ফিকাহ্ এ হানাফী
হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব আল মুগনী, হিদায়া, রাদ্দুল মুহতার, বিকায়া……ইত্যাদী।
মাযহাব অনূসরনকারীদের জন্য এগুলো নির্ভরযোগ্য কিতাব। কিতাবগুলো হানাফি মাযহাবের মূল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আর সে কারনে, সমগ্র মুছলিম বিশ্বের ফুকাহানে ক্বিরম সে আলোকে মাছাঅা'লা, মাছায়িল প্রণয়নে প্রামাণ্য রুপে গ্রহণ করে থাকেন।
হানাফী মাযহাবের মূল বর্ণনাকারী ইমাম আবু ইউসুফ ,ইমাম মুহাম্মদা রহ., ইবনে আবি শাইবা। তাঁরা সরাসরি ইমাম আবু হানিফার ছাত্র। তাঁদের নিজের হাতে লেখা কিতাব রয়েছে। তাঁদের লিখিত কিতাবগুলো হানাফি মাযহাবের সবচেয়ে বড় দলিল। এসব কিতাবে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর উক্তি গুলো সন্নিবেশিত হয়েছে। এখান থেকেই অন্য অন্য কিতাব গুলোতে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর উক্তি পেশ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো; খলিফা হাদী, মাহদী ও হারুনুর রশিদের যামানা থেকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রধান বিচারপতি ছিলেন ইমাম আ'বু হানিফার সুযোগ্য ছাত্র ইমাম আ'বু ইউছুফ রহ.। তখন, হানাফী মাযাহাবের মাসআ'লা গুলোর আলোকে বিচার সহ সকল কার্যক্রম চলেছে। আব্বাসীয় খিলাফত, উসমানী খিলাফত দু’টোই হানাফী ফিকাহ্ অনুযায়ী চলেছে।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন,
“উল্লেখ্য যে, আব্বাসী যুগের প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনার সকল ইমাম ও বিচারক হানাফী ছিলেন। অতঃপর প্রায় দু’শ বছর খাওয়ারিযমী ও সালজুক্বীদের অধীনে চলেছে, তারাও নিষ্ঠশীল হানাফী ছিলেন। অতঃপর উসমানী ও তুর্কী খেলাফত প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত চলেছে। তারাও সবাই হানাফী ছিলেন।”
• আল খাইরাতুল হিসান, ইবনে হাজার, মক্কী শাফেয়ী রহ. পৃ: ৭২।
“মোটকথা, ইসলামী ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ে ১২ শ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনায় ইমাম ও খতীবের সুমহান দায়িত্ব হানাফী ইমামগণই আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন এবং কাযী ও বিচারকের আসনেও তারাই ছিলেন।”
• আল খাইরাতুল হিসান, ইবনে হাজার মক্কী, শাফেয়ী রহ. পৃ. ৭২।
• রদ্দুল মুহতার; পৃ: ১/৭৫।
হানাফী মাযহাবের মূল হলো, যাহেরী রিওয়াত। যাহেরী রিওয়াত বলা হয়, ইমাম মুহাম্মাদ রহ. এর ছয়টি কিতাবকে;
১. সিয়ারে কাবীর, ২. সিয়ারে সগীর, ৩. জামে সগীর, ৪. জামে কাবীর, ৫. মাবসুত, ৬. যিয়াদাত।
ইমাম মুহাম্মাদ রহ. ইমাম আবু হানিফার খাস ছাত্র। এগুলো হানাফী ফিকহের মূল উৎস। আর এগুলো থেকেই পরবর্তিতে বিভিন্ন ফতোয়ার কিতাবে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর কথাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
ইমাম ত্বহাবী রহ. (২২৯-৩২১ হি:), ``শারহু মায়ানিল আসার বয়ানু মুশকিলিল আসার`` লিখেছেন। ইহাতে হানাফী মাযহাবের সব মাসআলা বর্ণনা করা হয়েছে।
এভাবে প্রত্যেক যুগে হানাফী আলেমগণের তালিকা আছে।
এগুলো ত্বাবাকাতে হানাফিয়্যা নামের বইগুলোতে পাওয়া যাবে।
