Friday, September 11, 2015

ইয়াজিদ-প্রেমিক জাকির নায়ক

ইয়াজিদ-প্রেমিক

জাকির নায়ক

ড জাকির নায়েক বলেছে "ইয়াজিদকে (রহিমুল্লাহ) বলা যাবে (নাউযুবিল্লাহ)
যেই হাদিসকে প্রমানস্বরুপ ভিত্তি করে সে এ কথা বলেছে তাতে বুখারী শরীফের ১টা হাদিসে ৩টা মিথ্যাচার করতে হয়েছে থাকে। এখানে মাত্র ৬/৭ মিনিটের ভিডিওটি দেখুন।

https://m.youtube.com/watch?v=rqE33JbZB8k

দয়া করে গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন কাউকে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করবেন না।

★ জাকির নায়েক কারবালার জিহাদকে “Political Battle” বলে উল্লেখ করেছে। অথচ ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে। ইতিহাস মতে, হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হক্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজের জীবন কারবালার ময়দানে দান করে শাহাদাৎ বরণ করেছেন।

★ কারবালার ময়াদানের ঘৃনিত পশু ইয়াজিদের নামের শেষে “রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু” উচ্চারণ করে থাকে।

-----------------------------------------------

♦♦কুসতুনতুনিয়া-বিষয়ক হাদীসের অপব্যাখ্যার
অপনোদন♦♦

★ ”…তিনি মহানবী (দ:)-কে বলতে শুনেছেন,
‘নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আমার সাহাবীদের
প্রথম দলটি বেহেশতী হবে।’ মহানবী (দ:)
এর পর বলেন, ‘আমার সাহাবীদের
মধ্যে প্রথম বাহিনী যারা (রোমক) সিজারের
শহর (কুসতুনতুনিয়া তথা কনস্টানটিনোপোল/
ইস্তাম্বুল) জয় করবে, তাদের গুনাহ মাফ
করা হবে’।” [সহীহ বুখারী, ৪র্থ খণ্ড,
হাদীস – ১৭৫]


★আবু দাউদের
সুনানে বর্ণিত সহীহ হাদীসে বিবৃত
হয়েছে:

عن أسلم أبي عمران قال : غزونا من المدينة نريد القسطنطينية وعلى الجماعة عبد الرحمن بن خالد بن الوليد

হযরত আসলাম আবি ইমরান (রা:)
বলেন, “আমরা কনস্টানটিনোপোল জয়ের
উদ্দেশ্যে মদীনা হতে বের হই। আবদুর
রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন এই বাহিনীর
প্রধান।” [সুনানে আবি দাউদ, ২য় খণ্ড, হাদীস
নং ২৫১২; আলবানীও এই হাদীসকে সহীহ
বলেছে তার ‘তাখরিজ’ পুস্তকে]


★ইমাম তাবারী নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে বলেন –

فمما كان فيها من ذلك دخول المسلمين مع عبد الرحمن بن خالد بن الوليد بلاد الروم ومشتاهم بها وغزو

আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদের
সেনাপতিত্বে ৪৪ হিজরী সালে মুসলমান
বাহিনী রোমে (কনস্টানটিনোপোল)
প্রবেশ করেন এবং সেখানে গযওয়া (ধর্মযুদ্ধ)
সংঘটিত হয়। [তারিখে তাবারী, ৪৪ হিজরীর ঘটনা,
০০৫ খণ্ড, ২১২ পৃষ্ঠা; কায়রোর ‘দারুল মা’আরিফ’
প্রকাশনী হতে প্রকাশিত]


অথচ এয়াযীদ আরও বহু পরে ওখানে যায়।

উপরন্তু, তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল
শাস্তিস্বরূপ; আর সে ওই
প্রথমে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের
প্রতি বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছিল।


★ইমাম ইবনে আসীর (রহ:) লিখেন:

في هذه السنة وقيل ‏:‏ سنة خمسين سير معاوية جيشًا كثيفًا إلى بلاد الروم للغزاة ، وجعل عليهم سفيان بن عوف ، وأَمَرَ ابنه يزيد بالغزاة معهم فتثاقل واعتلّ فأمسك عنه أبوه ، فأصاب الناس في غزاتهم جوعٌ ومرض شديد ، فأنشأ يزيد يقول ‏:‏

ما إن أبالي بما لاقت جموعهم *** بالفرقدونة من حمى ومن موم
إذا اتكأت على الأنماط مرتفقًا *** بدير مروان عندي أم كلثومِ

فبلغ معاوية شعره، فأقسم عليه ليلحقنّ بسفيان في أرض الروم، ليصيبه ما أصاب الناس، فسار ومعه جمع كثير أضافهم إليه أبوه


”এই বছর, অর্থাৎ, ৪৯ বা ৫০ হিজরী সালে হযরত
আমীরে মোয়াবিয়া (রা:) রোমের
(কনস্টানটিনোপোল) উদ্দেশ্যে এক বিশাল
বাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি এর দায়িত্বভার
অর্পণ করেন সুফিয়ান বিন আউফের প্রতি এবং তাঁর
ছেলে এয়াযীদকে ওই বাহিনীর
সাথে যেতে বলেন। কিন্তু এয়াযীদ ‘অসুস্থ
হওয়ার ভান করে এবং যেতে অস্বীকৃতি জানায়’।
যোদ্ধারা যখন ক্ষুধা ও রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত হন,
তখন সে ব্যঙ্গ করে কবিতায় বলে, ‘ফারকুদওয়ানা-
এ মহা গযবে তারা পতিত হয়েছে; তাদের জ্বর
বা অন্য যা-ই কিছু হোক, তাতে আমার যায়
আসে না। কেননা, আমি বসে আছি উচ্চ
ফরাশে (ম্যাট্রেস); আর আমার
বাহুবন্ধনে আছে উম্মে কুলসুম (এয়াযীদের
স্ত্রীদের একজন)।’

”হযরত আমীরে মোয়াবিয়া (রা:) যখন এই
কবিতার শ্লোক সম্পর্কে জানতে পারেন,
তখন তিনি এয়াযীদকে শপথ গ্রহণ করতে ও
কনস্টানটিনোপোলে সুফিয়ান
ইবনে আউফের সাথে যোগ দিতে বাধ্য
করেন, যাতে করে ’সেও ইসলামের
মোজাহিদদের মোকাবেলাকৃত কঠিন পরীক্ষার
অংশীদার হতে পারে’ (এটি এয়াযীদের
প্রতি শাস্তি ছিল)। এমতাবস্থায় এয়াযীদ অসহায়
হয়ে পড়ে এবং তাকে যুদ্ধে যেতে হয়; আর
হযরত আমীরে মোয়াবিয়া (রা:) তার
সাথে আরেকটি বাহিনী প্রেরণ
করেন।”
[’তারিখে ইবনে আল-আসীর’, ৩য়
খণ্ড, ১৩১ পৃষ্ঠা]


★ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (রহ:) বলেন:

قلت: الأظهر أن هؤلاء السادات من الصحابة كانوا مع سفيان هذا ولم يكونوا مع يزيد بن معاوية، لأنه لم يكن أهلاً أن يكون هؤلاء السادات في خدمته

”আমি বলি, অসংখ্য সাহাবী (রা:) হযরত সুফিয়ান
ইবনে আউফ (রা:)-এর
অধীনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং ‘এয়াযীদ
ইবনে মোয়াবিয়ার নেতৃত্বে যান নি,
কেননা সে তাঁদেরকে নেতৃত্বদানে
অযোগ্য ছিল’।” [‘উমদাতুল কারী’,
শরহে সহীহ আল-বোখারী, ১৪/১৯৭-১৯৮]

★কনস্টানটিনোপোলে সেনা অভিযানের সার-সংক্ষেপ
নিম্নরূপ:

* প্রথম আক্রমণ পরিচালিত হয় ৪২ হিজরী সালে।

* দ্বিতীয় দফায় আক্রমণ হয় ৪৩
হিজরীতে এবং এর সেনাপতি ছিলেন হযরত বসর
বিন আবি আরকা।

* তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করা হয় ৪৪
হিজরী সালে এবং এটি নেতৃত্ব দেন আবদুর
রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ।

*৪র্থ বার পরবর্তী অভিযান ছিল ৪৬ হিজরীতে যার
সেনাপতি ছিলেন মালিক বিন আবদির্ রহমান ও
আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ।

* ৪৭ হিজরীতে পরবর্তী অভিযান
পরিচালনা করেন মালিক বিন হোবায়রা ও আবদুর
রহমান বিন কায়েমী।

* ৪৯ হিজরী সালে কনস্টানটিনোপোল তিনবার
আক্রমণ করা হয়।

*আর সর্বশেষ ৫০
হিজরীতে যে অভিযান পরিচালিত হয়
তাতে ""ইয়াযীদ"" যোগ দেয় ।



★হযরত আমীরে মোয়াবিয়া (রা:)
এয়াযীদকে আটক করে সিজারের ওখানে পাঠান,
কারণ সে মোজাহিদীনবৃন্দের প্রতি বিদ্রূপ
করতো। তাই শাস্তিস্বরূপ
তাকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল, জ্বেহাদের
জন্যে নয়।
অতএব, এয়াযীদ সপ্তম
সেনা অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল, প্রথম
অভিযানে নয় । আর
বোখারী শরীফে উল্লেখিত হয়েছে,
“আমার উম্মতের মধ্যে সিজারের
নগরী আক্রমণকারী প্রথম সেনা দলের পাপ-
পঙ্কিলতা মাফ করা হবে।”
★রেফারেন্স
★ইবনে কাসিরের আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া
★ইবনে খালদুনের ইতিহাস
★ইমাম ইবনে আসীরের ইতিহাস


এখন সেই গুলোর বিস্তারিত  দেখুন:-

মুসলিম বাহিনীর কায়সারের নগরী আক্রমণ ও ইয়াজিদের অংশগ্রহণ:

(১) প্রথম মুসলিম নৌবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হযরত আমিরে মুয়াবিয়া (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু)। হযরত উছমান ইবনে আফফানের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) শাসনামলে তিনি রোম আক্রমণের অনুমতি চেয়েছিলেন এবং ৩২ হিজরীতে অনুমতি পেয়ে তিনি যুদ্ধ করে ইস্তাম্বুল (কন্সস্ট্যান্টিনোপল) জয় করেন। তখন ইয়াজিদ মাত্র ৬ (ছ’) বছরের শিশু। আর সে ঐ যুদ্ধে অংশ নেয় নি।
*সুত্রঃ {ইবনে আছীরের (৫৫৫-৬৩০ হিঃ) রচিত আল-কামিল ফীত তারীখ, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৫ ও ইবনে কাছীরের (৭০২-৭৭৪ হিঃ) রচিত আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১৭৯}

(২) কায়সারের রোম নগরীতে মুসলিম বাহিনীর আক্রমণ:

প্রথম আক্রমণ: আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে, মহানবী নিজেই (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) মুসলিম সেনাবাহিনীকে কায়সারের নগরী আক্রমণ করতে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি জামাদিউল উলা ৮ মোতাবেক, ৬২৯ খৃষ্টাব্দে ঐ এলাকা (কায়সারের নগরী) দ্রুত আক্রমণ করে অপরাধী গোত্রগুলোকে শাস্তি দিতে তাঁর ৩,০০০ সাহাবীর একটি দলকে (সারিয়্যা) পাঠিয়েছিলেন - যার নেতৃত্বে ছিলেন হযরত জাইদ ইবনে হারিছা, দ্বিতীয় কমান্ডার ছিলেন হযরত জাফর ইবনে আবি ত্বালিব ও তৃতীয় কমান্ডার ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম
নেয় নি।
*সুত্রঃ {সাইফুর রহমান মুবারকপুরীর (১৯৪৩-২০০৬ খৃঃ) রচিত, আর-রাহীকুল মাখতুম}। এ যুদ্ধে নবীজী উল্লিখিত তিনজনের শাহাদাত বরণের সংবাদ আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন! আর এর নাম ছিলো মুতার যুদ্ধ। তখন ইয়াজিদের জন্মই হয় নি।

