলি্লখিত হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, জীবিত ব্যক্তির দোয়ায় মৃত ব্যক্তির উপকার হয়। আহলে সুন্নাতুল জামায়াত অর্থাৎ চারি মাযহাবের ইমামদের ইহা সম্মিলিত মত। মো'তাযিলা (মুসলমানদের বাতিল একটি দল) ফেরকার অভিমত হলো, মানুষের মত্যুর পর তাদের পক্ষ থেকে জীবিতদের দ্বারা যত রকমের নেককাজ করা হউক তাতে কোন উপকার হবে না।
বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ১৭৭ পৃষ্ঠায় আছে_
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আঁ-হযরত ছাহাবায়ে কেরামকে নাজাশী, (হাবশার বাদশাহ আসহামা) এর মৃত্যু সংবাদ দিলেন। এরপর তিনি সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, ছাহাবায়ে কেরাম হুযুর এর পেছনে কাতার দিয়ে দাঁড়ালেন; তখন তিনি চার তকবীরে জানাজার নামাজ আদায় করলেন তাঁর থেকে আরোও একটি হাদীছ বর্ণিত আছে যে, আঁ-হযরত হাবশার বাদশাহ নাজাশী যেদিন ওফাত পেলেন সেদিনই ছাহাবায়ে কেরামকে ডেকে বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা কর।
বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ১৭৭ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে-
যিয়াদ বিন আলাকা বলেন, আমি জারীর বিন আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি ঐ দিন কুফার গভর্নর মুগীরা বিন শো'বা মৃত্যু বরণ করেন, জারীর (রাঃ) দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা'য়ালার হামদ ও ছানা পাঠ করে বলেন; ওহে হাজেরীন! আল্লাহ তা'য়ালা যার কোন অংশীদার নেই তাকে ভয় করুন; ধৈর্য ও স্থীরতা আপনাদের একান্ত প্রয়োজন যতক্ষণ না তার স্থলে আরেকজন গভর্নর না আসেন। সত্বর তিনি আসছেন। তৎপর বললেন, আপনারা মরহুম গভর্নরের জন্য মহান আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করুন; কেননা, তিনি মানুষকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন।
অতপর জারীর বললেন, আমি হুযুর এর দরবারে এসে আরজ করেছিলাম, আমি আপনার নিকট ইসলামের বয়াত করবো। তাতে তিনি আমার উপর প্রত্যেক মানুষের জন্য সদুপদেশ প্রদানের শর্তারোপ করেন। একথার উপর আমি তাঁর নিকট বয়াত হয়েছি।
ঈছালে ছওয়াবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কবর ও মাযার যিয়ারত। এ বিষয় আঁ-হযরত নিজে যিয়ারত করেছেন ও উম্মতগণকে যিয়ারত করার জন্য হুকুম দিয়েছেন।
নাসায়ী শরীফ ১ম খণ্ড ২৮৫ পৃষ্ঠায় আছে-
হযরত বুরায়াদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আঁ-হযরত বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর।
নাসায়ী শরীফের ১ম খণ্ড ২৭১ পৃষ্ঠায় আছে-
আউফ বিন মালিক (রাঃ) বলেন, আমি রাসুল পাককে কোন এক মায়্যেতের উপর এ দোয়া করতে শুনেছি, হে প্রভু! তাকে ক্ষমা করুন, রহম করুন, মাফ করুন, তাকে সম্মান জনক আতিথিয়তা দান করুন, তার কবরকে প্রশস্ত করুন, তাকে পানি ও বরফ দ্বারা গোসল দিন এবং তাকে গুনাহ থেকে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়।
আসুন ! জিন্দা ব্যক্তিগণ মৃতদের জন্য কিরূপে দোয়া করবেন, এ সম্পর্কে আঁ হযরত ও ছাহাবায়ে কিরামের এবং আয়েম্মায়ে দ্বীনের আমল ও কওল থেকে দেখি! জীবিতগণ মৃতদের জন্য দোয়া করেছেন কি? তাই মহান আল্লাহ ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের শানে নিম্নোক্ত আয়াতখানি অবতীর্ণ করেছেন-
অর্থাৎ ঃ ঐ সব ব্যক্তিগণ যারা পূর্ববর্তী ঈমানদার ভাইদের ক্ষমা করুন। (সূরা হাশর ১০)
হযরত বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেছেন, আঁ-হযরত (সাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিতেন। তারা যখন কবরস্থানে গমন করবেন, যেন তাদের মধ্য হতে একজন বলেন, ওহে কবরস্থানের মুমিন মুসলমান বাসিন্দারা ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আমরাও তোমাদের সাথী হবো। মহান আল্লাহর কাছে আমাদের ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি প্রার্থনা করি।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, জীবিতদের দোয়া মৃতদের জন্য উপকারী এবং মৃতদের জন্য জীবিতগণের দোয়া করা উচিত।
মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনদে আহমদ ও ইবনে মাজা শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেছেন, জনৈক ব্যক্তি হযরত রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন আমার আব্বাজান মারা গেছেন, অথচ কোন অছীয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ হতে ছদ্কা করি তাতে তিনি উপকৃত হবেন কি? হুযুর বললেন হঁ্যা।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি হুযুরকে জিজ্ঞেস করেন, আমার আম্মা হঠাৎ মারা যান। আমার ধারণা যদি তিনি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে তিনি দান ছদকা করে যেতেন। হুযুর! যদি আমি তার পক্ষ থেকে দান করি, তাহলে তিনি উক্ত দানের ছওয়াব পাবেন কি:? আঁ-হযরত (সাঃ) উত্তরে বললেন হঁ্যা। এই হাদীছটি বুখারী ও মুসলিম স্বীয় কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাছ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত রাসুলকে জিজ্ঞেস করেন, আমার মাতা মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি যদি তার তরফ হতে ছদকা করি এতে তার কোন উপকার হবে কি? তদুত্তরে হুযুর পাক বললেন হঁ্যা। প্রশ্নকারী বলেন আমি বললাম আমার একটি বাগান আছে এবং আপনাকে সাক্ষী করলাম, উক্ত বাগানটি আমার মায়ের তরফ হতে দান করলাম। বুখারী, তিরমিজী, আবু দাউদ ও নাসায়ী শরীফ দ্রষ্টব্য।
হাসান বসরী (রাঃ) ছাদ বিন ওবাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার মাতা মারা যান। আমি কি মায়ের তরফ হতে দান করবো। তিনি বললেন হঁ্যা। আমি বললাম কি ছদকা দেবো? উত্তরে বললেন, পানি পান করার ব্যবস্থা কর। (অর্থাৎ কূপ খনন করে দাও)।
উল্লেখিত হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো, আওলাদ ফরজন্দ যদি ছদকা খয়রাত মা-বাপের মৃত্যুর পর অছীয়ত করুক বা না করুক তাদের রূহের মাগফিরাত কামনার্থে দান করে তবে উক্ত দান-খয়রাতের ছওয়াব তাদের রূহের উপর পৌঁছবে।
মানুষ যা দুনিয়াতে উপার্জন করে উহাই পরকালে ভোগ করবে। মো'তাযিলা ফেরকা উক্ত আয়াত চয়ন করে বলেন, অপরের দান খয়রাত দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোন উপকার সাধিত হবে না। তদুত্তরে বলবো উক্ত আয়াতখানি কাফিরদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। উল্লেখিত আয়াতখানীর হুকুম মানসুখ হয়ে গেছে।
যথা ঃ
হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, আঁ-হযরত বলেছেন, মানুষের উপার্জনের একটা অংশ হতেছে সন্তানাদি।
সুতরাং কুরআন পাকের আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণিত। যথা মুলতাকাল আখবার ৪/৮০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। অর্থাৎ মানুষ যা দুনিয়ায় কামাই করবে তা' পাবে। এখানে আয়াতে উল্লেখিত দ্বারা মানুষের আওলাদ উদ্দেশ্য হতেছে। অথবা ইনসান শব্দ দ্বারা এখানে কাফেরকে বুঝানো হয়েছে। কাফিরদের জন্য পরকালে কিছুই নেই। শুধু দুনিয়ার বুকে যা গুনাহ করেছে উহাই পাবে। অথবা এর অর্থ হবে, যে মুসলমান স্ত্রী বা পুরুষের জন্য মৃত্যুর পর কোন লোক দান-খয়রাত ও কুরআন পাঠ কিছুই না করে তাহলে ঐ ব্যক্তি পরকালে শুধু উহাই ভোগ করবে, যা সে দুনিয়ার বুকে ভাল কাজ করেছে।
সুতরাং আয়াতটি জীবিতদের দোয়া ও দান-খয়রাত মৃতদের জন্য উপকৃত হওয়ার বিপরীত নয় বরং সপক্ষে। মানুষের মৃত্যুর পর সে কিছু আল্লাহ পাকের তরফ থেকে পুরস্কার পাবে, উহা একমাত্র আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ হিসেবে পাবে। অথবা এর লামটা অর্থে ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের কর্মদোষের দরুণ তার উপর শাস্তির ব্যবস্থা হবে। মানুষের মৃত্যুর পর জীবিত ব্যক্তিগণ তাদের জন্য দোয়া অথবা দান-খয়রাত করলে তদ্বারা মৃত ব্যক্তিগণ উপকৃত হন।