ইমাম সারাখসী, ইমাম বাযদাবী, আবুল লাইস সমরকন্দী……সকলেই অনেক আগের। এরা হানাফী মাযহাবের মাসয়ালাগুলো সন্নিবেশিত করেছেন। এভাবেই হানাফী ফিকহ অন্য সকল কিছু থেকে শক্তিশালী সনদে সংরক্ষিত হয়ে আসছে।
একটি বিষয় জানা খুবই জরুরি; আর তা হলো, ফিকহের কিতাবগুলোতে ছনদ সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়না। সনদের জন্য অন্যান্য কিতাব রচিত হয়/হয়েছে। যে গুলোর উদ্যেশ্যই হল সনদ সংকলন করা। কওল বর্ণনা করে সম্পূর্ণ সনদ বর্ণনা করা জরুরি নয় বলে ``মিশকাত শরিফ`` এ হাদিছ সংকলনে তেমন করা হয়নি। ``মিশকাত শরীফ`` এ হাদীস বা আছার বর্ণনা করে বলা হয়েছে এটা ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেছেন, এটা ইমাম বাইহাকী রহ. বর্ণনা করেছেন, এটা ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই সকল ইমাম থেকে মিশকাতের মুসান্নাফের লেখক হাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল খতীব আত তিবরিযী(৭৪১ হি:) পর্যন্ত কোন সনদ উল্যেখ নেই। কিন্তু এর সামনে সেই সনদ অবশ্যই ছিলো। যদিও তিনি তা উল্লেখ করা যরুরী মনে করেন নি। কারন, যদিও ইমাম বোখারী রহ. ২৫৬ হি: তে মৃত্যু বরণ করেছেন তারপরও তাঁর কিতাব রয়েছে; ছনদ বর্ণনা না করা হলেও ইহাই বড় দলিল।
ইবনে হাজর আসকালানি রহ. এর ``তাকরীবুত তাহযীব`` রিজাল সাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব। এখানে ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ৬০০,৫০০, ৪০০, ৩০০… বছর আগের রাবিদের ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু কোনো ধরনের সনদ উল্লেখ করেন নি।
মান্যবর ইবনে হাজার রহ. তাঁর কিতাবে উল্লেখিত রাবির মৃত্যুর ৩৯০ বছর পর জন্মগ্রহন করে ছনদ ছাড়া মন্তব্য করার কারন হলো তাঁর সামনে রাবির ব্যাপারে মন্তব্যের সনদ ছিলো কিন্তু তিনি তা সেই কিতাবে উল্লেখ করা জরুরী মনে করেন নি।
ঠিক একই ঘটনা কুদুরী, হিদায়া, রাদ্দুল মুহতারের… ক্ষেত্রেও। এগুলোর লেখকদের সামনে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর কথার সনদ ছিলো যা ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ছাত্র ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম ইউসুফ, ইমাম ইবনে আবি শাইবার কিতাবে আছে কিন্তু তাঁরা এর সনদ ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ করা জরুরী মনে করেন নি। ঠিক যে কারনে মিশকাতের লেখক জরুরী মনে করেন নি।
কাজেই, উপরোক্ত ফতোয়ার কিতাবগুলোতে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর কথা গুলোর কোন সূত্র না থাকলেও কিতাবগুলোর লেখকদের মতামতকে অস্বীকারের কোন ভিত্তি নেই।
সনদ উল্লেখ না করা হলেই সনদ না থাকার প্রমান বহন করে না। যেমন, মান্যবর হাযরাত ইবনে হাজার আসক্বালানি রহ. এর ``তাকরীবুত তাহযীব`` এ যে মন্তব্য করা হয়েছে তার কোন সূত্র নেই। মেশকাতের ক্ষেত্রেও অনূরুপ। এমন আরো অনেক নির্ভরযোগ্য পুস্তকের দৃষ্টান্ত মঔযুদ রয়েছে।
এবার পাঠকেরা ফিকহে হানাফীর কিতাবগুলোতে সূত্র উল্লেখ না থাকার ব্যাপারে সচেতন হতে পারবেন বলে আশা করছি।