দ্বিতীয় আক্রমণ: আমরা যদি কায়সারের নগরীর অর্থ করি - তাহলে সেটা হবে, হিমস বা হোমস নগরী - যা হযরত উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) শাসনামলে ১৬ হিজরীতে মুসলিম বাহিনী জয় করছিলেন এবং এর কমান্ডার ছিলেন হযরত উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু)। এ বাহিনীতে হযরত ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) অংশ নিয়েছিলেন। তখনো ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া জন্মগ্রহণ করে নি। কেননা, সে জন্মগ্রহণ করেছে ২৬ হিজরীতে
*সুত্রঃ (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৯ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৭৬) ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান একজন সাহাবী ও আমিরে মুয়াবিয়ার ভাই ছিলেন।

তৃতীয় আক্রমণ: (আগেই উল্লেখ করা হয়েছে) হযরত আমিরে মুয়াবিয়া (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) ৩২ হিজরীতে রোম আক্রমণ করে ইস্তাম্বুলে পৌঁছে যান - যখন ইয়াজিদ ছিলো ৬ বছরের শিশু।
*সুত্রঃ (সূত্র: আল-কামিল ফীত তারীখ, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৫ ও আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১৭৯} এটিই ছিলো মুসলমানদের প্রথম নৌপথে রোম আক্রমণ।

চতুর্থ আক্রমণ: ৪২ হিজরীতে মুসলিম বাহিনী ইস্তাম্বুলের পথে রোম আক্রমণ করে।
*সুত্রঃ (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৪)।

পঞ্চম আক্রমণ: পরের বছর, অর্থাৎ ৪৩ হিজরীতে মুসলিম বাহিনী হযরত বাশার ইবনে আর্তাহর (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) নেতৃত্বে আবারো ইস্তাম্বুলের পথে রোম আক্রমণ করে।
*সুত্রঃ (তারিখে ইবনে খালদুন, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৯ ও আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৪)।

ষষ্ঠ আক্রমণ: পরের বছর, অর্থাৎ ৪৪ হিজরীতে হযরহ খালিদ বিন ওয়ালিদের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) ছেলে হযরত আব্দুর রহমান বিন সহ (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) মুসলিম বাহিনী রোমে প্রবেশ করে এবং সেখানে শুধু শীতকালটা কাটায়। আর হযরত বাশার ইবনে আর্তাহর (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) তখন নৌপথে যুদ্ধ করেছিলেন।
*সুত্রঃ (আল-কামিল ফীত তারীখ, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৯৮) ।

সপ্তম আক্রমণ: ৪৬ হিজরীতে হযরত মালিক ইবনে আব্দিল্লাহ (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) রোম রাজ্যে ছিলেন। কথিত আছে যে, হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) একই বছর হিমসে ফিরে আসেন এবং ইন্তেকাল করেন। তিনি কন্সস্ট্যান্টিনোপল আক্রমণের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। এ আক্রমণের কথা কোনো ইতিহাসের বইতে লিখা না থাকলেও আবূ দাউদ শরীফে রয়েছে। যেমন-




হযরত আবূ ইমরান (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বর্ণনা করেন, আমরা মদীনা হতে ইস্তাম্বুল (কুস্তুনতুনিয়া বা কন্সন্ট্যান্টিনোপল) অভিমুখে যুদ্ধ-যাত্রা করলাম। আমাদের সেনাপতি ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদের ছেলে আব্দুর রহমান। রোমানবাহিনী ইস্তাম্বুল শহরের দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে যুদ্ধের জন্যে দাঁড়িয়েছিলো। এরপর কেউ শত্রুসেনাদের উপরে হামলা করে বসলো। আমাদের লোকজন বলে উঠলো: থামো! থামো!! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!!! সেতো নিজেই নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তখন হযরত আবূ আইউব আনসারী (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বললেন: “তোমরা নিজেদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না (সূরা আল-বাকারা:১৯৫)। এ আয়াত আমাদের আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছিলো। যখন আল্লাহ তাঁর নবীকে (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহায্য করলেন এবং ইসলামকে জয়ী করলেন - তখন আমরা বলেছিলাম যে, আমরা যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে থেকে আমাদের সহায়-সম্পদ দেখাশুনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবো। তখন আল্লাহুতা’লা নাযিল করলেন: তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো এবং নিজেদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না (২:‌১৯৫)। ঘরে বসে থেকে মালামালের রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং যুদ্ধে না যাওয়াটাই হচ্ছে, নিজেদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া।” আবূ ইমরান বলেন: এ কারণেই আবূ আইউব (আনসারী) ইস্তাম্বুলে সমাহিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ আঝ্ঝা ও জাল্লার রাস্তায় সব সময়ে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন।
*সুত্রঃ (সুনানে আবূ দাউদ, জিহাদ অধ্যায়, “তিনি আঝ্ঝা ওয়া জাল্লা ফরমান: তোমরা নিজেদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না” অনুচ্ছেদ, হাদীছ নং ২৫০৪)

উল্লিখিত বিস্তারিত বর্ণনা অনুসারে, হযরত আমিরে মুয়াবিয়ার (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) নেতৃত্বে যে মুসলিম সেনাবাহিনী ৩২ হিজরীতে প্রথমবার ইস্তাম্বুল আক্রমণ করে - সেটাই হচ্ছে, বুখারী শরীফে উল্লিখিত ক্ষমাপ্রাপ্ত দল। আর এটা পরিষ্কার যে, আবূ দাউদ শরীফে উল্লিখিত ইস্তাম্বুল আক্রমণকারী মুসলিম সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) ছেলে হযরত আব্দুর রহমান (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) - যিনি আল-কামিল ফীত তারীখের বর্ণনা অনুসারে ৪৬ বা ৪৭ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে এ ইস্তাম্বুল আক্রমণও ৪৬ হিজরীতে হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সিহাহ সিত্তাহর অন্তর্গত সুনানে আবূ দাউদের গ্রহণযোগ্যতা সকল ইতিহাসগ্রন্থের চেয়ে বেশি। সুতরাং হাদীছ শরীফ, ইতিহাস ও রিজাল (জীবনী গ্রন্থ) অনুসারে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বেই ৪৬ বা ৪৭ হিজরীর আগে মুসলিম সেনাবাহিনী ইস্তাম্বুল আক্রমণ করেছিলো।

অষ্টম আক্রমণ: অষ্টমবার যখন মুসলিম সেনাবাহিনী ইস্তাম্বুল আক্রমণ করে - তখন এ বাহিনীতে ছিলেন হযরত ইয়াজিদ ইবনে শাজরাহ শামী রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু। ইনি কোনোভাবেই ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া নন।

নবম আক্রমণ: ৪৯ বা ৫০ হিজরীতে আমিরে মুয়াবিয়া (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) হযরত সুফিয়ান ইবনে আউফের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) নেতৃত্বে রোমের শহরগুলো দখল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময়ের প্রথম দলে ইয়াজিদ অংশ না নেওয়ায় তিনি শাস্তি হিসেবে জোর করে ইয়াজিদকে দ্বিতীয় দলে অর্ন্তভুক্ত করেছিলেন। ঐতিহাসিক ইবনুল আছীর এ ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন: “এ বছর (৪৯ হিঃ) কিংবা কেউ কেউ বলেন ৫০ হিজরীতে আমিরে মুয়াবিয়া সুফিয়ান ইবনে আউফের নেতৃত্বে রোমের শহরগুলো দখল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি সেখানে সেনাবাহিনী পাঠালেন এবং তাঁর ছেলে ইয়াজিদকে নির্দেশ দিলেন তাতে যোগ দিতে। কিন্তু ইয়াজিদ তাতে যোগ দিতে গড়িমসি করলো। আর মুয়াবিয়া এ ব্যাপারে চুপ থাকলেন। মুসলিম সেনারা এ অভিযানে অসুস্থতা ও ক্ষুধায় অনেক কষ্ট স্বীকার করলো। এ খবর পেয়ে ইয়াজিদ একটি দু’ লাইনের শ্লোক আবৃত্তি করলো: আমি ঐ বাহিনী থেকে কেন সতর্ক থাকবো না - যারা ফার্কানদোনায় (বর্তমানে গ্রীসের একটি পৌরসভা) জ্বর ও গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়েছে - যখন কিনা আমি মারওয়ানের ঘরে উম্মে কুলসুমের সঙ্গে শৌখিন পোশাক পরে আরামে শুয়ে আছি?” (আল-কামিল ফীত তারীখ)

উম্মে কুলসুম বিনতে আব্দিল্লাহ বিন আমির ছিলো ইয়াজিদের স্ত্রী। যখন মুয়াবিয়া ইয়াজিদের এ শ্লোক আবৃত্তির খবর পেলেন - তখন তিনি তাকে সুফিয়ান ইবনে আওফের কাছে রোমে পাঠানোর শপথ নিলেন - যেন তিনিও কষ্ট লাঘব করতে পারেন। (প্রাগুক্ত)

ইবনুল আছীরের (৫৫৫-৬৩০ হিঃ) চেয়েও অনেক প্রবীণ ঐতিহাসিক আল-মাসউদী (২৮২/২৮৩-৩৪৫ হিজরী) তাঁর “মুরূজুয যাহাবী ওয়া মা’য়াদিনিল জাওয়াহির” কিতাবে লিখেছেন: “মুয়াবিয়া মুসলিম সেনাবাহিনীর উন্নতির খবর পেয়ে তা ইয়াজিদকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন। আর ইয়াজিদ বললো: এ (মুসলিম বাহিনীর জয়লাভের) উপলক্ষে আমি আমার মাতাল বন্ধুদের নিয়ে বাড়ীতে একটি পার্টি দেবো!”

সুতরাং উল্লিখিত বিবরণগুলোর আলোকে এটা পরিষ্কার যে,

১। নবীজী (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) প্রথম যে দু’ সেনাবাহিনীর ব্যাপারে বেহেশত নিশ্চিত হওয়ার ও ক্ষমাপ্রাপ্তির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন - ইয়াজিদ তাতে অংশ নেয় নি, বরং সে নবম বাহিনীতে অংশ নিয়েছিলো।

২। কিছু অর্বাচীন ব্যক্তি মানুষকে গোমরাহ করতে অপপ্রচার (প্রোপাগান্ডা) করে বেড়ায় যে, ইয়াজিদ ঐ বাহিনীর সেনাপতি ছিলো; আর ইমাম হুসাঈন (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) নাকি সাধারণ সৈনিক হিসেবে তাতে যোগ দিয়েছিলেন! ডাহা মিথ্যে কথা!! বরং সত্য হচ্ছে, ইয়াজিদ নয়, বরং হযরত সুফিয়ান ইবনে আউফ (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) ঐ (নবম) বাহিনীর কমান্ডার বা সেনাপতি ছিলেন।

৩। জিহাদে অংশগ্রহণে ইয়াজিদের কোনোই আগ্রহ ছিলো না। আর তাই, সে মুসলিম বাহিনীতে অংশ নেয় নি। এতে পরিষ্কার হলো যে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত ইস্তাম্বুল অভিযানে প্রেরিত জান্নাতি ও ক্ষমাপ্রাপ্ত প্রথম নৌবাহিনীতে সে কোনোভাবেই অংশ নেয় নি।

৪। মুসলিম বাহিনীর কষ্টের কথা জানতে পেরে - তাতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে ইয়াজিদের খুশি হওয়াটা অবশ্যই কোনো জান্নাত প্রত্যাশী কামেলদার ব্যক্তির আলামত হতে পারে না।

৫। ইয়াজিদের এ খুশি হওয়ার খবর পেয়ে হযরত মুয়াবিয়া (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) তাকে শাস্তি দিতে ঐ (নবম) বাহিনীতে পাঠাতে সিদ্ধান্ত নেন।

সুতরাং ইয়াজিদ কোনোভাবেই উল্লিখিত দু’টি হাদীছ শরীফাঈনে বর্ণিত প্রথম অভিযানে অংশ নেয় নি। যারা বলে অংশ নিয়েছিলো - তারা গোমরাহ ও মিথ্যেবাদী।






