Wednesday, September 9, 2015

" ছেমা–কাওয়ালী জায়েজ কি না "



আসসলামু আলাইকুম ওয়া রাহমতুল্লাহি ওবারাকাতুহ
শরু করছি পরম করুণাময় সেই প্রেমময় জাল্লে জালালু আহাদময় অসীম দয়ালু আল্লাহ সুবাহানু তাআলা তার পেয়ারে নূরময় হাবীব শাফেয়ীন মুজনেবিন রাহমাতালাল্লিল আলামিন আহমদ মোস্তফা মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) উনার উপর দুরুদ পেশ করে এবং আমার দাদা হুজুর আক্তার উদ্দিন শাহ আমার মূর্শীদ কেবলা দয়াল মোখলেছ সাই এর সরণে...
" ছেমাকাওয়ালী জায়েজ কি না  "
আজ কাল কিছু নামধারী কাট মুল্লারা সামা গান কে বেদাত বলে চালানোর অপচেষ্টা করছে ,আসলে অহাবিদের মাথার রাত চিঁরে গেছে ,গান বাঝনা বেদাত কোরআন হাদিসে কোথায় পেলাম না ,
যে সব দরবারে শ্যামা,গজল,কাওয়ালি,বাউল গান,জারি,শারি,মুর্শিদি গান গুলো জিনারা গেয়ে থাকে তাতে তো কোন অবঞ্চাত মুলক কথা পাঠ করে না ,তাতে আল্লাহ,রাসুল,অলি দের গুন গানই গেয়ে থাকে..তাহলে তাদের কে বেদাতি বলে বেড়ায় কেন ওহাবি কাট মুল্লারা..অথচ কিছু নামধারী গায়ক লিখক আছে যাদের গান শুনলে মাথা গরম হয়ে যায় যুবক ছেলেদের..তাদের বিরুদ্দে কোন মিছিল,মিটিং,ফতোয়া,মানব বন্দন,ভাংচুর কিছুই তো করতে দেখি না ? তাদের কথা লিখতে লিখতে আমার একটি গানের কথা মনে পড়ে গেল শুনুন সে গানটি
দিয়ো না গো বাসর ঘরের বাত্তি নিবাইয়া
বন্দ ঘরে অন্দকারে যাবো মরিয়া ,
ভয় কেন পাও প্রানস্বজনী আমায় দেখিয়া
প্রেম সোহাগে কাছে টেনে রাখবো ঝরাইয়া ।।
এই গান গুলু শুনে ওহাবিরা আত্নতৃপ্তির চুকা ডেকুর তুলে আর বলে (লাকুম দিনুকুম অয়ালিয়াদিন) জার জার ধর্ম তার তার কাছে , আপনারাই বলুন কি বলব এদের..যেইটাকে বেদাত বলার দরকার সেইটাকে সালাম করে,আর যেটা রাসুলের সুন্নাত সেটাকে বেদাত বলে...চালিয়ে দেয় এবং সরলপ্রাণ মুসলমানদের ভ্রান্ত আকিদ্বা প্রেরণ করে যাচ্ছে...এই হল আমাদের নামধারী মুসলিম সমাজ...অতচ বিভিন্ন হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় রাসূল (সা:)নিজেই হুকুম করেছেন গান গাওয়ার জন্য এবং সেই গান শুনে তিনি এই উক্তি করেছেন যেমন-(যে কেহ প্রিয়তম স্বরণের গানে বিচলিত না হয় সে করিম(ভদ্র)নহে)...এখন আপনারাই বলুন রাসূল (সা:) ওনার হাদিস কি মিথ্যা নাকি ষড়যন্ত্র করে ওনার সূন্নত গুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে...আসূন আমরা এর প্রতিরোধ গড়ে তুলি...তবে আমার কিছু ব্যক্তিগত মত আছে ভুল হলে মাফ করবেন..সব গান কিন্তু যায়েয না...যদিও গান মনের খুরাক..আশেকের..কিন্তু সীমা লঙ্গন করে নয় বড়পীর আব্দুল কাদীর জিলানী (:)ওনি গান শুনেছেন খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (:)ওনার কাছ থেকে এই ধরনের গান শুনতে হবে বা গাইতে হবে..যেমন আমার দয়াল মোখলেছ সাই অনেক শান গেয়েছেন যেমন...আর আমার কেহ নাই দয়াল মাবুদ তুমি বিনে..আমি বাইতাম যদি তোমার তরী--পাড় করতা তরী কানতাম না আর জনমভরী--পাইতাম যদি তোমারে--আর আমার কেহ নাই দয়াল মাবুদ তুমি বিনে-এরকম অনেক শান গেয়েছেন আর দিবা নিশী চোখের জলে বুক ভাসিয়েছেন..আসলে ধরনের গান এখন খুজে যাওয়া মুশকিল...যার ফলে দিন দিন গুলি ডুবে যাচ্ছে...আমি এখানে কিছু হাদীস এবং বুর্যুগণের মতামত তুলে ধরছি আপনারাই আপনাদের বিবেক খাটিয়ে দেখেন.....কারণ বিবেকহীন মানুষ পশুর চেয়ে অধম....