এ বিষয় দলিলরূপে ধারাবাহিক কয়েকটি হাদীছ পেশ করছি। যথা ঃ মুসলিম শরীফ ২/৪১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, আঁ-হযরত বলেছেন, মানুষের মৃত্যুর পর তার যাবতীয় নেক আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি নেক আমল এমন ধরনের যার ছওয়াব মৃত্যুর পরেও তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে। (১) ছদকায়ে জারিয়া যেমন ওয়াকফ সম্পত্তি বা মাদ্রাসা, মসজিদ, পান্থশালা ইত্যাদি কায়েম করা। (২) এমন ইলম শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করা যেমন বই পুস্তক, কিতাবাদি প্রণয়ন করা এবং এমন তা'লীম তরবীয়ত দেয়া যাতে সে লোকটি শিক্ষা প্রাপ্ত হয়ে অন্যকে শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়। (৩) এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে সন্তান নামাজ, রোজা, ওয়াজ-নছীহত, জিকর-ফিকর, মুরাকাবা ও মুশাহাদা কালে দোয়াতে লোকটিকে স্মরণ করে। উপরোলি্লখিত হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, জীবিত ব্যক্তির দোয়ায় মৃত ব্যক্তির উপকার হয়। আহলে সুন্নাতুল জামায়াত অর্থাৎ চারি মাযহাবের ইমামদের ইহা সম্মিলিত মত। মো'তাযিলা (মুসলমানদের বাতিল একটি দল) ফেরকার অভিমত হলো, মানুষের মত্যুর পর তাদের পক্ষ থেকে জীবিতদের দ্বারা যত রকমের নেককাজ করা হউক তাতে কোন উপকার হবে না।
বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ১৭৭ পৃষ্ঠায় আছে_
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আঁ-হযরত ছাহাবায়ে কেরামকে নাজাশী, (হাবশার বাদশাহ আসহামা) এর মৃত্যু সংবাদ দিলেন। এরপর তিনি সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, ছাহাবায়ে কেরাম হুযুর এর পেছনে কাতার দিয়ে দাঁড়ালেন; তখন তিনি চার তকবীরে জানাজার নামাজ আদায় করলেন তাঁর থেকে আরোও একটি হাদীছ বর্ণিত আছে যে, আঁ-হযরত হাবশার বাদশাহ নাজাশী যেদিন ওফাত পেলেন সেদিনই ছাহাবায়ে কেরামকে ডেকে বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা কর।
বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ১৭৭ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে-
যিয়াদ বিন আলাকা বলেন, আমি জারীর বিন আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি ঐ দিন কুফার গভর্নর মুগীরা বিন শো'বা মৃত্যু বরণ করেন, জারীর (রাঃ) দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা'য়ালার হামদ ও ছানা পাঠ করে বলেন; ওহে হাজেরীন! আল্লাহ তা'য়ালা যার কোন অংশীদার নেই তাকে ভয় করুন; ধৈর্য ও স্থীরতা আপনাদের একান্ত প্রয়োজন যতক্ষণ না তার স্থলে আরেকজন গভর্নর না আসেন। সত্বর তিনি আসছেন। তৎপর বললেন, আপনারা মরহুম গভর্নরের জন্য মহান আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করুন; কেননা, তিনি মানুষকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন।
অতপর জারীর বললেন, আমি হুযুর এর দরবারে এসে আরজ করেছিলাম, আমি আপনার নিকট ইসলামের বয়াত করবো। তাতে তিনি আমার উপর প্রত্যেক মানুষের জন্য সদুপদেশ প্রদানের শর্তারোপ করেন। একথার উপর আমি তাঁর নিকট বয়াত হয়েছি।
ঈছালে ছওয়াবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কবর ও মাযার যিয়ারত। এ বিষয় আঁ-হযরত নিজে যিয়ারত করেছেন ও উম্মতগণকে যিয়ারত করার জন্য হুকুম দিয়েছেন।
নাসায়ী শরীফ ১ম খণ্ড ২৮৫ পৃষ্ঠায় আছে-
হযরত বুরায়াদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আঁ-হযরত বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর।
নাসায়ী শরীফের ১ম খণ্ড ২৭১ পৃষ্ঠায় আছে-
আউফ বিন মালিক (রাঃ) বলেন, আমি রাসুল পাককে কোন এক মায়্যেতের উপর এ দোয়া করতে শুনেছি, হে প্রভু! তাকে ক্ষমা করুন, রহম করুন, মাফ করুন, তাকে সম্মান জনক আতিথিয়তা দান করুন, তার কবরকে প্রশস্ত করুন, তাকে পানি ও বরফ দ্বারা গোসল দিন এবং তাকে গুনাহ থেকে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়।
No comments:
Post a Comment