----------------------------------------


♦♦ যেখানে সাধারন ১ জন মুসলমানকে হত্যা করা কুফরি সেখানে জান্নাতী যুবকদের সরদার ইমাম হোসাইন (আ) কে শহীদ করার পিছনে যারা ছিল তারা কি কাফির হবে না?♦♦

★অথচ আল- কুরআনে ঘোষনা করেছেন , “যে ব্যাক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে কতল করে সে জাহান্নামী।”
সুরা নিসা ৯৩

★আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন -

ﺳﺒﺎﺏ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﻓﺴﻮﻕ ﻭﻗﺘﺎﻟﻪ ﻛﻔﺮ

অর্থ- মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি আর কতল করা কুফরী !”
দলীল-
√ বুখারী শরীফ
√ মুসলিম শরীফ

নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আহলে বায়েতের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের শর্ত, ইয়াজিদ বা কোন লানতপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ নয়। তারা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে যে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর সংগী সাথীদের হত্যা করে ইয়াজিদ (লাঃ) কুফরি করেনি, কবীরা গোনাহ করেছে। এর পক্ষে যদিও তাদের কোন দলীল নেই।

১। মুসলমান তো দূরের কথা, কোন কাফির বা মুশরিক যদি যুদ্ধ ক্ষেত্রেও জীবন বাঁচানোর জন্য ইসলাম গ্রহণ করে তাকেও হত্যা করা নিষেধ। আর হত্যাকারী নিজেই শিরক আর কুফরে প্রত্যাবর্তন করে। দেখুন সহীহ মুসলিম এবং সহীহ বুখারির নিম্নের হাদিসগুলো।

প্রথম হাদিসঃ
------------
আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। "ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন, যদি আমি কোন কাফিরের সম্মুখীন হই এবং সে আমার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তার তলোয়ার দ্বারা আমার একটি হাত উড়িয়ে দেয়, এরপর কোন গাছের আড়ালে গিয়ে বলে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম! এ কথা বলার পরও আমি কি তাকে কতল করতে পারি?" রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "তাকে হত্যা করো না।" আমি আরয করলাম, "হে আল্লাহর রাসুল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলে এ কথা বলেছে, তবুও কি আমি তাকে হত্যা করব না?" তিনি বললেনঃ "না, হত্যা করতে পারবে না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর (তবে) এ হত্যার পুর্বে তোমার যে অবস্হান ছিল সে ব্যাক্তি সে স্হানে পৌছবে এবং কালিমা পড়ার আগে সে ব্যাক্তি যে অবস্হানে ছিল তুমি সে স্হানে পৌছবে।"
[সহীহ মুসলিম ১৭৬, সহীহ বুখারি ৩৭৯৪]



দ্বিতীয় হাদিসঃ
------------
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের একটি বাহিনী মুশরিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাঠালেন। উভয় দল পরস্পর সম্মুর্খীন হল। মুশরিক বাহিনীতে এক ব্যাক্তি ছিল। সে যখনই কোন মুসলিমকে হামলা করতে ইচ্ছা করত, সে তাকে লক্ষ করে ঝাপিয়ে পড়ত এবং শহীদ করে ফেলত। একজন মুসলিম তার অসতর্ক মূহৃর্তের অপেক্ষা করতে নাগলেন। জুনদুব বললেন, আমাদের বলা হলো যে, সে ব্যাক্তি ছিল উসামা ইবনু যায়িদ। তিনি যখন তার উপর তলোয়ার উত্তোলন করলেন তখন সে বলল, 'লা ইলাহা ইল্লাহ' তবুও উসামা (রাঃ) তাকে হত্যা করলেন। দুত যুদ্ধে জয়লাভের সুসংবাদ নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলেন। তিনি তার কাছে যুদ্ধের পরিস্হিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি সব ঘটনাই বর্ণনা করলেন, এমন কি সে ব্যাক্তির ঘটনাটিও বললেন যে তিনি কি করেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামাকে ডেকে পাঠালেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি সে ব্যাক্তিকে হত্যা করলে কেন? উসামা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে অনেক মুসলিমকে ঘায়েল করেছে এবং অমুক অমুককে শহীদ করে দিয়েছে। এ বলে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন। আমি যখন তাকে আক্রমণ করলাম এবং সে তলোয়ার দেখে অমনি 'লা ইলাহা ইল্লাহ' বলে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তাকে মেরে ফেললে? তিনি বললেন, জি হ্যা। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মাগফিরাতের জন্য দু'আ করুন। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে তখন তুমি কি করবে? তারপর তিনি কেবল এ কথাই বলছিলেনঃ কিয়ামতের দ্বীন যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি এর অতিরিক্ত কিছু বলেন নি।
[মুসলিম ১৭৬]




তৃতীয় হাদিসঃ
--------------
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বি আল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদেরকে গালাগালি করা ফাসেকি আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফরী | [ বুখারী ৪৮, মুসলিম ৬৪ ]

উপরের এই তিনটি হাদিস ছাড়াও আরও অসংখ্য হাদিস রয়েছে এই কথার পক্ষে। উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে ইয়াজিদকে কি বলা যায়? এরপরও তারা যদি হাদিস অস্বীকার করে ইয়াজিদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর লোভে মনে করে সে কুফরি করেনি বরং কবীরা গোনাহ করেছে তাহলে তাদের ঈমান চলে যাবে। জেনেশুনে কেউ একটি সহীহ হাদিসকে অস্বীকার করলে কুফরি হয়।


সেই হিসেবে বলা যায় যার হুকুমে বা যাদের দ্বারা বা যাদের ইচ্ছাকৃত সম্মতিকৃমে ইমাম হোসাইনকে ও অনেক সাহাবায়ে কেরামকে শহীদ করল তারা সকলেই কাফির আর তাদের অধিনায়ক হল ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া।

★★★ এ প্রসংগে বিখ্যাত মুফাসসিস ও মুহাদ্দিস আল্লামা আলুসি (রহ) বলেন (নিচে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে),"

★ইবনে যিয়াদ ইয়াযীদের নির্দেশে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত
উনাদেরকে বন্দী করে এবং কারবালায় শাহাদাত প্রাপ্ত
উনাদের কর্তিত মস্তক মুবারক নিয়ে মিছিল
করে দামাস্কে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিমার ইবনে জুল
জাউশান ইবনে সালাবা, শীস ইবনে রাবী, আমর ইবনে,
হাজ্জাজ এবং আরো কতক লোককে নিযুক্ত করে। তাদের হুকুম
দেয় তারা যে শহরে পৌঁছাবে সেখানে যেন কর্তিত মস্তক
মুবারকের প্রদর্শনী করা হয়। নাউযুবিল্লাহ !! এরূপ
মিছিলটি পহেলা ছফর দামেস্ক শহরের দ্বার দেশে পৌঁছে।
ইয়াযীদ তখন জায়রূন রাজপ্রাসাদে অবস্থা করছিলো।
সে প্রাসাদের বেলকুনীতে বসে দৃশ্য উপভোগ করছিলো।
নাউযুবিল্লাহ !

★ওখানকার কাকগুলো কলরব
করে বিলাপ প্রকাশ করতে লাগলো। ইয়াযীদ তখন
কবিতা আবৃত্তি করে বিজয় উল্লাস করে বলে-

ﻟﻤﺎ ﺑﺪﺕ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﺤﻤﻮﻝ ﻭﺍﻟﺸﺮﻗﺖ + ﺗﻠﻚ ﺍﻟﺮﺅﺱ ﻋﻠﻲ ﺷﻔﺎ ﺟﻴﺮﻭﻥ + ﻧﻌﺐ ﺍﻟﻐﺮﺍﺏ ﻓﻘﻠﺖ ﻗﻞ ﺍﻭ ﻻﺗﻘﻞ +
ﻓﻘﺪ ﺍﻗﺘﻀﻴﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺩﻳﻮﻧﻲ

অর্থ: যখন ওইসব বাহন চোখে পড়লো, আর ওইসব মস্তক
সামনে ভেসে উঠলো জয়রূন উপকন্ঠে তখন কাককুল কলরব
করে উঠলো। আমি বললাম, কলরব করো বা নাই করো,
আমি রসূলের নিকট হতে আমার ঋনগুলো শোধ করে নিয়েছি।”
আসতাগফিরুল্লাহ !! নাউযুবিল্লাহ !!!
দলীল-
√ তাফসীরে রূহুল মায়ানী ২৫ তম খন্ড ৭৪ পৃষ্ঠা ।

★ইয়াযীদ কাফির যে তার কবিতায় কথিত ঋনের
কথা বলেছে সে বিষয়ে আল্লামা আলূসী বাগদাদী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,-

” ইয়াযীদ তার উক্তি আমি রসূলের নিকট হতে আমার
ঋনগুলো শোধ করে নিয়েছি দ্বারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদর
যুদ্ধে ইয়াযীদের নানা উতবা এবং তার মামাকে ও অন্যান্য
আপনজনকে হত্যা করেছিলেন। যার প্রতিশোধরূপে ইয়াযীদ
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আহলে বাইত শরীফ উনাদের শহীদ করেছে। নাউযুবিল্লাহ!
এটা স্পষ্ট কুফরীর প্রমান। তার এ উক্তি প্রমানিত হওয়ায়
ইয়াযীদ এজন্য অবশ্যই কাফির হয়ে গেছে।”
দলীল-
√ তাফসীরে রূহুল মায়ানী ২৫ তম খন্ড ৭৪ পৃষ্ঠা


★আলুসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

ﺫﺍﻟﻚ ﻟﻌﻤﺮﻱ ﻫﻮ ﺍﻟﻀﻼﻝ ﺍﻟﺒﻌﻴﺪ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻜﺎﺩ
ﻳﺰﻳﺪ ﻋﻠﻲ ﺿﻼﻝ ﻳﺰﻳﺪ

অর্থ-আমি কসম করে বলি , এটা হলো চরম ভ্রষ্টতা।
যা ইয়াজীদের ভ্রষ্টতাকে অতিক্রম করেছে।”
দলীল-
√ রুহুল মায়ানী ২৫ তম খন্ড ৭৩ পৃষ্ঠা ।


♦♦কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফের আলোকে হযরত
আহলে বাইত (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) ওনাদের ফযীলত ♦♦


★কুরআন মজীদে ঘোষিত হয়েছে: “নিশ্চয়
যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:)-কে,
তাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত) দুনিয়া ও
আখেরাতে এবং আল্লাহ তাদের
জন্যে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত
করে রেখেছেন।” [সূরা আহযাব, ৫৭ আয়াত]


★মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-

ﻗﻞ ﻻ ﺍﺱﺀﻟﻜﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﺟﺮﺍ ﺍﻻ ﺍﻟﻤﻮﺩﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮ ﺑﻲ

অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !
আপনি ( উম্মতদের ) বলুন, আমি তোমাদের নিকট নবুওয়াতের
দায়িত্ব পালনের কোন প্রতিদান চাই না। তবে আমার
নিকটজন তথা আহলে বাইত উনাদের প্রতি তোমরা সদাচারন
করবে।”
( সূরা শূরা : আয়াত শরীফ ২৩ )

★এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তফসীর
“তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ আছে-

ﻻ ﺍﺱﺀﻟﻜﻢ ﺍﺟﺮﺍ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺗﻮﺩﻭﺍ ﺍﻗﺮﺑﺎﺀﻱ ﻭﺍﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ ﻭ ﻋﺘﺮﺗﻲ ﻭﺫﻟﻚ ﻻﻧﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﺧﺎﺗﻢ
ﺍﻟﻨﺒﻴﻦ ﻻ ﻧﺒﻲ ﺑﻌﺪﻩ

অর্থ: আমি তোমাদের নিকট প্রতিদান চাই
না তবে তোমরা আমার নিকটাত্মীয়, আহলে বাইত ও বংশধর
উনাদের ( যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক) হক্ব আদায় করবে।
কেননা আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন শেষ নবী। উনার
পরে কোন নবী নেই।”
দলীল-
√ তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ড ৩২০ পৃষ্ঠা।