হযরত দাউদ (আঃ) এর প্রতি নাজিলকৃতজবুর কিতাব (খৃষ্টপুর্ব) ১৫০টি সংগীতের সমষ্টি হযরত দাউদ (আঃ) এর কন্ঠস্বর ছিল সুমধুর ইংরেজীতে জবুর কিতাব কে “Psalms of David” এবং বাংলায়গীত সংহীতা বলা হয় দাঊদ নবীকে ফজিলত বা বিশেষত্ব প্রদান করে হইয়াছিল “ ( সুরা সাবা, রুকু -১০) এই ফজিলত বা বিশেষত্বই ছিল তাঁর সুমধুর সংগীত বিদ্যা সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, তখন হতে তিন হাজার বছর পুর্বেও একজন আল্লাহর নবী আল্লাহর প্রসংশায় সংগীতের আশ্রয় নিয়েছিলেন এতে বুঝা যায় আরাধনায় সংগীতের ব্যবহার প্রকৃত সনাতন ইসলামী হেকমত এটা কোন নুতন আবিষ্কার বা অনৈসলামিক কৌশল বা পদ্ধতি নয়
যাহারা বাক্যাদি শ্রবণ করে এবং যাহা ভাল তাহা অনুসরণ করে – (আল কোরআন)
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলিতেছেনএকদা ঈদের সময় রসুল (সঃ) কাপড় মুড়ি দিয়া শুইয়া আছেন আর দুইজনজারিয়া দফ বাজাইয়াবুওয়াছ যুদ্ধের সংগীত গাহিতেছিল, এমন সময় আমার পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ)সেখানে উপস্থিত হইয়া র্সনা করিতে লাগিলেন হযরত তখন মুখের কাপড় ফেলিয়া দিয়া বলিলেনআবু বকর, তাহাদের (নিজ অবস্থায় ) ছেড়ে দিন, কেন না প্রত্যেক জাতির একটা সব আছে, ইহা আমাদের সবের দিন (বোখারী, মুসলিম , মেশকাত এবনে মাজা )
আনাছ ইবনে মালেক হতে বর্ণিত - মদিনায় রসুল (সঃ) কোন এক স্থানে পদার্পণ করিলেন, তথায় কয়েকজন স্ত্রীলোক দফ বাজাইয়া গান করিতেছিলআমরা বনী নজ্জার গোত্রের স্ত্রীলোক, আমাদের কতইনা সৌভাগ্য যে, মুহাম্মদ(সঃ) আমাদের প্রতিবেশী তখন নবীয়ে করিম (সঃ) বলিলেন- খোদাই জানেন আমি তোমাদের কত ভালোবাসি (ইবনে মাজা, বোখারী , মুসলিম)
ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত আছে - বিবি আয়শা (রাঃ) তাঁহার একজন আনছার বংশীয়া আত্মিয়া বালিকার বিবাহ দেন তখন হযরত (সঃ) শুভাগমণ করিয়া ফরমাইলেন -...নবধুর সঙ্গে একজন গায়িকা পাঠাইয়াছ তো ? তাহারা উত্তরে বলিলেননা তখন নবীয়ে করিম (সঃ) বলিলেনআনছার বংশ খুবই সংগীত প্রিয়, সুতরাং যদি একজন গায়িকা তাহার সঙ্গে পাঠাইয়া দিতে ( আতাইনাকুম আতাইনাকুম গানের জন্য) ( ইবনে মাজা বোখারী)
হে রসুল আপনার গরীব উম্মতগণ ধনী উম্মতগণের অর্ধদিবস (বর্তমান ৫০০ শত বছর) পুর্বে জান্নাতে গমণ করিবে ওহি নাজিল হবার পর রসুল (সঃ) খুব খুশী হয়ে উপস্থিত সাহাবাগণের মধ্যে কেউ সংগীত জানে কি না জানতে চাইলে, এক বদরী বলতে লাগলেন- ‘অনর্থ খাহেশানীতে নফসানীর সর্প আমার কলিজার দরদে বিস্তার লাভ করেছে, যাহার কোন আরোগ্যকারী বা বিষ্ক্রিয়া ধ্বংসকারী নাই, কিন্তু যে বন্ধুর প্রতি আমি আসক্ত, তাঁহারই