________________________________
হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব আল মুগনী, হিদায়া, রাদ্দুল মুহতার, বিকায়া……ইত্যাদী।
মাযহাব অনূসরনকারীদের জন্য এগুলো নির্ভরযোগ্য কিতাব। কিতাবগুলো হানাফি মাযহাবের মূল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আর সে কারনে, সমগ্র মুছলিম বিশ্বের ফুকাহানে ক্বিরম সে আলোকে মাছাঅা'লা, মাছায়িল প্রণয়নে প্রামাণ্য রুপে গ্রহণ করে থাকেন।
হানাফী মাযহাবের মূল বর্ণনাকারী ইমাম আবু ইউসুফ ,ইমাম মুহাম্মদা রহ., ইবনে আবি শাইবা। তাঁরা সরাসরি ইমাম আবু হানিফার ছাত্র। তাঁদের নিজের হাতে লেখা কিতাব রয়েছে। তাঁদের লিখিত কিতাবগুলো হানাফি মাযহাবের সবচেয়ে বড় দলিল। এসব কিতাবে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর উক্তি গুলো সন্নিবেশিত হয়েছে। এখান থেকেই অন্য অন্য কিতাব গুলোতে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর উক্তি পেশ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো; খলিফা হাদী, মাহদী ও হারুনুর রশিদের যামানা থেকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রধান বিচারপতি ছিলেন ইমাম আ'বু হানিফার সুযোগ্য ছাত্র ইমাম আ'বু ইউছুফ রহ.। তখন, হানাফী মাযাহাবের মাসআ'লা গুলোর আলোকে বিচার সহ সকল কার্যক্রম চলেছে। আব্বাসীয় খিলাফত, উসমানী খিলাফত দু’টোই হানাফী ফিকাহ্ অনুযায়ী চলেছে।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন,
“উল্লেখ্য যে, আব্বাসী যুগের প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনার সকল ইমাম ও বিচারক হানাফী ছিলেন। অতঃপর প্রায় দু’শ বছর খাওয়ারিযমী ও সালজুক্বীদের অধীনে চলেছে, তারাও নিষ্ঠশীল হানাফী ছিলেন। অতঃপর উসমানী ও তুর্কী খেলাফত প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত চলেছে। তারাও সবাই হানাফী ছিলেন।”
• আল খাইরাতুল হিসান, ইবনে হাজার, মক্কী শাফেয়ী রহ. পৃ: ৭২।
“মোটকথা, ইসলামী ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ে ১২ শ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনায় ইমাম ও খতীবের সুমহান দায়িত্ব হানাফী ইমামগণই আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন এবং কাযী ও বিচারকের আসনেও তারাই ছিলেন।”
• আল খাইরাতুল হিসান, ইবনে হাজার মক্কী, শাফেয়ী রহ. পৃ. ৭২।
• রদ্দুল মুহতার; পৃ: ১/৭৫।
হানাফী মাযহাবের মূল হলো, যাহেরী রিওয়াত। যাহেরী রিওয়াত বলা হয়, ইমাম মুহাম্মাদ রহ. এর ছয়টি কিতাবকে;
১. সিয়ারে কাবীর, ২. সিয়ারে সগীর, ৩. জামে সগীর, ৪. জামে কাবীর, ৫. মাবসুত, ৬. যিয়াদাত।
ইমাম মুহাম্মাদ রহ. ইমাম আবু হানিফার খাস ছাত্র। এগুলো হানাফী ফিকহের মূল উৎস। আর এগুলো থেকেই পরবর্তিতে বিভিন্ন ফতোয়ার কিতাবে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর কথাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
ইমাম ত্বহাবী রহ. (২২৯-৩২১ হি:), ``শারহু মায়ানিল আসার বয়ানু মুশকিলিল আসার`` লিখেছেন। ইহাতে হানাফী মাযহাবের সব মাসআলা বর্ণনা করা হয়েছে।
এভাবে প্রত্যেক যুগে হানাফী আলেমগণের তালিকা আছে।
এগুলো ত্বাবাকাতে হানাফিয়্যা নামের বইগুলোতে পাওয়া যাবে।