কতিপয় হাদীস শরীফ থেকে হযরত সাইয়্যিদুনা ইমাম
হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার ফযীলত নিম্নে উল্লেখ
করা হলো :

★” উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম
তিনি বলেন, একদা ভোরবেলা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একখানা কালো বর্নের
পশমী নকশী কম্বল শরীর মুবারকে জড়িয়ে বের হলেন। এমন
সময় হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম
তিনি সেখানে আসলেন, তিনি উনাকে কম্বলের ভিতর প্রবেশ
করিয়ে নিলেন। তারপর ইমাম হযরত হুসাইন আলাইহিস
সালাম তিনি আসলেন, উনাকেও হযরত ইমাম হাসান
আলাইহিস সালাম উনার উনার সাথে প্রবেশ করিয়ে নিলেন।
অতঃপর সাইয়্যিদাতুন নিছা হযরত ফাতিমাতুয
যাহরা আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন উনাকেও
তাতে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত আলী আলাইহিস
সালাম তিনি আসলেন,উনাকেও তার ভিতর প্রবেশ
করিয়ে নিলেন। অতঃপর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন শরীফের এই আয়াত
শরীফখানা পড়লেন, হে আমার আহলে বাইত ! আল্লাহ
তায়ালা তিনি আপনাদেরকে সকল প্রকার
অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রেখে পবিত্র করার মত পবিত্র
করবেন।”
অর্থাৎ পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন।
দলীল-

√ সহীহ মুসলিম শরীফ – বাবু ফাদ্বায়িলু আহলে বাইতিন
নাব্যিয়ি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ৬০৪৩
নং হাদীস শরীফ। (ইফা)


★হাদীস শরীফে আরো বর্নিত আছে-

ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ
ﻭ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭ ﺍﻟﺤﺴﺴﻴﻦ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺳﻴﺪﺍ ﺷﺒﺎﺏ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বলেন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক
করেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম উনারা দু’জনেই জান্নাতী যুবকগনের
সাইয়্যিদ।”
দলীল-
√ তিরমীযি শরীফ – আহলে বাইত শরীফ উনাদের ফযীলত
অধ্যায়।


★হাদীস শরীফে আরো বর্নিত আছে-

ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﻌﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻋﻠﻴﻪ
ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺍﻧﺎ ﺣﺮﺏ ﻟﻤﻦ ﺣﺎﺭﺑﻬﻢ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻟﻤﻦ ﺳﺎﻟﻤﻬﻢ

অর্থ: হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী আলাইহিস সালাম ,
সাইয়্যিদাতুনা ফাতিফাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত
ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম , ইমাম হুসাইন আলাইহিস
সালাম উনাদের সম্পর্কে বলেছেন, যারা উনাদের
প্রতি শত্রুতা পোষন করবে, আমি তাদের শত্রু।
পক্ষান্তরে যে উনাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, আমি তাদের
সাথে সদ্ব্যবহার করবো।”
দলীল-
√ সহীহ তিরমিযী শরীফ – আহলে বাইত শরীফ উনাদের
ফযীলত অধ্যায়।

এই সম্পর্কে বললে শেষ করা যাবে না শুধু কিছু হাদিস এর রেফারেন্স দিচ্ছি এগুলো স্বয়ং আমি (মাসুম বিল্লাহ সানি) শপথ করে বলছি আহলে বাইয়াতের শানে সহীহ তিরমিযি থেকে সংকলিত করেছি (আরো অনেক হাদিস রয়েছে এখানে কিছু দিলাম)-

TIRMIZI SORIF::-
Hadith Number 3205:
Hadith Number 3206:
Hadith Number 3712:
Hadith Number 3713:
Hadith Number 3717:
Hadith Number 3718:
Hadith Number 3719:
Hadith Number 3721:
Hadith Number 3722:
Hadith Number 3723:
Hadith Number 3724:
Hadith Number 3726:
Hadith Number 3727:
Hadith Number 3728:
Hadith Number 3731:
Hadith Number 3732:
Hadith Number 3733:
Hadith Number 3734:
Hadith Number 3735:
Hadith Number 3736:
Hadith Number 3737:
Hadith Number 3767:
Hadith Number 3768:
Hadith Number 3769:
Hadith Number 3770:
Hadith Number 3771:
Hadith Number 3772:
Hadith Number 3773:
Hadith Number 3874:
Hadith Number 3775:
Hadith Number 3876:
Hadith Number 3786:
Hadith Number 3787:
Hadith Number 3788:
Hadith Number 3789:
Hadith Number 3800:
Hadith Number 3801:
:
:
HOUSEHOLD:
Al-Tirmidhi, Hadith #6143
Al-Tirmidhi, Hadith #6144
Al-Tirmidhi, Hadith # 6174
:
Muslim:--
:
Hadith Number 31/5923:
Hadith Number 31/5920:5922
Hadith Number 031/5955:


-----------------------------------------------


♦♦ইতিহাস সাক্ষী ইয়াজিদ চিরঅভিশপ্ত♦♦

♦♦এখন আসুন ইয়াজিদকে জগতবিখ্যাত ইমামগন দ্বারা Justify করি যাদেরকে আহলে হাদিস / সুন্নী / ওহাবী- তাবলিগ সবাই মানেন।♦♦


★সহীহ হাদিসঃ
রাসুল [ﷺদুরুদ ] বলেছেন, যে ব্যাক্তি মদিনাবাসীর উপর অত্যাচার করে এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করে, তুমি তাঁকে ভয় প্রদর্শন কর, এমন মানুষের উপর আল্লাহ, ফেরেস্তাগন ও সকল মানুষের লা'নত বর্ষিত হোক।
[মো'জামুল আওসাত লিত তাবারানী- ২/১২৫/১]


★Imam Ahmed narrates this report from Sa’ib bin Khalad (RA) that the Prophet of Allah (Peace be upon him) said:

Whosoever spreads injustice and frightened the people of Madina, then Curse (Lanah) of Allah, his Angels and all the people is upon such a person.

[Musnad Ahmed bin Hanbal as narrated by Imam Ibn Kathir in Al Bidayah Wal Nihayah Vol 8 Page No. 274]


**************** ইয়াজিদ এর অভিশপ্ত কর্মকান্ডঃ**************


★★★ইয়াজিদ আল-কুরআনকে ত্যাগ করেছিল


এয়াযীদের কুরআন প্রত্যাখ্যান
নিচের রেফারেন্সগুলো দেখুন –
১. আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা,
যিকর রাস আল-হুসাইন
২. মিনহাজ আস্ সুন্নাহ ২য় খণ্ড, ২৪৯ পৃষ্ঠা, যিকর
এয়াযীদ
৩. শরহে ফেকাহে আকবর, ৭৩ পৃষ্ঠা, যিকর
এয়াযীদ
৪. শরহে তাফসীরে মাযহারী, ৫ম খণ্ড, ২১
পৃষ্ঠা, সূরাহ ইবরাহীম
৫. শাযরাহ আল-যাহাব, ৬৯ পৃষ্ঠা,
যিকরে শাহাদাতে হুসাইন
৬. মাকাতাহিল হুসাইন ২য় খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা,
যিকরে শাহাদাতে হুসাইন
৭. তাযকিরায়ে খাওওয়াস, ১৪৮ পৃষ্ঠা
৮. তারীখে তাবারী ১১তম খণ্ড, ২১-২৩ পৃষ্ঠা,
যিকর ২৮৪ হিজরী
৯. তাফসীরে রূহুল মা’আনী (সূরা মোহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)



★ওহাবী সালাফী সুন্নী সকলের গ্রহনযোগ্য Scholar ইবনে কাসীর (রঃ) ৬৩ হিজরীর (কারবালার) ঘটনা সম্পর্কে নিজ ’তারিখ’ গ্রন্থে লিখেন:


فقال ابن الزبير يا هؤلاء قتل أصحابكم فانا لله وإنا إليه راجعون

وقد أخطأ يزيد خطأ فاحشا فى قوله لمسلم بن عقبة أن يبيح المدينة ثلاثة أيام وهذا خطأ كبير فاحش مع ما انضم إلى ذلك من قتل خلق من الصحابة وأبنائهم وقد تقدم أنه قتل الحسين وأصحابه على يدى عبيد الله بن زياد وقد وقع فى هذه الثلاثة أيام من المفاسد العظيمة فى المدينة النبوية مالا يحد ولا يوصف مما لا يعلمه إلا الله عز وجل وقد أراد بارسال مسلم بن عقبة توطيد سلطانه وملكه ودوام أيامه من غير منازع فعاقبه الله بنقيض قصده وحال بينه وبين ما يشتهيه فقصمه الله قاصم الجبابرة وأخذه أخذ عزيز مقتدر وكذلك أخذ ربك إذا أخذ القرى وهى ظالمة إن أخذه أليم شديد


ইবনে যুবাইর (রা:) বলেন, ওহে মানুষেরা! তোমাদের আসহাবদেরকে হত্যা করা হয়েছে - ইন্না লিল্লাহে ইন্না ইলাইহে রাজেউন। এয়াযীদ একটি ঘৃণিত ভুল কাজ করেছে মদীনা মোনাওয়ারাকে তিন দিনের জন্যে ‘মোবাহ’ হিসেবে কার্যকর করার লক্ষ্যে মুসলিম ইবনে উকবাকে আদেশ দিয়ে। এটি ছিল তার সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক ভুল। অনেক সাহাবা-এ-কেরাম ও তাঁদের সন্তানদের হত্যা করা হয়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের মাধ্যমে এয়াযীদ আমাদের রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা:) ও তাঁর সাথীদের শহীদ করে; আর ওই তিন দিনে মদীনা মোনাওয়ারায় এমন গর্হিত অপরাধ সংঘটিত হয় তা আল্লাহ ছাড়া কেই জানেন না। এয়াযীদ তার শাসনকে মুসলিম
ইবনে উকবাহের প্রেরণের মাধ্যমে সংহত
করতে চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহতা’লা তার
ইচ্ছাকে পুরো হতে দেন
নি এবং তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ
তাকে মেরে ফেলেন
যেমনিভাবে তিনি আগ্রাসী শহরগুলোকে
(অর্থাৎ, ওই শহরগুলোর
আক্রমণকারীদেরকে) নিজ কব্জায়
নিয়েছিলেন; আর নিঃসন্দেহে আল্লাহর
কব্জা কঠোর ও বেদনাদায়ক।” [আল-বেদায়া ওয়ান্
নেহায়া, ৮ম খণ্ড, ২৮৩ পৃষ্ঠা]


★ইয়াজিদের অনুগত সেনা ইবনে যিয়াদের মন্তব্য :-


كان يزيد كتب إلى عبد الله بن زياد أن يسير إلى الزبير فيحاصره بمكة فأبى عليه وقال والله لا أجمعهما للفاسق أبدا أقتل ابن بنت رسول الله ص وأغزو البيت الحرام وقد كانت أمه مرجانة قالت له حين قتل الحسين ويحك ماذا صنعت وماذا ركبت وعنفته تعنيفا شديدا قالوا وقد بلغ يزيد أن ابن الزبير يقول فى خطبته يزيد القرود شارب الخمور تارك الصلوات منعكف على القينات