নিকট আমার তাবিজ এবং বিষ পাথর ইহা শ্রবণে রসুল (সঃ) এবং সাহাবাগণ ভাবান্বিত হয়ে নাচতে লাগলেন এমন কি রসুল (সঃ) স্কন্দ মোবারক হতে চাদর মোবারক মাটিতে পড়ে গেল নৃত্য শেষ হলে আবু সুফিয়ান(রাঃ) এর পুত্র মাবিয়া বললেন- আপনাদের খেলা যে কত সুন্দর ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ) ! তখন রসুল (সঃ) বললেন –“যে ব্যক্তি বন্ধুর জিকির শুনিয়া অজদ করে না সে মহ নয় অতঃপর নবী করিম (সঃ) স্বীয় মহাপবিত্র চাদর খানা ৪০০ শত টুকরা করে উপস্থিত সাহাবাগণের মধ্যে বন্টন করে দিলেন (তফসিরে আহমদী)
হযরত রসুলে করিম (সঃ) সংগীতের সাহায্যের স্বীয় উট পরিচালনার্থেআনজেশা নামক এক গায়ক নিযুক্ত রাখিয়াছিলেন ( বোখারী শরীফ)
হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রূমী (রঃ) এর প্রবর্তিতমৌলবিয়া ত্বরিকায় ( জিকির সমেত গ্রহ-উপগ্রহের অনুকরণে ঘুর্ণায়মান লাটিমের মত নিজ শরীরকে ঘুরায়ে বৃত্তাকারে নৃত্য করা) বাদ্যযন্ত্র সহকারে ছেমা-কাওয়ালী প্রচলন ছিল
সংগীত কি ? – বলাবাহুল্য সংগীত হচ্ছে এমন সুললিত ভারসাম্যপুর্ণ স্বর শ্রবণ করা, যার অর্থ হৃদয়ঙ্গম হয় (এহিয়াউল উলুমুদ্দি)
সংগীত মনকে আন্দোলিত করে এবং মনের প্রবল ভাবকে উত্তোলিত করে তাই আমরা বলি যে, আত্মার সাথে ভারসাম্যপুর্ণ সংগীতের সম্পর্ক রাখার বিষয়টি আল্লাহতায়ালার একটি ভেদ ফলে সংগীত আত্মার মধ্যে আশ্চর্য প্রভাব বিস্তার করে ( এহিয়াউল উলুমুদ্দি)
সংগীত যার অন্তরকে নাড়া দেয়না, সে অসম্পুর্ণ, সমতাবিচ্যুত, আধ্যাত্বিকতাবর্জিত এবং মনের দিক দিয়া উট, পশু-পাখী এমন কি সকল চতুষ্পদ জন্তু থেকে অধিকতর স্থুল
( এহিয়াউল উলুমুদ্দি)
অন্তরে প্রভাব বিস্তারের দিকে লক্ষ্য করলে সংগীতকে সর্বাবস্থায় বৈধ অথবা সর্বাবস্থায় হারাম বলা ঠিক হয় না এটা অবস্থা, ব্যক্তি এবং সংগীতের ধরণভেদ বিভিন্নরূপ হয়ে থাকে ক্ষেত্রে অন্তরের ভাবের যে বিধান, সংগীতের বিধানও তাই ( এহিয়াউল উলুমুদ্দি)
আগার আদমী রা নাবাশ্ত খারাশ্ত গান-বাদ্যের দ্বারা যদি কোন মানুষের ভাবান্তর না হয়, তবে সে গর্দভ বিশেষমনুষ্য পদবাচ্য নহে (গোলেস্তাহযরত শেখ শাদী (রঃ) )
সংগীত এক সম্প্রদায়ের জন্য ফরজ, এক সম্প্রদায়ের জন্য ছুন্নাত, এক সম্প্রদায়ের জন্য বেদআত অর্থা - ফরজ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের জন্য, ছুন্নাত প্রেমিকদের জন্য আর বেদআত গাফেল বা অলস ব্যক্তিদের জন্য (ছিররোল আছরারহযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ)
সারা বিশ্ব ধর্মীয় সংগীতে আল্লাহর প্রেম মত্ততায় সুরে পরিপুর্ন, কিন্তু একজন অন্ধ আয়নার মধ্যে কি দেখবে ? ‘ ( বোস্তাহযরত শেখ শাদী (রঃ)
গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মইন্নুদ্দিন চিশতি (রঃ) ভারত উপমহাদেশে এসে ভারতবাসীর মজাকি-রুচি দেখে তাদের রুচি মাফিক ধর্মীয় আরাধনায় বাদ্যযন্ত্র সহকারে সংগীত অনুমোদন করেছেন
ছেমা জায়েজ - মাদারেজুন নবুয়তমাওঃ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহ্লভী (রঃ)
ছেমা জায়েজ - তাফসিরে আহমদী তাফসিরে আজিজ
ছেমা জায়েজ - তোহফাতুল আখইয়ার, আগানী এস্তিয়াব, একদুল ফরিদ, এহিয়াউল উলুল, তবলিছ, আজাবীর, কিমিয়ায়ে সাআদত, কেতাবুল আহকাম, এবং আদিল্লাতুছ ছেমা শামী
সংগীত মাত্রকেই হারাম বললে কাফের হবে – ‘ফতওয়ায়ে খাইরিয়া, ‘বাওয়ারেকুচ্ছমা ফি তকফিয়ে, মই এয়াহরেমুচ্ছমা
নোক্কাতুল হক কিতাবেমাওলানা আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রঃ) বর্ণিতঃ
() যে ব্যক্তি সকল অবস্থায় সর্বপ্রকার ছেমা বা সংগীতকে হারাম বলে বিশ্বাস করে, সে অন্ধ জাহেল এবং সকল প্রকার সংগীতকে সর্বাবস্থায় জায়েজ মনে করে সে ফাসেক বা গোনাহগার
() ছেমা মোবাহ বা হালাল ইমাম চতুষ্টয়ও ছেমা শ্রবণ করেছেন (মাদারেজুন নবুয়ত)
() নির্দোষ সংগীত শ্রবণ করার সিদ্ধতা চার ইমাম স্বীকার করেছেন - হযরত মোল্লা আলী ক্কারী হানাফী (রঃ)
() ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) খলিফা হারুন-অর-রশিদের মজলিসে সংগীত শ্রবণ করিতেন তাঁকে সংগীত সম্পর্কে মাছআলা জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ) এর প্রতিবেশীর সংগীত শ্রবণের বিষয়টি উল্লেখ করে বলতেনসংগীত জায়েজ না হলে ইমাম আজম (রঃ) কখনো প্রতিরাতে নিজের মূল্যবান সময় অযথা নষ্ট কর
টিকাঃ লাহওয়াল হাদিস অর্থা অশ্লীল বা অসার বাক্য (সুরা লোকমান,) যা থেকে আমাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে
জন-সম্মুখে একজন মহিলা গায়িকাকে দিয়ে অশ্লীল সঙ্গীত পরিবেশন করার ঘটনার প্রেক্ষিতে সুরা লোকমান, আয়াত নাজিল হয়েছে অশ্লীল বা অসার বাক্য আয়াতের ব্যাখ্যায় (বিভিন্ন তাফসিরে) ‘সঙ্গীত জায়েজ কি না-জায়েজ তা নিয়ে ওলামাগণের নিজেদের মধ্যেই মতভেদ রয়েছে
মানুষের দৈনন্দিন আচার-ব্যবহারে, কাজ-কর্মে, লেখা-লেখিতে, দেখা-শোনায় অশ্লীল বা অসার বাক্যের ব্যবহার নিঃসন্দেহে মন্দ কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাগণকে সকল প্রকার মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে আদেশ করেছেন
পরিশেষে টুকুই বলতে চাই সংগীত জায়েজ হওয়ার জন্য নবীয়ে করিম (সঃ) এর যে কোন একটি হাদিসই যথেষ্ট মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সিরাতুল মূস্তাকিমে চলার তৌফিক দান করুন আমিন (সমাপ্ত)

No comments:

Post a Comment