ইমাম সারাখসী, ইমাম বাযদাবী, আবুল লাইস সমরকন্দী……সকলেই অনেক আগের। এরা হানাফী মাযহাবের মাসয়ালাগুলো সন্নিবেশিত করেছেন। এভাবেই হানাফী ফিকহ অন্য সকল কিছু থেকে শক্তিশালী সনদে সংরক্ষিত হয়ে আসছে।
একটি বিষয় জানা খুবই জরুরি; আর তা হলো, ফিকহের কিতাবগুলোতে ছনদ সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়না। সনদের জন্য অন্যান্য কিতাব রচিত হয়/হয়েছে। যে গুলোর উদ্যেশ্যই হল সনদ সংকলন করা। কওল বর্ণনা করে সম্পূর্ণ সনদ বর্ণনা করা জরুরি নয় বলে ``মিশকাত শরিফ`` এ হাদিছ সংকলনে তেমন করা হয়নি। ``মিশকাত শরীফ`` এ হাদীস বা আছার বর্ণনা করে বলা হয়েছে এটা ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেছেন, এটা ইমাম বাইহাকী রহ. বর্ণনা করেছেন, এটা ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই সকল ইমাম থেকে মিশকাতের মুসান্নাফের লেখক হাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল খতীব আত তিবরিযী(৭৪১ হি:) পর্যন্ত কোন সনদ উল্যেখ নেই। কিন্তু এর সামনে সেই সনদ অবশ্যই ছিলো। যদিও তিনি তা উল্লেখ করা যরুরী মনে করেন নি। কারন, যদিও ইমাম বোখারী রহ. ২৫৬ হি: তে মৃত্যু বরণ করেছেন তারপরও তাঁর কিতাব রয়েছে; ছনদ বর্ণনা না করা হলেও ইহাই বড় দলিল।
ইবনে হাজর আসকালানি রহ. এর ``তাকরীবুত তাহযীব`` রিজাল সাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব। এখানে ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ৬০০,৫০০, ৪০০, ৩০০… বছর আগের রাবিদের ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু কোনো ধরনের সনদ উল্লেখ করেন নি।
মান্যবর ইবনে হাজার রহ. তাঁর কিতাবে উল্লেখিত রাবির মৃত্যুর ৩৯০ বছর পর জন্মগ্রহন করে ছনদ ছাড়া মন্তব্য করার কারন হলো তাঁর সামনে রাবির ব্যাপারে মন্তব্যের সনদ ছিলো কিন্তু তিনি তা সেই কিতাবে উল্লেখ করা জরুরী মনে করেন নি।
ঠিক একই ঘটনা কুদুরী, হিদায়া, রাদ্দুল মুহতারের… ক্ষেত্রেও। এগুলোর লেখকদের সামনে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর কথার সনদ ছিলো যা ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ছাত্র ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম ইউসুফ, ইমাম ইবনে আবি শাইবার কিতাবে আছে কিন্তু তাঁরা এর সনদ ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ করা জরুরী মনে করেন নি। ঠিক যে কারনে মিশকাতের লেখক জরুরী মনে করেন নি।
কাজেই, উপরোক্ত ফতোয়ার কিতাবগুলোতে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর কথা গুলোর কোন সূত্র না থাকলেও কিতাবগুলোর লেখকদের মতামতকে অস্বীকারের কোন ভিত্তি নেই।
সনদ উল্লেখ না করা হলেই সনদ না থাকার প্রমান বহন করে না। যেমন, মান্যবর হাযরাত ইবনে হাজার আসক্বালানি রহ. এর ``তাকরীবুত তাহযীব`` এ যে মন্তব্য করা হয়েছে তার কোন সূত্র নেই। মেশকাতের ক্ষেত্রেও অনূরুপ। এমন আরো অনেক নির্ভরযোগ্য পুস্তকের দৃষ্টান্ত মঔযুদ রয়েছে।
এবার পাঠকেরা ফিকহে হানাফীর কিতাবগুলোতে সূত্র উল্লেখ না থাকার ব্যাপারে সচেতন হতে পারবেন বলে আশা করছি।
________________________________
No comments:
Post a Comment