 ইবনে যিয়াদও এয়াযীদের আচরণে বিরূপ
এয়াযীদের অপরাধ এতো গর্হিত ছিল যে এমন
কি তার অনুগত উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ
যাকে মুসলিম ইবনে আকীল ও
পরবর্তী পর্যায়ে ইমাম হুসাইন (রা:)-এর হত্যার
জন্যে পাঠানো হয়েছিল, এবং যাকে পত্র মারফত
এয়াযীদ বলেছিল মক্কায় গিয়ে হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে যুবাইর (রা:)-এর ওপর আবরোধ দিতে,
সেও তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিল:
’আল্লাহর শপথ! আমি কোনো ফাসেক
(পাপী এয়াযীদ)-এর খাতিরে দুটো (অপ)-
কর্মতে জড়াবো না। আমি ইতোমধ্যেই
রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর মেয়ের (ঘরের)
নাতিকে হত্যা করেছি; আর এখন (সে নির্দেশ
দিচ্ছে) বায়তুল হাররামের সাথে যুদ্ধ করতে।’
তবে এয়াযীদ যখন ইমাম হুসাইন (রা:)-
কে শহীদ করে, তখন তার
মা মারজানা তাকে বলেন, ‘তুমি মরো গে!
তুমি এই জঘন্য অপরাধ
কীভাবে করতে পারলে?’ তিনি তাকে অত্যন্ত
কঠোর ভাষায় ভর্ৎসনা করেন।
এয়াযীদকে জানানো হয় যে হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে যুবাইর (রা:) তাঁর বিভিন্ন ভাষণে এয়াযীদ
সম্পর্কে বলতেন, সে একজন জালিয়াত, মদ্যপ,
নামায তরককারী ও গায়িকা (ভ্রষ্টা) নারীদের
সাহচর্যে অবস্থানকারী ব্যক্তি।
[ইবনে কাসীর কৃত ‘আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া’,
৮ম খণ্ড, ২৭৯ পৃষ্ঠা]


★তিনি আরো লিখেন:-

ثم أباح مسلم بن عقبة الذى يقول فيه السلف مسرف بن عقبة قبحه الله من شيخ سوء ما أجهله المدينة ثلاثة أيام كما أمره يزيد لا جزاه الله خيرا وقتل خيرا خلقا من أشرافها وقرائها وانتهب أموالا كثيرة منها ووقع شر وفساد عريض على ما ذكره غير واحد فكان ممن قتل بين يديه صبرا معقل بن سنان وقد كان صديقه قبل ذلك ولكن أسمعه فى يزيد كلاما غليظا فنقم عليه بسببه


ইবনে কাসীর আরও বর্ণনা করেন:
মুসলিম ইবনে উকবা, যার অপর পরিচিতি আস্ সাইফ
মুসরাফ বিন উকবা নামে (আল্লাহ এই বদ ও মূর্খ
লোকের কল্যাণ না করুন, আমীন),
সে এয়াযীদের
আদেশে মদীনা মোনাওয়ারার
আক্রমণকে ‘বৈধতা’ দিয়েছিল তিন দিনের জন্যে।
আল্লাহতা’লা এয়াযীদকে ‘জাযা’ ও ’খায়র’ মন্ঞ্জুর
না করুন, আমীন। সে বহু ন্যায়বান মানুষের
হত্যা সংঘটন করে এবং মদীনার বিপুল মালামাল
লুঠপাট করে। একাধিক বর্ণনায়
এসেছে যে সে ওখানে প্রচুর ক্ষতি সাধন
করে এবং অনেক ফাসাদের জন্ম দেয়। এও
উল্লেখিত হয়েছে যে (সাহাবী) হযরত
মুয়াফল ইবনে সানান (রা:)-কে ইবনে উকবার
সামনে বেঁধে রাখা হয় এবং তারপর শহীদ
করা হয়। এই সময় সে বলে, ‘তুমি এয়াযীদের
বন্ধু ছিলে, কিন্তু পরে তুমি তার বিরুদ্ধে কঠোর
ভাষা ব্যবহার করেছ; তাই এয়াযীদ তোমার
প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন হয়েছে। [আল-বেদায়াহ
ওয়ান্ নেহায়াহ, ৮ম খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা]


★★★নেতৃস্থানীয় তাবেঈ সাঈদ
ইবনে মুসাইয়েব (রহ:)-এর প্রতি এয়াযীদের
বৈরিতা
আল-মুদাইনী (রহ:) বলেন যে,"


قال المدائنى وجىء إلى مسلم بسعيد بن المسيب فقال له بايع فقال أبايع على سيرة أبى بكر وعمر فأمر بضرب عنقه فشهد رجل إنه مجنون فخلى سبيله

অর্থ: হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব (রহ:)-কে নিয়ে আসা হয়
মুসলিম বিন উকবার সামনে। সে তাঁকে তার
কাছে বায়াত (আনুগত্য) গ্রহণ করতে বলে।
তিনি এর জবাবে বলেন, “আমি (শুধু)
সাইয়্যেদুনা হযরত আবু বকর (রা:) ও
সাইয়্যেদুনা হযরত উমর (রা:)-এর সীরাতের
(আদর্শের) প্রতি বায়াত নিতে পারি।” এমতাবস্থায়
ইবনে উকবা তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেয়। কিন্তু
কেউ একজন (তাঁকে বাঁচাবার জন্যে) বলেন
যে এই ব্যক্তি (হযরত সাঈদ) পাগল।
এতে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়। [ আল-বেদায়াহ
ওয়ান্ নেহায়াহ, ৮ম খণ্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা]


★ইবনে কাসীরের ভাষ্য –
ইবনে কাসীর তার রচিত ‘আল-বেদায়া’ গ্রন্থের
৮ম খণ্ডের ১১৬৯ পৃষ্ঠায় ‘যিকরে এয়াযীদ বিন
মোয়াবিয়া’ শীর্ষক অধ্যায়ে লিখেন:
”বিভিন্ন বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে এয়াযীদ
দুনিয়ার কুকর্ম পছন্দ করতো; মদ্যপান করতো,
গান-বাজনায় ছিল আসক্ত, দাড়িবিহীন ছেলেদের
সাথে সমকামিতায় লিপ্ত, ঢোল বাজাতো, কুকুর
পালতো, ব্যাঙের, ভালুকের ও বানরের লড়াই
লাগিয়ে দিতো। প্রতিদিন সকালে সে মদ্যপ
অবস্থায় বানরকে ঘোড়ার পিঠের
সাথে বেঁধে ঘোড়াকে দৌড় দিতে বাধ্য
করতো।” [আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া, ৮ম খণ্ড,
১১৬৯ পৃষ্ঠা]


★★★ইবনে আসীরের মন্তব্য:-

ইবনে আসীর নিজ ’তারীখ আল-কামিল’
গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৪৫০ পৃষ্ঠায় মুনযির
ইবনে যাবীর থেকে বর্ণনা করেন:
”এটি সত্য যে এয়াযীদ আমাকে ১,০০,০০০ (এক
লক্ষ) দিরহাম পুরস্কারস্বরূপ দিয়েছিল, কিন্তু এটি তার
প্রকৃত
অবস্থা বর্ণনা করা হতে আমাকে রুখবে না।
আল্লাহর কসম, সে একজন মাতাল।”


★★★ ইমাম নাসাফী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কিতাবুল আক্বায়িদ” বলেছেন, “ইয়াযিদের উপর, ইবনে যিয়াদের উপর, আহলে বাইত-এর সদস্যগণের শহীদকারীদের উপর লা’নত বর্ষিত হোক।”
(আকাইদে নাসাফী পৃ ১৬২)


★★★ ইমাম যাহাবী (রহ) এর মন্তব্য :-


★ইমাম যাহাবী (রঃ) বর্ণনা করেন,
”এয়াযীদ ছিল এক জঘন্য নসিবী (আহলে বায়তকে ঘৃণাকারী)। সে রাজত্ব আরম্ভ করে ইমাম হুসাইন (রা:)-কে শহীদ করে এবং রাজত্বের ইতি টানে হাররা-এর ঘটনা দ্বারা (অর্থাৎ, মদীনা অবরোধ, যার দরুন সহীহ হাদীস মোতাবেক সে লা’নতের যোগ্য হয়)। ফলে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতো; অধিকন্তু সে জীবনে রহমত-বরকত কিছুই পায় নি; ইমাম হুসাইন (রা:)-এর শাহাদাতের পরে তার বিরুদ্ধে অনেকে অস্ত্র তুলে নেন - যেমনটি করেছিলেন মদীনাবাসীগণ, যাঁরা আল্লাহর ওয়াস্তে (তার বিরুদ্ধে) রুখে দাঁড়ান।”
[‘সিয়্যার আল-আ’লম আন্ নুবালা’, ৪র্থ খণ্ড, ৩৭-৩৮ পৃষ্ঠা]


★ইমাম যাহাবী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে আরও বলেন,
“আমি বলি, এয়াযীদ মদীনাবাসীদের সাথে যে আচরণ করেছিল, এবং ইমাম হুসাইন (রা:) ও তাঁর বংশধরদের যেভাবে হত্যা করেছিল, আর যেভাবে মদ্যপান ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়েছিল, তাতে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিকবার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আল্লাহতা’লা এয়াযীদের জীবনে রহমত-বরকত দেন নি; উপরন্তু, আবু বিলাল মিরদাস্ বিন আদইয়া আল-হানযালী তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।”
[তারিখুল ইসলাম ওয়া তাবাকাত আল-মাশাহির ওয়াল্ আ’লম, ০০৫ খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা]


★ ইমাম যাহাবী আরও লিখেন, “যিয়াদ
হারসী বর্ণনা করে: ‘এয়াযীদ আমাকে মদ পান
করতে দেয়। আমি ইতিপূর্বে কখনোই এ রকম
মদ পান করি নি; তাই তাকে জিজ্ঞেস
করি কোথা থেকে সে এই মদের উপাদান
সংগ্রহ করেছে। এয়াযীদ জবাবে বলে,
এটি মিষ্টি ডালিম, ইসপাহানের মধু, হাওয়াযের চিনি,
তায়েফের আঙ্গুর ও বুরদাহ-এর
পানি দ্বারা প্রস্তুতকৃত।’ আহমদ
ইবনে মাসামা বর্ণনা করেন: ‘একবার এয়াযীদ
মদ্যপান করে নাচা আরম্ভ করে; হঠাৎ
সে পড়ে যায় এবং তার নাক দিয়ে রক্ত
বেরুতে আরম্ভ করে’।” [সিয়ার আল-আ’লম
আন্ নুবালাহ, ০০৪ খণ্ড, ০৩৭ পৃষ্ঠা]


★★★হাফিজুল হাদিস ইবনে হাজর আসকালানী (রহ) ইয়াজিদ সম্পর্কে মন্তব্য:-


★বুখারী শারীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার শায়খুল ইসলাম
ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) তাঁর রচিত

‘আল-এমতা’ বিল আরবাঈন’ শীর্ষক বইয়ের পুরো শিরোনামই দিয়েছেন :-

                       ’'এয়াযীদের প্রতি লা’নত’'


وأما المحبة فيه والرفع من شأنه فلا تقع إلا من مبتدع فاسد الاعتقاد فإنه كان فيه من الصفات ما يقتضي سلب الإيمان عمن يحبه لأن الحب في الله والبغض في الله من الإيمان والله المستعان



ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) লিখেছেন,
“ইয়াযীদকে ভক্তি ও তার প্রশংসা ’পথভ্রষ্ট, গোমরাহ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই করে না; আর তার ইমান তথা বিশ্বাস একেবারেই শূন্য। কেননা, ইয়াযীদের এমন সব বৈশিষ্ট্য ছিল যার ভক্ত, অনুরক্ত হলে কুফর তথা কুফরির তথা অবিশ্বাসের যোগ্য হতে হয; কারন, কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করাই হল ঈমানের লক্ষণ।”

তথ্যসুত্র :


[দার আল- কুতুব আল-’এলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন হতে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী প্রণীত ‘আল-’ইমতা বিল্ আরবাঈন আল-মাতবাইনাত আস্ সামা’আ’ (الإمتاع بالأربعين المتباينة السماع), পুস্তকের ৯৬ পৃষ্ঠা]




★ ইমাম ইবনে হাজার ইয়াজিদের ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) তাঁর তফসীরে, ইয়াজিদের ‘মাগফুর’ বা ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন এভাবে , “ ইবনে মুহলাব বলেছেন যে, এই হাদীসে আমীর মুয়াবিয়ার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন তিনি প্রথম নৌ অভিযান করেছিলেন এবং এই হাদীসে ইয়াযিদের কথাও ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন সে প্রথম কাইসারের নগরী আক্রমন করেছিল (এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা কারন ইয়াযিদ প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহন করে নি সে অনেক পরের একটি অভিযানে তার পিতা কর্তৃক শাস্তিস্বরুপ প্রেরিত হয়েছিল- লেখক)
কিন্তু, ইবনে আল তীন এবং ইবনে আল্ মূনীর এর উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ইহা অপরিহার্য নয় যে, ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে সকলেই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত কারন উলামায়ে ক্বিরাম তথা জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ সকলেই একমত যে, তারাই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত হবে যারা প্রকৃতই তার উপযুক্ত হবে কারন আক্রমনকারীদের মধ্যে যদি কেউ পরে মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে সে আর ক্ষমাপ্রাপ্তগনের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে না এবং এটা প্রমান যে উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ক্ষমাপ্রাপ্তির বিষয়টি শর্তাধীন।
[ তথ্যসূত্র : ফাতহুল বারী শারাহ সাহীহ বুখারী - ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী – খন্ড নং ৬ – পৃ নং ২০০-২০১ ]



★তিনি আরো লিখেন :-

قال يحيـى بن عبد الملك بن أبـي غنية أحد الثقات، ثنا نوفل بن أبـي عقرب ثقة قال: كنت عند عمر بن عبد العزيز فذكر رجل يزيد بن معاوية، فقال: قال أمير المؤمنين يزيد، فقال عمر: تقول أمير المؤمنين يزيد، وأمر به فضرب عشرين سوطاً


“ইয়াহইয়া ইবনে আব্দিল মুলক্ বিন
আবি গানিয়্যা যিনি ’সিকা (নির্ভরযোগ্য)
বর্ণনাকারীদের একজন’, তিনি ‘সিকা’
বর্ণনাকারী নওফল বিন আবি আকরাব
থেকে শুনেছেন: একবার খলীফা উমর
ইবনে আবদিল আযীয (২য় উমর)-এর
দরবারে মানুষেরা এয়াযীদ
ইবনে মু’আবিয়া সম্পর্কে আলাপ করছিলেন। ওই
সময় এক লোক এয়াযীদকে ‘আমীরুল
মো’মেনীন’ (ঈমানদারদের শাসক)
খেতাবে সম্বোধন করে।
এটি শুনে খলীফা ২য় উমর (রাগান্বিত হয়ে)
তাকে বলেন, “তুমি এয়াযীদকে আমীরুল
মো’মেনীন ডেকেছ?” অতঃপর তিনি ওই
লোককে ২০টি দোররা মারার হুকুম দেন। [ইমাম
আসকালানী কৃত ‘তাহযিবুত্ তাহযিব’, ৬ষ্ঠ খণ্ডের
৩১৩ পৃষ্ঠা]


★★★ হাফিজুল হাদিস (১ লক্ষ হাদিসের হাফিজ) ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী (রহ)
ইয়াজিদ সম্পর্কে বলেন:-


★ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ:) ’তারিখুল
খুলাফা’ গ্রন্থে যা বলেন –

”আপনি (ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু) শাহাদাত বরণ
করেন এবং আপনার কর্তিত শির ইবনে যিয়াদের
সামনে একটি থালায় করে আনা হয়।
আপনাকে যে ব্যক্তি হত্যা করেছে তার ওপর
আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত); আরও লা’নত
ইবনে যিয়াদ ও এয়াযীদের ওপর।” [ইমাম
সৈয়ুতী রচিত ‘তারিখুল খুলাফা’ গ্রন্থের ১৬৫ পৃষ্ঠা]


★ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

ﻗﺎﻝ ﻧﻮﻓﻞ ﺑﻦ ﺍﺑﻲ ﺍﻟﻔﺮﺍﺕ ﻛﻨﺖ ﻋﻨﺪ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﻓﺬﻛﺮ ﺭﺟﻞ ﻳﺰﺩ ﻓﻘﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺍﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻳﺰﻳﺪ
ﺑﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻋﻨﻪ ﻓﺎﻝ ﺗﻘﻮﻝ ﺍﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻮﻳﻦ ؟ ﻭﺍﻣﺮ ﺑﻦ ﻓﻀﺮﺏ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺳﻮﻃﺎ

অর্থ: নাওফিল ইবনু আবী ফিরায়াত (রহ) বলেন, আমি খলীফা উমর
ইবনে আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট
ছিলাম, সেখানে এক ব্যক্তি ইয়াজিদ
প্রসঙ্গে বর্ননা করতে গিয়ে বলে ফেলেছিল ” হযরত
মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পুত্র আমীরুল মু’মিনিন ইয়াযীদ
বলেছে।”” এ কথা শোনার সাথে সাথেই খলীফা হযরত উমর
ইবনে আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলে উঠলেন,
তুমি ইয়াযীদকে আমীরুল মু’মিনিন বলছো ? হযরত উমর বিন
আব্দুল আযীয
রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি লোকটিকে দোররা মারার
নির্দেশ দিলেন। তখনই লোকটিকে বিশটি দোররা মারা হয়।”
দলীল-
√ তারীখুল খুলাফা লি জালালুদ্দীন
সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৬৭ পৃষ্ঠা।

★হুররার ঘটনার বিবরন দিতে গিয়ে  মুসলিম শরীফের
বরাতে  ইমাম সৈয়ুতী (রহ:) আরও লিখেন:

৬৩ হিজরীতে এয়াযীদ
জানতে পারে যে মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ
তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তার
বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই সে এক
বিশাল সৈন্যবাহিনী পবিত্র নগরীতে প্রেরণ
করে এবং মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষণা করে। পবিত্র নগরী লুঠপাটের
পরে সে তার বাহিনীকে পবিত্র মক্কায় পাঠায়
সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:)-
কে শহীদ করার জন্যে। ওই সময় ‘হাররা’-এর
ঘটনা ঘটে। হাররায় কী ঘটেছিল আপনারা জানেন
কি? এ প্রসঙ্গে (তাবেঈ) হযরত হাসসান বলেন,
“মদীনা মোনাওয়ারায় হামলা হলে পর কেউই
নিরাপদ ছিলেন না। অসংখ্য সাহাবী ও অন্যান্য মানুষ
শহীদ হন এবং মদীনায় লুঠপাট হয়; আর সহস্র
সহস্র কুমারী মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা হয়।
ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। …
মহানবী (দ:) এরশাদ করেন:
“মদীনাবাসীকে যে কেউ (সন্ত্রাসের
মাধ্যমে) হয়রানি বা ভীত-সন্ত্রস্ত
করলে আল্লাহ-ও তাকে অনুরূপ প্রতিদান
দেবেন এবং তার ওপর আল্লাহর লা’নত,
ফেরেশতাকুল ও মানব জাতির (মো’মেনদের)
লা’নত-ও” (মুসলিম শরীফ)।


মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ
যে কারণে এয়াযীদের বায়াত গ্রহণ করেন নি,
তা হলো সে ’অত্যধিক পাপাচারে লিপ্ত’ ছিল।
আল-ওয়াকিদী সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ বিন
খাযলাতাল গুসাইল (রা:) থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেন: “আল্লাহর শপথ! আমরা এয়াযীদের
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি যখন আমরা নিশ্চিত
হয়েছি যে ‘আমাদের প্রতি আসমান
থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হবে’; কেননা,
এয়াযীদী গোষ্ঠী তাদের মা, বোন ও
কন্যাদের বিয়ে করা আরম্ভ করেছিল,
প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিল এবং নামাযও তরক
করছিল।” ইমাম যাহাবী বলেন, এয়াযীদ ‘মদ্যপান
ও অন্যান্য কুকর্মে লিপ্ত’ হবার পর
মদীনাবাসীদের প্রতি জুলুম-নিপীড়ন
করলে মক্কাবাসী মুসলমানবৃন্দও চারদিক
থেকে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
আল্লাহতা’লা এয়াযীদের
জীবনে কোনো রহমত-বরকত দেন নি।
(এয়াযীদ মক্কা আক্রমণ করে হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকেও শহীদ
করে)।
 [ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত ‘তারিখুল খুলাফা’
গ্রন্থের ১৬৭ পৃষ্ঠা]


★★★ইমাম কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী (রহ) ইয়াজিদ সম্পর্কে :-


★ কাজী সানাউল্লাহ
পানিপথী (রহ:)-এর ভাষ্য –
মহান মুফাসসির ও সুবিখ্যাত গ্রন্থাবলীর
প্রণেতা এবং সকল সুন্নী মুসলমানের
কাছে গ্রহণযোগ্য ইসলামী জ্ঞান বিশারদ
কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী (রহ:) কুরআন
মজীদের ১৪:২৮ আয়াতখানি উদ্ধৃত করেন:
“আপনি কি তাদেরকে দেখেন
নি যারা অকৃজ্ঞতাবশত আল্লাহর অনুগ্রহকে বদল
করেছে এবং আপন সম্প্রদায়কে ধ্বংসের
ঘরে নামিয়ে এনেছে?” অতঃপর এর
তাফসীরে হযরত পানিপথী (রহ:) লিখেন,
“বনী উমাইয়া সব সময় কুফরীর ওপর উল্লাস
প্রকাশ করেছিল; তবে আবু সুফিয়ান,
আমীরে মোয়াবিয়া (রা:), আমর ইবনে আস্
এবং অন্যান্যরা মুসলমান হয়েছিলেন।
পরবর্তীকালে এয়াযীদ ও তার
সাথীরা আল্লাহর এই নেয়ামত (আশীর্বাদ)
প্রত্যাখ্যান করে আহলে বায়তের প্রতি বৈরিতার
পতাকা উড়ায়; আর শেষমেশ ইমাম হুসাইন (রা:)-
কে শহীদ করে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়,
যেখানে সে মহানবী (দ:)-এর
ধর্মকে অস্বীকার করে বসে। ইমাম হুসাইন

(রা:)-এর শাহাদাতের পরে সে বলে: ‘আমার
পূর্বপরুষেরা বেঁচে থাকলে তাঁরা আজ
দেখতেন কীভাবে আমি মহানবী (দ:)-এর
পরিবার ও বনী হাশেমের ওপর প্রতিশোধ
নিয়েছি।’ সে এ কথা ব্যক্ত করতে যে দ্বিচরণ
শ্লোক ব্যবহার করে তার শেষাংশে আছে –
’বদরের যুদ্ধে আহমদ (মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমার পূর্বপুরুষদের
সাথে যা কিছু করেছেন, তার
বদলা আমি নেবো’ (নাউযুবিল্লাহ)। সে মদ হালাল
ঘোষণা করে এবং এর প্রশংসায় বলে,
‘যদি মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর ধর্মে মদ হারাম হয়,
তাহলে ঈসা ইবনে মরঈয়মের (আ:)
ধর্মে একে জায়েয
জেনো’।” [তাফসীরে মাযহারী, ৫ম খণ্ড,
২১১-২১২ পৃষ্ঠা]


★★★ ইমাম ইবনে যাওজীর মন্তব্য :-


★‘মাতাল’ এয়াযীদ
সম্পর্কে ইবনে জাওযীর মন্তব্য
ইবনে জাওযী তাঁর ’ওয়াফা আল-ওয়াফা’
কেতাবে বলেন:
”এয়াযীদ তার চাচাতো ভাই উসমান বিন মোহাম্মদ
বিন আবি সুফিয়ানকে মদীনার শাসক
পদে নিয়োগ করে। উসমান উপহার সামগ্রীসহ
এক প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে এয়াযীদের
কাছে তারই আনুগত্যের শপথ নেয়ার
উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রতিনিধি দলের
প্রত্যাবর্তনশেষে এর সদস্যরা বলেন,
‘আমরা এমন এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ
করে এসেছি যার কোনো ধর্ম নেই;
সে মদ্যপান করে, বাদ্যযন্ত্র বাজায়,
গায়িকা (ভ্রষ্টা নারী) ও কুকুর সাথে রাখে।
আমরা তার প্রতি আনুগত্যের শপথ প্রত্যাহার
করে নেয়ার কথা ঘোষণা করছি।’ আবদুল্লাহ
ইবনে আবি উমরু বিন হাফস মখযুমী বলেন,
‘এয়াযীদ আমাকে উপহার সামগ্রী দিয়েছিল।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই লোক আল্লাহর
একজন শত্রু এবং মদ্যপ। আমি যেভাবে আমার
এমামা (পাগড়ী) মাথা থেকে সরিয়ে ফেলছি, ঠিক
একইভাবে তার
থেকে নিজেকে আলাদা করবো।


-------------------------------------------


★আজ হতে ১৩৭২ বছর আগে ৬৪ হিজরির এই দিনে (১৪ ই রবিউল আউয়াল) জালিম ও খোদাদ্রোহী শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া মারা যায়। (মহান আল্লাহর অনন্ত অভিশাপ তার ওপর বর্ষিত হোক)


★ইয়াজিদ তার তিন বছর নয় মাসের অবৈধ শাসনামলে অন্তত: তিনটি মহাপাপ ও অপরাধযজ্ঞের জন্য ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ও ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে।
এই ৩টি পাপ হল :-

১) ইমাম হোসাইন ও শিশু আলী আসগর সহ কারবালায় নবী বংশের অনেককে শহীদ করা হয়।
২) ইয়াজিদের হুকুমে ইয়াজিদ বাহিনীর মদীনায় ৩ দিন ব্যাপী হামলা করে লুটপাত, ধর্ষন ও গন হত্যা চালায়। তখন অসংখ সাহাবীগনকে হত্যা করা হয়।
৩) পবিত্র মক্কায় কাবা শরীফে আক্রমন করা।

★এই তিনটি মহাপাপের মধ্যে প্রথমটি হল ৬১ হিজরিতে কারবালায় বিশ্বনবী (সা.)এর প্রিয় নাতী হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)ও তাঁর ছয় মাসের শিশুপুত্র হযরত আলী আসগরসহ নবী (দরুদ) বংশের ১৮ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে পিপাসার্ত অবস্থায় শহীদ করা। কারবালায় ইমামের আরো প্রায় ৬০ জন সমর্থকও বীরের মত লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন।
ইমাম শিবিরের জন্য কয়েকদিন ধরে পানি সরবরাহ নিষিদ্ধকারী ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (আ.)এর পবিত্র লাশসহ নবী-পরিবারের সদস্যদের লাশের ওপর ঘোড়া ছুটিয়ে লাশগুলো দলিত-মথিত করেছিল এবং তাঁদের মস্তক ছিন্ন করে বর্শার আগায় বিদ্ধ করেছিল। তারা কারবালায় ইমাম শিবিরের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুটপাট চালিয়েছিল। এ ছাড়াও নবী-বংশের নারী ও শিশুদেরকেও টেনে হিঁচড়ে শিকল পরিয়ে বন্দী অবস্থায় কুফার গভর্নরের দরবারে ও দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে গিয়েছিল খোদাদ্রোহী ইয়াজিদ বাহিনী।


★ইয়াজিদের দ্বিতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা চালানোসহ গণ-ধর্ষণের অনুমতি দেয়া। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম মাওলানা শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলাভী-র. প্রণীত 'কারবালার পর পবিত্র মক্কা ও মদীনায় ইয়াজিদি তাণ্ডবলীলা'শীর্ষক প্রবন্ধ)


★ইয়াজিদের তৃতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মক্কার কাবা ঘরে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়া। পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহাঅপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়।


পবিত্র কাবাঘরে হামলার পরই খবর আসে যে কুখ্যাত জালিম ও কাফির ইয়াজিদ মারা গেছে।

কারবালার ঘটনার পর নরাধম ইয়াজিদ তীব্র মাথা-ব্যথা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। একদিন সে মাতাল অবস্থায় শৌচাগারে পড়ে যায় এবং সেখানেই প্রাণ ত্যাগ করে। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর এবং তার পুরো শরীর আলকাতরার মত কালো হয়ে গিয়েছিল।

অবশ্য মহাপাপী ও অভিশপ্ত ইয়াজিদের মৃত্যু সম্পর্কে কয়েকটি বর্ণনা রয়েছে।

-----------------------------------------------

♦♦“অনেক ইমামগন ইয়াজিদের
প্রতি লানত বা অভিশাপ দিয়েছেন ♦♦


★ইতিহাসে স্তম্ভিত আর বিস্ময়কর রেকর্ড করল D. Jakir naik ইয়াজিদকে শেষ পর্যন্ত সম্বোধন করল ""ইয়াজিদ রহিমুল্লাহ"" বলে।

★★★ আসুন দেখি সিহাহ সিত্তাহর ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) ইয়াজিদ সম্পর্কে কি বলেছেন :-

-- ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ)
-- মুসনাদে আহমদের প্রনেতা
-- The greatest Imam of Hamboli Mazhab
-- যার জন্ম ১৬৪ হিজরি ওফাত ২৪১ হিজরি
-- যিনি ইমাম বুখারী (রহ) এর শিক্ষক ছিলেন ইমাম শাফেয়ী (রহ) এর শিষ্য ছিলেন।
-- যিনি বিখ্যাত ইমাম,মুস্তাহিদ ও মুহাদ্দিস ছিলেন

সেই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) লানত করেছেন ইয়াজিদকে।


★ এ প্রসঙ্গে বর্নিত আছে-

ﺍﻧﺎ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﺍﺣﻤﺪ ﺳﺄﻟﻪ ﻭﻟﺪ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﻟﻌﻦ ﻳﺬﻳﺪ ﻗﺎﻝ ﻛﻴﻒ ﻻ ﻳﻠﻌﻦ ﻣﻦ ﻟﻌﻨﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ؟ ﻓﻘﺎﻝ
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺪ ﻗﺮﺃﺕ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭ ﺟﻞ ﻓﻠﻢ ﺍﺟﺪ ﻓﻴﻪ ﻟﻌﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻳﻘﻮﻝ ﻓﻬﻞ
ﻋﺴﻴﺘﻢ ﺍﻥ ﺗﻮﻟﻴﺘﻢ ﺍﻥ ﺗﻔﺴﺪﻭ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻭ ﺗﻘﻄﻌﻮﺍ ﺍﺭﺣﺎﻣﻜﻢ ﺍﻭﻝﺀﻙ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻟﻌﻨﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ. ﻭﺍﻱ ﻓﺴﺎﺩ ﻭﻗﻄﻴﻌﺔ
ﺍﺷﺪ ﻣﻤﺎ ﻓﻌﻠﻪ ﻳﺰﻳﺪ ؟

অর্থ : হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল
রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ছেলে হযরত আবদুল্লাহ
রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার
পিতাকে ইয়াজিদকে লা’নত করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন।
তিনি ছেলেকে বলেন, আল্লাহ পাক যাকে উনার কিতাব
( কুরআন শরীফে) এ লা’নত করেছেন তাকে লা’নত
করা যাবে না কেন ? হযরত আব্দুল্লাহ
রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক
উনার কিতাব পাঠ করেছি। কুরআন
শরীফে ইয়াজিদকে লা’নতের সন্ধান পাই নাই। হযরত ইমাম
আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার
ছেলেকে বলেন, আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
হতে পারে তোমরা ফিরে যাবে আর পৃথিবীতে উপদ্রব
সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের রেহমী বা জঠর সম্পর্ক ছিন্ন
করবে। এরূপ লোকদের প্রতি আল্লাহ পাক তিনি লা’নত করেন।
কাজেই ইয়াজিদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি যা করেছে তার
চেয়ে অধিক উপদ্রব ও রেহমী সম্পর্ক ছিন্ন করা আর
কি হতে পারে ?”
দলীল-
√ তাফসীরে রূহুল মাআনী ২৫ তম খন্ড ৭২ পৃষ্ঠা, সুরা মুহাম্মদ আয়াত নং ২২-২৩


★বিশ্ব বিখ্যাত সুন্নী আক্বায়ীদের কিতাব
“আক্বাইদে নাসাফী” কিতাবে বর্নিত আছে –

ﻭﺑﻌﻀﻬﻢ ﺍﻃﻠﻖ ﺍﻟﻠﻌﻦ ﻋﻠﻴﻪ ﻟﻤﺎ ﺍﻧﻪ ﻛﻔﺮ ﺣﻴﻦ ﺍﻣﺮ ﻳﻘﻨﻞ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭ ﺍﺗﻔﻘﻮﺍ ﻋﻠﻲ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﻠﻌﻦ
ﻋﻠﻲ ﻣﻦ ﻗﺘﻠﻪ ﺍﻭ ﺍﻣﺮ ﺑﻪ ﺍﻭ ﺍﺟﺎﺯﻩ ﻭﺭﺿﻲ ﺑﻪ ﻭﺍﻟﺤﻖ ﺍﻥ ﺭﺿﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﻳﻘﺘﻞ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭ
ﺍﺳﺘﺒﺸﺎﺭﻩ ﺑﺰﻟﻚ ﻭ ﺍﻫﺎﻧﺔ ﺍﻫﻞ ﺑﻴﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻤﺎ ﺗﻮﺍﺗﺮ ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺍﻥ ﻛﺎﻥ ﺗﻔﺎﺻﻴﻠﻪ ﺍﺣﺎﺩﺍ
ﻓﻨﺤﻦ ﻻﻧﺘﻮﻗﻒ ﻓﻲ ﺷﺎﻧﻪ ﺑﻞ ﻓﻲ ﺍﻳﻤﺎﻧﻪ ﻟﻌﻨﺖ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻋﻠﻲ ﺍﻧﺼﺎﺭﻩ ﻭﺍﻋﻮﺍﻧﻪ

অর্থ- কতক আলেম ইয়াজীদদের প্রতি লা’নত বর্ষন করেছেন।
কারন ইয়াজীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার নির্দেশ
দিয়ে কাফিরের কর্ম করে। আর যে ইমাম হুসাইন আলাইহিস
সালাম উনাকে শহীদ করেছে, যে উনাকে শহীদ করার
নির্দেশ জারী করেছে , যে উনাকে শহীদ করাকে বৈধ
বলে মত পোষন করেছে , এসব কান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছে –
এরুপ লোকদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত দেয়াকে সকলেই
বৈধ বলেছেন। আর সত্য হলো, ইয়াজীদ ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার
ব্যাপারে রাজি ছিলো। উনার শহাদাত বরনের
ব্যাপারে সে উল্লসিত ছিলো। সে নবীজী উনার পরিবারের
মানহানী করে আনন্দিত হয় । নাউযুবিল্লাহ ! কাজেই
আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইয়াজীদের
ব্যাপারে এতটুকু দ্বীধা করবো না , এমনকি তার ঈমানের
প্রশ্নেও না। ইয়াজীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত ,
ইয়াজীদের
সাহায্যকারী দের প্রতি লানত ও অভিসম্পাত। ইয়াজীদের
পক্ষ সমর্থন
কারীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত।”
দলীল–
√ শরহে আক্বায়ীদে নাসাফী ১৬২ পৃষ্ঠা!


★★★বিখ্যাত মুফাসসির "তফরীরে রুহুল মায়ানীর" প্রনেতেয়া আল্লামা আলুসি (রহ) এর মন্তব্য :


★এ বিখ্যাত মুফাসসির ও মুহাদ্দিস , মুফতীয়ে বাগদাদ হযরত
আল্লামা আলূসী বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইয়াজিদ
কাফির হওয়া প্রসঙ্গে বলেন-

ﺍﻧﺎ ﺍﻗﻮﻝ : ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻐﻠﺐ ﻋﻠﻲ ﻇﻨﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﺨﺒﻴﺚ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﺼﺪﻗﺎ ﺑﺮﺳﺎﻟﺔ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﺍﻥ
ﻣﺠﻤﻮﻉ ﻣﺎ ﻓﻌﻞ ﻣﻊ ﺍﻫﻞ ﺣﺮﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻭﺍﻫﻞ ﺣﺮﻡ ﻧﺒﻴﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻻ ﻻﺓ ﻭ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﻋﺘﺮﺗﻪ ﺍﻟﻄﻴﺒﻴﻦ ﺍﻟﻄﺎﻫﺮﻳﻦ
ﻓﻲ ﺍﻟﺤﻴﺎﺓ ﻭ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻮﺍﺕ ﻭﻣﺎ ﺻﺪﺭ ﻣﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺨﺎﺯﻱ ﻟﻴﺲ ﺑﺎﺿﻌﻒ ﺩﻻﻟﺔ ﻋﻠﻲ ﻋﺪﻡ ﺗﺼﺪﻳﻘﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺎﺀ
ﻭﺭﻗﺔ ﺍﻟﺼﻔﻒ ﺍﻟﺸﺮﻳﻒ ﻓﻲ ﻗﺬﺭ

অর্থ: আমি বলছি, আমার এটাই অধিক ধারনা যে,
খবীসটি হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল বলে বিশ্বাস করতো না।
সে আল্লাহ পাক উনার হেরেম শরীফে (কা’বা শরীফ
প্রান্তে) অবস্থানকারীদের সাথে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হেরেম শরীফ (মদীনা শরীফ) এ
অবস্থানকারীদের সাথে এবং উনার পূত-পবিত্র বংশধর
উনাদের সাথে উনার জীবদ্দশায় এবং উনাদের বেছাল
শরীফের পরে যে আচরন করেছে, এছাড়া তার দ্বারা যে সমস্ত
অনাচার প্রকাশ পেয়েছে তা তার ঈমান না থাকার
ব্যাপারটি স্পষ্ট করে, (তার ঈমান থাকার) ব্যাপারটি প্রমান
করতে কোন দুর্বল দলীলও নাই। কারন এ কাজটি ছিলো কুরআন
শরীফের পাতা অবহেলা অবজ্ঞার সাথে ময়লা আবর্জনায়
নিক্ষেপ করার মতো অন্যায়।”
দলীল-
√ তাফসীরে রূহুল মা’য়ানী ২৫ তম খন্ড ৭৩ পৃষ্ঠা।


★তিনি আরো বলেন :-

আমি মনে করি বেশিরভাগ মুসলমানের
কাছেই ইয়াজিদের কার্যকলাপ
অজানা ছিল না। কিন্তু মুসলমানরা তখন
অসহায়ভাবে বশীভূত ছিল।

আর যদি ধরে নেই খবিসটি (অপবিত্র)
মুসলমান ছিল, তাহলেও
বলতে হবে সে যাবতীয় বড় পাপ
একত্রে করেছে যা বর্ণনা করার
ভাষা নেই। আমি মনে করি তার মত
ব্যক্তির প্রতি অভিশাপ দেয়া বৈধ।
তার মত বড় পাপী কেউ আছে বলেও
ধারণা করা যায় না।

তিনি বলেন-
ﻭﻳﻠﺤﻖ ﺑﻪ ﺍﺑﻦ ﺯﻳﺎﺩ ﻭﺍﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﻭﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﻠﻌﻨﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭ ﺟﻞ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﺟﻤﻌﻴﻦ ﻭﻋﻠﻲ ﺍﻧﺼﺎﺭﻫﻢ ﻭﺍﻋﻮﺍﻧﻬﻢ
ﻭﺷﻴﻌﺘﻬﻢ ﻭﻣﻦ ﻣﺎﻝ ﺍﻟﻴﻬﻢ ﺍﻟﻲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻣﺎ ﺩﻣﻌﺖ ﻋﻴﻦ ﻋﻠﻲ ﺍﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ

অর্থ: ইয়াজিদ এর সাথে শামিল (তার গভর্নর)

ইবনে জিয়াদ, ওমর সাদ ও তাদের
দলবলও অভিশাপ পাওয়ার উপযুক্ত।
তাদের সবার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।

তাদের সাহায্যকারী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও
সাঙ্গপাঙ্গদের ওপরও লানত
তথা অভিশাপ। আর যারা তাদের
প্রতি সহানুভূতি দেখাবে তাদের ওপরও
অভিশাপ কিয়ামতের দিন পর্যন্ত
এবং ততদিন যতদিন না ইমাম হুসাইন (আ.)’এর
জন্য একটি মাত্র চোখ থেকেও অশ্রু
ঝরবে।” (রুহুল মায়ানি, খণ্ড-২৫,
পৃ-৭৩)


★তিনি  বলেন-

ﺫﺍﻟﻚ ﻟﻌﻤﺮﻱ ﻫﻮ ﺍﻟﻀﻼﻝ ﺍﻟﺒﻌﻴﺪ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻜﺎﺩ
ﻳﺰﻳﺪ ﻋﻠﻲ ﺿﻼﻝ ﻳﺰﻳﺪ

অর্থ-আমি কসম করে বলি , এটা হলো চরম ভ্রষ্টতা।
যা ইয়াজীদের ভ্রষ্টতাকে অতিক্রম করেছে।”
দলীল-
√ রুহুল মায়ানী ২৫ তম খন্ড ৭৩ পৃষ্ঠা ।


★তিনি আরো বলেন :-

ﻭﻗﺪ ﺻﺮﺡ ﺑﻜﻔﺮﻩ ﻭﺻﺮﺡ ﺑﻠﻐﻨﻪ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻣﻨﻬﻢ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﻧﺎﺻﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺠﻮﺯﻱ ﻭﺳﺒﻘﻪ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ
ﺍﺑﻮ ﻳﻌﻠﻲ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﻼﻣﺔ ﺍﻟﺘﻔﺘﺎﺯﺍﻧﻲ ﻻﻧﺘﻮﻗﻒ ﻓﻲ ﺷﺎﻧﻪ ﺑﻞ ﻓﻲ ﺍﻳﻤﺎﻧﻪ ﻟﻌﻨﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻋﻠﻲ ﺍﻧﺼﺎﺭﻩ
ﻭﺍﻋﻮﺍﻧﻪ ﻭﻣﻤﻦ ﺻﺮﺡ ﺑﻠﻌﻨﻪ ﺍﻟﺠﻼﻝ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﺖ

অর্থ- ইয়াজীদ কাফির হওয়া সম্পর্কে এবং তার প্রতি লানত
করা বৈধতার বিষয়ে এক জামাতের উলামা পরিস্কার মন্তব্য
করেছেন। উনারা হলেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের মদদগার
১) ইবনুল জাওজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আর উনার পূর্বে
২) হযরত কাজী আবু ইয়ালা রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৩) আল্লামা হযরত তাফতানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
আমরা ইয়াজীদের ব্যাপারে দ্বিধা করবো না। এমনকি তার
ঈমানের ব্যাপারে ও না। তার প্রতি, তার সাহায্যকারী দের
প্রতি , এবং শুভকামনা কারীদের প্রতি আল্লাহ পাকের
লানত। যারা ইয়াজীদ সুস্পষ্ট লানত করেছেন তাদের
মধ্যে
৪)ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহিও রয়েছেন।”

দলীল-
√ তাফসিরে রুহুল মায়ানী ২৫ খন্ড ৭২ পৃষ্ঠা

তাছাড়াও আল্লামা আলুসির মতে এবং অন্যান্যদের মতে আরো অনেকজন তাকে লানত করেছে তারা হলেন:-

৫) আল-বারযানযি (রহ) তার " আল-হাসনাত" কিতাবে

৬) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) "(আস-সাওয়াইক)" ও "(তফসীরে রুহুল মায়ানী ২৫:পৃ ৭৩, সুরা ৪৭:২২-২৩) কিতাবে ওনার নিজ পুত্র আব্দুল্লাহ  এটা বর্ননা করেছেন আর তার থেকে

৭) ইমাম আল-হায়তামী (রহ) ও আল্লামা আলুসী বর

৮) ইমাম তাবারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ,

৯) বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়েখ আব্দুল হক্ব দেহলবী (রহ) ,

১০) বিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী (রহ) ইয়াযীদকে লা’নতপ্রপ্ত,
অভিশপ্ত, নাপাক বলে উল্লেখ করেছেন।

১১) মুফাসসির আল্লামা আলুসী (রহ)



★তিনি আরো বলেন :-

ﻋﻠﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ‏( ﺍﻱ ﻋﻠﻲ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺑﻌﻌﻦ ﻣﻌﻴﻦ ‏) ﻻﻧﻮﻗﻒ ﻓﻲ ﻟﻌﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻜﺜﺮﺓ ﺍﻭﺻﺎﻓﻪ ﺍﻟﺨﺒﻴﺜﺔ
ﻭﺍﺭﺗﻜﺎﺑﻪ ﺍﻟﻜﺒﺎﺀﺭ ﻓﻲ ﺟﻤﻴﻊ ﺍﻳﺎﻡ ﺗﻜﻠﻴﻔﻪ ﻭﻳﻜﻔﻲ ﻣﺎ ﻓﻌﻠﻪ ﺍﻳﺎﻡ ﺍﺳﺘﻼﺀﻩ ﺑﺎﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻭﻣﻜﺔ ﻓﻘﺪ ﺭﻭﻱ
ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﺑﺴﻨﺪ ﺣﺴﻦ : ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻣﻦ ﻇﻠﻢ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻭﺍﺧﺎﻓﻬﻢ ﻓﺎﺧﻔﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻟﻌﻨﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻣﻼﺀﻛﺔ ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ
ﺍﺟﻤﻌﻴﻦ ﻻﻳﻘﺒﻞ ﻣﻨﻪ ﺻﺮﻑ ﻭﻻﻋﺪﻝ
ﻭﺍﻟﻄﺎﻣﺔ ﺍﻟﻜﺒﺮﻱ ﻣﺎ ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺑﺎﻫﻞ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻭﺭﺿﺎﻩ ﺑﻘﺘﻞ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻋﻠﻲ ﺟﺪﻩ ﻭﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﺎﻭﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺍﺳﺘﺒﺸﺎﺭﺓ
ﺑﺬﺍﻟﻚ ﻭﺍﻫﺎﻧﺘﻪ ﺍﻫﻞ ﺑﻴﺘﻪ ﻣﻤﺎ ﺗﻮﺍﺗﺮ ﻣﻌﻨﺎﻩ ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﻔﺎﺻﻴﻠﻪ ﺍﺣﺪﺍ .

অর্থ: এ কথার ভিত্তিতে ( সুনির্দিষ্টভাবে অভিসম্পাত
দানের বৈধতার ভিত্তিতে) ইয়াযিদ
লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে লা’নত করার
প্রশ্নে আমরা দ্বিধা করবো না। সে বহুবিধ নিকৃষ্টমানের
দোষ করেছে। তার জবর দখলের দিনগুলোতে সে মদীনা শরীফ
ও মক্কা শরীফ এর অধিবাসীদের সাথে যে আচরন করেছে তার
ব্যাপারে বিচার করতে গেলেই যথেষ্ট।
প্রসঙ্গত হযরত ইমাম তাবরানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাসান সনদে হাদীস
শরীফ বর্ননা করেছেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
হে বারে ইলাহী ! যে মদীনাবাসীদের প্রতি যুলুম করবে,
উনাদের সন্ত্রস্ত করবে, আপনি তাকেও ভীতির সম্মুখীন করুন।”
এরূপ ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ পাক, ফেরেশতাকুল, মানবকুলসহ
সকলে অভিসম্পাত ( লা’নত) বর্ষিত হোক। এরূপ ব্যক্তির কোন
ফরজ ও নফল ইবাদত কবুল করা হবে না।
আর মহাপ্রলয়ের ন্যায় ইয়াযিদ
লা’নাতুল্লাহি আলাইহি হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত শরীফ
(পরিবারবর্গ) উনাদের সাথে যা করেছে আর হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার
শাহাদাতকে যেভাবে সানন্দে সে গ্রহণ করেছে।
নাউযুবিল্লাহ । হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার
নানা ও উনাদের উভয়ের প্রতি ছলাত ও সালাম বিনিময়
নিবেদন করি এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম
উনার পরিবারবর্গের সাথে সে যেসব মানহানিকর ব্যবহার
করেছে, তার বিস্তারিত বিবরন সূত্রগত একক বর্ননায় বর্নিত
হলেও অর্থ ও তথ্য দৃষ্টে (মুতাওয়াতির) ব্যাপক সূত্রে বর্নিত।”
দলীল-
√ তাফসীরে রূহুল মায়ানী ২৫ তম খন্ড ৭২ নং পৃষ্ঠা।

No comments:

Post a Comment